ETV Bharat / bharat

তাঁরা কোথায় হারিয়ে গেলেন, কেন হারিয়ে গেলেন ?

প্রতিটি থানার সামনে নিখোঁজ ব্যক্তিদের একটি বোর্ড ঝোলানো থাকে । কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার নিখোঁজ ব্যক্তিটির পরিবারের তরফে আর্থিক পুরষ্কারের কথাও ঘোষণা করা হয় । হায়দরাবাদের মতো বড় শহর, যেখানে প্রতিদিন বহু মানুষ বাড়ির বাইরে বের হন । কেউ বের হন ব্যক্তিগত কাজে, কেউ আবার পারিবারিক কাজে । 11 জন অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক এবং 14 জন মহিলা-সহ শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই নিখোঁজ হয়েছেন 40 জন । পুলিশ অনেক খুঁজলেও তাদের কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি ।

ছবিটি প্রতীকী
ছবিটি প্রতীকী
author img

By

Published : Dec 9, 2019, 10:28 PM IST

পরিবারটি সুন্দর জীবনযাপনের স্বপ্ন নিয়ে দিল্লিতে এসেছিল । 16 বছরের মেয়েটি তার অবসর সময়ে চায়ের দোকানের কাজে মাকে সাহায্য করত । একদিন রাতে হঠাত্ই মেয়েটি নিখোঁজ হয়ে গেল । অনেক খুঁজেও মেয়েকে পেলেন না মা । খালি হাতেই ফিরে আসতে হল বাড়িতে । গরচিবোলি থানায় রাত 11টা নাগাদ দায়ের করা হল একটি নিখোঁজ ডায়েরি । পর দিন বাড়িতে পৌঁছল একটি ভয়ঙ্কর খবর । পুলিশ ওই মেয়েটির পরিবারকে জানায়, একটি নির্জন স্থানে একটি দেহ পাওয়া গেছে । মা গিয়ে দেখতে পান মেয়ের নিথর দেহটি পড়ে আছে, দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ।

দিন কয়েক আগে শামসাবাদে যুবতি চিকিত্সক দিশাকে ধর্ষণের পর খুন করা হয় । পুড়িয়ে দেওয়া হয় । সেই ভয়ঙ্কর দিনে রাত নটা নাগাদ যুবতি তাঁর বোনকে ফোন করে তাঁর পরিস্থিতির কথা জানয়েছিলেন । অপরাধীরা তার পিছু ধাওয়া করায় ভয় পেয়েছিলেন চিকিত্সক । এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই যুবতির ফোন বন্ধ হয়ে যায় । যুবতির চিন্তিত পরিবার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে যায় । কিন্তু, পুলিশের গাফিলতির জন্য দিশার দগ্ধ দেহ উদ্ধার হয় । সমাজের সর্বস্তর এক বাক্যে স্বীকার করে নেয়, পুলিশ একটু সক্রিয় হতে পারলে পরিস্থিতি কোনওভাবেই এমনটি হতো না ।

প্রতিটি থানার সামনে নিখোঁজ ব্যক্তিদের একটি বোর্ড ঝোলানো থাকে । কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার নিখোঁজ ব্যক্তিটির পরিবারের তরফে আর্থিক পুরষ্কারের কথাও ঘোষণা করা হয় । হায়দরাবাদের মতো বড় শহর, যেখানে প্রতিদিন বহু মানুষ বাড়ির বাইরে বের হন । কেউ বের হন ব্যক্তিগত কাজে, কেউ আবার পারিবারিক কাজে । 11 জন অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক এবং 14 জন মহিলা-সহ শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই নিখোঁজ হয়েছেন 40 জন । পুলিশ অনেক খুঁজলেও তাদের কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি । কেবল মাত্র জুবলি হিলসের থানায় এক মহিলা অভিযোগ করেছিলেন তাঁর স্বামী এবং দুই সন্তান নিখোঁজ হয়ে গেছে, যদিও পুলিশ ওই ব্যক্তকে খুঁজে পায় । আবার এক বাবা থানার অভিযোগ করেছিলেন , তাঁর মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না , এক মাস এর কেটে গেলেও মেয়েটির কোনও এখনও দিতে পারেনি ।

