মারাত্মক বিপর্যয় হবে, যদি না আমরা এখনই জেগে উঠি!
প্রাকৃতিক সম্পদের ক্ষেত্রে দ্রুত পরিবেশগত পরিবর্তন হওয়ার ফলে সারা বিশ্বের জনসংখ্যা ক্রমশ কমতে শুরু করেছে ৷ বিশ্বের জনসংখ্যা বর্তমানে প্রায় 780 কোটি । এর মধ্যে 220 কোটি মানুষের কাছে সুরক্ষিত পানীয় জল নেই । 420 কোটি মানুষের কাছে উপযুক্ত নিকাশির সুবিধাও নেই ৷ ইউনাইটেড নেশনস ওয়ার্ল্ড ওয়াটার ডেভলপমেন্ট কাউন্সিলের একটি প্রতিবেদন (2020) অনুযায়ী, পরিবেশে যে বদল ঘটছে তাতে গুণমান সম্পন্ন জল পাওয়ার ক্ষেত্রে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হবে ৷ ওই প্রতিবেদনে এটাও সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে বিশ্বের দেশগুলি যদি এখনই জেগে না ওঠে এবং UNO-র দেখানো পথে এগিয়ে সামগ্রিক উন্নয়ন না করে, তাহলে 2030 সালের মধ্যে জলকে সুরক্ষিত করা এবং নিকাশির পরিস্থিতি ভালো করার লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হবে না ৷
প্রতিটি দেশের জন্যই সমস্যা !
গত একশো বছরে জল পানের পরিমাণ ছয়গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ একদিকে জনসংখ্যা বিস্ফোরণের মতো বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ অন্যদিকে জলবায়ুর পরিবর্তনের জন্য সুপার সাইক্লোন, বন্যা, খরার মতো সমস্যা তৈরি হয়েছে এবং যার ফলে বিশ্বের দেশগুলি সমস্যার মুখে পড়েছে ৷ এর ফলে জলের উপর লক্ষ্যণীয় ভাবে চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ আসলে এই সময়ে অনেক দেশই জল সংকটের সমস্যায় ভুগতে শুরু করেছে ৷ ওয়ার্ল্ড রিসোর্স কাউন্সিলের পরিসংখ্যান অনুযায়ী (2019), যে সমস্ত দেশ জল সংকটে ভুগছে, তার মধ্যে কাতারের অবস্থান একেবারে প্রথমে রয়েছে ৷ আর ভারতের অবস্থান 13 নম্বর স্থানে ৷ বিশেষজ্ঞরা এটা স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে জলের ঘাটতির পরিমাণে হয়তো হেরফের হতে পারে ৷ কিন্তু ভবিষ্যতে সারা বিশ্বের সমস্ত দেশকেই জলের অভাবে ভুগতে হবে ৷ ফলে জলের অভাব সারা বিশ্বের সমস্ত দেশের সাধারণ একটি অ্যাজেন্ডা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ মোট যে পরিমাণ জলের প্রয়োজন হয়, তার মধ্যে কৃষিক্ষেত্রেই দরকার পড়ে 69 শতাংশ ৷ শিল্পক্ষেত্র, জ্বালানি সংক্রান্ত সামগ্রী, মৎস্যক্ষেত্রগুলি জলের অভাবে খারাপ প্রভাব ফেলে ৷ কৃষি উন্নয়ন, UNO-র আন্তর্জাতিক আর্থিক তহবিল তাদের একটি প্রতিবেদনের মাধ্যমে স্পষ্ট করে দিয়েছে যে ইতিমধ্যেই অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে ৷ আর সারা বিশ্বকে একসঙ্গে এখন সঠিক লক্ষ্য স্থির করে কাজ করতে হবে ৷
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে জলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ এর ফলে জলে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গিয়েছে এবং জলের গুণগত মান আরও খারাপ হয়ে গেছে ৷ প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্টি হওয়া জলাশয় এবং হ্রদ নিজে থেকেই জল পরিষ্কার করার শক্তি হারিয়ে ফেলেছে ৷ খরা এবং দুর্ভিক্ষের সময় দূষণ হয় এমন পদার্থ বৃদ্ধি পায় এবং এর