ETV Bharat / bharat

দেশবাসীকে খোলা চিঠি প্রধানমন্ত্রীর, কী লিখলেন ? - দেশবাসীকে খোলা চিঠি নরেন্দ্র মোদির

গত বছর ঠিক আজকের দিনেই দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসে BJP নেতৃত্বাধীন NDA । তাই সেই উপলক্ষে আজ দেশবাসীকে খোলা চিঠি লিখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ।

Narendra Modi
নরেন্দ্র মোদি
author img

By

Published : May 30, 2020, 1:56 PM IST

দিল্লি, 30 মে : 2019-এর লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে BJP । গতবছর ঠিক আজকের দিনেই দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসে BJP নেতৃত্বাধীন NDA । তাই সেই উপলক্ষে আজ দেশবাসীকে খোলা চিঠি লিখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । এই একবছরে তাঁর সরকারের করা একাধিক পদক্ষেপ, সাফল্য, বড় সিদ্ধান্তগুলির উল্লেখ করেন চিঠিতে । পাশাপাশি কোরোনার বিরুদ্ধে জয়লাভ নিয়ে যে তিনি আত্মবিশ্বাসী তাও জানান ।

চিঠিতে তিনি লেখেন,

প্রিয় বন্ধুগণ,

এক বছর আগে ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক সুবর্ণ অধ্যায়ের সংযুক্তি হয় । কয়েক দশক পর দেশের মানুষ কোনও সরকারকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে দ্বিতীয়বারের জন্য নির্বাচিত করে । এই অধ্যায় লিখতে আপনারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন । আজকের দিনে ভারত ও ভারতের গণতন্ত্রের প্রতি আপনাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার জন্য জায়গা তৈরি করেছেন ।

পরস্থিতি যদি স্বাভাবিক থাকত তাহলে আমি আপনাদের মাঝে গিয়ে আশীর্বাদ চাইতাম । কিন্তু কোরোনা ভাইরাসের জেরে বিশ্বে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার ফলে এই চিঠি লিখতে বাধ্য হচ্ছি এবং আপনাদের আশীর্বাদ চাইছি । গত এক বছরে আপনাদের স্নেহ, আশীর্বাদ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ আমাকে নতুন করে শক্তি ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে । এই সময়ে আপনারা গণতন্ত্রের সম্মিলিত শক্তি প্রদর্শন করেছেন, যা গোটা বিশ্বের কাছে উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

2014 সালে মানুষ বিশাল পরিবর্তনের জন্য ভোট দান করেছিলেন । আপনারা নীতি ও ব্যবস্থা ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে ভোট দিয়েছিলেন । সেই পাঁচ বছরে দেশ নিজেকে জড়তা ও দুর্নীতির গ্রাস থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেছিল । এই পাঁচ বছরে দেশ দেখেছিল, কীভাবে গরিবদের জীবনযাপন সহজ করতে প্রশাসন পরিবর্তন এনেছে ।

এই সময়সীমায় একদিকে বিশ্বের কাছে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় । অন্যদিকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ব্যবস্থা করে, বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস ও বিদ্যুৎ পরিষেবা দিয়ে, বাড়ি ও শৌচালয় তৈরি করে গরিবদেরও মর্যাদা দেওয়া হয় । এই সময়সীমার মধ্যেই সার্জিকাল ও এয়ার স্ট্রাইক হয়েছে । এক পদ এক পেনসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে । এক দেশ এক করের ব্যবস্থা করা হয়েছে । চাষিদের জন্য MSP-র অধীনে ফসল বিক্রির মতো কয়েক দশকের দাবি পূরণ করা হয়েছে । এই সময়সীমা দেশের বিভিন্ন চাহিদা মেটানোয় নিয়োজিত করা হয়েছে ।

