একটি জাতীয় সংবাদমাধ্যমের ই-সংস্করণে একটি বিজ্ঞাপন দেখা যায় কয়েকদিন আগে । বিজ্ঞাপনটি নর্দার্ন ইন্ডিয়া টেক্সটাইল মিল অ্যাসোশিয়েশনের দেওয়া । বিজ্ঞাপনটিতে দেশের বস্ত্রশিল্পে চলা মন্দার বিষয়টি তুলে ধরা হয় । দেশের 10 কোটি মানুষের জীবনযাপন নির্ভর করে এই শিল্পের উপর । একইরকম আরও একটি বিজ্ঞাপন দেখা যায় অন্য একটি সংবাদপত্রে । সেই বিজ্ঞাপনটি দেওয়া হয়েছিল ইন্ডিয়ান টি অ্যাসোশিয়েশনের তরফে । সেই বিজ্ঞাপনে বলা হয়, চলতি অবস্থায় চা শিল্পের মন্দার কারণে এর সঙ্গে যুক্ত 10 লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সংকটের মুখে । এছাড়া পার্লে কম্পানির দুর্দশার কথা জানা ।
গত কয়েক বছরে দেশের অর্থনীতির গতি অনেকটা নেমে গেছে । দেশের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ গত সপ্তাহে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন সাংবাদিক বৈঠকে দেশের অর্থনীতির খতিয়ান তুলে ধরেন । অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে নানা পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন । যদিও দেশের GDP-র অবস্থা খারাপ, এই কথা মানতে রাজি হননি । তাঁর ব্যাখ্যা ছিল, বিশ্বের উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোতেও মন্দা চলছে ।
সম্প্রতি দেশের অর্ডন্যান্স কারখানা সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার । এর মাধ্যমে দেশে চলতে থাকা অর্থনীতির ধীরগতিকে বেগ দিতে চাইছে সরকার । তবে সরকারের এই পদক্ষেপ কি দেশের অর্থনীতির অনুকূল? প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে ।
পরিসংখ্যান বলছে, গত 45 বছরের মধ্যে এখন দেশে বেকারের সংখ্যা সব থেকে বেশি । অর্থনীতিবিদদের একাংশ বলছে, ভারতকে 5 লাখ কোটি টাকার অর্থনীতিতে নিয়ে যাওয়ার যে কথা সরকার বলেছে, তার বাস্তবায়ন সম্ভব একমাত্র গান্ধির পথেই । সেই পথে সমবণ্টন ও গ্রামগুলিকে স্বনির্ভর করে তোলার মাধ্যমেই দেশের প্রকৃত উন্নয়ন সম্ভব ।
গান্ধির অর্থনৈতিক উন্নয়নের মূল মন্ত্র ছিল, "গণ উৎপাদন নয়, জনগণের দ্বারা উৎপাদন প্রয়োজন ।" তাঁর অর্থনৈতিক চিন্তাধারা অর্থনৈতিক বিকাশের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন বিষয়কে একত্রিত করার একটি প্রচেষ্টা । নৈতিকতা ও অর্থনীতি, উন্নয়ন ও সমতা, সম্পদ সৃষ্টি ও বিতরণকে একত্রিত করার চেষ্টা করেছিলেন গান্ধি । তাঁর অর্থনৈতিক চিন্তাধারার মূল নীতি ছিল যে, একটি অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ায় সবার সমান সুযোগ থাকা উচিত ।
ভারতের অর্থনীতির গতিবিধি পরিবর্তিত হয় 1990-এর দশকে । দেশকে দেওলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে ভারত উদার অর্থনীতির পথ বেছে নেয় । এর জেরে গান্ধির অর্থনীতির পথ থেকে আরও সরে যায় ভারতের অর্থনীতি । বর্তমান সরকার আরও সরে যাচ্ছে গান্ধির নীতি থেকে । তাই অর্থনীতিবিদদের একাংশের দাবি, ভারতের অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে ফের একবার গান্ধিনীতির প্রয়োগ দরকার ।