ETV Bharat / bharat

দোকানদার ছাড়াই চলছে দোকান - অতনু বিশ্বাস

দোকানদার নেই, তবু লোকসানও নেই । পাশে রাখা ক্যাশবাক্সে নির্ধারিত টাকা রেখে যাচ্ছেন ক্রেতারা । এমন দৃষ্টান্তই বারবার সামনে আসছে ।

shopp
shopp
author img

By

Published : Jul 3, 2020, 11:33 AM IST

Updated : Jul 3, 2020, 12:09 PM IST

আমাদের বাস স্টপের কাছের খবরের কাগজ বিক্রির স্ট্যান্ডটা বেশির ভাগ সময়ই বিক্রেতাহীন অবস্থায় থাকে । গ্রাহকরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী খবরের কাগজ নিয়ে এক কোণে রাখা ট্রে-তে টাকা রেখে চলে যান । বিষয়টি নিয়ে আমার কৌতূহল হয় । আমি দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেন, সারা দিন তিনি অন্য ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন । তিনি জলের জারের ব্যবসা করেন । এবং এর ফলে তিনি বেশির ভাগ সময় ওই স্ট্যান্ডে থাকতে পারেন না । কিন্তু এর ফলে কখনও তাঁকে খবরের কাগজের দাম নিয়ে ভাবতে হয়নি । সব সময় তিনি সঠিক মূল্যই পেয়েছেন ।

বিশ্বের যে কোনও প্রান্তের বেশির ভাগ মানুষই মোটামুটি ভাবে সৎ । কিন্তু খুব আশ্চর্যজনকভাবে সততার বিশেষ কিছু নিদর্শন মাঝেমধ্যে আমাদের সামনে উদয় হয় । উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, আইজ়ল থেকে 65 কিলোমিটার দূরে সেলিংয়ের হাইওয়ের পাশে স্থানীয় মানুষ এক ধরনের ব্যবসা করেন । একেবারেই তৃণমূলস্তরে হওয়া এই ব্যবসার স্থানীয় নাম, ‘এনগা লোউ দর কালচার’ । এই ব্যবসার মূল ভিত্তি হল সততা । বিক্রেতাহীন ছোটো ছোটো বাঁশের ঘরে ঝোলানো থাকে সাইনবোর্ড । তাতে কয়লা বা চক দিয়ে লেখা থাকে সেখানে কী ধরনের সামগ্রী পাওয়া যায় এবং সেগুলির দাম কত । সে সব দোকানে সবজি থেকে ফল, ফুল তো বটেই, মাঝেমধ্যে মেলে বোতলে ভরা ফলের রস, ছোটো শুকনো মাছ এমনকী তাজা শামুকও । ক্রেতারা সে সব সামগ্রী নিয়ে বোর্ডে লেখা অনুযায়ী দাম দিয়ে দেন । যদি প্রয়োজন হয়, ক্রেতারা টাকা ভাঙিয়ে ফেরতও নিয়ে নিতে পারেন । সততার নীতি এই ক্ষেত্রে 100 শতাংশ সফল । ঝুম চাষের সময় বিক্রেতারা সবাই তাঁদের ছোটো খামার বা বাগানে চাষের কাজে ব্যস্ত থাকেন । তাঁরা ওই সময় বাড়ির কাউকেই দোকানে রাখতে পারেন না । মিজ়োরামের এই এনগা লোউ দর-এর খবর সম্প্রতি খবরে আসে যখন এইটি নিয়ে ‘মাই হোম ইন্ডিয়া’ নামে একটি NGO এবং মিজ়োরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা টুইট করেন । টুইটে লেখা হয়, নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার একটা ভালো উপায় ।