জুনের 1 থেকে 10 তারিখের মধ্যে 540 জন নিখোঁজের খবর ছিল । এর মধ্যে 303 জন হায়দরাবাদ, সায়বারাবাদ এবং রিচাকোন্ডা এলাকা থেকে । এর মধ্যে 276 জন মহিলা, 55 জন যুবতি, 26 জন যুবক এবং 183 জন পুরুষ । 222 জনের খোঁজ মিলেছে । নভেম্বর মাসে এই তিন পুলিশ স্টেশনে 38-40টি নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়েছিল । দেখে গেছে, গড়পরতা প্রতিদিন 60 জন করে নিখোঁজ হয়েছে, যার বেশির ভাগেই গ্রেটার হায়দরাবাদ এলাকা থেকে । তারা কী শেষ হয়ে যাচ্ছে ? নাকি তারা কোনও দুর্নীতিমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে ? মেয়েরা সুস্থ ভাবে বাড়ি ফেরা না পর্যন্ত শান্তিতে থাকতে পারেন না বাবা-মায়েরা । নিখোঁজ হওয়া মহিলা-যুবতিদের মধ্যে মাত্র 50 শতাংশের খোঁজ পাওয়া গেছে । পাচার রোখা এই মুহূর্তে পুলিশের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ । এ কাজের জন্য রীতিমতো পুলিশের টহল চলছে । দেখা গেছে, চাকরি এবং বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েও অনেক ক্ষেত্রে পাচার করা হচ্ছে ।

KPHB-র বাসিন্দা রামানা তাঁর মানসিক প্রতিবন্ধী ভাইকে খুঁজে চলেছেন, যে গত 24 জুন থেকে নিখোঁজ । দুর্গি বালেশ্বরী পেশায় একজন নিরাপত্তা কর্মী । ওই একই এলাকার বাসিন্দা । গত 23 সেপ্টেম্বর থেকে তাঁর 17 বছরের মূকবধির ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছেন না । বেশ কয়েকবার থানায় গেছেন, অভিযোগ করেছেন, কিন্তু, কোনও ফল পাওয়া যায়নি । KPHB এলাকার অপর এক বাসিন্দা ভি এস রাজু । গত 21 জুন থেকে তাঁর মানসিক প্রতিবন্ধী বাবাকে খুঁজে পাচ্ছেন না । এখনও পর্যন্ত যার কোনও খবর নেই । ইন্দিরা নগরের বাসিন্দা 40 বছরের গীতা একজন দৈনিক মজুরির শ্রমিক । 2017 সালের মে মাসে বাড়ি থেকে কাজে বেড়িয়েছিলেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাড়ি ফেরেননি । ওনার মা জয়াম্মা বালানগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, কিন্তু, এখনও পর্যন্ত কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি । রাজু কলোনির বাসিন্দা 36 বছরের সঞ্জীবা রাও, তিন মাস ধরে নিখোঁজ । তাঁর স্ত্রী করুণা শ্রী থানায় অভিযোগ করেও কোনও ফল পাননি ।

লালাগুডা পুলিশ নিখোঁজের অভিযোগগুলি সমাধান করার ক্ষেত্রে একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে । কোনও সূত্র না থাকলেও তারা অতি সক্রিয়ার সঙ্গে বিষয়গুলির দিকে নজর দিয়েছে । লালাপেট, শান্তি নগর, চন্দ্রবাবু নগর, সত্য নগর, ইন্দিরা নগর, লালাগুডা এবং মেত্থুগুডার মতো জায়গায় বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ ভাগ হয়ে নজরদারি শুরু করে, এক অপ্রত্যাশিত দৃষ্টান্তও স্থাপন করে । 2016 থেকে 2019 সালের মধ্যে ওই থানায় নথিভুক্ত 69টি নিখোঁজ অভিযোগের মধ্যে একটি বাদে বাকি সবগুলির সমাধান করা হয়েছে । 68 জন মহিলাকে নিরাপদে তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয় ।

