ETV Bharat / bharat

কোরোনা মোকাবিলায় উন্নত দেশের একমাত্র ভরসা আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স - coronavirus latest news

AI প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলিবাবা এমন রোগনির্ণয় ব্যবস্থা চালু করেছে, যা কয়েক সেকেন্ডে করোনাভাইরাসকে চিহ্নিত করে । এখনও পর্যন্ত 96 শতাংশ নিখুঁতভাবে এই ব্যবস্থা সংক্রমণের কেস খুঁজে বার করতে পেরেছে । স্বাস্থ্যকর্মী এবং হাসপাতালগুলির উদ্ধারে এগিয়ে এসেছে এই অভিনব সিস্টেম ।

আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স
আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্স
author img

By

Published : Apr 1, 2020, 9:27 PM IST

দিল্লি, 1 এপ্রিল : আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, স্মার্টফোন এবং বিগ ডেটা ব্যবহার করে Covid-19 ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে সফল হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও চিন । বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির অনেক কিছু শেখার আছে এদের থেকে । দক্ষিণ কোরিয়ায় দ্বিতীয় সর্বাধিক সংক্রমণ ধরা পড়লেও, মৃত্যুর হার ছিল অত্যন্ত কম । চিনের প্রতিবেশী তাইওয়ানে আরও কম মৃত্যু হয়েছে । দক্ষিণ কোরিয়া বিগ ডেটা ব্যবহার করে রোগীর সংখ্যা, তাঁরা কোথায় থাকেন, তাঁদের লিঙ্গ এবং বয়স, কতজনের মৃত্যু হয়েছে এমন বিশদ তথ্য সংগ্রহ করছে । আক্রান্তদের একটা নির্দিষ্ট আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার দেওয়া হচ্ছে । তাঁদের তথ্য গোপন রাখা হচ্ছে । উদাহরণ স্বরূপ, দক্ষিণ কোরিয়ার বুলেটিনে বলা হচ্ছে : 102 নম্বর রোগিনী এবং তাঁর বন্ধু একটি নির্দিষ্ট সিনেমা হলের K-১ ও K-২ সিটে বসে সিনেমা দেখেন । তাঁরা অমুক ট্যাক্সিতে চেপে সিনেমা হলে গিয়েছিলেন । 151 নম্বর রোগী অমুক রেস্তোঁরায় খেতে গিয়েছিলেন । 587 নম্বর রোগী লোকাল ট্রেনে চেপে একটি পার্টিতে গিয়েছিলেন, যেখানে তাঁর সঙ্গে 20 জনের দেখা হয় । একটা ওয়েবসাইটই খোলা হয়েছে, যেখানে আক্রান্তদের গতিবিধি নিয়ে নাগরিকদের জানানো হচ্ছে । স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই ওয়েবসাইটটি চলছে । এইসব তথ্য নাগরিকদের সংক্রমিত জায়গাগুলি এড়িয়ে যেতে সাহায্য করছে । GPS, কল ডেটার সাহায্যে সরকার বেশ কয়েকটি অ্যাপ তৈরি করেছে, এবং ফেসবুক, ট্যুইটার, হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে সেগুলিকে সংযুক্ত করেছে । এইসব অ্যাপ আক্রান্তদের গতিবিধি চিহ্নিত করতে সাহায্য করছে । আতঙ্কিত হওয়ার বদলে, জনগণ বুঝতে পারছে যে কোন জায়গাগুলি এড়িয়ে চলা উচিত । তাঁরা সামাজিক দূরত্বের গুরুত্ব বুঝেছেন । এই সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্রুত কাজ করতে সাহায্য করছে ।

চিনে Covid-19 ছড়িয়ে পড়ার পরেই ন্যাশনাল হেলথ কমান্ড সেন্টার তৈরি করে ফেলে তাইওয়ান । দেশে আসা এবং দেশের বাইরে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার ; বিগ ডেটা ব্যবহার করে আক্রান্তদের চিহ্নিত করেছে । সোশাল মিডিয়ায় ভুল খবর প্রচার হওয়াও কমিয়েছে সরকার । স্বাস্থ্যবিমা, ভিনদেশে যাতায়াত, হাসপাতালে যাওয়া, কাস্টমস, বিমান টিকিটের QR কোডের মতো তথ্য একত্র করে একটি ডেটাবেস তৈরি করা হয়েছে । AI অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে মানুষকে বার বার সতর্ক করা হচ্ছে । এতে স্বাস্থ্যকর্মীদের পক্ষে রোগীদের যাতায়াতের ইতিহাস জেনে নেওয়া সহজ হচ্ছে । বিগ ডেটার সাহায্য নিয়ে, কর্তৃপক্ষ সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে কোনও ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থা জানিয়ে দিতে পারছে । এই বার্তা যাতায়াতের ছাড়পত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে । যেসব জায়গায় কোরোনার প্রকোপ বেশি, সেখানে মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে আক্রান্তদের খুঁজে বের করে কোয়ারান্টাইনে করা হচ্ছে। ন্যাশনাল হেলথ কমান্ড সেন্টার মাস্কের সরবরাহ বাড়িয়েছে এবং তার দামের দিকেও নজর রেখেছে। মাস্ক পাওয়া যাবে, এমন ওষুধের দোকানগুলোর ম্যাপও দেওয়া হচ্ছে।

