ইতিহাসে প্রথম বার বেসরকারি ক্ষেত্রের জন্য রেলের দরজা খুলে দেওয়া হল । 109 টি রুটে মোট 151 টি আধুনিক ট্রেন চালানোর জন্য বেসরকারি সংস্থাগুলিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে ।
নিলামে অংশ নেওয়ার জন্য ছয় মাস সময়
যদিও এই প্রস্তাবটির বয়স বেশ কয়েক মাস, তবে এ বার নিলাম প্রক্রিয়া শুরু করার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় যে প্রশ্নটা উপস্থিত তা হল, এর মাধ্যমে রেল, বেসরকারি সংস্থাগুলি বা সাধারণ মানুষ কার কতটা লাভ হবে ?
রেলের আধুনিকীকরণ বা সম্প্রসারণের মতো বিষয়গুলি নতুন নয় । এই বিষয়ে এখনও পর্যন্ত বহু কমিটি কাজ করেছে । তবে বর্তমানের নিলামের প্রক্রিয়া শুরু হতে চলেছে 2015 সালে বিবেক দেবরায় কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতে । কমিটির মতে, এটাকে রেলের বেসরকারিকরণ না বলে উদারীকরণ বলা যেতে পারে । এটা একেবারেই সত্যি কারণ, ভারতীয় রেল তার মাত্র পাঁচ শতাংশ বেসরকারি ক্ষেত্রের হাতে ছাড়ার কথা ভাবছে ।
• এপ্রিল 2023 সালে চলবে প্রথম বেসরকারি ট্রেন
• আনুমানিক বিনিয়োগ 30 হাজার কোটি টাকা
• উৎসাহী সংস্থা 20
এই সিদ্ধান্ত কেন ?
দেশের সাধারণ যাত্রীদের দিক থেকে দেখতে গেলে বহু বড় শহরেই সবচেয়ে বড় চাহিদা বেশি ট্রেনের । রেল বোর্ড এ কথা স্বীকারও করেছে যে, স্রেফ উঠতে পারা যায় না বলে অন্তত পাঁচ কোটি মানুষ রেল পরিষেবা ব্যবহার করতেই পারেন না । এই চাহিদা আরও বেড়ে যায় গ্রীষ্মকালে ও উৎসবের মরসুমে । রেলের তরফে সমীক্ষা করে দেখা গেছে যে, পরিকাঠামোর উন্নয়ন না হলে আগামী কয়েক বছরে সড়ক পরিবহণের কাছেই বহু ব্যবসা হারাবে রেল । পাশাপাশি, কেন্দ্রে মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের গুরুত্বের কথাও স্মরণ করিয়েছে দেব রায় কমিটি । কমিটির আরও দাবি, পরিষেবার মান বাড়লে বেশি অর্থ খরচ করতেও যাত্রীরা পিছপা হবেন না । আর এই কারণেই রেলের এই বেসরকারিকরণের প্রস্তাবে সায় দেওয়া হয়েছে ।
এতে কি যাত্রীদের সুবিধা হবে ?