KPHB কলোনির একটি পরিসংখ্যান এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায় । দেখা গেছে, এখান থেকে অনেক মহিলা স্বেচ্ছাতেই তাঁদের ঘর ছেড়েছেন । কিছু ক্ষেত্রে মহিলারা ঘর ছাড়ার আগে চিঠি লিখে বিস্তারিত জানিয়েছেন । মহিলা চিকিত্সকের ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের পর বাবা-মায়েরা তাঁদের মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত অতঙ্কিত । 2017 সালের KPHB কলোনি থেকে 191টি নিখোঁজ ঘটনার অভিযোগ করা হয়েছিল, এর মধ্যে 180টি ক্ষেত্রেই পুলিশ সমাধান করেছে । KPHB-র পুলিশ সিআই লক্ষ্মী নারায়ণ দাবি করেছেন, তাঁরা সব নিখোঁজ অভিযোগগুলির সমাধান করবেন, দ্রুততার সঙ্গে । বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, 18 বছর হওয়ার পর অনেক মেয়েই পালিয়ে গেছে । কিছু আবার বিয়ের পর বাড়ি ফিরে আসে, এ সব ক্ষেত্রে পুরুষবন্ধুটি তাকে ঠকানোর পর বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে আসতে হয় মেয়েটিকে । বিয়ে করার জন্য পালিয়ে যাওয়া এবং পরে ফিরে আসার পর পুলিশের তরফে বিশেষ কাউন্সেলিং করার ব্যবস্থা করা হয়, যাতে মেয়েটিকে ঘরে ফিরিয়ে নেওয়া হয়, সে জন্যও উদ্যোগ নেয় পুলিশ । কোনও পরিবারের কাছে কোনওরকম হুমকি এলেই পুলিশের তরফে নিরাপত্তার দ্রুত ব্যবস্থা করা হয় । বাড়ি ফিরিয়ে আনার পর ওই যুবতির নিখোঁজের সঙ্গে যে বা যারা যুক্ত তাদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ।

হায়াতনগর পুলিশ সূত্রে খবর, নিখোঁজদের অধিকাংশই বৃদ্ধাবাস এবং অনাথ আশ্রমের । প্রবীণ নাগরিক এবং যাঁরা কানে শুনতে পান না, তাঁদের খুঁজে বের করা খুবই সমস্যার । হায়াতনগর পুলিশ রেল লাইন এবং বাস স্ট্যান্ড থাকা শিশুদের অনাথ আশ্রমে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে । যাদের মধ্যে বেশির ভাগই বাড়ি থেকে পালিয়েছিল, বাড়ি পালানোর কিছুদিনের মধ্যেই তাদের সন্ধান পাওয়া যায় । মালকাজিগির পুলিশ সূত্রে খবর, 2019 সালে 134 টি নিখোঁজ মামলা দায়ের করা হয়েছিল । এই নিখোঁজদের মধ্যে 20 শতাংশ মহিলা, 95 শতাংশকে নিরাপদে বাড়ি ফেরানো সম্ভব হয়েছে । 2014 সালে বালানগর পুলিশের কাছে 303টি নিখোঁজ মামলা দায়ের করা হয়েছিল । এর মধ্যে 286টির সমাধান হয়ে গেছে । 17টি ক্ষেত্রে এখনও কোনও সমাধান মেলেনি । এই থানায় 40-70 শতাংশ অভিযোগই নিখোঁজের । বালানগরের সিআই ওয়াইউদ্দিন জানিয়েছেন, প্রতিটি মামলার ক্ষেত্রে আসল কারণ- উদ্দেশ্য জেনেই তা দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে ।

গত চার বছরে জুবিলি হিলসে এই ধরণের নিখোঁজের অভিযোগ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে । 90 শতাংশ ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে । গত চার বছরে 546টি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল । জুবিলি হিলসের সিআই পি বালাভানতাইয়া জানিয়েছেন, অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আধুনির প্রযুক্তি ব্যবহার করার সুফল পেয়েছেন তাঁরা । বানজারা হিলসের অবশ্য গত চার বছরে নিখোঁজের অভিযোগ বেশি জমা পড়েছে ।গত চার বছরে 735 টি অভিযোগ জমা হয়েছে । পুলিশের দাবি, এর মধ্যে 90 শতাংশের সমাধান করা সম্ভব হয়েছে । বাচুপল্লী পুলিশ সূত্রে খবর, গত দুই বছরে 194টি অভিযোগ জমা পড়েছে । 96 জনের নিখোঁজ হওয়ার খবর রয়েছ 2018 সালে । এর মধ্যে 51 জন মহিলা এবং 12 জন যুবতি । 2019 সালে 54 জন পুরুষ, 39 জন মহিলা, 4 জন যুবক এবং এক জন যুবতি । 98টি নিখোঁজ অভিযোগের মধ্যে 81 জনের সন্ধান পেতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ ।