এই ধরনের দোকানি ছাড়া দোকানের উদাহরণ আরও বেশ কিছু রয়েছে । নাগা্যান্ডের লেশেমি গ্রামের বেশ কিছু কৃষক ও গ্রামবাসীর মধ্যে এর চল রয়েছে । বেঙ্গালুরুর ‘ট্রাস্ট শপ’ চেন গ্রাহকদের জন্য প্যাকেটে ইডলি দোসা ব্যাটার, গমের চাপাটি এবং মালাবার পরোটার মতো তাজা দক্ষিণ ভারতীয় খাবার ২৪x৭ সরবরাহ করে । তাদের আয় হয় কখনও 90 শতাংশ, আবার কখনও 100 শতাংশ ! এমনই একটি বিক্রেতাহীন দোকান তামিলনাড়ুর পাপানাসমে গান্ধি জয়ন্তির দিন গত 20 বছর ধরে চলে আসছে । পাপানাসমের রোটারি ক্লাবের উদ্যোগে প্রতি বছর ওই দিন সেখানকার বাস স্ট্যান্ডকে অস্থায়ী একটি দোকানে পরিণত করা হয় । সেই দোকানে গৃহস্থের টুকিটাকি জিনিস থেকে লেখাপড়ার সামগ্রী, খাবারদাবারও মেলে । প্রতিটা জিনিসের সঙ্গে দামের ট্যাগ লাগানো থাকে । সেখানেই একটি টেবিলে ক্যাশবাক্স রাখা থাকে । সেখানে টাকা দিয়ে খুচরো টাকা ফেরতও নেওয়া যায় । বিশেষভাবে সক্ষমদের নিয়ে কাজ করা জনশক্তি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামে একটি NGO কেরলের সমুদ্র সৈকতের গ্রাম আঝিকোড়ের ভাঙ্কুলাথুভায়ালে এমনই একটি সেল্ফ সার্ভিস দোকান খোলে । সেখানে অবশ্য কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে CCTV ক্যামেরা লাগানো রয়েছে । চণ্ডীগড়ের ধানাসের গভর্নমেন্ট মডেল সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে অবশ্য কোনও CCTV লাগানো নেই । সেখানে রয়েছে শুধু একটি সাইনবোর্ড । তাতে লেখা রয়েছে, ‘নিজেকে নিজে সাহায্য করো এবং সৎভাবে মূল্য দাও’ । এই দোকানে নোটবুক, পেন, পেনসিল, প্রভৃতি পাওয়া যায় ।

জাপানের সমুদ্র সৈকতের বহু গ্রামে এইরকম বিক্রেতাহীন দোকানের খোঁজ মেলে । টোকিয়োর দক্ষিণের কানাগাওয়া পারফেকচারের ইয়ামাডা পরিবারের এমনই একটি দোকানে আবার ক্যালকুলেটর পর্যন্ত রাখা আছে যাতে ক্রেতারা নিজেরাই হিসাব করে নির্দিষ্ট কাঠের বাক্সে টাকা রেখে দিতে পারেন । সুইজ়ারল্যান্ডের গিম্মেলওয়াল্ড গ্রামের এমনই একটি বিক্রেতাহীন দোকান দেখে উদ্বুদ্ধ হন বিখ্যাত হোটেল মালিক ডেভিড ওয়াটারহাউজ । ‘দ্য অনেস্টি শপ’-এর আদলে তিনি টাওয়ার অব লন্ডনের কাছে তৈরি করেন ‘ট্রাস্টি’। এইটি আসলে একটি দোতলা বাস যেখানে বেশির ভাগ সামগ্রী বিক্রি হত 20 পাউন্ডের কম দামে । প্রতিদিন সকাল ও বিকালে নিয়ম করে এই বাসের স্টক ভরতি করা হত । কখনও এই দোকান থেকে কিছু খোয়া গিয়েছে বলে শোনা যায়নি ।

