ETV Bharat / bharat

"কোয়াড"-র উদ্দেশ্য কাউকে চমকানো নয় : প্রাক্তন নৌসেনা আধিকারিক

"প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবার জন্য সুরক্ষা ও উন্নতির বিষয়ে জোর দিয়ে আসছেন ৷ আমরাও তাই বিশ্বের এই এলাকায় সমুদ্র অঞ্চলে এমন পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছি যাতে অর্থনীতির উন্নতির স্বার্থে সব দেশ স্বাধীনভাবে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সমুদ্রপথ ব্যবহার করতে পারে এবং মাদক পাচার, জলদস্যুদের দাপট বন্ধ হয় ৷ কেউ যেন মনে না করে যে, এই মহড়ার মাধ্যমে আমরা কাউকে চমকাতে চাইছি ৷"

author img

By

Published : Oct 8, 2019, 3:06 PM IST

নৌ সেনা

নিউইয়র্কে গতমাসে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে "কোয়াড" (Quadrilateral Security Dialogue) - এর প্রথম বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয় ৷ প্রায় একই সময়ে জাপানের উপকূলে ভারত, অ্যামেরিকা ও জাপানের গুরুত্বপূর্ণ নৌ-মহড়া "মালাবার" অনুষ্ঠিত হয় ৷ এই মহড়ায় ভারতীয় নৌসেনার তরফে অংশ নিয়েছিল INS সহ্যাদ্রি, সাবমেরিন বিধ্বংসী করভেট INS কিলতান, বোয়িং P8I, নৌসেনার দূরপাল্লার টহলদারি বিমান ইত্যাদি ৷ সম্প্রতি ভারতীয় নৌসেনার মুখপাত্রর পদ থেকে অবসর নিয়েছেন ক্যাপ্টেন ডি কে শর্মা ৷ "কোয়াড" ও "মালাবার" মহড়ার গুরুত্ব, ভারত ও অ্যামেরিকার সামরিক সম্পর্ক নিয়ে তিনি কথা বললেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক স্মিতা শর্মার সঙ্গে ৷

প্রশ্ন : কোয়াড (Quadrilateral Security Dialogue) বা "চতুর্ভুজীয় সুরক্ষা সংলাপ" বিদেশমন্ত্রী স্তরে উন্নীত হয়েছে ৷ এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয়?

ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) ডি কে শর্মা : "কোয়াড" - কে কেউ যেন চার দেশের (ভারত, অ্যামেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া) মধ্যে সামরিক সমঝোতা বলে ভুল না করে ৷ তবে "কোয়াড"-এর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মালাবার নৌ-মহড়ায় জাপানকে সামিল করা হয়েছে ৷ জাপানকে সামিল করা হয়েছে কারণ সে দেশে অ্যামেরিকান সেনার যে বেস রয়েছে, তা মালাবার মহড়ার জন্য ব্যবহৃত হয় । আগে এই মহড়া মাঝেমধ্যে হত, এখন নিয়মিত হচ্ছে ৷
মালাবার নৌ-মহড়া ছাড়াও আমরা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে 2014, 2016 এবং 2019 সালে তিনটি মহড়া দিয়েছি ৷ এই ধরনের জটিল নৌ-মহড়ায় আমরা উন্নত যুদ্ধ জাহাজ, সাবমেরিন, হেলিকপ্টার ইত্যাদি ব্যবহার করি ৷ এছাড়া আমরা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আরও দুইটি মহড়া দিয়েছিলাম ৷ তাদের মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা পরিচালিত একটি মহড়ার নাম RIMPAC- RIM ৷ অন্যটি HADR ৷ তবে দ্বিতীয় মহড়ার উদ্দেশ্য ছিল দুর্গতদের ত্রাণ সরবরাহ ও সাহায্য করা ৷

প্রশ্ন : 70 তম জাতীয় দিবসের সামরিক কুচকাওয়াজের প্যারেডে চিন তাদের নতুন অস্ত্রসম্ভার প্রদর্শন করে কি বিশ্বকে বিশেষ কোনও বার্তা দিতে চেয়েছে ?

ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) ডি কে শর্মা : চিন সুপার পাওয়ার এবং তাদের উচ্চাভিলাষ রয়েছে । অস্ত্রসম্ভার সর্বদাই সব দেশ গর্বের সঙ্গে প্রদর্শন করে ৷ তবে হ্যাঁ, কোনও মিজ়াইল যদি 30 মিনিটে নির্দিষ্ট কোনও দেশে গিয়ে আঘাত হানতে সক্ষম হয়, তবে তা অবশ্যই ভাবার বিষয় ৷ তবে এগুলি বলা যত সহজ, করা ততটা নয় ৷ একমাত্র সময় বলবে, চিনের প্রদর্শিত নতুন অস্ত্রগুলি কতটা কার্যকরী ৷ পরিস্থিতি যদি সেরকম প্রতিকূল হয়, তবে সবারই সতর্ক হওয়া উচিত ৷

প্রশ্ন : বর্তমান বিশ্বে সামরিক সমঝোতার ক্ষেত্রে ভারত কি এখন অ্যামেরিকার শিবিরে অবস্থান করছে?

ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) ডি কে শর্মা : আমরা কোনও শিবিরে নেই ৷ তবে প্রয়োজনের ভিত্তিতে আমরা বিশেষ অবস্থান নিই ৷ আমরা কারও বিরুদ্ধে কোনও জোটে নেই ৷

প্রশ্ন : এই প্রথম ভারত ও অ্যামেরিকার মধ্যে ত্রিপার্শ্বিক (দুই দেশের স্থল, জল ও বায়ুসেনা অংশ নেবে ) মহড়া হতে যাচ্ছে, যা টু প্লাস টু ডায়ালগের ফল ৷ এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) ডি কে শর্মা : নভেম্বরে এই মহড়া হতে যাচ্ছে ৷ যদি আগামীদিনে দুই দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হয়, তবে এই ধরনের মহড়ার প্রয়োজন রয়েছে ৷ অ্যামেরিকা বা অন্য যে দেশগুলির সঙ্গে ভারত এই ধরনের মহড়া করছে, আগামীদিনে তা চালিয়ে যাওয়া উচিত ৷ এই ধরনের মহড়ার মাধ্যমে অন্য দেশের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা হয় ৷

প্রশ্ন : সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মালাবার মহড়ার কী পরিবর্তন হয়েছে ? এই মহড়ার মাধ্যমে অন্যদের কী ধরনের কৌশলগত বার্তা দেওয়া হচ্ছে ?

ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) ডি কে শর্মা : মালাবার মহড়া শুরু হওয়ার পর প্রায় দুই দশক কেটে গেছে । প্রথমদিকে ছোটো আকারে মহড়া হত ৷ অ্যামেরিকার নৌসেনা অল্প কিছু যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে আসত ৷ তবে এখন অনেক বড়মাপে এই মহড়া হয় ৷ জাপানের উপকূলে অ্যামেরিকার নৌবহর বরাবরই শক্তিশালী ৷ সেখানে রয়েছে অ্যামেরিকার তৃতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম নৌবহর ৷ ১৯৯০-এর দশকে ইন্দো-অ্যামেরিকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বার্থে এই মহড়া শুরু হয় ৷ তবে এটা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই যে, ভারত এই মহড়ায় কারও জোটসঙ্গী হিসেবে নয়, স্বাধীনভাবে অংশ নেয় ৷ দুই দেশের নৌ-সহযোগিতাকে আরও জোরদার করতে এবং নিজেদের সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মালাবার নৌ-মহড়ার আয়োজন করা হয় । মহড়ায় অংশগ্রহণকারী তিন দেশের (ভারত, অ্যামেরিকা ও জাপান) নৌ-আধিকারিকরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন । এইভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা পরস্পরের বিশ্বাস অর্জন করেছি ৷ এই আত্মবিশ্বাস ও সমঝোতা LEMOA (Logistics Exchange Memorandum of Agreement) এবং CISMOA (Communication and Information on Security Memorandum of Agreement) চুক্তির মাধ্যমে ক্রমশ জোরদার হচ্ছে ৷ সেজন্য মালাবার মহড়ায় এখন দুই দেশই বিমানবাহী জাহাজ, পারমাণবিক ডুবোজাহাজ ইত্যাদি ব্যবহার করছে ৷

