ব্যক্তি, সম্প্রদায় এবং সমাজের জন্য শিক্ষার গুরুত্বকে এবং আরও বেশি শিক্ষিত সমাজের দিকে তীব্র প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা স্মরণ করিয়ে দেওয়ার জন্য 1966 সালে 8 সেপ্টেম্বর UNESCO আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস ঘোষণা করেছিল।
সাক্ষরতার বিষয়টি হল উন্নয়ন ও বিকাশের জন্য রাষ্ট্রসংঘের 2030-এর অ্যাজেন্ডার একটি মূল উপাদান।
2015 সালের সেপ্টেম্বরে বিশ্বনেতাদের দ্বারা গৃহীত রাষ্ট্রসংঘের উন্নয়ন অ্যাজেন্ডা, মানুষের শিক্ষা এবং শিক্ষার সুযোগগুলির প্রচার করে ।
সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের লক্ষ্য হল সাক্ষরতার হার বাড়ানো এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে যাদের মধ্যে এই দক্ষতার অভাব রয়েছে তাদের শিক্ষার সুযোগ দেওয়া । এই প্রশ্নগুলির উত্তর খোঁজার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস 2020 প্রতিফলিত হবে । যুব ও প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতার প্রোগ্রামগুলিতে প্য়ানডেমিক এবং এর বাইরেও কীভাবে উদ্ভাবনী এবং কার্যকর শিক্ষাগত পদ্ধতি এবং শিক্ষাদান পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে তা আলোচনা করা হবে।
দিনটিতে শিক্ষকদের ভূমিকা এবং সেইসঙ্গে কার্যকর নীতি, ব্যবস্থা, প্রশাসন এবং এমন ব্যবস্থাগুলি যা শিক্ষাবিদদের এবং শেখার ক্ষেত্রে সহায়তা করতে পারে সেগুলি বিশ্লেষণ করার সুযোগ দেবে । ভার্চুয়াল কনফারেন্সের মাধ্যমে UNESCO SDG-4-র অর্জনের দিকে COVID-19-এর যুগে যুবক এবং প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতার, শিক্ষা এবং শেখার পুনরায় কল্পনা করার জন্য একটি সম্মিলিত আলোচনা শুরু করবে ।
‘COVID-19 সংকটে সাক্ষরতা, শিক্ষাদান এবং শেখানো’
বিগত দশকগুলিতে বিশ্ব সাক্ষরতা অবিচ্ছিন্ন অগ্রগতি অর্জন করেছে । তবুও, বিশ্বব্যাপী, 773 মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক এবং তরুণদের মধ্যে প্রাথমিক শিক্ষার দক্ষতার অভাব রয়েছে ।
617 মিলিয়নেরও বেশি শিশু ও কিশোর-কিশোরীরা পড়াশোনা এবং গণিতে ন্যূনতম দক্ষতার স্তর অর্জন করতে ব্যর্থ।
সাম্প্রতিক COVID-19 সংকটে বিদ্যমান সাক্ষরতার চ্যালেঞ্জগুলির অন্যতম হল, যুব ও প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য কম বা স্বল্প সাক্ষরতার দক্ষতা সহ স্কুল শিক্ষার এবং আজীবন শিক্ষার সুযোগগুলিকে গভীরভাবে প্রভাবিত করা।
প্যানডেমিকের প্রাথমিক পর্যায়ে, 190টিরও বেশি দেশে স্কুলগুলি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল ৷ এবং বিশ্বের 91 শতাংশ শিক্ষার্থীর শিক্ষা ব্যাহত হয় । প্রায় 63 মিলিয়ন প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষকদের জীবন ব্য়াহত হয়েছে ।
সরকার বিশেষত শিশু এবং তরুণদের জন্য দূর-শিক্ষার ব্যবস্থা এনেছে । ভার্চুয়াল ক্লাসের জন্য টিভি, রেডিয়ো মাধ্যমও ব্যবহার করা হয়েছে ।
এটি যুবক এবং প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতা এবং শিক্ষাকে কিছু কিছু ক্ষেত্রে যথেষ্ট প্রভাবিত করেছে।