আরেকটা জিনিস নিশ্চই খেয়াল করেছেন যে, অনলাইন শপিংয়ের ক্ষেত্রে ‘বিশ্বাস’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শব্দ । পাশাপাশি কেবলমাত্র আস্থার উপর নির্ভর করে এই ধরনের সব বিক্রেতাহীন দোকান প্রমাণ করেছে যে, বিশ্বাসই আসল । আর এটা একটা খুবই ভালো ভাবনা, বিশেষ করে ভয়ঙ্কর সংক্রমণের এই সময়ে । তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, এই ধরনের বিক্রেতাহীন দোকান অর্থনৈতিকভাবে ভালো হলেও দেখতে হবে এর থেকে যদি কোনও ক্ষতি হয়, তা যেন সামগ্রিক লাভের থেকে কম হয় । পাশাপাশি এই দোকানের বিক্রেতার অবশ্যই অন্য লাভজনক পেশা থাকতে হবে । যেমন মিজ়োরামের ঝুম চাষি বা আমার এলাকার খবরের কাগজের দোকানি । সেই সব ক্ষেত্রে বিক্রেতাহীন দোকান চালানোর জন্য আঝিকোড়ের ভাঙ্কুলাথুভায়ালের মতো CCTV লাগানো যেতে পারে ।

তবে এই ব্যবস্থায় যে সব ধরনের ব্যবসা চলতে পারে না, তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় । যেমন, ধরা যাক ওষুধের দোকানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ওষুধ খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব । এই বিষয়ে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন । কোনও কোনও জিনিস বিক্রয়ের জন্য বিক্রেতার অবশ্যই প্রয়োজন । তবে, একেবারে সাধারণ জিনিসপত্রের ক্ষেত্রে যেমন, সবজি বা মুদির দোকানের সামগ্রী প্রভৃতির ক্ষেত্রে বিক্রেতাহীন দোকান অনেকের রোজগারের ক্ষতি করতে পারে । এবং খুব সাধারণভাবে দেখতে গেলে, এঁদের জন্য বিকল্প রোজগারের পথ খুঁজে বের করাও যথেষ্টই কঠিন । ‘বিশ্বাস’ শব্দটা শুনতে খুবই ভালো লাগলেও দোকানের ক্ষেত্রে বড় আকারে এটা ততটা পছন্দের বিষয় না হতেও পারে । উলটো দিকে, ছদ্ম বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে CCTV ক্যামেরা লাগানোর ফলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়াও আসতে পারে ।

(প্রতিবেদনটি লিখেছেন অতনু বিশ্বাস । তিনি কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইনস্টিটিউটের প্রফেসর অফ স্ট্যাটিসটিকস )

আমাদের বাস স্টপের কাছের খবরের কাগজ বিক্রির স্ট্যান্ডটা বেশির ভাগ সময়ই বিক্রেতাহীন অবস্থায় থাকে । গ্রাহকরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী খবরের কাগজ নিয়ে এক কোণে রাখা ট্রে-তে টাকা রেখে চলে যান । বিষয়টি নিয়ে আমার কৌতূহল হয় । আমি দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেন, সারা দিন তিনি অন্য ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন । তিনি জলের জারের ব্যবসা করেন । এবং এর ফলে তিনি বেশির ভাগ সময় ওই স্ট্যান্ডে থাকতে পারেন না । কিন্তু এর ফলে কখনও তাঁকে খবরের কাগজের দাম নিয়ে ভাবতে হয়নি । সব সময় তিনি সঠিক মূল্যই পেয়েছেন ।