এছাড়া আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল Indo-PACOM (United States Indo-Pacific Command) সমঝোতা, যার মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দুই দেশের (ভারত ও অ্যামেরিকা) সামরিক দায়িত্ব ক্রমশ বাড়ছে ৷ ভারতের উপর অ্যামেরিকার ভরসা রয়েছে বলেই এটা হচ্ছে ৷ অ্যামেরিকার নজর এখন দক্ষিণ চিন সাগরের দিকে, কারণ তারা জানে ওই এলাকায় রয়েছে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সামরিক শক্তি ৷

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবার জন্য সুরক্ষা ও উন্নতির বিষয়ে জোর দিয়ে আসছেন ৷ আমরাও তাই বিশ্বের এই এলাকায় সমুদ্র অঞ্চলে এমন পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছি যাতে অর্থনীতির উন্নতির স্বার্থে সব দেশ স্বাধীনভাবে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সমুদ্রপথ ব্যবহার করতে পারে এবং মাদক পাচার, জলদস্যুদের দাপট বন্ধ হয় ৷ কেউ যেন মনে না করে যে, এই মহড়ার মাধ্যমে আমরা কাউকে চমকাতে চাইছি ৷


প্রশ্ন : চিনকে আরও বড় কোনও বার্তা দেওয়ার আছে ?


ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) ডি কে শর্মা : 2008 সালে জলদস্যুদের দাপট বাড়ছিল উপসাগরীয় অঞ্চলে ৷ সেইসময় উপসাগরীয় অঞ্চলে জাহাজ পাঠাতে শুরু করে ভারতীয় নৌসেনা ৷ 2012 সালের পরে চিনের সেনাও 4-5টি করে জাহাজ একসঙ্গে পাঠাতে থাকে ৷ তারা ডুবোজাহাজও পাঠাতে শুরু করে ৷ সকলেই জানে যে, জলদস্যুদের দমনের জন্য সাবমেরিন পাঠানো শুরু করেনি চিন ৷ আসলে তারা জলের তাপমাত্রার হেরফের পরিমাপ করছিল ৷ শত্রুপক্ষের ডুবোজাহাজ ধ্বংসের জন্য কিছু তথ্য থাকা দরকার ৷ যার উপর ভিত্তি করে আপনি নিজের অস্ত্রসম্ভার ব্যবহার করতে পারেন ৷ তাই, জলদস্যু বিরোধী অভিযান হলে সমুদ্রপথের স্বাধীনতা রক্ষায় বিশ্বাসী সমস্ত শক্তিকে এক হতে হবে ৷ বাণিজ্যের জন্য সবাই ভারত মহাসাগর ব্যবহার করে ৷ কিন্তু, কেউ যদি পিছনে এইসব করে তা হলে তীব্র আপত্তি রয়েছে ৷ ভারত মহাসাগরকে নিজেদের বলে দাবি করছে চিন ৷ এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে সবার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে আমাদের ৷

photo
ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন মুখপাত্র ক্যাপ্টেন ডি কে শর্মা


প্রশ্ন : ভারত মহাসাগরে ক্ষেত্রে ভারতের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী ?

ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) ডি কে শর্মা : আমাদের কাছে কোনও চ্যালেঞ্জ নেই ৷ আমরা এখানে সবচেয়ে শক্তিশালী ৷ আমাদের কাছে বেশকিছু ভালো সম্পদ ও প্রযুক্তি আছে ৷ গত কয়েক বছরে ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় সহ যে কোনও ঘটনায় প্রথম পদক্ষেপ করেছে ভারতীয় নৌসেনা ৷ এটা ভারতের অবস্থানের জন্য সম্ভব হয়েছে ৷ মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মাদাগাসকার, মরিশাস, বাংলাদেশ, সেশলস্ বা মায়ানমারের কাছে এমন সম্পদ নেই ৷ ফলে তাদের সমস্যায় সবসময় সাহায্য করে ভারত ৷ আমাদের অসৎ উদ্দেশ্য নেই ৷ কোথাও গিয়ে কোনও জিনিস ছিনিয়ে নিই না ৷ আমাদের কর্মপদ্ধতি চিনের মতো নয় ৷

