দিল্লি, 18 জানুয়ারি : দিল্লি গণধর্ষণের অপরাধীদের মাফ করে দেওয়া হোক । নির্ভয়ার মায়ের কাছে আবেদন জানালেন বর্ষীয়ান আইনজীবী ইন্দিরা জয়সিং । উদাহরণ টানলেন সোনিয়া গান্ধিরও । যদিও সে আবেদনে নজর দিতে নারাজ আশা দেবী । তাঁর কথায়, এই ধরনের মানুষের জন্যই ধর্ষণের মতো অপরাধ বন্ধ হয় না । এমন আবেদন করার সাহস কোথা থেকে পেলেন তিনি ?
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হওয়ার পর গতকাল নির্ধারিত হয় নির্ভয়া মামলায় অপরাধীদের ফাঁসির তারিখ ৷ ফাঁসি দেওয়া হবে 1 ফেব্রুয়ারি । তারপরই দোষীদের মাফ করে দেওয়ার আবেদন জানান ইন্দিরা জয়সিং । একটি টুইটে তিনি লেখেন, আশা দেবীর অবস্থা আমি জানি, ওঁর কষ্টটাও আমি বুঝতে পারছি । কিন্তু তাও আমি আবেদন জানাচ্ছি, সোনিয়া গান্ধি যেভাবে রাজীব গান্ধি হত্যায় জড়িত মহিলাকে ক্ষমা করেছিলেন এবং তার মৃত্যুদণ্ড চান না বলে জানিয়েছিলেন, সেভাবে আশা দেবীও যদি এই অপরাধীদের ছেড়ে দেন ।
এবিষয়ে আশা দেবীকে প্রশ্ন করা হলে তিনি কড়া ভাষায় জানিয়ে দেন, আমি ভাবতে পারছি না এই রকম পরামর্শ তিনি দিলেন কী করে । এই ক'বছরে সুপ্রিম কোর্টে ওঁর সঙ্গে অনেকবার দেখা হয়েছে । আমি কেমন আছি তা তো একবারও জিজ্ঞেস করেননি । উলটে এমন ঘৃণ্য অপরাধে যারা জড়িত তাদের হয়ে উনি কথা বলছেন । এই ধরণের মানুষের জন্যই দেশে ধর্ষণ কমে না ।
নির্ভয়ার দোষীদের মৃত্যুদণ্ড বার বার পিছিয়ে যাওয়ার গতকালই ক্ষোভপ্রকাশ করেছেন তিনি । 1 ফেব্রুয়ারি ফাঁসির কথা শুনেও নির্ভয়ার মা সরব হন বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রিতার বিরুদ্ধে । আঙুল তোলেন সরকার ও সংশোধনাগার কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার প্রতি । তাঁর কথায়, ''তারিখ পে তারিখ, তারিখ পে তারিখ । দোষীরা যা চেয়েছিল তাই হচ্ছে । আমাদের পুরো ব্যবস্থাই এইরকম যেখানে দোষীদের কথা শোনা হয় ।''
এর পাশাপাশি কংগ্রেসে যোগ দিচ্ছেন এবং আসন্ন দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে লড়ছেন, এমন দাবিও খারিজ করেন আশা দেবী । তিনি গতকাল স্পষ্ট জানিয়ে দেন, ''রাজনীতির সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই তাঁর । বলেন, আমার রাজনীতিতে কোনও আগ্রহ নেই । আমি শুধু আমার মেয়ের ন্যায়বিচারের জন্য লড়ছি । এই দেশের মেয়েদের জন্য লড়ছি । আমি এখন চাই চার দোষীর ফাঁসি ।''
এই সংক্রান্ত আরও খবর : "তারিখ পে তারিখ", ক্ষোভপ্রকাশ নির্ভয়ার মায়ের
16 ডিসেম্বর, 2012 ৷ দক্ষিণ দিল্লিতে সিনেমা দেখে বাড়ি ফেরার সময় বেসরকারি বাসে ধর্ষিত হন নির্ভয়া । বাসে ছ'জন তাঁকে ধর্ষণ করার পর রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তায় ছুড়ে ফেলে দেয় । 17 ডিসেম্বর, 2012 । ছ’জন অপরাধীর মধ্যে চারজন রাম সিং, পবন গুপ্তা, বিনয় শর্মা এবং মুকেশ সিংকে শনাক্ত করা হয় । পরদিনই গ্রেপ্তার হয় চারজন । 21 ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হয় পাঁচ নম্বর অভিযুক্ত অক্ষয় ঠাকুর । 29 ডিসেম্বর, 2012 সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মারা যান নির্ভয়া । চিকিৎসকরা যথাসাধ্য চেষ্টা করলেও তাঁর শরীরের ক্ষত গভীর হওয়ায় মৃত্যুর কাছে হেরে যান । দেশজুড়ে শুরু হয় প্রতিবাদ । দোষীদের শাস্তির দাবিতে উত্তাল হয় দেশ । শুরু হয় বিচার প্রক্রিয়া ।
এই সংক্রান্ত আরও খবর : 1 ফেব্রুয়ারি নির্ভয়া দোষীদের ফাঁসি
দোষীদের শাস্তির দাবিতে যারা 2012-তে মিছিলে হেঁটেছিলেন, লড়েছিলেন, আন্দোলন-প্রতিবাদে মুখর হয়েছিলেন, তাঁরাই আজ নির্ভয়া গণধর্ষণ মামলা নিয়ে রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার চেষ্টা করছেন বলেও গতকাল অভিযোগ তোলেন আশা দেবী ।
এই সংক্রান্ত আরও খবর : নাবালকত্ব প্রমাণ করতে সুপ্রিম কোর্টে নির্ভয়াকাণ্ডে দোষী পবন