2019-এ আপনাদের আশীর্বাদের কারণেই দেশের জন্য বড় স্বপ্ন, বড় আশা ও আকাঙ্ক্ষা করা সম্ভব হয়েছে । গত এক বছরে যে সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছে সেগুলি ওই বড় স্বপ্নগুলিরই প্রতিচ্ছবি । সাধারণ মানুষের শক্তি দ্বারাই দেশের শক্তি উজ্জ্বল হয়েছে । গত এক বছরে দেশ একাধিক স্বপ্ন দেখেছে । বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ওই স্বপ্নগুলির অনেকটাই পূরণ হয়েছে । এই ঐতিহাসিক সফরে প্রত্যেক সম্প্রদায়, প্রত্যেক ক্ষেত্র ও প্রত্যেকে আলাদা করে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছে । "সবার সাথ, সবার বিকাশ" এই মন্ত্রের সাহায্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক, বিশ্ব ও অন্তর্দেশীয় সব ক্ষেত্রেই দেশ এগিয়েছে ।

শেষ এক বছরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আলোচিত হয়েছে । তাই স্বাভাবিকভাবেই সেই সাফল্যগুলি স্মৃতিতে থেকে যায় । সে তা জাতীয় ঐক্য ও অখণ্ডতার জন্য 370 ধারা প্রত্যাহার হোক বা রাম মন্দির নিয়ে পুরানো দ্বন্দ্ব । তিন তালাক হোক বা নাগরিকত্ব(সংশোধনী) আইন সব সাফল্যই আপনারা মনে রেখেছেন । এই সাফল্যমণ্ডিত সিদ্ধান্তগুলি ছাড়াও আর কিছু সিদ্ধান্ত ও পরিবর্তন রয়েছে যেগুলি ভারতের উন্নয়নের সফরে নতুন গতি দিয়েছে । মানুষের প্রত্যাশা পূরণে নতুন উদ্দেশ্য দান করেছে । ডিফেন্স স্টাফের প্রধান পদের সংযুক্তি সশস্ত্র সেনা বাহিনীগুলির মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়েছে । একইসময়ে ভারত গগনযান মিশনের প্রস্তুতি তরান্বিত করছে ।

এই সময়সীমায় আমাদের গুরুত্ব ছিল গরিব, চাষি, মহিলা ও যুব সমাজের ক্ষমতায়ন করা । আজ প্রত্যেক চাষিকে "প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির" আওতায় আনা হয়েছে । শেষ এক বছরে এই প্রকল্পের আওতায় 72 হাজার কোটির টাকার বেশি 9.5 কোটি চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে । গ্রামের 15 কোটির বেশি মানুষের পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে "জল জীবন মিশন" চালু করা হয়েছে । সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে 50 কোটির বেশি গবাদি পশুর টীকাকরণের জন্য প্রচারের কাজ চলছে ।

দেশের ইতিহাসে প্রথম সরকার অসংগঠিত ক্ষেত্রের চাষি, ফার্মের শ্রমিক, ছোটো দোকানদার ও কর্মীদের 60 বছর পরে মাসিক 3 হাজার টাকা পেনসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । মৎস্যজীবীদের সুবিধার্থে একটি পৃথক দপ্তর গঠন করা হয়েছে । একইভাবে ব্যবসায়িক এন্টারপ্রাইজ়গুলির সময়মতো সমস্যা সমাধানে জাতীয় বাণিজ্যিক বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । স্বনির্ভর দলের সঙ্গে যুক্ত প্রায় 7 কোটি বোনকে আরও আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে । সম্প্রতি গ্যারান্টি ছাড়াই প্রাপ্ত লোনের পরিমাণ 10 লাখ থেকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে 20 লাখ করা হয়েছে । আদিবাসী শিশুদের শিক্ষার কথা মাথায় রেখে 450 টি একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । তার জন্য কাজ চলছে ।

সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য আইন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে সরকার কাজ করে চলেছে । উপভোক্তা সুরক্ষা আইন, চিট ফান্ড আইনে সংশোধন এবং মহিলা ও শিশু সুরক্ষায় আরও আইন দ্রুত কার্যকর করা সম্ভব হয়েছে ।

