দিল্লি, 7 অগাস্ট : "মঙ্গলে আটকে পড়লেও উদ্ধার করবে ভারতীয় দূতাবাস" ৷ মজা করে কথাটা বললেও যখনই যেখানে কেউ বিপদে পড়েছে অভিভাবকের মতো পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি ৷ তাই তো বিদেশমন্ত্রী থেকে তিনি হয়ে ওঠেছিলেন ভারতের "সুপার মম"৷
2014 সালে বিদেশমন্ত্রকের দায়িত্ব পাওয়ার পরই সোশাল মিডিয়াকে অন্যভাবে কাজে লাগিয়েছিলেন সুষমা স্বরাজ ৷ সবসময় সোশাল মিডিয়ায় সক্রিয় থাকতেন ৷ সাহায্য করার জন্য থাকতেন প্রস্তুত ৷ শুধু দেশের নাগরিক বা অনাবাসী ভারতীয় নয়, বিদেশিদের জন্যও ছিল তাঁর অবারিত দ্বার ৷
2017 সাল ৷ পাকিস্তানের শিশু শিরিন সিরাজ়ের ওপেন হার্ট সার্জারির জন্য একবছরের মেডিকেল ভিসা মঞ্জুর করেছিলেন ৷ সেই বছরই মেডিকেল ভিসা দিয়ে পাকিস্তানের আরও দুই নাগরিকের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি ৷

শুধু পাকিস্তানের নাগরিক নয়, ইয়েমেনের এক মহিলাকেও সাহায্য করেছিলেন তিনি ৷ আট মাসের সন্তানের ছবি দিয়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকা থেকে তাঁদের উদ্ধারের জন্য আবেদন করেছিলেন ওই মহিলা ৷ সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করেন তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী ৷ উদ্ধার করা হয় তাঁদের ৷
বিদেশে ভারতীয়রা যখনই বিপদে পড়েছে পাশে পেয়েছেন সুষমাজিকে ৷ 2015-র ফেব্রুয়ারিতে ইরানে আটকে পড়া 168 ভারতীয়কে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছিল তাঁরই তৎপরতায় ৷ সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা একটি ভিডিয়োর উপর ভিত্তি করেই তাঁদের উদ্ধারে সচেষ্ট হয়েছিলেন ৷ সেই বছরই জার্মানির বার্লিনে পাসপোর্টসহ ওয়ালেট হারিয়ে ফেলা এক ভারতীয়কে সাহায্য করেছিলেন তিনি৷
সালটা 2016 ৷ দোহা বিমানবন্দরে আটকে পড়েছিল তার ভাই ৷ এক যুবকের কাতর আবেদনে সঙ্গে সঙ্গে সাড়া দিয়েছিলেন তৎকালীন বিদেশমন্ত্রী৷

2018-র কথা ৷ কয়েকদিন পরই বিয়ে ৷ কিন্তু, পাসপোর্টের জন্য অ্যামেরিকা থেকে দেশে ফিরতে পারছিলেন না এক যুবক ৷ সাহায্য চাইতেই এগিয়ে আসেন তিনি ৷
2016 সালে যখন তাঁর কিডনি প্রতিস্থাপন হয়েছিল তখনও SOS মেসেজের মাধ্যমে একজনকে সাহায্য করেছিলেন ।
15 বছর পাকিস্তানে আটকে থাকার পর দেশে ফিরেছিল মূক ও বধির গীতা ৷ তার পরিবারকে খুঁজতে সাহায্য করেছিলেন সুষমা স্বরাজ ৷ তার জন্য পাত্র খোঁজাও শুরু করেন তিনি ৷
এভাবেই তাঁর একের পর এক পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন সুষমা স্বরাজ ৷ জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন তাঁর মন্ত্রককেও ৷ অনায়াসে তাঁকে ভারতের "সুপার মম" আখ্যা দিয়েছিল বিদেশের এক সংবাদপত্র ৷ পাকিস্তানের এক ব্যক্তি ভাইঝির জন্য ভিসার আবেদন করতে গিয়ে সুষমা স্বরাজকে উদ্দেশ্য করে লিখেছিলেন, "আল্লার পর আপনিই শেষ ভরসা৷"
তাঁর এই কাজের প্রশংসা না করে থাকতে পারেননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ বলেছিলেন, বিদেশ মন্ত্রক তথা সরকারকে মানবিক মুখ দিয়েছিলেন সুষমাজি ৷ তাঁর কাজের উদাহরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, একেই বলে সুপ্রশাসন ৷ আর তাঁর প্রয়াণের পর প্রধানমন্ত্রীর শোকবার্তায় উঠে এসেছে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজেরই কথা ৷