নিউইয়র্কে গতমাসে রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ অধিবেশনের ফাঁকে "কোয়াড" (Quadrilateral Security Dialogue) - এর প্রথম বিদেশমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক হয় ৷ প্রায় একই সময়ে জাপানের উপকূলে ভারত, অ্যামেরিকা ও জাপানের গুরুত্বপূর্ণ নৌ-মহড়া "মালাবার" অনুষ্ঠিত হয় ৷ এই মহড়ায় ভারতীয় নৌসেনার তরফে অংশ নিয়েছিল INS সহ্যাদ্রি, সাবমেরিন বিধ্বংসী করভেট INS কিলতান, বোয়িং P8I, নৌসেনার দূরপাল্লার টহলদারি বিমান ইত্যাদি ৷ সম্প্রতি ভারতীয় নৌসেনার মুখপাত্রর পদ থেকে অবসর নিয়েছেন ক্যাপ্টেন ডি কে শর্মা ৷ "কোয়াড" ও "মালাবার" মহড়ার গুরুত্ব, ভারত ও অ্যামেরিকার সামরিক সম্পর্ক নিয়ে তিনি কথা বললেন বর্ষীয়ান সাংবাদিক স্মিতা শর্মার সঙ্গে ৷

প্রশ্ন : কোয়াড (Quadrilateral Security Dialogue) বা "চতুর্ভুজীয় সুরক্ষা সংলাপ" বিদেশমন্ত্রী স্তরে উন্নীত হয়েছে ৷ এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ বলে আপনার মনে হয়?

ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) ডি কে শর্মা : "কোয়াড" - কে কেউ যেন চার দেশের (ভারত, অ্যামেরিকা, জাপান ও অস্ট্রেলিয়া) মধ্যে সামরিক সমঝোতা বলে ভুল না করে ৷ তবে "কোয়াড"-এর ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল মালাবার নৌ-মহড়ায় জাপানকে সামিল করা হয়েছে ৷ জাপানকে সামিল করা হয়েছে কারণ সে দেশে অ্যামেরিকান সেনার যে বেস রয়েছে, তা মালাবার মহড়ার জন্য ব্যবহৃত হয় । আগে এই মহড়া মাঝেমধ্যে হত, এখন নিয়মিত হচ্ছে ৷
মালাবার নৌ-মহড়া ছাড়াও আমরা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে 2014, 2016 এবং 2019 সালে তিনটি মহড়া দিয়েছি ৷ এই ধরনের জটিল নৌ-মহড়ায় আমরা উন্নত যুদ্ধ জাহাজ, সাবমেরিন, হেলিকপ্টার ইত্যাদি ব্যবহার করি ৷ এছাড়া আমরা অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আরও দুইটি মহড়া দিয়েছিলাম ৷ তাদের মধ্যে প্রশান্ত মহাসাগরে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র দ্বারা পরিচালিত একটি মহড়ার নাম RIMPAC- RIM ৷ অন্যটি HADR ৷ তবে দ্বিতীয় মহড়ার উদ্দেশ্য ছিল দুর্গতদের ত্রাণ সরবরাহ ও সাহায্য করা ৷

প্রশ্ন : 70 তম জাতীয় দিবসের সামরিক কুচকাওয়াজের প্যারেডে চিন তাদের নতুন অস্ত্রসম্ভার প্রদর্শন করে কি বিশ্বকে বিশেষ কোনও বার্তা দিতে চেয়েছে ?

ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) ডি কে শর্মা : চিন সুপার পাওয়ার এবং তাদের উচ্চাভিলাষ রয়েছে । অস্ত্রসম্ভার সর্বদাই সব দেশ গর্বের সঙ্গে প্রদর্শন করে ৷ তবে হ্যাঁ, কোনও মিজ়াইল যদি 30 মিনিটে নির্দিষ্ট কোনও দেশে গিয়ে আঘাত হানতে সক্ষম হয়, তবে তা অবশ্যই ভাবার বিষয় ৷ তবে এগুলি বলা যত সহজ, করা ততটা নয় ৷ একমাত্র সময় বলবে, চিনের প্রদর্শিত নতুন অস্ত্রগুলি কতটা কার্যকরী ৷ পরিস্থিতি যদি সেরকম প্রতিকূল হয়, তবে সবারই সতর্ক হওয়া উচিত ৷

প্রশ্ন : বর্তমান বিশ্বে সামরিক সমঝোতার ক্ষেত্রে ভারত কি এখন অ্যামেরিকার শিবিরে অবস্থান করছে?

ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) ডি কে শর্মা : আমরা কোনও শিবিরে নেই ৷ তবে প্রয়োজনের ভিত্তিতে আমরা বিশেষ অবস্থান নিই ৷ আমরা কারও বিরুদ্ধে কোনও জোটে নেই ৷

প্রশ্ন : এই প্রথম ভারত ও অ্যামেরিকার মধ্যে ত্রিপার্শ্বিক (দুই দেশের স্থল, জল ও বায়ুসেনা অংশ নেবে ) মহড়া হতে যাচ্ছে, যা টু প্লাস টু ডায়ালগের ফল ৷ এটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ?

ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) ডি কে শর্মা : নভেম্বরে এই মহড়া হতে যাচ্ছে ৷ যদি আগামীদিনে দুই দেশকে একসঙ্গে কাজ করতে হয়, তবে এই ধরনের মহড়ার প্রয়োজন রয়েছে ৷ অ্যামেরিকা বা অন্য যে দেশগুলির সঙ্গে ভারত এই ধরনের মহড়া করছে, আগামীদিনে তা চালিয়ে যাওয়া উচিত ৷ এই ধরনের মহড়ার মাধ্যমে অন্য দেশের কর্মপদ্ধতি সম্পর্কে আমাদের স্পষ্ট ধারণা হয় ৷

প্রশ্ন : সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মালাবার মহড়ার কী পরিবর্তন হয়েছে ? এই মহড়ার মাধ্যমে অন্যদের কী ধরনের কৌশলগত বার্তা দেওয়া হচ্ছে ?

ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) ডি কে শর্মা : মালাবার মহড়া শুরু হওয়ার পর প্রায় দুই দশক কেটে গেছে । প্রথমদিকে ছোটো আকারে মহড়া হত ৷ অ্যামেরিকার নৌসেনা অল্প কিছু যুদ্ধ জাহাজ নিয়ে আসত ৷ তবে এখন অনেক বড়মাপে এই মহড়া হয় ৷ জাপানের উপকূলে অ্যামেরিকার নৌবহর বরাবরই শক্তিশালী ৷ সেখানে রয়েছে অ্যামেরিকার তৃতীয়, পঞ্চম ও সপ্তম নৌবহর ৷ ১৯৯০-এর দশকে ইন্দো-অ্যামেরিকা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের স্বার্থে এই মহড়া শুরু হয় ৷ তবে এটা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই যে, ভারত এই মহড়ায় কারও জোটসঙ্গী হিসেবে নয়, স্বাধীনভাবে অংশ নেয় ৷ দুই দেশের নৌ-সহযোগিতাকে আরও জোরদার করতে এবং নিজেদের সামরিক ক্ষমতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মালাবার নৌ-মহড়ার আয়োজন করা হয় । মহড়ায় অংশগ্রহণকারী তিন দেশের (ভারত, অ্যামেরিকা ও জাপান) নৌ-আধিকারিকরা নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতবিনিময় করেন । এইভাবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা পরস্পরের বিশ্বাস অর্জন করেছি ৷ এই আত্মবিশ্বাস ও সমঝোতা LEMOA (Logistics Exchange Memorandum of Agreement) এবং CISMOA (Communication and Information on Security Memorandum of Agreement) চুক্তির মাধ্যমে ক্রমশ জোরদার হচ্ছে ৷ সেজন্য মালাবার মহড়ায় এখন দুই দেশই বিমানবাহী জাহাজ, পারমাণবিক ডুবোজাহাজ ইত্যাদি ব্যবহার করছে ৷

এছাড়া আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল Indo-PACOM (United States Indo-Pacific Command) সমঝোতা, যার মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে দুই দেশের (ভারত ও অ্যামেরিকা) সামরিক দায়িত্ব ক্রমশ বাড়ছে ৷ ভারতের উপর অ্যামেরিকার ভরসা রয়েছে বলেই এটা হচ্ছে ৷ অ্যামেরিকার নজর এখন দক্ষিণ চিন সাগরের দিকে, কারণ তারা জানে ওই এলাকায় রয়েছে এই অঞ্চলের সবচেয়ে বড় সামরিক শক্তি ৷