সরকারের নীতির সাহায্যে শহর ও গ্রামীণ জীবনের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন হয়েছে । প্রথমবারের জন্য শহরের থেকে গ্রামে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা 10 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ।

ঐতিহাসিক কাজ ও সিদ্ধান্তের তালিকা খুবই দীর্ঘ । এই চিঠিতে তার সবটা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় । কিন্তু আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, শেষ এক বছরে প্রতিদিন সরকার সতর্কতা, সহনশীলতার সঙ্গে কাজ করেছে এবং সিদ্ধান্তগুলি নিয়েছে ।

ঠিক যে সময়ে আমরা দেশের আকাঙ্ক্ষাগুলি উপলব্ধির দিকে দ্রুত এগোচ্ছি ঠিক তখনই ভারতকেও ঘিরে ধরেছে কোরোনা মহামারী । একদিকে বিপুল আর্থিক ও অত্যাধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবাযুক্ত দেশগুলি রয়েছে । অন্যদিকে বিশাল জনসংখ্যা ও একাধিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে রয়েছে ভারত । একাধিক মানুষ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, যখন ভারতে কোরোনা সংক্রমণ হবে তখন এই দেশ গোটা বিশ্বের কাছে সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে । আজ ভারতের প্রতি প্রত্যেক দেশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে । আপনার প্রমাণ করেছেন যে, আপনাদের সম্মিলিত ক্ষমতা ও যোগ্যতা অন্যান্য সমৃদ্ধ দেশগুলির সঙ্গে অতুলনীয় ।

কোরোনা যোদ্ধাদের জন্য থালা বাজিয়ে বা হাততালি দিয়ে হোক, মোমবাতি জ্বালিয়ে হোক অথবা জনতা কারফিউ মেনে বা লকডাউনের নিয়ম মেনেই হোক আপনারা দেখিয়েছেন যে, ভারত একাই বৃহত্তর ও উন্নত ভারত গড়ে তুলতে সক্ষম ।

এই সংকটে কেউ সমস্যায় পড়েনি তা কেউ দাবি করতে পারে না । আমাদের কর্মীরা, অভিবাসী শ্রমিক ভাই ও বোনেরা, যাঁরা ছোটো শিল্পক্ষেত্রে কাজ করেন, ঠেলা গাড়ি চালক ও ভেন্ডাররা, আমাদের দোকানদাররা ও যাঁদের ছোটো ব্যবসা রয়েছে প্রত্যেকেই চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন । তাঁদের সমস্যা সমাধানে আমরা সকলে একসঙ্গে কাজ করছি । তবে, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে । তাঁদের এই সমস্যাগুলি যেন জীবনের বিপর্যয়ে পরিণত না হয় । তার জন্য প্রত্যেক ভারতীয়কে প্রত্যেকটি নির্দেশ পালন করতে হবে । এখনও পর্যন্ত আমরা যে ধৈর্য্য ও উৎসাহের সাথে রয়েছি সেইভাবেই আমাদের এগিয়ে চলতে হবে । এটাই কারণ যে, এখনও পর্যন্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে । এই লড়াই দীর্ঘ হবে । কিন্তু আমরাও জয়ের পথে রয়েছি । জয় লাভ করাই আমাদের সংকল্প ।

আমরা সে সমস্ত মানুষের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হতে পারি যাঁরা সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আমফানের মুখোমুখি হয়েছেন । ঘূর্ণিঝড়ের জেরে হওয়া ক্ষতির মাত্রা কমাতে তাঁরা কঠোর পরিশ্রম করেছেন ।

বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সংকট থেকে ভারতের অর্থনীতি অন্যান্য দেশের সঙ্গে কীভাবে বেরিয়ে আসবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে । একইসময়ে একটা বিশ্বাস তৈরি হয়েছে । সেটা হল যেভাবে ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কোরোনার মোকাবিলা করে বিশ্বকে বিস্মিত করেছে, ঠিক একইভাবে অর্থনীতির ক্ষেত্রেও ভারত একই উদাহরণ তৈরি করবে । 130 কোটি ভারতীয় কেবল বিশ্বকে বিস্মিত করবে না, তাদের অনুপ্রাণিতও করবে ।

আজ সময় আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর দাবি রাখছে । তাই আমাদের নিজের শক্তি দিয়ে এগিয়ে যেতেই হবে । আর তার জন্য একটাই রাস্তা আছে - আত্মনির্ভর ভারত । 20 লাখ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ এই আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের জন্য একটা বড় পদক্ষেপ । এই অভিযান আমাদের চাষি, কর্মী ও শ্রমিক, মাঝারি এন্টারপ্রাইজ়েস ও স্টার্টআপের সঙ্গে যুক্ত যুব সমাজের জন্য নতুন সুযোগ এনে দেবে । আমদানি জিনিসের উপর ভারত তার নির্ভরতা হ্রাস করবে । তার বদলে ভারতের নাগরিকের কঠোর পরিশ্রম ও দক্ষতা দিয়ে তৈরি জিনিসের উপর নির্ভরতা বাড়াবে । এইভাবেই আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে ভারত ।

গত ছয় বছর ধরে আপনাদের ভালোবাসা দিয়ে আমাকে আশীর্বাদ করে চলেছেন আপনারা । ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ও উন্নয়নের সঙ্গে অভূতপূর্ব গতিতে এগিয়েছে দেশ । কিন্তু আমি জানি এখনও অনেক কিছু করা বাকি । দেশে আগে থেকেই একাধিক চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা রয়েছে । আমি দিন রাত চেষ্টা করে চলেছি । আমার মধ্যে হয়ত কোনও ত্রুতি থাকতে পারে । কিন্তু দেশে কোনও ত্রুটি নেই । তাই আপনার, আপনার শক্তি ও ক্ষমতার উপর আমার বেশি বিশ্বাস রয়েছে । আপনি, আপনার সমর্থন ও আপনার আশীর্বাদ আমার সংকল্পের পিছনের শক্তি ।

এই বিশ্ব মহামারী আমাদের এক সংকটময় পরিস্থিতিতে এনে দাঁড় করিয়েছে । কিন্তু একইসময়ে ভারতীয়দের জন্য এটা দৃঢ় সংকল্পের সময় । আমাদের মনে রাখতে হবে যে, কোনও বিপর্যয়, কোনও সংকট 130 কোটি ভারতীয়র বর্তমান বা ভবিষ্যতকে টলাতে পারবে না । আমরা আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ তৈরি করব ।

আমরা এগিয়ে যাব । উন্নয়নের জন্য আমরা এগোব এবং জিতব । আমাদের দেশে বলা হয় : "কৃতম মে দক্ষিণে হস্তে, যায়ো মে সভ্য অহিত-হ ।" যার অর্থ আমরা এক হাতে আমাদের কর্ম ও দায়িত্ব বহন করি । আর অন্য হাতে বহন করি নিশ্চিত সাফল্য ।

চিরকালের জন্য দেশের সাফল্য কামনা করে আর একবার আপনাদের সামনে আমি মাথা নত করছি । আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য শুভেচ্ছা । সুস্থ থাকুন, সুরক্ষিত থাকুন । সতর্ক ও সচেতন থাকুন ।

আপনাদের প্রধান সেবক

দিল্লি, 30 মে : 2019-এর লোকসভা নির্বাচনে জয়লাভ করে BJP । গতবছর ঠিক আজকের দিনেই দ্বিতীয় বারের জন্য ক্ষমতায় আসে BJP নেতৃত্বাধীন NDA । তাই সেই উপলক্ষে আজ দেশবাসীকে খোলা চিঠি লিখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । এই একবছরে তাঁর সরকারের করা একাধিক পদক্ষেপ, সাফল্য, বড় সিদ্ধান্তগুলির উল্লেখ করেন চিঠিতে । পাশাপাশি কোরোনার বিরুদ্ধে জয়লাভ নিয়ে যে তিনি আত্মবিশ্বাসী তাও জানান ।

