2022 সালের মধ্যে টেলিকম উপকরণের আমদানি শূন্যতে নামিয়ে আনতে চায় TRAI ৷ এয়ারটেল-ভোডাফোনের প্রায়োরিটি প্ল্যান প্রাথমিকভাবে অন্য গ্রাহকদের ওপর প্রভাব ফেলব বলেও মনে করছে ট্রাই ৷ এয়ারটেল এবং ভোডাফোন আইডিয়ার বিশেষ প্ল্যান, যা নির্দিষ্ট কিছু গ্রাহককে আরও দ্রুত ইন্টারনেট পরিষেবার আশ্বাস দেয়, তা অন্যান্য গ্রাহকদের পরিষেবার ওপর প্রভাব ফেলবে, কারণ প্রতি বিটিএসে ব্যান্ডউইথ নির্দিষ্ট থাকে । ETV ভারতকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে একথা জানান TRAI-এর চেয়ারম্যান আর এস শর্মা । ETV ভারতকে আর এস শর্মা, আমদানি করা টেলিকম সরঞ্জামের ওপর ভারতের নির্ভরতার প্রসঙ্গে এও বলেন, যে কিছু দেশ অভ্যন্তরীণ শিল্পকে নষ্ট করতে তাদের ইলেকট্রনিক এবং টেলিকম সরঞ্জাম এদেশে জড়ো করেছিল, যাতে তারা পরে তার দাম চড়াতে পারে ।
- প্রশ্ন : আপনি কি বিশ্বাস করেন যে অগ্রাধিকার পাওয়া গ্রাহকদের আরও দ্রুতগতির ইন্টারনেট পাইয়ে দিতে ভারতী এয়ারটেল এবং ভোডাফোন আইডিয়ার প্ল্যান, অন্যান্য গ্রাহকদের পরিষেবার অবনতি ঘটাতে পারে?
তিনি বলেন, প্রাথমিকভাবে, যেহেতু প্রতি বিটিএসে ব্যান্ডউইথ নির্দিষ্ট থাকে, তাতে কয়েকজন গ্রাহককে কোনও অগ্রাধিকার দিলেই তা সম্ভবত অন্যান্য সাধারণ গ্রাহকদের পরিষেবার ওপর প্রভাব ফেলবে। মনে হচ্ছে যে কয়েকজন নির্দিষ্ট গ্রাহককে অগ্রাধিকার দেওয়ার ফলে সাধারণ গ্রাহকদের ওপর খারাপ প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়াও, এধরনের প্ল্যানে তথাকথিত ‘দ্রুত গতি’র ব্যাপারে নির্দিষ্ট করে কিছু বলা হয়নি, যা গ্রাহককে তথ্য জেনে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য
করতে পারে। TRAI এটা বিশদে খতিয়ে দেখছে, এবং আমরা আমাদের পরীক্ষার ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারব।
- প্রশ্ন : টেলিকম একটা সংবেদনশীল ক্ষেত্র হওয়ায়, আপনি কি মনে করেন যে টেলিকম উপকরণের ঘরোয়া উৎপাদন এবং ডিজিটাল আত্মনির্ভরতাকে উৎসাহিত করা উচিত?
কয়েকটি দেশ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কৌশল নিয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে ইলেকট্রনিক সামগ্রী চাপিয়ে দিয়ে আমাদের ঘরোয়া শিল্পকে শেষ করে ফেলার, এবং তারপর তারা দাম বাড়িয়ে দেবে। আমাদের এই কৌশলগুলো বুঝতে হবে এবং অবিলম্বে পক্ষপাতমূলক বাজার ধরার নীতি চালু করতে হবে। আমি মনে করি, যদি না আমরা আমাদের ঘরোয়া উৎপাদকদের আরও সুযোগ দিই, ভারত স্থানীয়ভাবে উৎপাদনে সফল হবে না। 2018 সালের তিন অগাস্ট টেলিকম দপ্তরের কাছে ট্রাউ স্থানীয় টেলিকম উপকরণ উৎপাদনকে উৎসাহিত করার সুপারিশ করেছিল। TRAI সুপারিশ করেছিল, যে ভারতের উচিত 2022 সালের মধ্যে টেলিকম উপকরণের আমদানির পরিমাণ শূন্য করার লক্ষমাত্রা নেওয়া। এজন্য টেলিকম ইকুইপমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং কাউন্সিল (TEMC)-কে অগ্রাধিকারের জায়গাগুলো চিহ্নিত এবং সুপারিশ করতে হবে।
এক হাজার কোটি টাকার একটা বিশেষ ফান্ড তৈরি করা উচিত গবেষণা,উদ্ভাবন, স্ট্যান্ডার্ডাইজ়েশন, ডিজ়াইন, পরীক্ষা, সার্টিফিকেশন এবং দেশীয় টেলিকম উৎপাদনকে উৎসাহিত করার জন্য। আমি মনে করি যে সরকারের নীতিগুলো যথেষ্ট ফলপ্রসূ হয়েছে, কিন্তু আরও অনেক কিছু করা দরকার।
- প্রশ্ন : আপগ্রেডেশনের জন্য চিনে তৈরি উপকরণ ব্যবহার না করার পথে হেঁটেছে BSNL, সেদিকে তাকিয়ে আপনি কি মনে করেন, যে চিনা টেলিকম উপকরণ নিষিদ্ধ করা যাবে?