অনেক দেশে প্রাথমিক শিক্ষার প্রতিক্রিয়া পরিকল্পনাগুলিতে প্রাপ্তবয়স্কদের সাক্ষরতা এবং শিক্ষা অনুপস্থিত ছিল ৷ এবং প্রচুর প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষরতার কর্মসূচি স্থগিত করা হয়েছে যা আগে COVID-19 সংকটের আগে চালু ছিল।
এর অর্থ , অনেক যুবক এবং প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বা অল্প শিক্ষার দক্ষতা রয়েছে, যারা একাধিক অসুবিধার মুখোমুখি হয়৷ তাদের জীবন রক্ষাকারী তথ্য এবং দূরবর্তী শিক্ষার সুযোগগুলিতে সীমাবদ্ধ অ্যাক্সেস ছিল ।
1946 সাল থেকে UNESCO সকলের জন্য একটি শিক্ষার বিশ্বের দৃষ্টিভঙ্গির অগ্রগতিতে সচেষ্ট হয় । এটি সারা জীবন শিক্ষার অধিকারের অন্তর্নিহিত অংশ হিসাবে সাক্ষরতা দক্ষতা অর্জন এবং উন্নতি করে । সাক্ষরতার "গুণক প্রভাব" মানুষকে ক্ষমতায়িত করে, তাদের সমাজে সম্পূর্ণরূপে অংশীদার করতে সক্ষম করে এবং জীবিকা নির্বাহের ক্ষেত্রে অবদান রাখে ।
সাক্ষরতাও সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের জন্য একটি চালকের ভূমিকা নেয় । শিশু এবং পরিবারের স্বাস্থ্য এবং পুষ্টি উন্নত; দারিদ্র্য হ্রাস এবং জীবনের সুযোগগুলি প্রসারিত করতে সাহায্য় করে ।
পড়ার, লেখার এবং গণনার দক্ষতার সেট হিসাবে প্রচলিত ধারণার বাইরে, সাক্ষরতা এখন একটি ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল, পাঠ্য-মধ্যস্থ, তথ্য সমৃদ্ধ এবং দ্রুত-পরিবর্তিত বিশ্বে সনাক্তকরণ, বোঝার, ব্যাখ্যা, সৃষ্টি এবং যোগাযোগের মাধ্যম হিসাবে বোঝা যাচ্ছে ।
তবে বিশ্বব্যাপী, কমপক্ষে 5 কোটি যুবক এবং প্রাপ্তবয়স্করা এখনও পড়তে এবং লিখতে পারে না এবং 25 কোটি শিশু প্রাথমিক শিক্ষার দক্ষতা অর্জন করতে ব্যর্থ হচ্ছে । এর ফলস্বরূপ নিম্ন-শিক্ষিত এবং নিম্ন দক্ষ যুবক এবং প্রাপ্তবয়স্কদের তাদের সম্প্রদায় এবং সমাজে সম্পূর্ণ অংশগ্রহণ থেকে বাদ পড়ছে।
আজীবন শিক্ষার একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এবং সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্টের 2030 এজেন্ডা হিসাবে সাক্ষরতার অগ্রগতির জন্য, UNESCO যুবসমাজ এবং প্রাপ্তবয়স্কদের উপর জোর দিয়ে বিশ্বব্যাপী সাক্ষরতার প্রচারের জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতিগুলি গ্রহণ করে ।
শৈশবকালীন যত্ন এবং শিক্ষার মাধ্যমে দৃঢ় ভিত্তি স্থাপন
সমস্ত শিশুর জন্য মানসম্পন্ন প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান
প্রাথমিক এবং সাক্ষরতার দক্ষতার অভাব আছে এমন যুবক এবং প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য স্কেলিং-আপ ক্রিয়ামূলক সাক্ষরতার স্তর
সাক্ষর পরিবেশের বিকাশ করা
বিশ্ব সাক্ষরতার কিছু তথ্য:
1965 সালে 7 নভেম্বর UNESCO কর্তৃক আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয়
দিনটি প্রথমবারের মতো 1966 সালে 8 সেপ্টেম্বর পালিত হয়েছিল
UNESCO সংগৃহীত তথ্য অনুসারে বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় 84 শতাংশ সাক্ষরতাপ্রাপ্ত
আজ অবধি বিশ্বজুড়ে আড়াইশো মিলিয়ন শিশু ভালো লিখতে বা একেবারেই লিখতে পারে না