চিঠিতে তিনি লেখেন,

প্রিয় বন্ধুগণ,

এক বছর আগে ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে এক সুবর্ণ অধ্যায়ের সংযুক্তি হয় । কয়েক দশক পর দেশের মানুষ কোনও সরকারকে সংখ্যাগরিষ্ঠতার সঙ্গে দ্বিতীয়বারের জন্য নির্বাচিত করে । এই অধ্যায় লিখতে আপনারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন । আজকের দিনে ভারত ও ভারতের গণতন্ত্রের প্রতি আপনাদের প্রতিশ্রুতিবদ্ধতার জন্য জায়গা তৈরি করেছেন ।

পরস্থিতি যদি স্বাভাবিক থাকত তাহলে আমি আপনাদের মাঝে গিয়ে আশীর্বাদ চাইতাম । কিন্তু কোরোনা ভাইরাসের জেরে বিশ্বে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে তার ফলে এই চিঠি লিখতে বাধ্য হচ্ছি এবং আপনাদের আশীর্বাদ চাইছি । গত এক বছরে আপনাদের স্নেহ, আশীর্বাদ ও সক্রিয় অংশগ্রহণ আমাকে নতুন করে শক্তি ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে । এই সময়ে আপনারা গণতন্ত্রের সম্মিলিত শক্তি প্রদর্শন করেছেন, যা গোটা বিশ্বের কাছে উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ।

2014 সালে মানুষ বিশাল পরিবর্তনের জন্য ভোট দান করেছিলেন । আপনারা নীতি ও ব্যবস্থা ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে ভোট দিয়েছিলেন । সেই পাঁচ বছরে দেশ নিজেকে জড়তা ও দুর্নীতির গ্রাস থেকে বেরিয়ে আসতে দেখেছিল । এই পাঁচ বছরে দেশ দেখেছিল, কীভাবে গরিবদের জীবনযাপন সহজ করতে প্রশাসন পরিবর্তন এনেছে ।

এই সময়সীমায় একদিকে বিশ্বের কাছে দেশের মর্যাদা বৃদ্ধি পায় । অন্যদিকে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের ব্যবস্থা করে, বিনামূল্যে রান্নার গ্যাস ও বিদ্যুৎ পরিষেবা দিয়ে, বাড়ি ও শৌচালয় তৈরি করে গরিবদেরও মর্যাদা দেওয়া হয় । এই সময়সীমার মধ্যেই সার্জিকাল ও এয়ার স্ট্রাইক হয়েছে । এক পদ এক পেনসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে । এক দেশ এক করের ব্যবস্থা করা হয়েছে । চাষিদের জন্য MSP-র অধীনে ফসল বিক্রির মতো কয়েক দশকের দাবি পূরণ করা হয়েছে । এই সময়সীমা দেশের বিভিন্ন চাহিদা মেটানোয় নিয়োজিত করা হয়েছে ।

2019-এ আপনাদের আশীর্বাদের কারণেই দেশের জন্য বড় স্বপ্ন, বড় আশা ও আকাঙ্ক্ষা করা সম্ভব হয়েছে । গত এক বছরে যে সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছে সেগুলি ওই বড় স্বপ্নগুলিরই প্রতিচ্ছবি । সাধারণ মানুষের শক্তি দ্বারাই দেশের শক্তি উজ্জ্বল হয়েছে । গত এক বছরে দেশ একাধিক স্বপ্ন দেখেছে । বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে ওই স্বপ্নগুলির অনেকটাই পূরণ হয়েছে । এই ঐতিহাসিক সফরে প্রত্যেক সম্প্রদায়, প্রত্যেক ক্ষেত্র ও প্রত্যেকে আলাদা করে নিজেদের দায়িত্ব পালন করেছে । "সবার সাথ, সবার বিকাশ" এই মন্ত্রের সাহায্যে সামাজিক, অর্থনৈতিক, বিশ্ব ও অন্তর্দেশীয় সব ক্ষেত্রেই দেশ এগিয়েছে ।