কুতবুল্লাপুর মন্ডলের দান্ডিগাল থানায় গত চার বছরে 576টি নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করা হয় । 2018 সাল পর্যন্ত 78টির সমাধান হয়নি । বাবা-মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে । শেষ দুই বছরে 19টি অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে, এর মধ্যে তিনটির কোনও অগ্রগতি হয়নি । দান্ডিগালের এসআই শেখর রেড্ডি জানিয়েছেন, অভিযোগ দায়েরের এক বছরর পরও যে অভিযোগগুলির ক্ষেত্রে খুব একটা অগ্রগতি ঘটেনি, তেমন অভিযোগগুলি বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে । তিনি আরও যোগ করেছেন, পরিস্থিতি বর্তমানে অনেকটাই পাল্টে গেছে । বাবা-মায়ের অভিযোগের পরও বিস্তারিত অনুসন্ধান করে অভিযোগ নেওয়া হচ্ছে । পেশায় নিরাপত্তা রক্ষী 45 বছরের মহম্মদ ইব্রাহিম 2016 সালের 13 ফেব্রুয়ারি কাজের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন । গত তিন বছরে তাঁর কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি । তাঁর স্ত্রী সালেমা বেগম চন্দ্রয়ানা গুট্টা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, কিন্তু, তিন বছর পরও কোনও রকম হদিশ পাননি । 2016 সালের 20 ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি নিখোঁজ, সে দিন শেষ বার ফোনে স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছিলেন সালেমার । তার পর থেকেই ফোন বন্ধ । পুলিশ অনেক খুঁজেও এখনও কোনও সন্ধান দিতে পারেনি । সব চেষ্টাই আপাতত ব্যর্থ ।

পরিবারটি সুন্দর জীবনযাপনের স্বপ্ন নিয়ে দিল্লিতে এসেছিল । 16 বছরের মেয়েটি তার অবসর সময়ে চায়ের দোকানের কাজে মাকে সাহায্য করত । একদিন রাতে হঠাত্ই মেয়েটি নিখোঁজ হয়ে গেল । অনেক খুঁজেও মেয়েকে পেলেন না মা । খালি হাতেই ফিরে আসতে হল বাড়িতে । গরচিবোলি থানায় রাত 11টা নাগাদ দায়ের করা হল একটি নিখোঁজ ডায়েরি । পর দিন বাড়িতে পৌঁছল একটি ভয়ঙ্কর খবর । পুলিশ ওই মেয়েটির পরিবারকে জানায়, একটি নির্জন স্থানে একটি দেহ পাওয়া গেছে । মা গিয়ে দেখতে পান মেয়ের নিথর দেহটি পড়ে আছে, দেহে একাধিক আঘাতের চিহ্ন ।

দিন কয়েক আগে শামসাবাদে যুবতি চিকিত্সক দিশাকে ধর্ষণের পর খুন করা হয় । পুড়িয়ে দেওয়া হয় । সেই ভয়ঙ্কর দিনে রাত নটা নাগাদ যুবতি তাঁর বোনকে ফোন করে তাঁর পরিস্থিতির কথা জানয়েছিলেন । অপরাধীরা তার পিছু ধাওয়া করায় ভয় পেয়েছিলেন চিকিত্সক । এর কয়েক মিনিটের মধ্যেই যুবতির ফোন বন্ধ হয়ে যায় । যুবতির চিন্তিত পরিবার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানাতে যায় । কিন্তু, পুলিশের গাফিলতির জন্য দিশার দগ্ধ দেহ উদ্ধার হয় । সমাজের সর্বস্তর এক বাক্যে স্বীকার করে নেয়, পুলিশ একটু সক্রিয় হতে পারলে পরিস্থিতি কোনওভাবেই এমনটি হতো না ।