চিনে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে কোরোনা আক্রান্তদের গতিবিধির ওপর ক্রমাগত নজর রাখা হচ্ছে । এতে অন্যান্য এলাকায় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া কমানো গেছে । চিন সরকার AI অ্যালগোরিদম ব্যবহার করেছে । দেশের সবথেকে বড় টেলিকম সংস্থা চায়না মোবাইলের তথ্যভাণ্ডারের সাহায্য নিয়ে সরকার নাগরিকদের গতিবিধির ওপর নজর রেখেছে । আলিবাবা, বাইদু এবং হুয়ায়েই-এর মতো বড় সংস্থাগুলির সঙ্গে, বহু ছোট সংস্থাও ভাইরাসের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়ছে । AI প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলিবাবা এমন রোগনির্ণয় ব্যবস্থা চালু করেছে, যা কয়েক সেকেন্ডে করোনাভাইরাসকে চিহ্নিত করে । এখনও পর্যন্ত 96 শতাংশ নিখুঁতভাবে এই ব্যবস্থা সংক্রমণের কেস খুঁজে বার করতে পেরেছে । স্বাস্থ্যকর্মী এবং হাসপাতালগুলির উদ্ধারে এগিয়ে এসেছে এই অভিনব সিস্টেম । কানাডার সংস্থা ব্লু ডট-উ প্রথম কোরোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে সতর্ক করেছিল । প্রত্যেকদিন, এই সংস্থার এআই বট 65 টি ভাষায় প্রকাশিত লক্ষ লক্ষ প্রতিবেদন, খবর আর ব্লগপোস্ট বিশ্লেষণ করে । গত বছরের 31 ডিসেম্বর তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, যে চিনের উহানে সার্সের মতো একটা মারণ-রোগের সংক্রমণ হতে চলেছে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা Covid-19 কে জনস্বাস্থ্যের বিপদ বলে ঘোষণা করার নয় দিন আগেই এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ব্লু ডট সিস্টেম মান্দারিন ভাষায় লেখা একটি প্রতিবেদন সম্পর্কে আধিকারিকদের সতর্ক করেছিল, যেখানে লেখা ছিল যে উহানের বাজারে যাওয়ার পর 27 জন মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন । ব্লু ডটের 40 জন কর্মীর মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, পশু চিকিৎসক, সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ, ডেটা বিশেষজ্ঞ এবং সফটওয়্যার ডেভলপাররা । ন্যাচরাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং এবং মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির মাধ্যমে 65 টি ভাষায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিশ্লেষণ করেন তাঁরা। কোনও সংক্রমণের চিহ্ন দেখা গেলেই তাঁদের কাছে সতর্কবার্তা আসে । এই ব্লু ডটই 2016 সালে ব্রাজিল থেকে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপারে আমেরিকাকে সতর্ক করেছিল ।