শেষ এক বছরে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আলোচিত হয়েছে । তাই স্বাভাবিকভাবেই সেই সাফল্যগুলি স্মৃতিতে থেকে যায় । সে তা জাতীয় ঐক্য ও অখণ্ডতার জন্য 370 ধারা প্রত্যাহার হোক বা রাম মন্দির নিয়ে পুরানো দ্বন্দ্ব । তিন তালাক হোক বা নাগরিকত্ব(সংশোধনী) আইন সব সাফল্যই আপনারা মনে রেখেছেন । এই সাফল্যমণ্ডিত সিদ্ধান্তগুলি ছাড়াও আর কিছু সিদ্ধান্ত ও পরিবর্তন রয়েছে যেগুলি ভারতের উন্নয়নের সফরে নতুন গতি দিয়েছে । মানুষের প্রত্যাশা পূরণে নতুন উদ্দেশ্য দান করেছে । ডিফেন্স স্টাফের প্রধান পদের সংযুক্তি সশস্ত্র সেনা বাহিনীগুলির মধ্যে সমন্বয় বাড়িয়েছে । একইসময়ে ভারত গগনযান মিশনের প্রস্তুতি তরান্বিত করছে ।

এই সময়সীমায় আমাদের গুরুত্ব ছিল গরিব, চাষি, মহিলা ও যুব সমাজের ক্ষমতায়ন করা । আজ প্রত্যেক চাষিকে "প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির" আওতায় আনা হয়েছে । শেষ এক বছরে এই প্রকল্পের আওতায় 72 হাজার কোটির টাকার বেশি 9.5 কোটি চাষির ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে জমা করা হয়েছে । গ্রামের 15 কোটির বেশি মানুষের পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে "জল জীবন মিশন" চালু করা হয়েছে । সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করে 50 কোটির বেশি গবাদি পশুর টীকাকরণের জন্য প্রচারের কাজ চলছে ।

দেশের ইতিহাসে প্রথম সরকার অসংগঠিত ক্ষেত্রের চাষি, ফার্মের শ্রমিক, ছোটো দোকানদার ও কর্মীদের 60 বছর পরে মাসিক 3 হাজার টাকা পেনসন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে । মৎস্যজীবীদের সুবিধার্থে একটি পৃথক দপ্তর গঠন করা হয়েছে । একইভাবে ব্যবসায়িক এন্টারপ্রাইজ়গুলির সময়মতো সমস্যা সমাধানে জাতীয় বাণিজ্যিক বোর্ড গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । স্বনির্ভর দলের সঙ্গে যুক্ত প্রায় 7 কোটি বোনকে আরও আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে । সম্প্রতি গ্যারান্টি ছাড়াই প্রাপ্ত লোনের পরিমাণ 10 লাখ থেকে দ্বিগুণ বাড়িয়ে 20 লাখ করা হয়েছে । আদিবাসী শিশুদের শিক্ষার কথা মাথায় রেখে 450 টি একলব্য মডেল রেসিডেন্সিয়াল স্কুল তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । তার জন্য কাজ চলছে ।

সাধারণ মানুষের কল্যাণের জন্য আইন ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে সরকার কাজ করে চলেছে । উপভোক্তা সুরক্ষা আইন, চিট ফান্ড আইনে সংশোধন এবং মহিলা ও শিশু সুরক্ষায় আরও আইন দ্রুত কার্যকর করা সম্ভব হয়েছে ।

