দিল্লি, 12 অগাস্ট : দেশের অর্থনীতিকে দিশা দেখানোর কথা বলেছিলেন ৷ ফেরি করেছিলেন কর্মসংস্থানের স্বপ্ন ৷ কিন্তু, প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের সেই আর্থিক সমৃদ্ধির ফানুস কোথায় যেন চুপসে যাওয়ার আশঙ্কা তীব্র হল ৷ অন্তত, তেমনই অশনি সঙ্কেত শোনালেন নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার । আর্থিক ক্ষেত্রে গত 70 বছরে এমন সঙ্কটজনক পরিস্থিতি আসেনি— বলেও কটাক্ষ তাঁর । কেবল মাত্র কটাক্ষ করেই থেমে থাকেননি রাজীব কুমার ৷ তাঁর আশঙ্কা, এই কঠিন পরিস্থিতি থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসতে না পারলে অচিরেই ভেঙে পড়বে দেশের অর্থনীতির মেরুদণ্ড ৷
নরেন্দ্র মোদির অন্যতম প্রধান প্রতিশ্রুতি ছিল, দ্বিতীয় UPA জমানায় মন্দাক্রান্ত অর্থনীতির পুনরুজ্জীবন ঘটাবেন তাঁরা । বাস্তব পরিস্থিতি কী? গত ডিসেম্বরে নীতি আয়োগ রীতিমতো অভূতপূর্ব ভাবেই, CSO-র ‘সংশোধিত তথ্য’ প্রকাশ করে । দেখা যায়, এর আগে GDP বৃদ্ধির যে হার পাওয়া গেছিল, সংশোধিত হিসাবে আয় বৃদ্ধির হার তার চেয়ে বেশি— 7.3 শতাংশ । ভোট আরও কাছে এল, 31 জানুয়ারি CSO নতুন সংশোধিত হিসাব প্রকাশ করল । দেখা গেল, GDP বৃদ্ধির হার দাঁড়িয়েছে 7.7 শতাংশ! অথচ বিশ্বব্যাঙ্কের ওয়ার্ল্ড ডেভেলপমেন্ট ইন্ডিকেটরস-এর সাম্প্রতিকতম সংস্করণ অনুসারে, গত 15 বছরের মধ্যে মাত্র পাঁচটি বছরে ভারতের GDP বৃদ্ধির হার 7 শতাংশ ছাড়িয়েছে । এবং, সাম্প্রতিক অতীতে তিন বার ভারতের GDP বৃদ্ধির হার 7 শতাংশের নীচে নেমেছে— 2008-09 সালের বিশ্ব আর্থিক সঙ্কটের পরে, দ্বিতীয় UPA জমানার শেষ তিন বছরে (তথাকথিত নীতিপঙ্গুতার পর্বে) এবং নরেন্দ্র মোদির নোট বাতিলের পরের বছরে ।
শুধু আর্থিক ক্ষেত্রেই নয় ৷ হিসাব বলছে সমস্যা বেড়েছে কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রেও ৷ অধিকাংশ মানুষের জীবনে মূল সমস্যা হল জীবিকার সংস্থান । মোদির প্রতিশ্রুতি ছিল, তিনি ক্ষমতা পেলে দশ বছরে পঁচিশ কোটি চাকরি হবে । মানে, বছরে গড়ে আড়াই কোটি । গৃহস্থালির সমীক্ষার ভিত্তিতে CMIE 2016 সাল থেকে কর্মসংস্থানের যে হিসাব কষছে, তাতে দেখা যাচ্ছে, 2017 সালে দেশে মোট কর্মীর সংখ্যা ছিল 40 কোটি 67 লাখ । 2018 সালে সেটা কমে দাঁড়ায় 40 কোটি 62 লাখ, 2019-এর ফেব্রুয়ারিতে তা 40 কোটিতে ঠেকেছে । 2017 সালে নতুন কর্মসংস্থান হয়েছে 18 লাখ, কিন্তু এটা সেই বছরের নতুন কর্মপ্রার্থীর সংখ্যার 12 শতাংশ, আর মোদি বছরে যে আড়াই কোটি নতুন কাজ দেওয়ার কথা বলেছিলেন, তার 7 শতাংশ!
এই পরিসংখ্যানের নিরিখেই কুমারের বিশ্লেষণ, অটোমোবাইল সেক্টর ধুঁকছে । বহু কর্মী ছাঁটাই করে বা ছাঁটাইয়ের পরিকল্পনা করে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে অধিকাংশ সংস্থা । উৎপাদন ক্ষেত্রে ভাটা । নতুন কোনও শিল্প বা বিনিয়োগের রাস্তা তৈরি করা যাচ্ছে না । আদপে তার চেয়েও বেশি সংকট ফাইনান্সিয়াল সেক্টরে অর্থাৎ আর্থিক শিল্পক্ষেত্রে ।
কিন্তু, কেন এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হল? রাজীব কুমারের মতে, "গত চার বছরে পরিস্থিতি পালটেছে পুরোপুরি । নোট বাতিল, GST এবং দেউলিয়া বিধি পরিবর্তন । তার আগে পর্যন্ত 10, 20, 30, 35 শতাংশ নগদ বাজারে লেনদেন চলত । কিন্তু এখন সেই পরিমাণ অনকেটাই কমে গেছে ।" এখন বেশিরভাগটাই ডিজিটাল মাধ্যম ৷ বাজারে নগদ মূলধনী লেনদেন ও বিনিয়োগের অবস্থা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, "এই পরিস্থিতি শুধু সরকার ও বেসরকারি ক্ষেত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় । মূলধন ধীরে ধীরে দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে । সেটা থামানো দরকার ।" রাজীব কুমার সরকারকে সাবধান সূত্র বাতলে দেওয়ার চেষ্টা করেছে ৷ বলেছেন, "এমন কোনও পদক্ষেপ করতে হবে যা চিরাচরিত বা প্রথাগত নয় । আমি মনে করি, বেসরকারি ক্ষেত্রের আস্থা ফেরাতে সরকারের পক্ষে যতটা করা সম্ভব, তার পুরোটাই করতে হবে ।"