চিনের 80 শতাংশ কেনাবেচাই ক্যাশলেস । আলি পে বা উইচ্যাটের মতো অ্যাপের মাধ্যমে এটা করা হয়ে থাকে । চিনের আধিকারিকরা এই তথ্য তাঁদের নাগরিকদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে ক্রমাগত ব্যবহার করছেন, এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছেন । চিনের কমিউনিস্ট পার্টি ফেস রেকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরদারি চালাচ্ছে । এই ফেসিয়াল রেকগনিশন ক্যামেরার সঙ্গে থার্মাল সেন্সরও যুক্ত করা হয়েছে, যাতে কোনও ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রাও জানা যায় । সেন্স টাইম নামে একটি সংস্থা এই প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার জোগান দিচ্ছে । সিচুয়ান প্রদেশে থার্মাল সেন্সর লাগানো স্মার্ট হেলমেটও বিলি করা হয়েছে । বিগ ডেটা এবং আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিন সরকার একটা বিস্তৃত নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যাকে হেলথ কোড বলা হচ্ছে । এই কোড রোগীদের ভ্রমণের বিবরণ, আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসার সময়সীমার হদিশ পেতে সরকারকে সাহায্য করে । আলি পে এবং উইচ্যাটের মতো অ্যাপ বাইরে বেরোনো বা ঘরে কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষকে সাহায্য করছে । এইসব অ্যাপে লাল, হলুদ ও সবুজ কোড দেওয়া আছে । নাগরিকরা দেখতে পারেন যে তাঁদের এলাকাটা কোন কালার কোডে রয়েছে, এবং তার থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে আরও কোয়ারান্টাইনে থাকবেন কি না ।

টেনসেন্ট গ্রুপের তৈরি উইচ্যাট চিনা নাগরিকদের কাছে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত খবরাখবর পৌঁছে দিচ্ছে । পর্যটনের ক্ষেত্রে চ্যাটবট ব্যবহার করে তারা বিমান ও ট্রেনের সেই মুহূর্তের ছবিটা জানিয়ে দিচ্ছে । হুয়াসেই, টেনসেন্ট এবং DD-র সুপারকম্পিউটারগুলো Covid-19 এর ওষুধ খোঁজার কাজে গবেষকদের সাহায্য করছে । হংকং থেকে ইজরায়েল হয়ে আমেরিকা, সব জায়গায় কোরোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন খোঁজার কাজে ব্যবহত হচ্ছে AI এবং মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি । যদি এইসব গবেষণা সফলও হয়, তা সত্ত্বেও ভ্যাকসিন মানুষের কাছে পৌঁছতে আরও একটা বছর লেগে যাবে । এর মধ্যে ভালো খবর পাওয়া গেছে ইজ়রায়েল থেকে । ইজ়রায়েলের মিগুয়েল ইনস্টিটিউট মুরগির শ্বাসকষ্টজনিত অসুখের নিরাময় খুঁজতে গবেষণা চালাচ্ছিল । এখানকার বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্ট একধরণের কোরোনা ভাইরাসের ওপর পরীক্ষানীরিক্ষা করছিলেন, যার DNA-র গঠন কোরোনা ভাইরাসের অনেকটা কাছাকাছি । মিগুয়েল ইনস্টিটিউট ঘোষণা করেছে, যে তাদের গবেষণা সফল হলে, তিন মাসের মধ্যেই তারা একটা ভ্যাকসিন সামনে আনতে পারে । ভ্যাকসিনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে গোটা বিশ্ব । কোরোনা সংক্রমণ চিহ্নিত করতে চিনের হাসপাতালগুলিকে প্রতিদিন অন্তত 1000 সিটি স্ক্যান করতে হচ্ছে । ইনফর ভিশন কোম্পানির AI প্রযুক্তি এইসমস্ত স্ক্যানে দ্রুত ফলাফল পেতে সাহায্য করছে । স্বাস্থ্য বিমার টাকা দ্রুত পাইয়ে দিতে ব্লকচেন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে আলিবাবা গোষ্ঠীর অ্যান্টি-ফিনানশিয়ালস ।

এই সমস্ত পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে, হাসপাতাল কর্মীদের সঙ্গে রোগীদের যোগাযোগের সময়টা অনেকটাই কমিয়ে আনা গেছে । যেহেতু ভাইরাস রোবটদের সংক্রমিত করে না, তাই তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন বাড়ি ও জনসাধারণের জন্য নির্দিষ্ট জায়গাগুলি সংক্রমণমুক্ত করার কাজে । চিনের পুডু টেকনোলজি এই রোবটগুলিকে তৈরি করেছে, যাদের ব্যবহার করা হচ্ছে রোগীদের খাবার এবং ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার কাজে । টেরা কোম্পানির তৈরি ড্রোনের মাধ্যমে পরীক্ষার ফলাফল এবং কোয়ারান্টাইন উপকরণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে । জমায়েত এবং সংক্রমণ এড়াতে তারা বিভিন্ন এলাকার ওপর ক্রমাগত নজরদারি চালাচ্ছে ।

