হায়দরাবাদ, 5 এপ্রিল : ভাইরস যুদ্ধে সঙ্গী প্রযুক্তি ৷ ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন (DRDO)-এর চেয়ারম্যান এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের পরামর্শদাতা জি সতীশ রেড্ডি বলেন, “আমরা একটা যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি। এমন এক যুদ্ধ, যেখানে শত্রুকে দেখতে পাওয়া যায় না । দৃশ্যমান শত্রুর সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য অস্ত্র প্রচুর । কিন্তু এই শত্রু, অর্থাৎ ভাইরাসকে চোখে দেখা যায় না । এই অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য বিশেষ প্রযুক্তি তৈরি করছে DRDO।” এই কথাগুলি তিনি বলেছেন ইনাডুর সঙ্গে তাঁর বিশেষ সাক্ষাৎকারে । কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে DRDO কীভাবে সাহায্য করছে, তাও পরিষ্কার করেছেন তিনি।
ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে DRDO-এর ভূমিকা কী?
ভাইরাস হল এক অদৃশ্য শত্রু । একে নিয়ন্ত্রণে আমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিচ্ছি । একাধিক ‘অস্ত্র’ আমরা তৈরি করছি এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে । যার মধ্যে কিছু খুব শীঘ্রই হাতে আসবে । কিছু জিনিস প্রায় তৈরি হয়ে গিয়েছে ।
কত দিনে মাস্ক, স্যানিটাইজার এবং ভেন্টিলেটর পাওয়া যাবে?
মাস্ক ও স্যানিটাইজার তৈরির কাজ পুরো দমে চলছে । প্রথম পর্যায়ে আমরা তা তেলাঙ্গানা সরকারকে দেব । কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে আমাদের ভেন্টিলেটরের স্যাম্পেলকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে । আমরা সেগুলি তৈরি করার বরাত ইতিমধ্যেই কিছু বেসরকারি সংস্থাকে দিয়েছি ।
আমরা জানি পুষ্টিকর খাবার তৈরিতে DRDO-র অভিজ্ঞতা রয়েছে । কোভিড-19 আক্রান্তদের জন্য কী ব্যবস্থা করা হচ্ছে?
ভবিষ্যতে যদি খাদ্য সঙ্কট দেখা দেয়, সে কথা মাথায় রেখে আমরা এখন থেকেই রেডিমেড খাবার তৈরি করে তা সংরক্ষণও মজুত করছি । বেশ কয়েকটি দেশকে সম্ভাব্য খাদ্য সঙ্কট নিয়ে সাবধান করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO)। তবে WHO-এর সেই তালিকায় ভারত নেই ।
কতগুলো ভেন্টিলেটর তৈরি করা হচ্ছে? আপনাদের কি সেগুলি রপ্তানি করার কোনও পরিকল্পনা রয়েছে?
কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের সংখ্যা এবং কত সংখ্যক ভেন্টিলেটর লাগবে, তা ঠিক করবেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা । আমরা সেই অনুযায়ী ভেন্টিলেটর তৈরি শুরু করেছি । ভেন্টিলেটরের সমস্যায় ভুগছে এমন দেশকে সাহায্য করা হবে কি না, সে সিদ্ধান্ত নেবে কেন্দ্রীয় সরকার ।
প্রতি দিন কতগুলো করে ভেন্টিলেটর তৈরি হচ্ছে? মোট খরচ কত হচ্ছে?
প্রতি সপ্তাহে প্রায় 30 হাজার ভেন্টিলেটর তৈরি হচ্ছে । চলতি সপ্তাহে প্রথম ব্যাচ এসে পৌঁছবে। পরবর্তী সপ্তাহগুলোতে আমরা আরও বেশি পরিমাণে এই যন্ত্র তৈরি করব । প্রতি ভেন্টিলেটরের খরচ পড়বে প্রায় চার লক্ষ টাকা ।
DRDO কি কারওর সঙ্গে যৌথ ভাবে কোভিড-19 এর প্রতিষেধক তৈরি করছে?
আমরা গবেষকদের সঙ্গে যৌথ ভাবে কাজ করছি যাতে প্রয়োজনের সময় সেনাবাহিনীকে স্বাস্থ্য সরঞ্জাম দিয়ে সাহায্য করতে পারি ।
সেনাবাহিনী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষায় আপনারা কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন?
আমরা সেনাবাহিনী এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রচুর মাস্ক ও স্যানিটাইজার দিয়েছি। আমরা ইতিমধ্যেই বাহিনীর চিকিৎসকদের সতর্ক করেছি।
চিকিৎসক এবং স্বাস্থকর্মীরা কবে তাঁদের প্রয়োজনীয় সাজসরঞ্জাম পাবেন?
আমরা ইতিমধ্যেই তাঁদের জন্য অত্যন্ত উপযোগী পোশাকের দু’টি মডেল তৈরি করেছি। বিশেষজ্ঞ কমিটি তা অনুমোদনও করেছে। প্রতিটি পোশাকের মূল্য আট হাজার টাকা। এক সপ্তাহের মধ্যে দেড় লক্ষ এই ধরনের প্রতিরোধী পোশাক তৈর হয়ে যাবে।
কোভিড-১৯ আক্রান্তদের সংস্পর্শে থাকা চিকিৎসক ও প্যারা মেডিক্যাল কর্মীদের জন্য DRDO-র বিজ্ঞানীরা এক বিশেষ ধরনের বায়ো সুট তৈরি করেছেন । এই সুট তৈরিতে সংস্থার বিভিন্ন ল্যাবরেটরির একাধিক গবেষক যুক্ত ছিলেন । এই সুটের আর এক নাম পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট (PPE)। বিপুল চাহিদার কথা মাথায় রেখে চেষ্টা করা হচ্ছে প্রতি দিন অন্তত 15 হাজার PPE তৈরি করতে ।
PPE-র ব্যাপক চাহিদার কথা মাথায় রেখে সরকার তা আমদানি করার পরিকল্পনা করছে । DRDO-র বহু গবেষক বস্ত্র, কোটিং এবং ন্যানো প্রযুক্তিতে তাঁদের জ্ঞান উজার করে এই বায়ো সুট তৈরি করেছেন । প্রতিরক্ষা মন্ত্রক এক বিজ্ঞাপনে জানিয়েছে যে, এই বায়ো সুট কঠিন পরিস্থিতিতে পরীক্ষায় সফল হয়েছে। সিম সিলিং টেপের জোগান কম থাকায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বায়ো সুট উৎপাদন । এই সমস্যা সামাধানে DRDO এক ধরনের বিশেষ সিলেন্ট তৈরি করেছে যা ডুবোজাহাজে ব্যবহৃত হয় । পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থাকে দেড় লক্ষ লিটার স্যানিটাইজারও সরবরাহ করা হয়েছে । যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তৈরি করা হচ্ছে N-99 মাস্ক । DRDO-র তরফে জানানো হয়েছে, তারা ইতিমধ্যেই 10 হাজার মাস্ক সরবরাহ করে ফেলেছে এবং খুব শীঘ্রই দিনে 20 হাজার মাস্ক তৈরি করা হবে।