দিল্লি, 27 নভেম্বর : টোল প্লাজ়াগুলিতে যানজট কমাতে, যানবাহনের নির্বিঘ্নে চলাচলের জন্য এবং টাকা আদায়ের সুবিধার কথা ভেবে ন্যাশনাল ইলেকট্রনিক টোল কালেকশন প্রোগ্রামের ব্যবহার শুরু করেছে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথোরিটি অফ ইন্ডিয়া ৷ ডিজিটাল লেনদেন বাড়ানোর জন্য ও স্বচ্ছতা আনার জন্য জাতীয় সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রক এই পরিষেবা বাধ্যতামূলক করতে চলেছে ৷ চলতি বছরের 1 ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সড়কের টোল প্লাজ়ার সমস্ত রাস্তাকে (লেন) ফাস্ট-ট্যাগ লেন হিসেবে ঘোষণা করা হবে ৷ 1 ডিসেম্বর থেকে 100 শতাংশ ডিজিটাল টোল লেনদেনের রূপান্তর নিশ্চিত করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে জাতীয় সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রক ৷
ফাস্ট-ট্যাগ সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করতে একটি দেশজুড়ে প্রচারও শুরু করেছিল জাতীয় সড়ক ও পরিবহন মন্ত্রক ৷ 14 অক্টোবর থেকে এই প্রচার শুরু হয় ৷ নাম দেওয়া হয় 'ওয়ান নেশন ওয়ান ট্যাগ- ফাস্ট ট্যাগ' ৷ চলতি বছরের 1 নভেম্বর থেকে বিভিন্ন টোল প্লাজ়াগুলিতে পরীক্ষামূলকভাবে এই ফাস্ট-ট্যাগের ব্যবহার শুরু করা হয় ৷
জাতীয় সড়ক ফি (হার ও সংগ্রহ নির্ধারণ) বিধিমালা, 2008 অনুসারে, টোল প্লাজ়ায় ফাস্ট-ট্যাগ লেনটি শুধুমাত্র ফাস্ট-ট্যাগ ব্যবহারকারীদের চলাচলের জন্য সংরক্ষিত ৷ ফাস্ট-ট্যাগ ব্যবহার করেন না এমন কেউ এই লেন পেরোলে দ্বিগুণ চার্জ দিতে হবে ৷
বৈদ্যুতিন টোল সংগ্রহ (ETC) বা ফাস্ট-ট্যাগ (FASTag) কী?
জাতীয় সড়কগুলির টোল প্লাজ়াগুলিতে ইলেকট্রনিক টোল সংগ্রহের জন্য একটি নতুন প্রোগ্রাম শুরু করতে চলেছে ন্যাশনাল হাইওয়ে অথোরিটি অফ ইন্ডিয়া ৷
ফাস্ট-ট্যাগ হল এমন একটি যন্ত্র, যার মধ্যে রয়েছে রেডিয়ো ফ্রিকুয়েন্সি আইডেন্টিফিকেশন টেকনোলজি ৷ এই যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত প্রিপেইড অ্যাকাউন্ট থেকে সরাসরি টোল কর দেওয়া যাবে ৷ এটি গাড়ির উইন্ড স্ক্রিনে লাগানো থাকবে এবং এর সাহায্যে যে কেউ খুব সহজেই টাকা দিয়ে প্লাজ়াগুলি পেরোতে পারবেন ৷ ফাস্ট-ট্যাগের মেয়াদ পাঁচ বছরের ৷ এটি কেনার পর আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী, শুধু এই যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত প্রিপেইড অ্যাকাউন্টটি রিচার্জ করলেই হবে ৷
টোল প্লাজ়াগুলিতে যানজট দূর করতে ও নগদহীন টাকা প্রদানের মাধ্যমে দেশব্যাপী অন্তর্চালিত বৈদ্যুতিন টোল সংগ্রহ পরিষেবা দেবে এই ফাস্ট-ট্যাগ ৷
ফাস্ট-ট্যাগ ব্যবহারের সুবিধা কী?
- টাকা দেওয়ার সুবিধা- টোল কর দেওয়ার জন্য সঙ্গে নগদ রাখার প্রয়োজন নেই ৷ এটি সময়ও বাঁচায় ৷
- যানবাহনগুলির একটানা চলাচলের ফলে জ্বালানির ব্যয়ও কম হবে ৷
- অনলাইন রিচার্জ-ক্রেডিট কার্ড/ ডেবিট কার্ড/ NEFT/ RTGS বা নেট ব্যাঙ্কিংয়ের মাধ্যমে ফাস্ট-ট্যাগ রিচার্জ করা যাবে ৷
- টোল লেনদেন, কম ব্যালেন্স সব কিছু SMS-র মাধ্যমে জানা যাবে ৷
- গ্রাহকদের জন্য অনলাইন পোর্টালের ব্যবস্থা ৷
- পাঁচ বছরের মেয়াদ থাকবে ৷
- ইনসেন্টিভ : টোলের টাকা ফাস্ট ট্যাগের মাধ্যমে দিলে 10 শতাংশ ক্যাশব্যাক পেতে পারেন ৷
- অন্যান্য সুবিধাগুলির মধ্যে রয়েছে-
a) পরিবেশগত সুবিধা- বায়ুদূষণ হ্রাস, কাগজের ব্যবহার হ্রাস
b) সামাজিক সুবিধা- টোলের টাকা দেওয়ার কম ঝামেলা, জাতীয় সড়কের উন্নত পরিচালনার জন্য বিশ্লেষণ
c) অর্থনৈতিক সুবিধা- টোল প্লাজ়ায় ম্যানেজমেন্টের ক্ষেত্রে কম প্রচেষ্টা, কেন্দ্রীয়ভাবে পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রেও কম প্রচেষ্টা
ফাস্ট-ট্যাগ ব্যবহার করলে কোনও আর্থিক ছাড় পাওয়া যাবে কি না?