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সবার জন্য সুরক্ষা ও উন্নতির বিষয়ে জোর দিয়ে আসছেন ৷ আমরাও তাই বিশ্বের এই এলাকায় সমুদ্র অঞ্চলে এমন পরিস্থিতি তৈরি করার চেষ্টা করছি যাতে অর্থনীতির উন্নতির স্বার্থে সব দেশ স্বাধীনভাবে নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে সমুদ্রপথ ব্যবহার করতে পারে এবং মাদক পাচার, জলদস্যুদের দাপট বন্ধ হয় ৷ কেউ যেন মনে না করে যে, এই মহড়ার মাধ্যমে আমরা কাউকে চমকাতে চাইছি ৷


প্রশ্ন : চিনকে আরও বড় কোনও বার্তা দেওয়ার আছে ?


ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) ডি কে শর্মা : 2008 সালে জলদস্যুদের দাপট বাড়ছিল উপসাগরীয় অঞ্চলে ৷ সেইসময় উপসাগরীয় অঞ্চলে জাহাজ পাঠাতে শুরু করে ভারতীয় নৌসেনা ৷ 2012 সালের পরে চিনের সেনাও 4-5টি করে জাহাজ একসঙ্গে পাঠাতে থাকে ৷ তারা ডুবোজাহাজও পাঠাতে শুরু করে ৷ সকলেই জানে যে, জলদস্যুদের দমনের জন্য সাবমেরিন পাঠানো শুরু করেনি চিন ৷ আসলে তারা জলের তাপমাত্রার হেরফের পরিমাপ করছিল ৷ শত্রুপক্ষের ডুবোজাহাজ ধ্বংসের জন্য কিছু তথ্য থাকা দরকার ৷ যার উপর ভিত্তি করে আপনি নিজের অস্ত্রসম্ভার ব্যবহার করতে পারেন ৷ তাই, জলদস্যু বিরোধী অভিযান হলে সমুদ্রপথের স্বাধীনতা রক্ষায় বিশ্বাসী সমস্ত শক্তিকে এক হতে হবে ৷ বাণিজ্যের জন্য সবাই ভারত মহাসাগর ব্যবহার করে ৷ কিন্তু, কেউ যদি পিছনে এইসব করে তা হলে তীব্র আপত্তি রয়েছে ৷ ভারত মহাসাগরকে নিজেদের বলে দাবি করছে চিন ৷ এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে সবার সঙ্গে সমন্বয় করতে হবে আমাদের ৷

photo
ভারতীয় নৌসেনার প্রাক্তন মুখপাত্র ক্যাপ্টেন ডি কে শর্মা


প্রশ্ন : ভারত মহাসাগরে ক্ষেত্রে ভারতের কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী ?

ক্যাপ্টেন (অবসরপ্রাপ্ত) ডি কে শর্মা : আমাদের কাছে কোনও চ্যালেঞ্জ নেই ৷ আমরা এখানে সবচেয়ে শক্তিশালী ৷ আমাদের কাছে বেশকিছু ভালো সম্পদ ও প্রযুক্তি আছে ৷ গত কয়েক বছরে ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় সহ যে কোনও ঘটনায় প্রথম পদক্ষেপ করেছে ভারতীয় নৌসেনা ৷ এটা ভারতের অবস্থানের জন্য সম্ভব হয়েছে ৷ মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, মাদাগাসকার, মরিশাস, বাংলাদেশ, সেশলস্ বা মায়ানমারের কাছে এমন সম্পদ নেই ৷ ফলে তাদের সমস্যায় সবসময় সাহায্য করে ভারত ৷ আমাদের অসৎ উদ্দেশ্য নেই ৷ কোথাও গিয়ে কোনও জিনিস ছিনিয়ে নিই না ৷ আমাদের কর্মপদ্ধতি চিনের মতো নয় ৷

Poonch (J and K), Oct 07 (ANI): Pakistan violated ceasefire in Degwar sector of Poonch district in Jammu and Kashmir. Indian Army retaliated and gave befitting reply to Pakistan. The residents of the area are in great panic following the ceasefire violation by Pakistan Army which fired in civilian area of Degwar sector.
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.