প্রতিটি থানার সামনে নিখোঁজ ব্যক্তিদের একটি বোর্ড ঝোলানো থাকে । কোনও কোনও ক্ষেত্রে আবার নিখোঁজ ব্যক্তিটির পরিবারের তরফে আর্থিক পুরষ্কারের কথাও ঘোষণা করা হয় । হায়দরাবাদের মতো বড় শহর, যেখানে প্রতিদিন বহু মানুষ বাড়ির বাইরে বের হন । কেউ বের হন ব্যক্তিগত কাজে, কেউ আবার পারিবারিক কাজে । 11 জন অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক এবং 14 জন মহিলা-সহ শুধুমাত্র নভেম্বর মাসেই নিখোঁজ হয়েছেন 40 জন । পুলিশ অনেক খুঁজলেও তাদের কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি । কেবল মাত্র জুবলি হিলসের থানায় এক মহিলা অভিযোগ করেছিলেন তাঁর স্বামী এবং দুই সন্তান নিখোঁজ হয়ে গেছে, যদিও পুলিশ ওই ব্যক্তকে খুঁজে পায় । আবার এক বাবা থানার অভিযোগ করেছিলেন , তাঁর মেয়েকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না , এক মাস এর কেটে গেলেও মেয়েটির কোনও এখনও দিতে পারেনি ।

জুনের 1 থেকে 10 তারিখের মধ্যে 540 জন নিখোঁজের খবর ছিল । এর মধ্যে 303 জন হায়দরাবাদ, সায়বারাবাদ এবং রিচাকোন্ডা এলাকা থেকে । এর মধ্যে 276 জন মহিলা, 55 জন যুবতি, 26 জন যুবক এবং 183 জন পুরুষ । 222 জনের খোঁজ মিলেছে । নভেম্বর মাসে এই তিন পুলিশ স্টেশনে 38-40টি নিখোঁজ ডায়েরি করা হয়েছিল । দেখে গেছে, গড়পরতা প্রতিদিন 60 জন করে নিখোঁজ হয়েছে, যার বেশির ভাগেই গ্রেটার হায়দরাবাদ এলাকা থেকে । তারা কী শেষ হয়ে যাচ্ছে ? নাকি তারা কোনও দুর্নীতিমূলক কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়ছে ? মেয়েরা সুস্থ ভাবে বাড়ি ফেরা না পর্যন্ত শান্তিতে থাকতে পারেন না বাবা-মায়েরা । নিখোঁজ হওয়া মহিলা-যুবতিদের মধ্যে মাত্র 50 শতাংশের খোঁজ পাওয়া গেছে । পাচার রোখা এই মুহূর্তে পুলিশের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ । এ কাজের জন্য রীতিমতো পুলিশের টহল চলছে । দেখা গেছে, চাকরি এবং বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়েও অনেক ক্ষেত্রে পাচার করা হচ্ছে ।

KPHB-র বাসিন্দা রামানা তাঁর মানসিক প্রতিবন্ধী ভাইকে খুঁজে চলেছেন, যে গত 24 জুন থেকে নিখোঁজ । দুর্গি বালেশ্বরী পেশায় একজন নিরাপত্তা কর্মী । ওই একই এলাকার বাসিন্দা । গত 23 সেপ্টেম্বর থেকে তাঁর 17 বছরের মূকবধির ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছেন না । বেশ কয়েকবার থানায় গেছেন, অভিযোগ করেছেন, কিন্তু, কোনও ফল পাওয়া যায়নি । KPHB এলাকার অপর এক বাসিন্দা ভি এস রাজু । গত 21 জুন থেকে তাঁর মানসিক প্রতিবন্ধী বাবাকে খুঁজে পাচ্ছেন না । এখনও পর্যন্ত যার কোনও খবর নেই । ইন্দিরা নগরের বাসিন্দা 40 বছরের গীতা একজন দৈনিক মজুরির শ্রমিক । 2017 সালের মে মাসে বাড়ি থেকে কাজে বেড়িয়েছিলেন, কিন্তু এখনও পর্যন্ত বাড়ি ফেরেননি । ওনার মা জয়াম্মা বালানগর থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, কিন্তু, এখনও পর্যন্ত কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি । রাজু কলোনির বাসিন্দা 36 বছরের সঞ্জীবা রাও, তিন মাস ধরে নিখোঁজ । তাঁর স্ত্রী করুণা শ্রী থানায় অভিযোগ করেও কোনও ফল পাননি ।

