মণিপুর বিধানসভায় বাদল অধিবেশন শুরু হতে চলেছে 10 অগাস্ট ৷ তার আগে উত্তর-পূর্ব ভারতের এই রাজ্যের BJP-র নেতৃত্বাধীন জোট সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে কংগ্রেস ৷ আর মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং এই সপ্তাহেই বৈঠক করেছেন শাসক বিধায়কদের সঙ্গে ৷ এই পরিস্থিতিতে ওই রাজ্যের রাজনৈতিক সংকট আরও গভীরতর হয়েছে ৷
মণিপুর বিধানসভার সদস্য সংখ্যা ৬০ ৷ সেই বিধানসভার সচিবের কাছে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব মঙ্গলবার পেশ করেছে কংগ্রেস ৷ মাদক আটক সংক্রান্ত একটি মামলা কেন্দ্রীয় তদন্তকারী বিউরো (CBI)-র হাতে তুলে দেওয়ার দাবিতেই এই অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে ৷
এরপরই বুধবার মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং BJP-র নেতৃত্বাধীন জোটের 29 জন বিধায়ককে ডেকে বৈঠক করেন ৷ সেখানে ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (NPP), দা নাগা পিপলস ফ্রন্ট (NPF), একজন TMC বিধায়ক ও একজন নির্দল বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন ৷
যদিও খবর পাওয়া গিয়েছে যে, চার জন BJP বিধায়ক এন ইন্দ্রজিৎ, এল রামেশর মেইতাই, হিয়ানগামের বিধায়ক ড: ওয়াই রাধেশ্যাম এবং এল রাধাকিশোর ওই বৈঠকে অনুপস্থিত থেকে জল্পনা বাড়িয়েছেন ৷ বর্তমান সরকার চালিয়ে যেতে গেলে এই চার বিধায়কের সমর্থন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ৷
এর ফলে রাজ্যের রাজনীতিতে একাধিক সংকটের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ৷ যদিও সরকার এই ধরনের সংকট এই বছর জুন মাসেই কাটিয়ে উঠেছে ৷ তখন BJP-র তিনজন বিধায়ক দল থেকে পদত্যাগ করেন এবং কংগ্রেসের যোগদান করেন ৷ আর NPP বীরেন সিংয়ের সরকারকে বিপদে ফেলে সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেওয়ার হুমকি দেয় ৷ ওই সংকট তখনই শেষ হয়, যখন হস্তক্ষেপ করেন উত্তর-পূর্ব ভারতের BJP-র প্রধান সংকটমোচনকারী নেতা তথা নর্থ-ইস্ট ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স (NEDA)-এর আহ্বায়ক হিমন্ত বিশ্বশর্মা এবং মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী এবং NPP নেতা করনাড সাংমা৷
তার পর এই মাসের শুরুতে কংগ্রেস তাদের দুই জন বিধায়ক RK ইমো এবং ওকরাম হেনরিকে শোকজ় নোটিস পাঠায় ৷ তাঁরা রাজ্যসভার ভোটে মণিপুরের প্রাক্তন রাজা তথা BJP প্রার্থী লেইসেম্বা সানাজাওবাকে ভোট দেন ৷ তার জেরেই ওই শোকজ় করা হয় ৷ ইমো হচ্ছেন কংগ্রেসের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী আর কে জয়চন্দ্র সিংয়ের ছেলে ৷ আর মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংয়ের জামাই ৷ হেনরি প্রাক্তন কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী এবং CLP নেতা ওক্রাম ইবোবি সিংয়ের ভাইপো ৷
একটি খবর অনুযায়ী, ইমো এবং ইবোবি সিংয়ের মধ্যে দ্বন্দ্ব ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ কারণ, ইবোবি সিং ইমোকে দলের অন্দরেই নিজের জন্য বিপজ্জনক বলে মনে করছেন ৷ ইমো কংগ্রেসের বিধায়ক বটে, কিন্তু তিনি আবার BJP মুখ্যমন্ত্রীর জামাই ৷
অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিংও দলের অন্দরে বিদ্রোহের মুখে পড়ছেন ৷ কারণ, দলেই আরও একজন মুখ্যমন্ত্রীত্বের দাবিদার রয়েছেন ৷ সেই Th বিশ্বজিৎ সিং বীরেন সিংয়ের উল্টোদিকে রয়েছেন ৷ গত বছর বীরেন সিংকে অপসারণের একটা চেষ্টা হয়েছিল ৷ কিন্তু BJP-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তাঁর সমর্থনে দাঁড়ানোয় সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয় ৷
মাদক সংক্রান্ত একটি মামলা নিয়ে মণিপুর উচ্চ আদালতে একটি হলফনামা জমা করেছেন Th বৃন্দা নামে এক পুলিশ আধিকারিক ৷ তার ভিত্তিতেই এই সপ্তাহে কংগ্রেস অনাস্থা প্রস্তাব এনেছে ৷ এই মামলায় চান্দেল অটোনমাস ডিস্ট্রিক্ট কাউন্সিল (ADC)-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান লুকোসেই জৌ-এর নাম জড়িয়ে গিয়েছে ৷ যিনি BJP ওই রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর দলে যোগ দিয়েছিলেন ৷
বৃন্দা এখন নারকোটিক্স অ্যান্ড অ্যাফেয়ার্স অফ বর্ডার (NAB)-এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ৷ তিনি 2018 সালে প্রচুর পরিমাণ মাদক ও পুরনো নোট উদ্ধার করেছিলেন জৌ-এর সরকারি কোয়াটার থেকে ৷
যদিও এই মাসের শুরুতে দায়ের করা হলফনামায় বৃন্দার অভিযোগ, যে জৌ ও অন্যদের ছেড়ে দেওয়ার জন্য এবং চার্জশিট থেকে নাম তুলে নেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং তাঁর উপর চাপ সৃষ্টি করেছিলেন ৷ মুখ্যমন্ত্রী এই অভিযোগ সরাসরি খারিজ করে দিয়েছেন ৷
মাদক উদ্ধার হওয়ার এই ঘটনার পর থেকে কংগ্রেস বারবার মামলাটি CBI-এর হাতে তুলে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিল ৷ এখন বৃন্দা হলফনামা জমা দেওয়ার পর ওই দল অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে এসেছে ৷ এখন দেখতে হবে 10 অগস্ট যখন অধিবেশন বসছে, তখন বিধানসভা এই প্রস্তাব গ্রহণ করে কি না ৷