ফাস্ট-ট্যাগ ব্যবহার করে টোল টাকা দিলে গ্রাহকরা 10 শতাংশ ক্যাশব্যাক পেতে পারেন ৷ একটি নির্দিষ্ট মাসের ক্যাশব্যাকের পরিমাণ পরবর্তী মাসের এক সপ্তাহের মধ্যে আপনার ফাস্ট-ট্যাগ অ্যাকাউন্টে জমা দেওয়া হবে ৷
ফাস্ট-ট্যাগ পরিষেবা কি বাধ্যতামূলক এবং কোনও নির্দিষ্ট ধরনের যানবাহনের জন্যই কি ফাস্ট-ট্যাগ?
বর্তমানে এই পরিষেবা বাধ্যতামূলক নয় ৷ তবে, ভবিষ্যতে এটি কয়েকটি জায়গায় বাধ্যতামূলক করা হবে ৷ ফাস্ট-ট্যাগ পরিষেবা সমস্ত ধরনের গাড়ির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য ৷
কারা এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে?
ইন্ডিয়ান হাইওয়েজ় ম্যানেজমেন্ট কম্পানি লিমিটেড (IHMCL) এবং ন্যাশনাল পেইমেন্ট কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া (NPCI) এই কর্মসূচির দায়িত্বে রয়েছে ৷ টোল প্লাজ়ার ছাড়পত্র, ফাস্ট ট্যাগ ইসুয়ার এজেন্সিগুলি ও টোল ট্রানজ়কশন অকুয়ারার (নির্বাচিত ব্যাঙ্ক)-র সহায়তায় এই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে ৷
ফাস্ট-ট্যাগের চার্জ কী?
ফাস্ট ট্যাগের এককালীন চার্জ 200 টাকা ৷ রিফান্ডেবল সিকিউরিটি ডিপোজ়িট গাড়ির ধরনের উপর নির্ভর করবে ৷
কীভাবে ফাস্ট ট্যাগ কেনা যাবে এবং তার জন্য কী কী তথ্য লাগবে?
টোল প্লাজ়া বা 28,500টি পয়েন্ট অফ সেলে ফাস্ট ট্যাগ তৈরি করা যাচ্ছে ৷ সাতটি ব্যাঙ্কে বর্তমানে ফাস্ট-ট্যাগের সঙ্গে লিঙ্ক করা হচ্ছে ৷ এছাড়া, টোল প্লাজ়া ও অ্যামাজ়ন ইন্ডিয়াতেও কেনা যাচ্ছে ফাস্ট-ট্যাগ ৷ কার্ড রিচার্জ করার জন্য গ্রাহকরা 'মাই ফাস্ট ট্যাগ' অ্যাপটিও ব্যবহার করতে পারেন ৷ ভবিষ্যতে 12 হাজার বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলিতেও ফাস্ট-ট্যাগ পাওয়া যাবে ৷
ফাস্ট-ট্যাগের আবেদন পত্রের সঙ্গে এই তথ্যগুলি দিতে হবে-
- গাড়ির রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট
- গাড়ির মালিকের পাসপোর্ট সাইজ় ছবি
- গাড়ির মালিকের KYC তথ্য
এছাড়া, পরিচয় পত্র হিসেবে ও অ্যাড্রেস প্রুফ হিসিবে ড্রাইভিং লাইসেন্স, প্যান কার্ড, পাসপোর্ট, ভোটার ID কার্ড বা আধার কার্ড ৷
কেউ যদি টোল প্লাজ়ার 10 কিলোমিটারের মধ্যে বসবাস করে তহালে কি স্থানীয় গাড়িতে ছাড় পাওয়ার জন্য ফাস্ট ট্যাগ ব্যবহার করার দরকার আছে?
আপনি যদি টোল প্লাজ়ার 10 কিলোমিটারের মধ্যে থাকেন, তবে আপনার ফাস্ট ট্যাগের মাধ্যমে দেওয়া টোলে ছাড় পেতে পারেন ৷ এক্ষেত্রে আপনাকে প্রয়োজনীয় নথি জমা দিতে হবে ৷ আপনার ঠিকানা নির্দিষ্ট টোল প্লাজ়ার 10 কিলোমিটারের মধ্যে রয়েছে কি না তা যাচাই করার জন্য কাছের POS লোকেশন ও ব্যাঙ্কের প্রমাণপত্র দেখাতে হবে ৷ একবার ঠিকানা যাচাই হয়ে গেলে, আপনি আপনার গাড়িতে নির্ধারিত ফাস্ট ট্যাগের মাধ্যমে প্রদত্ত টোলটিতে ছাড় পেতে পারেন ৷
ফাস্ট-ট্যাগে সবথেকে কম কত টাকা রিচার্জ করা যাবে?
ফাস্ট-ট্যাগে সবথেকে কম 100 টাকা রিচার্জ করা যাবে ৷
দু'টি গাড়ি থাকলে কি একটিই ফাস্ট-ট্যাগ ব্যবহার করা যাবে?
না ৷ একজনের দু'টি গাড়ি থাকলে দু'টি আলাদা ফাস্ট-ট্যাগ প্রোগ্রাম নিতে হবে ৷