লালাগুডা পুলিশ নিখোঁজের অভিযোগগুলি সমাধান করার ক্ষেত্রে একটা দৃষ্টান্ত তৈরি করেছে । কোনও সূত্র না থাকলেও তারা অতি সক্রিয়ার সঙ্গে বিষয়গুলির দিকে নজর দিয়েছে । লালাপেট, শান্তি নগর, চন্দ্রবাবু নগর, সত্য নগর, ইন্দিরা নগর, লালাগুডা এবং মেত্থুগুডার মতো জায়গায় বেশ কয়েকটি ভাগে ভাগ ভাগ হয়ে নজরদারি শুরু করে, এক অপ্রত্যাশিত দৃষ্টান্তও স্থাপন করে । 2016 থেকে 2019 সালের মধ্যে ওই থানায় নথিভুক্ত 69টি নিখোঁজ অভিযোগের মধ্যে একটি বাদে বাকি সবগুলির সমাধান করা হয়েছে । 68 জন মহিলাকে নিরাপদে তাঁদের পরিবারের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয় ।

KPHB কলোনির একটি পরিসংখ্যান এক্ষেত্রে উল্লেখ করা যায় । দেখা গেছে, এখান থেকে অনেক মহিলা স্বেচ্ছাতেই তাঁদের ঘর ছেড়েছেন । কিছু ক্ষেত্রে মহিলারা ঘর ছাড়ার আগে চিঠি লিখে বিস্তারিত জানিয়েছেন । মহিলা চিকিত্সকের ভয়ঙ্কর হত্যাকাণ্ডের পর বাবা-মায়েরা তাঁদের মেয়েদের নিরাপত্তা নিয়ে অত্যন্ত অতঙ্কিত । 2017 সালের KPHB কলোনি থেকে 191টি নিখোঁজ ঘটনার অভিযোগ করা হয়েছিল, এর মধ্যে 180টি ক্ষেত্রেই পুলিশ সমাধান করেছে । KPHB-র পুলিশ সিআই লক্ষ্মী নারায়ণ দাবি করেছেন, তাঁরা সব নিখোঁজ অভিযোগগুলির সমাধান করবেন, দ্রুততার সঙ্গে । বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা গেছে, 18 বছর হওয়ার পর অনেক মেয়েই পালিয়ে গেছে । কিছু আবার বিয়ের পর বাড়ি ফিরে আসে, এ সব ক্ষেত্রে পুরুষবন্ধুটি তাকে ঠকানোর পর বাধ্য হয়ে বাড়ি ফিরে আসতে হয় মেয়েটিকে । বিয়ে করার জন্য পালিয়ে যাওয়া এবং পরে ফিরে আসার পর পুলিশের তরফে বিশেষ কাউন্সেলিং করার ব্যবস্থা করা হয়, যাতে মেয়েটিকে ঘরে ফিরিয়ে নেওয়া হয়, সে জন্যও উদ্যোগ নেয় পুলিশ । কোনও পরিবারের কাছে কোনওরকম হুমকি এলেই পুলিশের তরফে নিরাপত্তার দ্রুত ব্যবস্থা করা হয় । বাড়ি ফিরিয়ে আনার পর ওই যুবতির নিখোঁজের সঙ্গে যে বা যারা যুক্ত তাদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ।

হায়াতনগর পুলিশ সূত্রে খবর, নিখোঁজদের অধিকাংশই বৃদ্ধাবাস এবং অনাথ আশ্রমের । প্রবীণ নাগরিক এবং যাঁরা কানে শুনতে পান না, তাঁদের খুঁজে বের করা খুবই সমস্যার । হায়াতনগর পুলিশ রেল লাইন এবং বাস স্ট্যান্ড থাকা শিশুদের অনাথ আশ্রমে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে । যাদের মধ্যে বেশির ভাগই বাড়ি থেকে পালিয়েছিল, বাড়ি পালানোর কিছুদিনের মধ্যেই তাদের সন্ধান পাওয়া যায় । মালকাজিগির পুলিশ সূত্রে খবর, 2019 সালে 134 টি নিখোঁজ মামলা দায়ের করা হয়েছিল । এই নিখোঁজদের মধ্যে 20 শতাংশ মহিলা, 95 শতাংশকে নিরাপদে বাড়ি ফেরানো সম্ভব হয়েছে । 2014 সালে বালানগর পুলিশের কাছে 303টি নিখোঁজ মামলা দায়ের করা হয়েছিল । এর মধ্যে 286টির সমাধান হয়ে গেছে । 17টি ক্ষেত্রে এখনও কোনও সমাধান মেলেনি । এই থানায় 40-70 শতাংশ অভিযোগই নিখোঁজের । বালানগরের সিআই ওয়াইউদ্দিন জানিয়েছেন, প্রতিটি মামলার ক্ষেত্রে আসল কারণ- উদ্দেশ্য জেনেই তা দ্রুত সমাধান করা হচ্ছে ।