দিল্লি, 1 এপ্রিল : আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, স্মার্টফোন এবং বিগ ডেটা ব্যবহার করে Covid-19 ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণ করতে সফল হয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান ও চিন । বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির অনেক কিছু শেখার আছে এদের থেকে । দক্ষিণ কোরিয়ায় দ্বিতীয় সর্বাধিক সংক্রমণ ধরা পড়লেও, মৃত্যুর হার ছিল অত্যন্ত কম । চিনের প্রতিবেশী তাইওয়ানে আরও কম মৃত্যু হয়েছে । দক্ষিণ কোরিয়া বিগ ডেটা ব্যবহার করে রোগীর সংখ্যা, তাঁরা কোথায় থাকেন, তাঁদের লিঙ্গ এবং বয়স, কতজনের মৃত্যু হয়েছে এমন বিশদ তথ্য সংগ্রহ করছে । আক্রান্তদের একটা নির্দিষ্ট আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার দেওয়া হচ্ছে । তাঁদের তথ্য গোপন রাখা হচ্ছে । উদাহরণ স্বরূপ, দক্ষিণ কোরিয়ার বুলেটিনে বলা হচ্ছে : 102 নম্বর রোগিনী এবং তাঁর বন্ধু একটি নির্দিষ্ট সিনেমা হলের K-১ ও K-২ সিটে বসে সিনেমা দেখেন । তাঁরা অমুক ট্যাক্সিতে চেপে সিনেমা হলে গিয়েছিলেন । 151 নম্বর রোগী অমুক রেস্তোঁরায় খেতে গিয়েছিলেন । 587 নম্বর রোগী লোকাল ট্রেনে চেপে একটি পার্টিতে গিয়েছিলেন, যেখানে তাঁর সঙ্গে 20 জনের দেখা হয় । একটা ওয়েবসাইটই খোলা হয়েছে, যেখানে আক্রান্তদের গতিবিধি নিয়ে নাগরিকদের জানানো হচ্ছে । স্থানীয় প্রশাসনের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এই ওয়েবসাইটটি চলছে । এইসব তথ্য নাগরিকদের সংক্রমিত জায়গাগুলি এড়িয়ে যেতে সাহায্য করছে । GPS, কল ডেটার সাহায্যে সরকার বেশ কয়েকটি অ্যাপ তৈরি করেছে, এবং ফেসবুক, ট্যুইটার, হোয়াটসঅ্যাপের সঙ্গে সেগুলিকে সংযুক্ত করেছে । এইসব অ্যাপ আক্রান্তদের গতিবিধি চিহ্নিত করতে সাহায্য করছে । আতঙ্কিত হওয়ার বদলে, জনগণ বুঝতে পারছে যে কোন জায়গাগুলি এড়িয়ে চলা উচিত । তাঁরা সামাজিক দূরত্বের গুরুত্ব বুঝেছেন । এই সরকারি ওয়েবসাইটের তথ্য স্বাস্থ্যকর্মীদের দ্রুত কাজ করতে সাহায্য করছে ।

চিনে Covid-19 ছড়িয়ে পড়ার পরেই ন্যাশনাল হেলথ কমান্ড সেন্টার তৈরি করে ফেলে তাইওয়ান । দেশে আসা এবং দেশের বাইরে যাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে সরকার ; বিগ ডেটা ব্যবহার করে আক্রান্তদের চিহ্নিত করেছে । সোশাল মিডিয়ায় ভুল খবর প্রচার হওয়াও কমিয়েছে সরকার । স্বাস্থ্যবিমা, ভিনদেশে যাতায়াত, হাসপাতালে যাওয়া, কাস্টমস, বিমান টিকিটের QR কোডের মতো তথ্য একত্র করে একটি ডেটাবেস তৈরি করা হয়েছে । AI অ্যালগোরিদম ব্যবহার করে মানুষকে বার বার সতর্ক করা হচ্ছে । এতে স্বাস্থ্যকর্মীদের পক্ষে রোগীদের যাতায়াতের ইতিহাস জেনে নেওয়া সহজ হচ্ছে । বিগ ডেটার সাহায্য নিয়ে, কর্তৃপক্ষ সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে কোনও ব্যক্তির স্বাস্থ্যের অবস্থা জানিয়ে দিতে পারছে । এই বার্তা যাতায়াতের ছাড়পত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে । যেসব জায়গায় কোরোনার প্রকোপ বেশি, সেখানে মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে আক্রান্তদের খুঁজে বের করে কোয়ারান্টাইনে করা হচ্ছে। ন্যাশনাল হেলথ কমান্ড সেন্টার মাস্কের সরবরাহ বাড়িয়েছে এবং তার দামের দিকেও নজর রেখেছে। মাস্ক পাওয়া যাবে, এমন ওষুধের দোকানগুলোর ম্যাপও দেওয়া হচ্ছে।