আমি মনে করি যে আমরা প্রয়োজনীয় সমস্ত টেলিকম উপকরণ আমাদের দেশেই তৈরি করতে পারি ৷ দেশে উপকরণ তৈরিতে সরকার সমস্তরকম সুবিধে দিচ্ছে, এবং ভারতীয় সংস্থাগুলোর এই সুযোগ ব্যবহার করে দেশেই প্রযুক্তি উদ্ভাবন এবং উপকরণ তৈরি করা উচিত । এটা সবথেকে বেশি এই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা গড়ে তোলার বিষয়, এবং তারপর চিনা উপকরণ নিষিদ্ধ করার।
- প্রশ্ন : সম্প্রচার শিল্পে নতুন মাসুল কাঠামোর ব্যাপারে কী ধরণের প্রতিক্রিয়া পেলেন?
নিয়ন্ত্রণমূলক নতুন ফ্রেমওয়ার্কের ভিত্তি হচ্ছে স্বচ্ছ্বতা, বৈষম্যহীনতা, গ্রাহকস্বার্থের সুরক্ষা এবং মূলর নীতিগুলোর ভিত্তিতে এই ক্ষেত্রের বৃদ্ধিতে সাহায্য করা। নতুন কাঠামো হল গ্রাহক-কেন্দ্রীক, যা তাঁদের স্বচ্ছ্বভাবে, তাঁদের পছন্দ অনুযায়ী টিভি চ্যানেল বেছে নিয়ে দেখার সক্ষমতা দেয়। বেছে নেওয়ার স্বাধীনতার অর্থ টেলিভিশন পরিষেবার মাসিক বিলে গ্রাহকের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ। এমন একটা ক্ষেত্র, যেখানে পরিষেবা প্রদানের ক্ষেত্রে বহু অংশীদার
কাজ করছে, সেখানে অসম স্বার্থের কৌশলী ভারসাম্যরক্ষা করার দরকার। নতুন ফ্রেমওয়ার্কে আলাদা আলাদা ভাবে অথবা গুচ্ছ হিসেবে চ্যানেল অফার করার জন্য পর্যাপ্ত নমনীয়তা দেওয়া হয়েছে। 2004 সাল থেকে চ্যানেলের দামের ওপর বলবত উর্ধ্বসীমা সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে যে নতন নিয়ন্ত্রণমূলক ফ্রেমওয়ার্ক টিভি চ্যানেল দেখার মূল্য নির্ধারণে স্বচ্ছতা এনেছে এবং এই ক্ষেত্রে
ব্যবসাকেও সুসংবদ্ধ করেছে। স্বচ্ছ্বতা আনার লক্ষ্যে চ্যানেলের দাম এবং নেটওয়ার্কের খরচকে আলাদা করা হয়েছে। ব্রডকাস্টারদের কাছে তাদের চ্যানেলের সর্বাধিক খুচরো মূল্য নির্ধারণের সুযোগ রয়েছে যাতে তারা NCF-র বলা নেটওয়ার্ক খরচ উসুল করতে পারেন। এই সংশোধনগুলো গ্রাহকদের জন্য আরও ভালও পরিষেবা, আরও নমনীয় ট্যারিফ স্কিম, এবং গ্রাহকদের জন্য আরও বিকল্প আনবে । সব মিলিয়ে, এই সংশোধনগুলো ব্রডকাস্টিং আর কেবল পরিষেবা ক্ষেত্রের স্বাস্থ্যকর ও সুগঠিত বৃদ্ধির জন্য এই সংশোধনগুলো প্রত্যাশিতই ছিল।
- প্রশ্ন : আপনি কি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় টেলিকম সেক্টর যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে, তা নিয়ে কিছু বলবেন?