সরকারের নীতির সাহায্যে শহর ও গ্রামীণ জীবনের মধ্যে যোগসূত্র স্থাপন হয়েছে । প্রথমবারের জন্য শহরের থেকে গ্রামে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা 10 শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ।

ঐতিহাসিক কাজ ও সিদ্ধান্তের তালিকা খুবই দীর্ঘ । এই চিঠিতে তার সবটা ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় । কিন্তু আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, শেষ এক বছরে প্রতিদিন সরকার সতর্কতা, সহনশীলতার সঙ্গে কাজ করেছে এবং সিদ্ধান্তগুলি নিয়েছে ।

ঠিক যে সময়ে আমরা দেশের আকাঙ্ক্ষাগুলি উপলব্ধির দিকে দ্রুত এগোচ্ছি ঠিক তখনই ভারতকেও ঘিরে ধরেছে কোরোনা মহামারী । একদিকে বিপুল আর্থিক ও অত্যাধুনিক স্বাস্থ্য পরিষেবাযুক্ত দেশগুলি রয়েছে । অন্যদিকে বিশাল জনসংখ্যা ও একাধিক চ্যালেঞ্জ নিয়ে রয়েছে ভারত । একাধিক মানুষ আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন যে, যখন ভারতে কোরোনা সংক্রমণ হবে তখন এই দেশ গোটা বিশ্বের কাছে সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে । আজ ভারতের প্রতি প্রত্যেক দেশের মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি বদলেছে । আপনার প্রমাণ করেছেন যে, আপনাদের সম্মিলিত ক্ষমতা ও যোগ্যতা অন্যান্য সমৃদ্ধ দেশগুলির সঙ্গে অতুলনীয় ।

কোরোনা যোদ্ধাদের জন্য থালা বাজিয়ে বা হাততালি দিয়ে হোক, মোমবাতি জ্বালিয়ে হোক অথবা জনতা কারফিউ মেনে বা লকডাউনের নিয়ম মেনেই হোক আপনারা দেখিয়েছেন যে, ভারত একাই বৃহত্তর ও উন্নত ভারত গড়ে তুলতে সক্ষম ।

এই সংকটে কেউ সমস্যায় পড়েনি তা কেউ দাবি করতে পারে না । আমাদের কর্মীরা, অভিবাসী শ্রমিক ভাই ও বোনেরা, যাঁরা ছোটো শিল্পক্ষেত্রে কাজ করেন, ঠেলা গাড়ি চালক ও ভেন্ডাররা, আমাদের দোকানদাররা ও যাঁদের ছোটো ব্যবসা রয়েছে প্রত্যেকেই চরম দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন । তাঁদের সমস্যা সমাধানে আমরা সকলে একসঙ্গে কাজ করছি । তবে, আমাদের সতর্ক থাকতে হবে । তাঁদের এই সমস্যাগুলি যেন জীবনের বিপর্যয়ে পরিণত না হয় । তার জন্য প্রত্যেক ভারতীয়কে প্রত্যেকটি নির্দেশ পালন করতে হবে । এখনও পর্যন্ত আমরা যে ধৈর্য্য ও উৎসাহের সাথে রয়েছি সেইভাবেই আমাদের এগিয়ে চলতে হবে । এটাই কারণ যে, এখনও পর্যন্ত অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া সম্ভব হয়েছে । এই লড়াই দীর্ঘ হবে । কিন্তু আমরাও জয়ের পথে রয়েছি । জয় লাভ করাই আমাদের সংকল্প ।

আমরা সে সমস্ত মানুষের কাছ থেকে অনুপ্রাণিত হতে পারি যাঁরা সম্প্রতি ঘূর্ণিঝড় আমফানের মুখোমুখি হয়েছেন । ঘূর্ণিঝড়ের জেরে হওয়া ক্ষতির মাত্রা কমাতে তাঁরা কঠোর পরিশ্রম করেছেন ।

বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সংকট থেকে ভারতের অর্থনীতি অন্যান্য দেশের সঙ্গে কীভাবে বেরিয়ে আসবে সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে । একইসময়ে একটা বিশ্বাস তৈরি হয়েছে । সেটা হল যেভাবে ভারত ঐক্যবদ্ধভাবে কোরোনার মোকাবিলা করে বিশ্বকে বিস্মিত করেছে, ঠিক একইভাবে অর্থনীতির ক্ষেত্রেও ভারত একই উদাহরণ তৈরি করবে । 130 কোটি ভারতীয় কেবল বিশ্বকে বিস্মিত করবে না, তাদের অনুপ্রাণিতও করবে ।

আজ সময় আমাদের নিজের পায়ে দাঁড়ানোর দাবি রাখছে । তাই আমাদের নিজের শক্তি দিয়ে এগিয়ে যেতেই হবে । আর তার জন্য একটাই রাস্তা আছে - আত্মনির্ভর ভারত । 20 লাখ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ এই আত্মনির্ভর ভারত অভিযানের জন্য একটা বড় পদক্ষেপ । এই অভিযান আমাদের চাষি, কর্মী ও শ্রমিক, মাঝারি এন্টারপ্রাইজ়েস ও স্টার্টআপের সঙ্গে যুক্ত যুব সমাজের জন্য নতুন সুযোগ এনে দেবে । আমদানি জিনিসের উপর ভারত তার নির্ভরতা হ্রাস করবে । তার বদলে ভারতের নাগরিকের কঠোর পরিশ্রম ও দক্ষতা দিয়ে তৈরি জিনিসের উপর নির্ভরতা বাড়াবে । এইভাবেই আত্মনির্ভর হয়ে উঠবে ভারত ।

গত ছয় বছর ধরে আপনাদের ভালোবাসা দিয়ে আমাকে আশীর্বাদ করে চলেছেন আপনারা । ঐতিহাসিক সিদ্ধান্ত ও উন্নয়নের সঙ্গে অভূতপূর্ব গতিতে এগিয়েছে দেশ । কিন্তু আমি জানি এখনও অনেক কিছু করা বাকি । দেশে আগে থেকেই একাধিক চ্যালেঞ্জ ও সমস্যা রয়েছে । আমি দিন রাত চেষ্টা করে চলেছি । আমার মধ্যে হয়ত কোনও ত্রুতি থাকতে পারে । কিন্তু দেশে কোনও ত্রুটি নেই । তাই আপনার, আপনার শক্তি ও ক্ষমতার উপর আমার বেশি বিশ্বাস রয়েছে । আপনি, আপনার সমর্থন ও আপনার আশীর্বাদ আমার সংকল্পের পিছনের শক্তি ।

এই বিশ্ব মহামারী আমাদের এক সংকটময় পরিস্থিতিতে এনে দাঁড় করিয়েছে । কিন্তু একইসময়ে ভারতীয়দের জন্য এটা দৃঢ় সংকল্পের সময় । আমাদের মনে রাখতে হবে যে, কোনও বিপর্যয়, কোনও সংকট 130 কোটি ভারতীয়র বর্তমান বা ভবিষ্যতকে টলাতে পারবে না । আমরা আমাদের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ তৈরি করব ।

আমরা এগিয়ে যাব । উন্নয়নের জন্য আমরা এগোব এবং জিতব । আমাদের দেশে বলা হয় : "কৃতম মে দক্ষিণে হস্তে, যায়ো মে সভ্য অহিত-হ ।" যার অর্থ আমরা এক হাতে আমাদের কর্ম ও দায়িত্ব বহন করি । আর অন্য হাতে বহন করি নিশ্চিত সাফল্য ।

চিরকালের জন্য দেশের সাফল্য কামনা করে আর একবার আপনাদের সামনে আমি মাথা নত করছি । আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য শুভেচ্ছা । সুস্থ থাকুন, সুরক্ষিত থাকুন । সতর্ক ও সচেতন থাকুন ।

আপনাদের প্রধান সেবক

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.