চিনে মোবাইল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে কোরোনা আক্রান্তদের গতিবিধির ওপর ক্রমাগত নজর রাখা হচ্ছে । এতে অন্যান্য এলাকায় ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া কমানো গেছে । চিন সরকার AI অ্যালগোরিদম ব্যবহার করেছে । দেশের সবথেকে বড় টেলিকম সংস্থা চায়না মোবাইলের তথ্যভাণ্ডারের সাহায্য নিয়ে সরকার নাগরিকদের গতিবিধির ওপর নজর রেখেছে । আলিবাবা, বাইদু এবং হুয়ায়েই-এর মতো বড় সংস্থাগুলির সঙ্গে, বহু ছোট সংস্থাও ভাইরাসের বিরুদ্ধে একজোট হয়ে লড়ছে । AI প্রযুক্তি ব্যবহার করে আলিবাবা এমন রোগনির্ণয় ব্যবস্থা চালু করেছে, যা কয়েক সেকেন্ডে করোনাভাইরাসকে চিহ্নিত করে । এখনও পর্যন্ত 96 শতাংশ নিখুঁতভাবে এই ব্যবস্থা সংক্রমণের কেস খুঁজে বার করতে পেরেছে । স্বাস্থ্যকর্মী এবং হাসপাতালগুলির উদ্ধারে এগিয়ে এসেছে এই অভিনব সিস্টেম । কানাডার সংস্থা ব্লু ডট-উ প্রথম কোরোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে সতর্ক করেছিল । প্রত্যেকদিন, এই সংস্থার এআই বট 65 টি ভাষায় প্রকাশিত লক্ষ লক্ষ প্রতিবেদন, খবর আর ব্লগপোস্ট বিশ্লেষণ করে । গত বছরের 31 ডিসেম্বর তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছিল, যে চিনের উহানে সার্সের মতো একটা মারণ-রোগের সংক্রমণ হতে চলেছে । বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা Covid-19 কে জনস্বাস্থ্যের বিপদ বলে ঘোষণা করার নয় দিন আগেই এই হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়। ব্লু ডট সিস্টেম মান্দারিন ভাষায় লেখা একটি প্রতিবেদন সম্পর্কে আধিকারিকদের সতর্ক করেছিল, যেখানে লেখা ছিল যে উহানের বাজারে যাওয়ার পর 27 জন মারাত্মক নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন । ব্লু ডটের 40 জন কর্মীর মধ্যে রয়েছেন চিকিৎসক, পশু চিকিৎসক, সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ, ডেটা বিশেষজ্ঞ এবং সফটওয়্যার ডেভলপাররা । ন্যাচরাল ল্যাঙ্গুয়েজ প্রসেসিং এবং মেশিন লার্নিং প্রযুক্তির মাধ্যমে 65 টি ভাষায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের বিশ্লেষণ করেন তাঁরা। কোনও সংক্রমণের চিহ্ন দেখা গেলেই তাঁদের কাছে সতর্কবার্তা আসে । এই ব্লু ডটই 2016 সালে ব্রাজিল থেকে জিকা ভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপারে আমেরিকাকে সতর্ক করেছিল ।

চিনের 80 শতাংশ কেনাবেচাই ক্যাশলেস । আলি পে বা উইচ্যাটের মতো অ্যাপের মাধ্যমে এটা করা হয়ে থাকে । চিনের আধিকারিকরা এই তথ্য তাঁদের নাগরিকদের গতিবিধির ওপর নজর রাখতে ক্রমাগত ব্যবহার করছেন, এবং সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছেন । চিনের কমিউনিস্ট পার্টি ফেস রেকগনিশন প্রযুক্তি ব্যবহার করে নজরদারি চালাচ্ছে । এই ফেসিয়াল রেকগনিশন ক্যামেরার সঙ্গে থার্মাল সেন্সরও যুক্ত করা হয়েছে, যাতে কোনও ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রাও জানা যায় । সেন্স টাইম নামে একটি সংস্থা এই প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার জোগান দিচ্ছে । সিচুয়ান প্রদেশে থার্মাল সেন্সর লাগানো স্মার্ট হেলমেটও বিলি করা হয়েছে । বিগ ডেটা এবং আর্টিফিশিয়াল ইনটেলিজেন্সের মতো অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে চিন সরকার একটা বিস্তৃত নজরদারি ব্যবস্থা গড়ে তুলেছে, যাকে হেলথ কোড বলা হচ্ছে । এই কোড রোগীদের ভ্রমণের বিবরণ, আক্রান্তদের সংস্পর্শে আসার সময়সীমার হদিশ পেতে সরকারকে সাহায্য করে । আলি পে এবং উইচ্যাটের মতো অ্যাপ বাইরে বেরোনো বা ঘরে কোয়ারেন্টিনে থাকা মানুষকে সাহায্য করছে । এইসব অ্যাপে লাল, হলুদ ও সবুজ কোড দেওয়া আছে । নাগরিকরা দেখতে পারেন যে তাঁদের এলাকাটা কোন কালার কোডে রয়েছে, এবং তার থেকে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন যে আরও কোয়ারান্টাইনে থাকবেন কি না ।

