ETV Bharat / bharat

কীভাবে কাজ করে কোরোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন

author img

By

Published : May 8, 2020, 9:13 PM IST

96জনেরও বেশি বিজ্ঞানী প্রাথমিক পর্যায়ে ভ্যাকসিন বিকাশের গবেষণা করছেন । ছ'টি সংস্থা ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করেছে । আরও কয়েকজন প্রাণীদের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন । এই জীবন রক্ষাকারী ভ্যাকসিনগুলি তৈরির জন্য কী কী লাগে ? তারা কীভাবে কাজ করে ?

কীভাবে কাজ করে কোরোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন
কীভাবে কাজ করে কোরোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন

মহামারী বন্ধ করার সর্বোত্তম উপায় হল একটি ভ্যাকসিন তৈরি করা । এই ভ্যাকসিন তৈরির জন্য প্রচলিত ও উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা চলছে । SARS-CoV-2 থেকে মানব সভ্যতাকে বাঁচাতে যুদ্ধের গতিতে কাজ করছে বিজ্ঞানী, বিশ্ববিদ্যালয় ও ফার্মা সংস্থাগুলি । 96জনেরও বেশি বিজ্ঞানী প্রাথমিক পর্যায়ে ভ্যাকসিন বিকাশের গবেষণা করছেন । ছ'টি সংস্থা ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করেছে । আরও কয়েকজন প্রাণীদের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন । এই জীবনদায়ী ভ্যাকসিনগুলি তৈরির জন্য কী কী প্রয়োজন ? তারা কীভাবে কাজ করে ?

লাইভ ভাইরাস ভ্যাকসিনগুলি ভাইরাসের দুর্বল (ক্ষুদ্র) দিকগুলি ব্যবহার করে । হাম, মাম্পস ও রুবেলা ভ্যাকসিন এর উদাহরণ । কমপক্ষে সাতজন উদ্ভাবক লাইভ ভাইরাস-সহ সম্ভাব্য কোরোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করছেন । তবে, তাঁদের অব্শ্যই বিস্তৃত সুরক্ষার পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয় । নিউইয়র্ক ভিত্তিক ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা কোডজেনিক্স লাইভ ভ্যাকসিনের বিকাশের জন্য ভারতের পুনের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে । একটি নিষ্ক্রিয় ভাইরাস একটি পরিবেশে বেড়ে ওঠে, তারপর রোগ উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে । এই জাতীয় ভাইরাস থেকে তৈরি ভ্যাকসিনকে নিষ্ক্রিয় বা কিল্ড ভ্যাকসিন বলা হয় ।

বেজিংয়ের সিনোভ্যাক বায়োটেক মানুষের শরীরে নিষ্ক্রিয় কোরোনা ভাইরাস ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার অনুমোদন পেয়েছিল । জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড ভ্যাকসিন নামে আরও এক ধরনের ভ্যাকসিন রয়েছে, যা ইঞ্জিনিয়ার্ড RNA বা DNA ব্যবহার করে যাতে স্পাইক (এস) প্রোটিনের অনুলিপি তৈরির জন্য নির্দেশ রয়েছে । তবে দুঃখের বিষয় হল, এই জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড ভ্যাকসিনগুলির কোনওটিই মানুষের শরীরে ব্যবহারের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত নয় । এছাড়া, 25টি গ্রুপ ভেক্টর ভ্যাকসিনগুলির স্প্লিনিকাল মূল্যায়নের রিপোর্ট করেছে । একটি ভ্যাকসিন যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে প্যাথোগেনের টুকরোগুলিকে স্থানান্তর করতে একটি দুর্বল ভাইরাসকে ব্যবহার করে । আরও 32টি গবেষণা গ্রুপ এস-প্রোটিনভিত্তিক কোরোনা ভাইরাস ভ্যাকসিনের উপর পরীক্ষা চালাচ্ছে ।

nCoV-র স্ট্রাকচারাল প্রোটিনগুলির মধ্যে এস-প্রোটিন হল প্রধান অ্যান্টিজেনিক উপাদান যা হোস্টের ইমিউন প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ি । তাই বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, এস-প্রোটিন ভ্যাকসিন ও অ্যান্টিভাইরাল বিকাশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য । এদিকে, আরও পাঁচটি গ্রুপ ভ্যাকসিনের মতো কণা (VLP) ভ্যাকসিন বিকাশে কাজ করছে । VLP হল মাল্টিপ্রোটিন স্ট্রাকচার যা অথেনটিক ন্যাটিভ ভাইরাসের গঠন ও নিশ্চয়তাকে নকল করে তবে ভাইরাল জিনোমের অভাব থাকে, যা তাদের একটি সুলভ ও নিরাপদ বিকল্প হিসাবে পরিণত করে । ফর্মালডিহাইড ও জলের মিশ্রণ ব্যবহার করে কিছু প্যাথোজেনের টক্সিন নিষ্ক্রিয় করে একটি টক্সয়েড ভ্যাকসিন তৈরি করা হয় । এই মৃত টক্সিনগুলি পরে নিরাপদে শরীরে প্রবেশ করানো হয় । আটটি টক্সয়েড ভ্যাকসিন ক্লিনিকাল পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছে ।