ফলে জল দূষিত হয়ে যায় ৷ এই ধরনের খারাপ প্রভাবের জন্য খাদ্যশস্য উৎপাদন কমে যায় ৷ জলবায়ু, শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন, রোগ এবং অর্থনৈতিক সংকটের জন্য মানুষ এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় চলে যান ৷ পরিস্থিতি এমন খারাপ জায়গায় চলে গিয়েছে যে মানুষ সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না ৷ শুধু তাই নয়, বন ও জলাভূমি বিলুপ্ত হওয়ার কারণে জীববৈচিত্র ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ৷
বৃষ্টিপাতে যে মারাত্মক তারতম্য তৈরি হয়েছে জলবায়ুর পরিবর্তনের কারণে, তাতে বিভিন্ন ধরনের অনির্দিষ্টতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে ৷ ক্রান্তীয় অঞ্চলে জলের পরিমাণ কমতে দেখা যাচ্ছে ৷ ভারতও এই অঞ্চলের মধ্যে রয়েছে ৷ পৃথিবীর মানচিত্র থেকে কিছু অঞ্চল অদৃশ্য হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে । জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তুষার নির্ভর নদীগুলির উপর পড়বে । সারা বিশ্বের দেশগুলির কৌশলগত পরিবর্তনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে দুইটি কৌশলকে অবলম্বন করে ৷ এরই অংশ হিসেবে তাদের জলবায়ুর সম্ভাব্য পরিবর্তন সম্পর্কে বৈজ্ঞানিকভাবে অনুমান করার জন্য সক্ষম হতে হবে ৷ এর ফলে সম্ভাব্য জলবায়ু পরিবর্তন সম্পর্কে প্রযুক্তিগত ভাবে এবং বৈজ্ঞানিক অনুমান করা সম্ভব হবে । এর ফলে আমরা এই পরিবর্তনের তীব্রতা আগে থেকেই অনুমান করতে পারব ৷ আর প্রয়োজনীয় সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে । একমাত্র সুরাহা তখনই মিলতে পারে, যখন কার্বন ডাই অক্সাইড এবং গ্রিন হাউস গ্যাস কমাতে পদক্ষেপ করা হবে ৷ এটি বড় ভৌগোলিক অঞ্চলের সঙ্গে সম্পর্কিত । এর মধ্যে জলের সম্পদের ব্যবহার, সেগুলির পুনর্ব্যবহারের ব্যবস্থা, নর্দমা তৈরির ব্যবস্থাপনা করার কাজ ইত্যাদি থাকবে । এর কারণ হল গ্রিন হাউস গ্যাস 3 থেকে 7 শতাংশ নর্দমা থেকে উৎপন্ন হয় ৷
পরিবেশের জন্য চিকিৎসা
নর্দমার জল থেকে যে মিথেন গ্যাস নির্গত হয়, তা খুবই শক্তিশালী গ্রিন হাউস গ্যাস ৷ সারা বিশ্বে এটা হিসেব করে দেখা গিয়েছে যে নদর্মা থেকে যে পরিমাণ জল বের হয়ে পরিবেশের সঙ্গে মিশে যায়, তার 80 থেকে 90 শতাংশ কোনও রকম শোধন হয় না ৷ জ়র্ডন, মেক্সিকো, পেরু, থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলিতে জৈব উপাদানের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতি ব্যবহার করে মিথেন গ্যাস বের করে নেওয়া হয় এবং প্রয়োজনীয় শক্তি উৎপাদন করা হয় ৷ এর ফলে কার্বন ডাই অক্সাইড এবং গ্রিন হাউস গ্যাস কয়েক হাজার টন কমে যায় ৷ একইভাবে, রক্ষণশীল কৃষি পদ্ধতি এবং জলাভূমি সুরক্ষা অনুসরণ করে, পরিবেশের আর্দ্রতা সংরক্ষণ করা যেতে পারে । দূষিত জলকে আংশিক ভাবে পুনর্ব্যবহার এবং ঠিক করার মাধ্যমে জলের মধ্যে থাকা বর্জ্য পদার্থ মারাত্মকভাবে কমে যায় । জলের উৎস এবং নিকাশি পরিষেবার মান ঠিক রাখার জন্য স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলিকে আর্থিক ভাবে সাহায্য করতে হবে সরকারকে ৷