বিশ্বের 775 মিলিয়ন নিরক্ষর প্রাপ্তবয়স্কদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশ দশটি দেশে পাওয়া যায় : ভারত, চিন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, নাইজেরিয়া, ইথিওপিয়া, মিশর, ব্রাজ়িল, ইন্দোনেশিয়া এবং কঙ্গোর গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
UNESCO-র 'সকল দেশের জন্য শিক্ষা সম্পর্কিত গ্লোবাল মনিটরিং রিপোর্ট' রিপোর্ট অনুসারে বুর্কিনা ফাসো (12.8 শতাংশ), নাইজার (14.4 শতাংশ) এবং মালি (19 শতাংশ) সাক্ষরতার হার সবচেয়ে কম।
রাষ্ট্রসংঘের বিশ্লেষণ অনুসারে, প্রাপ্তবয়স্ক পাঁচজনের মধ্যে একজন নিরক্ষর; 75 মিলিয়ন শিশু স্কুলে যায় না এবং আরও অনেকগুলি অনিয়মিতভাবে উপস্থিত হয় বা ড্রপ আউট হয়।
ভারতের ঘটনা
- 2011 সালের আদমশুমারি অনুসারে ভারতের সাক্ষরতার হার 74.04 শতাংশ ছিল
- 2011 সালের আদমশুমারি অনুসারে সর্বোচ্চ পাঁচটি শিক্ষিত রাজ্য হল: কেরালার সাক্ষরতার হার 93.91 শতাংশ, লাক্ষাদ্বীপ 92.28 শতাংশ, মিজ়োরাম 91.58 শতাংশ, ত্রিপুরা 87.75. শতাংশ এবং গোয়া 87.40 শতাংশ
- ভারতে 313 মিলিয়ন নিরক্ষর মানুষের বসবাস; এদের মধ্যে 59 শতাংশই নারী
- তথ্য দেখায় যে শিক্ষা, পেশা এবং মজুরিতে লিঙ্গ ফাঁকগুলি বেশিরভাগ সূচকগুলিতে 1983 এবং 2010-এর মধ্যে খুব দ্রুত সংকুচিত হয়েছে
- ভারতে বর্তমানে 186 মিলিয়ন মহিলা রয়েছে যারা কোনও ভাষায় একটি সাধারণ বাক্যও পড়তে বা লিখতে পারে না
- বয়সের গোষ্ঠীর (15-24 বছর) বর্তমান লিঙ্গ ব্যবধান 3.7% পয়েন্ট ৷ যা ভারতের সামগ্রিক লিঙ্গ ব্যবধানের প্রায় এক-পঞ্চমাংশ। এটি দেখায় যে ভারতে মহিলা সাক্ষরতার হার পুরুষ সাক্ষরতার সাথে দ্রুত বাড়ছে
- সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, ভারতে শিশু ও যুব সমাজে শিক্ষার হার যথাক্রমে 93 শতাংশ এবং 94 শতাংশ
সরকার কর্তৃক উদ্যোগ
1988 সালে চালু হওয়া জাতীয় সাক্ষরতা মিশন (NLM) এর অন্যতম প্রধান উপাদান হিসাবে প্রাপ্তবয়স্কদের শিক্ষাকে অন্তর্ভুক্ত করে । এটি 15-35 বছর বয়সের নিরক্ষরদের ফাংশনাল সাক্ষরতা প্রদানের দিকে মনোনিবেশ করেছিল।
উদাহরণস্বরূপ মিড-ডে-মিল স্কিম (1995) এবং সর্বশিক্ষা অভিযান (2001) এর পাশাপাশি RTE (শিক্ষার অধিকার আইন, 2009) কার্যকর করার ফলে সাক্ষরতার উন্নতি হয়েছে ।
ভারত সাফল্যের সাথে "স্বল্প সাক্ষরতার ফাঁদ" কেটে ফেলেছে, যেখানে পিতা-মাতার নিরক্ষরতার ধারাবাহিক প্রজন্মের জন্য স্বল্প সাক্ষরতার ফলাফলের দিকে নিয়ে যায় । পুরুষ ও মহিলা উভয়ের জন্য শিশু ও যুবদের সাক্ষরতার সংখ্যাটি দেখায় যে শিক্ষার উন্নতির জন্য টানা প্রচেষ্টা বছরের পর বছর ধরে ফল লাভ করেছে । ভারত যদি এই গতি বজায় রাখতে সক্ষম হয়, তবে 2030 সালের মধ্যে শিশু এবং যুবকদের সর্বজনীন সাক্ষরতা অর্জন করতে সক্ষম হতে পারে ।
শিক্ষা নিয়ে ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকাল অফিস থেকে প্রকাশিত রিপোর্ট অনুযায়ী----
শীর্ষে থাকা পাঁচ রাজ্য
কেরালা - 96.2 শতাংশ
দিল্লি - 88.7 শতাংশ
উত্তরাখণ্ড - 87.6 শতাংশ
হিমাচল প্রদেশ - 86.6 শতাংশ
অসম - 85.9 শতাংশ
সবথেকে নিচে থাকা পাঁচ রাজ্য
উত্তরপ্রদেশ - 73 শতাংশ
তেলাঙ্গানা - 72.8 শতাংশ
বিহার - 70.9 শতাংশ
রাজস্থান - 69.7 শতাংশ
অন্ধ্রপ্রদেশ -66.4 শতাংশ