বিশ্বের যে কোনও প্রান্তের বেশির ভাগ মানুষই মোটামুটি ভাবে সৎ । কিন্তু খুব আশ্চর্যজনকভাবে সততার বিশেষ কিছু নিদর্শন মাঝেমধ্যে আমাদের সামনে উদয় হয় । উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, আইজ়ল থেকে 65 কিলোমিটার দূরে সেলিংয়ের হাইওয়ের পাশে স্থানীয় মানুষ এক ধরনের ব্যবসা করেন । একেবারেই তৃণমূলস্তরে হওয়া এই ব্যবসার স্থানীয় নাম, ‘এনগা লোউ দর কালচার’ । এই ব্যবসার মূল ভিত্তি হল সততা । বিক্রেতাহীন ছোটো ছোটো বাঁশের ঘরে ঝোলানো থাকে সাইনবোর্ড । তাতে কয়লা বা চক দিয়ে লেখা থাকে সেখানে কী ধরনের সামগ্রী পাওয়া যায় এবং সেগুলির দাম কত । সে সব দোকানে সবজি থেকে ফল, ফুল তো বটেই, মাঝেমধ্যে মেলে বোতলে ভরা ফলের রস, ছোটো শুকনো মাছ এমনকী তাজা শামুকও । ক্রেতারা সে সব সামগ্রী নিয়ে বোর্ডে লেখা অনুযায়ী দাম দিয়ে দেন । যদি প্রয়োজন হয়, ক্রেতারা টাকা ভাঙিয়ে ফেরতও নিয়ে নিতে পারেন । সততার নীতি এই ক্ষেত্রে 100 শতাংশ সফল । ঝুম চাষের সময় বিক্রেতারা সবাই তাঁদের ছোটো খামার বা বাগানে চাষের কাজে ব্যস্ত থাকেন । তাঁরা ওই সময় বাড়ির কাউকেই দোকানে রাখতে পারেন না । মিজ়োরামের এই এনগা লোউ দর-এর খবর সম্প্রতি খবরে আসে যখন এইটি নিয়ে ‘মাই হোম ইন্ডিয়া’ নামে একটি NGO এবং মিজ়োরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা টুইট করেন । টুইটে লেখা হয়, নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার একটা ভালো উপায় ।

এই ধরনের দোকানি ছাড়া দোকানের উদাহরণ আরও বেশ কিছু রয়েছে । নাগা্যান্ডের লেশেমি গ্রামের বেশ কিছু কৃষক ও গ্রামবাসীর মধ্যে এর চল রয়েছে । বেঙ্গালুরুর ‘ট্রাস্ট শপ’ চেন গ্রাহকদের জন্য প্যাকেটে ইডলি দোসা ব্যাটার, গমের চাপাটি এবং মালাবার পরোটার মতো তাজা দক্ষিণ ভারতীয় খাবার ২৪x৭ সরবরাহ করে । তাদের আয় হয় কখনও 90 শতাংশ, আবার কখনও 100 শতাংশ ! এমনই একটি বিক্রেতাহীন দোকান তামিলনাড়ুর পাপানাসমে গান্ধি জয়ন্তির দিন গত 20 বছর ধরে চলে আসছে । পাপানাসমের রোটারি ক্লাবের উদ্যোগে প্রতি বছর ওই দিন সেখানকার বাস স্ট্যান্ডকে অস্থায়ী একটি দোকানে পরিণত করা হয় । সেই দোকানে গৃহস্থের টুকিটাকি জিনিস থেকে লেখাপড়ার সামগ্রী, খাবারদাবারও মেলে । প্রতিটা জিনিসের সঙ্গে দামের ট্যাগ লাগানো থাকে । সেখানেই একটি টেবিলে ক্যাশবাক্স রাখা থাকে । সেখানে টাকা দিয়ে খুচরো টাকা ফেরতও নেওয়া যায় । বিশেষভাবে সক্ষমদের নিয়ে কাজ করা জনশক্তি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামে একটি NGO কেরলের সমুদ্র সৈকতের গ্রাম আঝিকোড়ের ভাঙ্কুলাথুভায়ালে এমনই একটি সেল্ফ সার্ভিস দোকান খোলে । সেখানে অবশ্য কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে CCTV ক্যামেরা লাগানো রয়েছে । চণ্ডীগড়ের ধানাসের গভর্নমেন্ট মডেল সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে অবশ্য কোনও CCTV লাগানো নেই । সেখানে রয়েছে শুধু একটি সাইনবোর্ড । তাতে লেখা রয়েছে, ‘নিজেকে নিজে সাহায্য করো এবং সৎভাবে মূল্য দাও’ । এই দোকানে নোটবুক, পেন, পেনসিল, প্রভৃতি পাওয়া যায় ।