যখন আমরা সামাজিক দূরত্ব এবং সেল্ফ কোয়ারেন্টিন পালন করছি, তখন স্বাভাবিকত্ব বজায় রাখতে গেলে দূর থেকে যোগা়যোগই একমাত্র পথ। দেশব্যাপী লকডাউনের পর, ঘরে থাকা এবং ওয়ার্ক ফ্রম হোমের প্রয়োজনীয়তা বহু বাড়িকে রিমোট অফিস, ভার্চুয়াল কনফারেন্স রুম, বাচ্চাদের অনলাইন স্কুল এবং কোনও কোনও ক্ষেত্রে পরিবারের বিনোদনের জন্য ভিডিয়ো স্ট্রিমিং হাবে বদলে দিয়েছে। পরিষ্কার জল এবং বিদ্যুতের মতো, ব্রডব্যান্ড ও আধুনিক জীবনের প্রয়োজনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে । ব্রডব্যান্ড সংযোগ ছাড়া জীবন কল্পনা করা কঠিন। সব মিলিয়ে, জীবন নর্মাল হবে এমন জীবন যাকে সহায়তা করবে টেলিকম যোগাযোগ এবং ডিজিটাল টুল।
- প্রশ্ন : আপনি কি মনে করেন যে জাতীয় ডিজিটাল যোগাযোগ নীতি 2018 কার্যকর করার জন্য সরকারের কাছে এটাই উপযুক্ত সময়?
এই নীতির তিনটি মূল ফোকাস এরিয়া হল: কানেক্ট ইন্ডিয়া, প্রপেল ইন্ডিয়া, এবং সিকিওর ইন্ডিয়া। যেখানে ‘কানেক্ট ইন্ডিয়া’ সবার জন্য ব্রডব্যান্ডে জোর দিচ্ছে, সেখানে ‘প্রপেল ইন্ডিয়া’-র লক্ষ্য, ডিজ়িটাল অর্থনীতির বৃদ্ধির লক্ষ্যে ফাইভ-জি, এআই, আইওটি, ক্লাউড এবং বিগ ডেটা সহ ডিজ়িটাল প্রযুক্তির শক্তির লাভ গ্রহণ করা। ‘সিকিওর ইন্ডিয়া’-র লক্ষ্য নাগরিকদের স্বার্থরক্ষা এবং ভারতের ডিজ়িটাল আধিপত্যকে সুরক্ষিত করা, যার লক্ষ্য ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও বিকল্প, ডেটার মালিকানা, গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা, এবং গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক উৎস হিসেবে তথ্যকে চিহ্নিত করা। এর লক্ষ্য 2022 সালের মধ্যে প্রতিটি নাগরিকের কাছে 50 MBPS ইন্টারনেট সংযোগ, প্রতিটি গ্রাম পঞ্চায়েতে 10 GBPS কানেক্টিভিটি পৌঁছে দেওয়া, সমস্ত উন্নয়নমূলক প্রতিষ্ঠানে চাহিদা অনুযায়ী ব্রডব্যান্ড চালু করা এবং সংযোগ পৌঁছয়নি এমন এলাকাগুলোতে সংযোগ পৌঁছে দেওয়া।
- প্রশ্ন : প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে গুগল CEO সুন্দর পিচাইয়ের কথাবার্তা নিয়ে কোনও মন্তব্য? প্রযুক্তি কীভাবে ভারতের কৃষক এবং যুব সম্প্রদায়কে সাহায্য করতে পারে?
আমি আমাদের প্রধানমন্ত্রী এবং গুগল CEO-র মধ্যে কথাবার্তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করব না। কিন্তু প্রযুক্তি ভারতের কৃষক ও যুব সম্প্রদায়ের জীবন অনেকভাবেই বদলে দিচ্ছে। পরিকল্পনা, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, নিরাপদে মজুত করা এবং মধ্যস্বত্ত্বকে সরানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে অন্যান্য অনেক কিছুর সঙ্গে জাতীয় কৃষি বাজার (ই-নাম), কৃষির জন্য আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে মেঘদূত ইত্যাদিও রয়েছে।