কোনও ক্ষেত্রেই একচেটিয়া ভালো নয় । বরং প্রতিযোগিতা থাকলে তা সবসময়ই বেশি ভালো কাজ দেয় । তবে এখনও পর্যন্ত ভারতীয় রেল যাত্রীদের স্বার্থই বেশি দেখেছে । আর তাই টিকিটের দাম বাড়ানোর সময় আয় বৃদ্ধির দিকে না তাকিয়ে দেখা হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের ক্ষমতার বিষয়টি । ঘাটতি মোকাবিলায় মাল পরিবহণের উপর সামান্য খরচ বাড়ানো হলেও সে ভাবে আয় বাড়াতে পারেনি রেল । এ বার যেটা দেখার সেটা হল, এই বেসরকারিকরণের ফলে রেলের কতটা লাভ হবে বা আদৌ লাভ হবে কি না । ধরেই নেওয়া যায় যে, বেসরকারি সংস্থাগুলি রেলের মতো করে ভাববে না এবং নিজেদের লাভের বিষয়ে ভাববে । তবে একটা বিষয় মোটামুটি নিশ্চিত যে, পরিষেবার গুণমান বাড়বে । আর তেমন পরিষেবা পেলে যাত্রীরা সম্ভবত সামান্য ভাড়া বৃদ্ধি নিয়ে ভাবিত হবেন না । বেসরকারিকরণের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, যা এখনও একেবারেই প্রাথমিক স্তরে রয়েছে, তা সফল হলে ভবিষ্যতে বিভিন্ন রুটে আরও অনেক বেসরকারি ট্রেন হয়ত দেখা যাবে ।
যে সব সংস্থাকে দেখা যেতে পারে
বিনিয়োগের প্রথম যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে, তা থেকে অনুমান, অন্তত 30 হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ হতে পারে । মনে করা হচ্ছে অন্তত 20 টি সংস্থা 16 টি বগি-সহ 151 টি ট্রেন চালাবে । এই সব সংস্থার মধ্যে আদানি পোর্ট, টাটা রিয়েলটি অ্যান্ড ইনফ্রা, এসেল গ্রুপ, বমবার্ডিয়ার ইন্ডিয়া, সিমেন্স এজি এবং ম্যাকারি গ্রুপ অন্যতম। ভিস্তারা, ইন্ডিগো, স্পাইসজেটের মতো বিমান সংস্থাও আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।
আদানি পোর্ট - এই সংস্থার এই ধরনের কাজের পুরনো অভিজ্ঞতা রয়েছে। বন্দর এলাকায় প্রায় তিনশো কিলোমিটার রেলপথ রয়েছে এই সংস্থার। এদের বড় ধরনের পরিকাঠামোর কাজ করার পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে। মেট্রো রেলের প্রজেক্টেও এরা অংশীদার।
এসেল গ্রুপ - দশকের পর দশক ধরে এই সংস্থা বহুবিধ সরকারি প্রজেক্টে কাজ করে আসছে। এসেল তাদের ‘এসেল ইনফ্রাপ্রজেক্টেস’-এর মাধ্যমে 2018 সালে প্রথম রেলের প্রজেক্টে কাজ করেছে।
টাটা রিয়েলটি অ্যান্ড ইনফ্রা - টাটা গ্রুপের এই সহ সংস্থা পুণের হিনজেওয়াড়ি থেকে শিবাজি নগর পর্যন্ত মেট্রো প্রজেক্টে কাজ করেছে। দিল্লি থেকে মেরঠ রিজিয়োনাল র্যাপিড ট্রানজিট সিস্টেমের জন্য মাটির তলা দিয়ে লাইনের কাজ করেছে এই সংস্থা।
বমবার্ডিয়ার - এই জার্মান সংস্থাও এ ক্ষেত্রে অন্যতম শক্তিশালী প্রতিযোগী। এরাই প্রথম বিদেশি বহুজাতিক সংস্থা, যারা 50 বছর আগে দেশে রেলের ভেহিকল তৈরির কারখানা তৈরি করে।
অ্যালস্টম - এটিও আরেকটি বিদেশি সংস্থা। এই ফরাসি সংস্থা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে বহু মেট্রো প্রকল্পে কাজ করেছে।
শেয়ারের দামের বৃদ্ধি - শেয়ার বাজারে এই রেল প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত সংস্থাগুলির শেয়ার দর বাড়তে শুরু করেছে সেই দিন থেকে, যখন ভারতীয় রেল এই বেসরকারিকরণের বিষয়ে ঘোষণা করল। আইআরসিটিসি, রেল বিকাশ নিগম, ইরকন ইন্টারন্যাশনাল, টিটাগড় ওয়াগন, টেক্সম্যাকো রেল, সিমকো, স্টোন ইন্ডিয়ার শেয়ার দরও উল্লেখযোগ্য ভাবে এর পর থেকে বাড়তে শুরু করেছে।