গত চার বছরে জুবিলি হিলসে এই ধরণের নিখোঁজের অভিযোগ উল্লেখযোগ্য ভাবে কমেছে । 90 শতাংশ ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান করা হয়েছে । গত চার বছরে 546টি অভিযোগ দায়ের হয়েছিল । জুবিলি হিলসের সিআই পি বালাভানতাইয়া জানিয়েছেন, অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আধুনির প্রযুক্তি ব্যবহার করার সুফল পেয়েছেন তাঁরা । বানজারা হিলসের অবশ্য গত চার বছরে নিখোঁজের অভিযোগ বেশি জমা পড়েছে ।গত চার বছরে 735 টি অভিযোগ জমা হয়েছে । পুলিশের দাবি, এর মধ্যে 90 শতাংশের সমাধান করা সম্ভব হয়েছে । বাচুপল্লী পুলিশ সূত্রে খবর, গত দুই বছরে 194টি অভিযোগ জমা পড়েছে । 96 জনের নিখোঁজ হওয়ার খবর রয়েছ 2018 সালে । এর মধ্যে 51 জন মহিলা এবং 12 জন যুবতি । 2019 সালে 54 জন পুরুষ, 39 জন মহিলা, 4 জন যুবক এবং এক জন যুবতি । 98টি নিখোঁজ অভিযোগের মধ্যে 81 জনের সন্ধান পেতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ ।

কুতবুল্লাপুর মন্ডলের দান্ডিগাল থানায় গত চার বছরে 576টি নিখোঁজের অভিযোগ দায়ের করা হয় । 2018 সাল পর্যন্ত 78টির সমাধান হয়নি । বাবা-মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে । শেষ দুই বছরে 19টি অপহরণের অভিযোগ দায়ের হয়েছে, এর মধ্যে তিনটির কোনও অগ্রগতি হয়নি । দান্ডিগালের এসআই শেখর রেড্ডি জানিয়েছেন, অভিযোগ দায়েরের এক বছরর পরও যে অভিযোগগুলির ক্ষেত্রে খুব একটা অগ্রগতি ঘটেনি, তেমন অভিযোগগুলি বিশেষ ভাবে নজর দেওয়া হচ্ছে । তিনি আরও যোগ করেছেন, পরিস্থিতি বর্তমানে অনেকটাই পাল্টে গেছে । বাবা-মায়ের অভিযোগের পরও বিস্তারিত অনুসন্ধান করে অভিযোগ নেওয়া হচ্ছে । পেশায় নিরাপত্তা রক্ষী 45 বছরের মহম্মদ ইব্রাহিম 2016 সালের 13 ফেব্রুয়ারি কাজের জন্য বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন । গত তিন বছরে তাঁর কোনও হদিশ পাওয়া যায়নি । তাঁর স্ত্রী সালেমা বেগম চন্দ্রয়ানা গুট্টা থানায় অভিযোগ দায়ের করেছিলেন, কিন্তু, তিন বছর পরও কোনও রকম হদিশ পাননি । 2016 সালের 20 ফেব্রুয়ারি থেকে তিনি নিখোঁজ, সে দিন শেষ বার ফোনে স্বামীর সঙ্গে কথা হয়েছিলেন সালেমার । তার পর থেকেই ফোন বন্ধ । পুলিশ অনেক খুঁজেও এখনও কোনও সন্ধান দিতে পারেনি । সব চেষ্টাই আপাতত ব্যর্থ ।

New Delhi, Dec 09 (ANI): Full-service carrier Vistara signed a codeshare agreement with Lufthansa to strengthening their existing interline partnership. The two airlines are planning to soon expand the scope of the agreement, enabling frequent fliers of both airlines to earn miles and points when travelling on each other's networks. As part of the agreement, Lufthansa will add its 'LH' designator code to nearly 18 Vistara-operated flights every day covering 10 Indian cities New Delhi, Ahmedabad, Bengaluru, Chennai, Goa, Hyderabad, Kolkata, Kochi, Mumbai and Pune. Both airlines have an interline and through check-in agreement under which customers can seamlessly connect from Vistara-operated domestic flights in India to Lufthansa-operated flights to both of its hubs in Frankfurt, Munich and beyond. Using the through check-in facility, customers get their boarding passes at the first point of departure for all the travel sectors, both domestic and international, with their baggage checked through to the final destination.

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.