SARS-CoV-2-এর ঝিল্লিতে স্পাইক (S) প্রোটিন রয়েছে । এই এস-প্রোটিনগুলি শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে উপস্থিত ACE2 রিসেপ্টরগুলিতে ঝুলে থাকে এবং এটি আমাদের নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে । হোস্ট সেলের সঙ্গে একবার এই ভাইরাস নিজেকে যুক্ত করলে এটি তার জিনগত উপাদান (RNA) ওই সেলের মধ্যে প্রবেশ করাতে শুরু করে । পাশাপাশি ওই হোস্ট সেলের প্রতিলিপি তৈরি করে । যে কোনও ভ্যাকসিনের লক্ষ্য হল, যে কোনও ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নিত করা এবং তা নষ্ট করার জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সাহায্য করে । এই কাজ করার জন্য ভাইরাস থেকে কিছু অণু (যাকে অ্যান্টিজেন বলা হয়) শরীরের মধ্যে প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়া শুরু করতে হবে । প্রতিরোধ ক্ষমতা একবার এই অ্যান্টিজেনগুলিকে চিহ্নিত করার পর অ্যান্টিবডিগুলি এই ভাইরাসের কোষের ঝিল্লিতে বিশেষ প্রোটিন সংযুক্ত করে যাতে T-সেলগুলি তাদের ধ্বংস করতে পারে । সহায়ক T-সেলগুলি ইনজেক্টেড অ্যান্টিজেনগুলি ধ্বংস করতে অ্যান্টিবডিগুলি ও ম্যাক্রোফেজ়গুলি সক্রিয় করতে B-সেলগুলিকে আগে সক্রিয় করে । তারা সংক্রমিত হোস্ট সেলগুলি নষ্ট করতে সাইটোটক্সিক T-সেলকে সক্রিয় করতে সহায়তা করে । T ও B-সেলগুলি মেমরি সেল তৈরি করে যা একই প্যাথোজেন (এই ক্ষেত্রে ভাইরাস) মনে রাখে । যদি একই ভাইরাস পুনরায় দেখা যায়, প্রতিরোধ ক্ষমতা তাৎক্ষণিকভাবে অ্যান্টিজেনগুলি চিহ্নিত করতে পারে ও দেহের ভিতরে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগে সেগুলিকে আক্রমণ করবে ।

মহামারী বন্ধ করার সর্বোত্তম উপায় হল একটি ভ্যাকসিন তৈরি করা । এই ভ্যাকসিন তৈরির জন্য প্রচলিত ও উদ্ভাবনী প্রচেষ্টা চলছে । SARS-CoV-2 থেকে মানব সভ্যতাকে বাঁচাতে যুদ্ধের গতিতে কাজ করছে বিজ্ঞানী, বিশ্ববিদ্যালয় ও ফার্মা সংস্থাগুলি । 96জনেরও বেশি বিজ্ঞানী প্রাথমিক পর্যায়ে ভ্যাকসিন বিকাশের গবেষণা করছেন । ছ'টি সংস্থা ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরু করেছে । আরও কয়েকজন প্রাণীদের উপর পরীক্ষা নিরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন । এই জীবনদায়ী ভ্যাকসিনগুলি তৈরির জন্য কী কী প্রয়োজন ? তারা কীভাবে কাজ করে ?

লাইভ ভাইরাস ভ্যাকসিনগুলি ভাইরাসের দুর্বল (ক্ষুদ্র) দিকগুলি ব্যবহার করে । হাম, মাম্পস ও রুবেলা ভ্যাকসিন এর উদাহরণ । কমপক্ষে সাতজন উদ্ভাবক লাইভ ভাইরাস-সহ সম্ভাব্য কোরোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করছেন । তবে, তাঁদের অব্শ্যই বিস্তৃত সুরক্ষার পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয় । নিউইয়র্ক ভিত্তিক ফার্মাসিউটিক্যাল সংস্থা কোডজেনিক্স লাইভ ভ্যাকসিনের বিকাশের জন্য ভারতের পুনের সিরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে অংশীদার হয়েছে । একটি নিষ্ক্রিয় ভাইরাস একটি পরিবেশে বেড়ে ওঠে, তারপর রোগ উৎপাদন ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে । এই জাতীয় ভাইরাস থেকে তৈরি ভ্যাকসিনকে নিষ্ক্রিয় বা কিল্ড ভ্যাকসিন বলা হয় ।

