ভোজনবিলাসীদের কাছে অত্যন্ত কাছের একটি ফল আনারস । গরমকালে রোদে পুড়ে বাড়ি ফেরার পর এক গ্লাস আনারসের জুস । আহা... এই তৃপ্তির কোনও তুলনাই হয় না । আজকের দিনে বাজারে এক কেজি ওজনের একটি আনারসের দাম খুব বেশি হলে পঞ্চাশ টাকা হবে । তবে যদি আপনাকে বলা হয়, একটি আনারস কিনতে হলে দাম দিতে হবে কয়েক হাজার পাউন্ড ! রসনাতৃপ্তির ইচ্ছাটায় হয়ত অনেকেরই ভাটা পড়বে ।
হ্যাঁ, এমনই দাম ছিল এককালে আনারসের । রীতিমতো কাড়াকাড়ি পড়ে যাওয়ার জোগাড় আর কী ! এককালে ব্রিটেনে আনারসকে মনে করা হত আভিজাত্যের প্রতীক । অতীতে যে কোনও অভিজাত পরিবারের অনুষ্ঠানে আনারস কিন্তু থাকবেই । অনেকটা শো-অফের মতো । নৈশভোজের অনুষ্ঠানে আনারস দিয়ে টেবিল সাজানোয় ছিল আলাদা একটা আভিজাত্য । সবার কপালে এমন নৈশভোজ জুটত না । এটা ছিল অনেকটা সৌভাগ্যের মতো । আনারস ছিল সামাজিক মর্যাদার একটি প্রতীক । তবে এই আনারস কিন্তু খাওয়া হত না । এক অনুষ্ঠান থেকে পরের অনুষ্ঠান... তার পরের অনুষ্ঠান... এভাবেই চলতে থাকত যতক্ষণ না আনারসটি পচে যাচ্ছে ।
আরও পড়ুন : এই লঙ্কা খেলে প্রাণও যেতে পারে !
এমনও হত, অনেকে বাড়ির কোনও অনুষ্ঠানের জন্য আনারস ভাড়া করতেন । সামাজিক মর্যাদা তো বজায় রাখতেই হবে । তাই কোনও অনুষ্ঠানে ভাড়া করে আনারস নিয়ে, সেটিকে দেখিয়ে, আমন্ত্রিতদের প্রশংসা কুড়িয়ে তারপর আবার ফিরিয়ে দেওয়া হত । এমন রেওয়াজের চল ছিল সেকালে । সমাজে আনারসের এমন মর্যাদা বজায় ছিল বহুদিন । আনারসের পাতার ছাঁচে তৈরি হত থালা-বাসন । আজকের দিনে যেমন সামাজিক মর্যাদার প্রতীক হিসাবে দেখা হয় বাড়ি-গাড়ি, তখনকার দিনে ব্রিটেনে আনারস ছিল তেমনই সামাজিক মর্যাদার প্রতীক ।
এরপর ধীরে ধীরে বাইরের দেশগুলিতে নিজেদের কলোনি তৈরি করে ব্রিটেন । কলোনিগুলি থেকে প্রচুর পরিমাণে আনারস জাহাজে করে ব্রিটেনে ঢুকতে থাকে । আর এরপর থেকেই হারিয়ে যেতে থাকে আনারসের আভিজাত্য । কমতে থাকে দাম । একসময় এমন পরিস্থিতি আসে, যে শুধুমাত্র মধ্যবিত্তরাই নয়, নিম্নবিত্তদেরও নাগালের মধ্যে চলে আসে আনারস ।