কেউ অঙ্গদান করলে আটজন মানুষের প্রাণ বাঁচাতে পারেন । আর টিসু দান করলে প্রায় ৫০ জন মানুষের জীবনের উন্নতি করা যায় । মানবতার নামে সর্বশ্রেষ্ঠ যে কাজটি আপনি করতে পারেন, তা হল অঙ্গদান । মৃত্যুর পর এক ব্যক্তির অঙ্গের কোনও প্রয়োজন নেই, কিন্তু সেই অঙ্গ অন্য কাউকে নবজীবন দিতে পারে । অঙ্গদান নিয়ে বহু মিথ ও কুসংস্কার আছে । প্রতিবছর 13 অগাস্ট বিশ্ব অঙ্গদান দিবস পালন করা হয়। যাতে এই মিথগুলি ভেঙে মানুষকে অঙ্গদানের ব্যাপারে আরও সংবেদনশীল এবং উৎসাহিত করা যায় । একটি সমীক্ষা বলছে, অঙ্গের অভাবে প্রতি বছর পাঁচ লাখ মানুষ মারা যান । তাই নিচে ভারতের ন্যাশনাল হেল্থ পোর্টাল থেকে কয়েকটি তথ্য দেওয়া হল, অঙ্গদানের ব্যাপারে যা আপনাদের জানা উচিত...
বয়স, জাতি, ধর্ম, সম্প্রদায় নির্বিশেষে যে কেউ অঙ্গদাতা হতে পারেন
অঙ্গদানের কোনও নির্দিষ্ট বয়স নেই । অঙ্গদানের সিদ্ধান্ত কড়া মেডিকেল শর্ত মেনে হয় । ১৮ বছরের নিচে কেউ অঙ্গদাতা হতে চাইলে বাবা-মা বা অভিভাবকের সম্মতির প্রয়োজন হয় ।
ছড়িয়ে পড়তে থাকা ক্যানসার, HIV, ডায়াবেটিস, কিডনির সমস্যা বা হৃদযন্ত্রের সমস্যা থাকলে, জীবিত অঙ্গদাতা হিসেবে আপনি বাধা পেতে পারেন ।
কী দান করা যায় ?
স্বাভাবিক মৃত্যুর ক্ষেত্রে :
কর্নিয়ার মতো টিসু
হৃদযন্ত্রের ভালভ
ত্বক
হাড়
ব্রেন ডেথের ক্ষেত্রে :
হৃৎপিণ্ড
লিভার
কিডনি
অন্ত্র
ফুসফুস
অগ্ন্যাশয়
একটি সফল প্রতিস্থাপনের পর, হাত ও মুখকেও সম্প্রতি অঙ্গদানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । বেশিরভাগ ক্ষেত্রে একজন মৃত ব্যক্তির অঙ্গই দান করা হয় । কিন্তু কখনও কখনও জীবিতের থেকেও অঙ্গদান হয়ে থাকে ।
একজন জীবিত ব্যক্তি যা দান করতে পারেন:
একটি কিডনি
একটি ফুসফুস
লিভারের একটা অংশ
অগ্ন্যাশয়ের একটা অংশ
অন্ত্রের একটা অংশ
কিছু মিথ...
মেডিকেল সমস্যা থাকলে অঙ্গদাতা হওয়া যায় না...
যে কেউ যে কোনও মেডিকেল সমস্যা সত্ত্বেও অঙ্গদাতা হিসেবে নাম নথিভুক্ত করাতে পারেন । একমাত্র মৃত্যুর পরই মেডিকেল টিম সিদ্ধান্ত নেবে যে অঙ্গদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে কি না । কিন্তু আপনি অঙ্গ বা টিসু দিতে সমর্থ থাকবেন ।
দাতার পরিবারকে অঙ্গদানের জন্য টাকা দিতে হয় ?
না, অঙ্গদান প্রক্রিয়ার জন্য কখনোই দাতার পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয় না ।
অঙ্গদানের পক্ষে আমার বয়স খুব কম...
একজন ব্যক্তি যে কোনও বয়সেই অঙ্গদাতা হতে পারেন । কিন্তু যদি বয়স ১৮-র নিচে হয়, তাহলে বাবা-মা বা অভিভাবকের সম্মতি বাধ্যতামূলক ।
চিকিৎসকরা আমার জীবন বাঁচানোর ব্যাপারে সহজে হাল ছেড়ে দেবেন...
প্রত্যেক চিকিৎসকের অগ্রাধিকার, যে কোনও মূল্যে আপনার জীবনরক্ষা । অঙ্গদান একমাত্র হবে যদি সেই ব্যক্তির ব্রেন ডেড হয় । এছাড়াও মেডিকেল টিম এবং প্রতিস্থাপন টিম আলাদা হয় ।
আমি খুবই বৃদ্ধ/দুর্বল/অসুস্থ বলে আমার অঙ্গ কেউ চাইবে না...
আগেই বলা হয়েছে, যে কোনও বয়সেই অঙ্গদাতা হওয়া যায় । পরে বিশেষজ্ঞরা সিদ্ধান্ত নেবেন যে আপনার অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যাবে কি না । আগে থেকেই নিজেকে অযোগ্য ভাববেন না ।
সুতরাং অঙ্গদান করে কাউকে নতুন জীবনদান করা, আপনার জীবনের অন্যতম সেরা কাজ হতে পারে । দেহকে বিকৃত না করে এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন বিশেষজ্ঞরা । মহান কোনও কিছু করতে, কাউকে আপনাকে ভয় দেখাতে দেবেন না ।