বেজিংয়ের সিনোভ্যাক বায়োটেক মানুষের শরীরে নিষ্ক্রিয় কোরোনা ভাইরাস ভ্যাকসিন প্রয়োগ করার অনুমোদন পেয়েছিল । জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড ভ্যাকসিন নামে আরও এক ধরনের ভ্যাকসিন রয়েছে, যা ইঞ্জিনিয়ার্ড RNA বা DNA ব্যবহার করে যাতে স্পাইক (এস) প্রোটিনের অনুলিপি তৈরির জন্য নির্দেশ রয়েছে । তবে দুঃখের বিষয় হল, এই জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড ভ্যাকসিনগুলির কোনওটিই মানুষের শরীরে ব্যবহারের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত নয় । এছাড়া, 25টি গ্রুপ ভেক্টর ভ্যাকসিনগুলির স্প্লিনিকাল মূল্যায়নের রিপোর্ট করেছে । একটি ভ্যাকসিন যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে প্যাথোগেনের টুকরোগুলিকে স্থানান্তর করতে একটি দুর্বল ভাইরাসকে ব্যবহার করে । আরও 32টি গবেষণা গ্রুপ এস-প্রোটিনভিত্তিক কোরোনা ভাইরাস ভ্যাকসিনের উপর পরীক্ষা চালাচ্ছে ।

nCoV-র স্ট্রাকচারাল প্রোটিনগুলির মধ্যে এস-প্রোটিন হল প্রধান অ্যান্টিজেনিক উপাদান যা হোস্টের ইমিউন প্রতিক্রিয়ার জন্য দায়ি । তাই বিজ্ঞানীরা বিশ্বাস করেন যে, এস-প্রোটিন ভ্যাকসিন ও অ্যান্টিভাইরাল বিকাশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য । এদিকে, আরও পাঁচটি গ্রুপ ভ্যাকসিনের মতো কণা (VLP) ভ্যাকসিন বিকাশে কাজ করছে । VLP হল মাল্টিপ্রোটিন স্ট্রাকচার যা অথেনটিক ন্যাটিভ ভাইরাসের গঠন ও নিশ্চয়তাকে নকল করে তবে ভাইরাল জিনোমের অভাব থাকে, যা তাদের একটি সুলভ ও নিরাপদ বিকল্প হিসাবে পরিণত করে । ফর্মালডিহাইড ও জলের মিশ্রণ ব্যবহার করে কিছু প্যাথোজেনের টক্সিন নিষ্ক্রিয় করে একটি টক্সয়েড ভ্যাকসিন তৈরি করা হয় । এই মৃত টক্সিনগুলি পরে নিরাপদে শরীরে প্রবেশ করানো হয় । আটটি টক্সয়েড ভ্যাকসিন ক্লিনিকাল পরীক্ষার জন্য অপেক্ষা করছে ।

SARS-CoV-2-এর ঝিল্লিতে স্পাইক (S) প্রোটিন রয়েছে । এই এস-প্রোটিনগুলি শ্লেষ্মা ঝিল্লিতে উপস্থিত ACE2 রিসেপ্টরগুলিতে ঝুলে থাকে এবং এটি আমাদের নিশ্বাসের সঙ্গে শরীরে প্রবেশ করে । হোস্ট সেলের সঙ্গে একবার এই ভাইরাস নিজেকে যুক্ত করলে এটি তার জিনগত উপাদান (RNA) ওই সেলের মধ্যে প্রবেশ করাতে শুরু করে । পাশাপাশি ওই হোস্ট সেলের প্রতিলিপি তৈরি করে । যে কোনও ভ্যাকসিনের লক্ষ্য হল, যে কোনও ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নিত করা এবং তা নষ্ট করার জন্য প্রতিরোধ ক্ষমতাকে সাহায্য করে । এই কাজ করার জন্য ভাইরাস থেকে কিছু অণু (যাকে অ্যান্টিজেন বলা হয়) শরীরের মধ্যে প্রতিরোধের প্রতিক্রিয়া শুরু করতে হবে । প্রতিরোধ ক্ষমতা একবার এই অ্যান্টিজেনগুলিকে চিহ্নিত করার পর অ্যান্টিবডিগুলি এই ভাইরাসের কোষের ঝিল্লিতে বিশেষ প্রোটিন সংযুক্ত করে যাতে T-সেলগুলি তাদের ধ্বংস করতে পারে । সহায়ক T-সেলগুলি ইনজেক্টেড অ্যান্টিজেনগুলি ধ্বংস করতে অ্যান্টিবডিগুলি ও ম্যাক্রোফেজ়গুলি সক্রিয় করতে B-সেলগুলিকে আগে সক্রিয় করে । তারা সংক্রমিত হোস্ট সেলগুলি নষ্ট করতে সাইটোটক্সিক T-সেলকে সক্রিয় করতে সহায়তা করে । T ও B-সেলগুলি মেমরি সেল তৈরি করে যা একই প্যাথোজেন (এই ক্ষেত্রে ভাইরাস) মনে রাখে । যদি একই ভাইরাস পুনরায় দেখা যায়, প্রতিরোধ ক্ষমতা তাৎক্ষণিকভাবে অ্যান্টিজেনগুলি চিহ্নিত করতে পারে ও দেহের ভিতরে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আগে সেগুলিকে আক্রমণ করবে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.