কোঝিকোড়, 9 অগাস্ট : চোখের নিমেষে ঘটে গেল ঘটনাটা ৷ নিমেষে না হলেও এমনটাই মনে হল ৷ ঠিক যখনই মনে হতে শুরু করেছিল বাড়ি পৌঁছেছে তারা ৷ তখনই বিমানের চাকা পিছলে 35 ফুট খাদে পড়ে দু'টুকরো হয়ে গেল বিমানটি ৷ সঙ্গে ভেঙে চুরমার হয়ে গেল বাড়ি ফেরার স্বপ্ন ৷ ঠিক এমনভাবেই ঘটনাটিকে বর্ণনা করেছেন দুর্ঘটনায় বেঁচে ফেরা যাত্রীরা ৷
ওই বিমানটি দুবাই থেকে 148 জন যাত্রী নিয়ে দেশে ফিরছিল ৷ বন্দে ভারত মিশনের আওতায় এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের বিমানটি বিদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের নিয়ে দেশে ফিরছিল ৷ এরই মধ্যে কোঝিকোড়ে নামতে না নামতেই সেই ভয়ঙ্কর মূহুর্ত ৷ বিমানটি অবতরণের সময় চাকা পিছলে পড়ে যায় খাদে ৷ বিমানটি দু'টুকরো হয়ে যায় ৷ ঘটনায় মারা যায় 2 বিমান চালক সহ 18 জন যাত্রী ৷ চার কেবিন ক্রুসহ 172 জন যাত্রী প্রাণে বাঁচলেও দুঃস্বপ্নের সেই দিন ভুলতে সময় লাগবে তাদের ৷ পুলিশ আধিকারিক জানায়, 149 জন জখম যাত্রীকে ভরতি করা হয়েছে হাসপাতালে ৷ তাদের মধ্যে 16 জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক ৷ যে জখম যাত্রীরা স্বাভাবিক অবস্থায় এসেছে তাদের কাছে দিনটি ভয়াবহ ৷ তারা মানসিকভাবে বিধ্বস্ত ৷
রামসাদ ৷ সেদিনে বিমানে ছিলেন রামসাদ , তার স্ত্রী সুফিরা ও চার বছরের ছেলে সাই দিশেরিন ৷ তবে, তাদের কেউই গুরুতরভাবে জখম হননি ৷ তারা কোঝিকোড়ের কাছে ভাতাকারার বাসিন্দা ৷ রামসাদ বলেন, আমরা কিছুই বুঝতে পারছিলাম না কি হচ্ছিল ৷ শুধুমাত্র বুঝতে পারছিলাম বিমানটি ভয়ঙ্করভাবে নড়ছিল ৷
আসরাফ, পূর্ব কোঝিকোড়ের বাসিন্দা ৷ বর্তমানে সে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷ মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছে সে ৷ তার সুস্থ হতে সময় লাগবে ৷ দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া অন্য এক ব্যক্তি বলেন, বিমানটি খাদের পড়ার আগে জরুরীকালীন দরজা খুলে সবাই বাঁচতে খাদের কালো অন্ধকারে ঝাঁপ দিচ্ছিল ৷ বিমানটি মাটিতে পড়তেই জরুরীকালীন দরজা দিয়ে সবাই বেরোতে শুরু করে ৷
বিজয় মোহন, দুর্ঘটনায় আহত আরও এক যাত্রী ৷ মালাপারাম্বার বাসিন্দা ৷ তার গুরুতর আঘাত না লাগেনি ৷ সে কাছের বেসরকারি হাসপাতালে ভরতি ৷ সে জানায়, " দুর্ঘটনাটি একটা দুঃস্বপ্নের মতো ৷ বোঝা যাচ্ছিল না, স্বপ্ন দেখছি না কি সত্যিই হচ্ছে ৷ আমি ভেবেছিলাম , এটা দুঃস্বপ্ন ৷ যখন চোখ খুললাম , দেখলাম চারদিকে মেটালের টুকরো ভেঙে বিধ্বস্ত অবস্থায় পড়ে আছে ৷ " বিজয় মোহনের স্ত্রী জামানাও দুর্ঘটনায় জখম ৷ সে ICU - তে ভরতি ৷ তারা গত বছর ডিসেম্বর মাসে দুবাইতে তাদের ছেলের কাছে গেছিল ৷ কিন্তু কোরোনা প্যানডেমিকের কারণে সেখানেই আটকে পড়ে তারা ৷ রিয়াস নামের আর এক আহত ব্যক্তি জানায়, " বিমানবন্দরটিতে নামার আগে দু'বার বিমানবন্দরের উপরই পাক খায় বিমানটি ৷ তারপরের সেই দুর্ঘটনা ৷ সেই কয়েক মিনিটের মুহূর্তকে মনে হয় কয়েক ঘণ্টার মতো ৷ আমি পিছনের সিটে বসেছিলাম ৷ হঠাৎই খুব চিৎকার চেচামেচি হল ৷ তারপর বুঝতে পারিনি কী হয় ৷ "
ফতিমা নামের অন্য এক যাত্রী বলে, বিমানটি খুব জোরে মাটিতে পড়ে ও সামনের দিকে এগিয়ে যায় ৷ আশিক নামের আর এক যাত্রী, তার হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে ৷ সে ধন্যবাদ জানিয়েছে দমকল কর্মীদের ৷ দুর্ঘটনাস্থান থেকে তাদের উদ্ধার করার জন্য ৷ এছাড়াও স্থানীয়রাও বৃষ্টির মধ্যে কোরোনার কথা ভুলে পুলিশ ও দমকলকর্মীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে উদ্ধার করে আহতদের ৷ তাদেরও কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন আশিক ৷
বেসরকারি হাসপাতালের এক চিকিৎসক শিমনা আজ়ির চিকিৎসা করছেন আহত যাত্রীদের ৷ স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীদের দুর্ঘটনাগ্রস্তদের হাসপাতালে নিয়ে আসা ও তাদের সাহায্য করতে দেখে আশ্চর্য হয়েছেন তিনিও ৷ তিনি বলেন, " কোরোনা ভাইরাসকে তোয়াক্কা না করে , বৃষ্টিকে না মেনে উদ্ধার কাজে হাত লাগান তারা ৷ ভলান্টিয়ররা খুব ভালো কাজ করেছেন ৷ তাদের মাস্কও বৃষ্টিতে ভিজে গেছিল ৷ তাও নিস্বার্থভাবে তারা উদ্ধারকাজ চালিয়েছে ৷ "