টেনসেন্ট গ্রুপের তৈরি উইচ্যাট চিনা নাগরিকদের কাছে স্বাস্থ্য সম্পর্কিত খবরাখবর পৌঁছে দিচ্ছে । পর্যটনের ক্ষেত্রে চ্যাটবট ব্যবহার করে তারা বিমান ও ট্রেনের সেই মুহূর্তের ছবিটা জানিয়ে দিচ্ছে । হুয়াসেই, টেনসেন্ট এবং DD-র সুপারকম্পিউটারগুলো Covid-19 এর ওষুধ খোঁজার কাজে গবেষকদের সাহায্য করছে । হংকং থেকে ইজরায়েল হয়ে আমেরিকা, সব জায়গায় কোরোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন খোঁজার কাজে ব্যবহত হচ্ছে AI এবং মেশিন লার্নিং প্রযুক্তি । যদি এইসব গবেষণা সফলও হয়, তা সত্ত্বেও ভ্যাকসিন মানুষের কাছে পৌঁছতে আরও একটা বছর লেগে যাবে । এর মধ্যে ভালো খবর পাওয়া গেছে ইজ়রায়েল থেকে । ইজ়রায়েলের মিগুয়েল ইনস্টিটিউট মুরগির শ্বাসকষ্টজনিত অসুখের নিরাময় খুঁজতে গবেষণা চালাচ্ছিল । এখানকার বিজ্ঞানীরা নির্দিষ্ট একধরণের কোরোনা ভাইরাসের ওপর পরীক্ষানীরিক্ষা করছিলেন, যার DNA-র গঠন কোরোনা ভাইরাসের অনেকটা কাছাকাছি । মিগুয়েল ইনস্টিটিউট ঘোষণা করেছে, যে তাদের গবেষণা সফল হলে, তিন মাসের মধ্যেই তারা একটা ভ্যাকসিন সামনে আনতে পারে । ভ্যাকসিনের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে গোটা বিশ্ব । কোরোনা সংক্রমণ চিহ্নিত করতে চিনের হাসপাতালগুলিকে প্রতিদিন অন্তত 1000 সিটি স্ক্যান করতে হচ্ছে । ইনফর ভিশন কোম্পানির AI প্রযুক্তি এইসমস্ত স্ক্যানে দ্রুত ফলাফল পেতে সাহায্য করছে । স্বাস্থ্য বিমার টাকা দ্রুত পাইয়ে দিতে ব্লকচেন প্রযুক্তি ব্যবহার করছে আলিবাবা গোষ্ঠীর অ্যান্টি-ফিনানশিয়ালস ।

এই সমস্ত পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে, হাসপাতাল কর্মীদের সঙ্গে রোগীদের যোগাযোগের সময়টা অনেকটাই কমিয়ে আনা গেছে । যেহেতু ভাইরাস রোবটদের সংক্রমিত করে না, তাই তাদের ব্যবহার করা হচ্ছে বিভিন্ন বাড়ি ও জনসাধারণের জন্য নির্দিষ্ট জায়গাগুলি সংক্রমণমুক্ত করার কাজে । চিনের পুডু টেকনোলজি এই রোবটগুলিকে তৈরি করেছে, যাদের ব্যবহার করা হচ্ছে রোগীদের খাবার এবং ওষুধ পৌঁছে দেওয়ার কাজে । টেরা কোম্পানির তৈরি ড্রোনের মাধ্যমে পরীক্ষার ফলাফল এবং কোয়ারান্টাইন উপকরণ পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে । জমায়েত এবং সংক্রমণ এড়াতে তারা বিভিন্ন এলাকার ওপর ক্রমাগত নজরদারি চালাচ্ছে ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.