দিল্লি, 7 অগাস্ট : সন্ধ্যায় কাশ্মীরে 370 ধারা প্রত্যাহার নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে টুইট করেছিলেন তিনি ৷ শরীর তাঁকে সক্রিয় রাজনীতি করার অনুমতি না দিলেও দেশ ও সমকালীন রাজনীতির সঙ্গে শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত জড়িয়েছিলেন ৷ হয়তো ভারতীয় রাজনীতির আরও কিছু পরিবর্তনের সাক্ষী হতে পারতেন ৷ দেশের প্রিয় এই রাজনীতিবিদের দূরদর্শিতায় আরও কিছু সমৃদ্ধ হওয়া বাকি ছিল ৷ কিন্তু নিয়তি বোধহয় অন্য কিছুই চেয়েছিল ৷ আচমকাই চলে গেলেন সুষমা স্বরাজ ৷ মাত্র 25 বছরে মন্ত্রী হওয়া থেকে শুরু করে দেশের প্রথম পূর্ণ সময়ের বিদেশ মন্ত্রীর যাত্রাপথটাও সুদীর্ঘ ৷ রাজনৈতিক মহলে তাঁর বাগ্মিতা, রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রশংসকও বহু৷ তাঁর বর্ণময় রাজনৈতিক জীবন নতুন প্রজন্মের কাছে একটা অনুপ্রেরণা বললেও ভুল বলা হয় না ৷
প্রথম জীবন :
1953 সালের 14 ফেব্রুয়ারি হরিয়ানায় জন্ম সুষমার ৷ বাবা হরদেব শর্মা ছিলেন একজন RSS কর্মী ৷ অম্বালা ক্যান্টনমেন্টের সনাতন ধর্ম কলেজ থেকে সংস্কৃত ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হন ৷ পরে পঞ্জাব বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়াশোনা করেন ৷ সেই সময় হরিয়ানায় ভাষা পর্ষদের তরফে রাজ্যস্তরে একটি প্রতিযোগিতা হত ৷ সেখানে সেরা হিন্দি বক্তা হিসেবে পরপর তিনবার পুরস্কার জেতেন ৷ অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন ৷
রাজনীতিতে পদার্পণ :
1970 সাল থেকে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের হাত ধরে রাজনৈতিক জীবনে পদার্পণ ৷ 1973 সালে সুপ্রিম কোর্টে আইনজীবী হিসাবে প্র্যাকটিস শুরু করেন সুষমা স্বরাজ । তাঁর স্বামী স্বরাজ কৌশলের সঙ্গে সোশালিস্ট নেতা জর্জ ফার্নান্ডেজ়ের ভালো সম্পর্ক ছিল ৷ 1975 - 1977 সাল ৷ দেশে তখন জরুরি অবস্থা ৷ আইনে তাঁর দক্ষতার জেরে সোশালিস্ট নেতা জর্জ ফার্নান্ডেজ়ের নেতৃত্বাধীন দলের সদস্য হন ৷ পরে জয়প্রকাশ নারায়ণের জরুরি অবস্থা বিরোধী আন্দোলনের সক্রিয় কর্মীও ছিলেন ৷ এরপরই যোগ দেন BJP তে ৷ 1977- 1982 সাল পর্যন্ত হরিয়ানার বিধায়ক ছিলেন ৷ 1977 সালের জুলাই মাস৷ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন দেবী লাল ৷ 25 বছর বয়সে জনতা পার্টির সরকারে প্রথম মন্ত্রী হন ৷ 1979 সালে 27 বছর বয়সে হরিয়ানার জনতা পার্টির স্টেট প্রেসিডেন্ট হন ৷ 1987-1990 সাল হরিয়ানায় ভারতীয় জনতা পার্টি ও লোকদলের জোট সরকার ৷ তখন শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন ৷
জাতীয়স্তরে রাজনীতি :
1990 সালের এপ্রিলে রাজ্যসভার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন ৷ এরপর 1996 সালে দক্ষিণ দিল্লি থেকে 11 তম লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেন ৷ 1996 সালে 13 দিনের বাজপেয়ী সরকারে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের দায়িত্ব পান ৷ দিল্লি থেকে 12 তম লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেন ৷ আবার বাজপেয়ি সরকারের অধীনে তথ্য-সম্প্রচার ও টেলিকমিউনিকেশন মন্ত্রকের অতিরিক্ত দায়ভার সামলান ৷ তৎকালীন সময়ে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদান সিনেমাকে শিল্পের তকমা দেওয়া ৷ যা ইন্ডিয়ান ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে ব্যাঙ্ক ফিনান্স পেতে সাহায্য করে ৷ 1998 -র অক্টোবর ৷ দিল্লির প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন ৷ কিন্তু সেই বছর ডিসেম্বরেই ইস্তফা দেন তিনি ৷ 1999-এর সেপ্টেম্বরে কর্নাটকের বেলারি কেন্দ্র থেকে তৎকালীন কংগ্রেস সভাপতি সোনিয়া গান্ধির বিরুদ্ধে লড়েন ৷ কিন্তু হেরে যান৷ 2000 সালে উত্তরপ্রদেশ থেকে রাজ্যসভার সদস্য নির্বাচিত হন৷ 2003 থেকে 2004 কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ ও সংসদীয় বিষয়ক মন্ত্রী হন তিনি ৷ 2006 সালে বর্ষীয়াণ নেতা প্রমোদ মহাজনের মৃত্যুর পর দলের মুখ হিসেবে উঠে আসেন তিনি ৷ 2009 সাল ৷ লোকসভা নির্বাচনে এল কে আদবানির নেতৃত্বাধীন BJP, কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন UPA সরকারকে কেন্দ্র থেকে সরাতে ব্যর্থ হয়৷ তখন আদবানির বয়স 86 বছর ৷ ফলে প্রশস্থ হয় সুষমার পথ ৷ লোকসভার বিরোধী মুখ হিসেবে উঠে আসেন ৷ 2014 সালে মধ্যপ্রদেশের বিদিশা কেন্দ্র থেকে জেতেন তিনি ৷ দায়িত্ব পান বিদেশ মন্ত্রকের ৷ তৎকালীন সময়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল নামে অ্যামেরিকার এক দৈনিক তাঁকে ভারতের সবচেয়ে প্রিয় রাজনীতিবিদের তকমা দেয় ৷
সাতবারের সাংসদ এবং তিনবারের বিধায়ক ছিলেন তিনি৷ BJP থেকে প্রথম মহিলা মুখ্যমন্ত্রী ৷ তিনি একমাত্র মহিলা সাংসদ যিনি আউটস্ট্যান্ডিং পার্লামেন্টেরিয়ান অ্যাওয়ার্ডে সম্মানিত হন৷ 2019 সালে 19 ফেব্রুয়ারি স্প্যানিস সরকার তাঁকে গ্র্যান্ড ক্রস অফ অর্ডার অফ সিভিল মেরিট সম্মান দেয় ৷
প্রথম মহিলা হিসেবে লোকসভায় সামলেছেন বিরোধী দলনেতার ভার ৷ দেশের কোনও জাতীয় দলের প্রথম মহিলা মুখপাত্রও ছিলেন তিনি ৷ বছর দুয়েক আগে কিডনি প্রতিস্থাপন হয় তাঁর ৷ তারপর আর শরীর সেভাবে সঙ্গ দেয়নি ৷ সম্প্রতি লোকসভা নির্বাচনেও অংশ নেননি তিনি ৷