জাপানের সমুদ্র সৈকতের বহু গ্রামে এইরকম বিক্রেতাহীন দোকানের খোঁজ মেলে । টোকিয়োর দক্ষিণের কানাগাওয়া পারফেকচারের ইয়ামাডা পরিবারের এমনই একটি দোকানে আবার ক্যালকুলেটর পর্যন্ত রাখা আছে যাতে ক্রেতারা নিজেরাই হিসাব করে নির্দিষ্ট কাঠের বাক্সে টাকা রেখে দিতে পারেন । সুইজ়ারল্যান্ডের গিম্মেলওয়াল্ড গ্রামের এমনই একটি বিক্রেতাহীন দোকান দেখে উদ্বুদ্ধ হন বিখ্যাত হোটেল মালিক ডেভিড ওয়াটারহাউজ । ‘দ্য অনেস্টি শপ’-এর আদলে তিনি টাওয়ার অব লন্ডনের কাছে তৈরি করেন ‘ট্রাস্টি’। এইটি আসলে একটি দোতলা বাস যেখানে বেশির ভাগ সামগ্রী বিক্রি হত 20 পাউন্ডের কম দামে । প্রতিদিন সকাল ও বিকালে নিয়ম করে এই বাসের স্টক ভরতি করা হত । কখনও এই দোকান থেকে কিছু খোয়া গিয়েছে বলে শোনা যায়নি ।

আরেকটা জিনিস নিশ্চই খেয়াল করেছেন যে, অনলাইন শপিংয়ের ক্ষেত্রে ‘বিশ্বাস’ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শব্দ । পাশাপাশি কেবলমাত্র আস্থার উপর নির্ভর করে এই ধরনের সব বিক্রেতাহীন দোকান প্রমাণ করেছে যে, বিশ্বাসই আসল । আর এটা একটা খুবই ভালো ভাবনা, বিশেষ করে ভয়ঙ্কর সংক্রমণের এই সময়ে । তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, এই ধরনের বিক্রেতাহীন দোকান অর্থনৈতিকভাবে ভালো হলেও দেখতে হবে এর থেকে যদি কোনও ক্ষতি হয়, তা যেন সামগ্রিক লাভের থেকে কম হয় । পাশাপাশি এই দোকানের বিক্রেতার অবশ্যই অন্য লাভজনক পেশা থাকতে হবে । যেমন মিজ়োরামের ঝুম চাষি বা আমার এলাকার খবরের কাগজের দোকানি । সেই সব ক্ষেত্রে বিক্রেতাহীন দোকান চালানোর জন্য আঝিকোড়ের ভাঙ্কুলাথুভায়ালের মতো CCTV লাগানো যেতে পারে ।

তবে এই ব্যবস্থায় যে সব ধরনের ব্যবসা চলতে পারে না, তা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় । যেমন, ধরা যাক ওষুধের দোকানের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট ওষুধ খুঁজে পাওয়া প্রায় অসম্ভব । এই বিষয়ে অভিজ্ঞতার প্রয়োজন । কোনও কোনও জিনিস বিক্রয়ের জন্য বিক্রেতার অবশ্যই প্রয়োজন । তবে, একেবারে সাধারণ জিনিসপত্রের ক্ষেত্রে যেমন, সবজি বা মুদির দোকানের সামগ্রী প্রভৃতির ক্ষেত্রে বিক্রেতাহীন দোকান অনেকের রোজগারের ক্ষতি করতে পারে । এবং খুব সাধারণভাবে দেখতে গেলে, এঁদের জন্য বিকল্প রোজগারের পথ খুঁজে বের করাও যথেষ্টই কঠিন । ‘বিশ্বাস’ শব্দটা শুনতে খুবই ভালো লাগলেও দোকানের ক্ষেত্রে বড় আকারে এটা ততটা পছন্দের বিষয় না হতেও পারে । উলটো দিকে, ছদ্ম বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে CCTV ক্যামেরা লাগানোর ফলে অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়াও আসতে পারে ।

(প্রতিবেদনটি লিখেছেন অতনু বিশ্বাস । তিনি কলকাতার ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিসটিকাল ইনস্টিটিউটের প্রফেসর অফ স্ট্যাটিসটিকস )

Last Updated : Jul 3, 2020, 12:09 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.