অদ্ভুত শোনালেই সত্যি, ভারতেরই এক গ্রামে বছরের 42 দিন কথা বলে না কেউ ৷ হিমাচল প্রদেশের ঘটনা ৷ মানালির কুলু জেলার আশ্চর্য গ্রামের নাম গোশাল ৷ এই গ্রামেই চলে 42 দিনের মৌনব্রত ! কথা না বলার নির্দিষ্ট তারিখও আছে ৷
জানুয়ারি মাসের 14 তারিখ থেকে ফেব্রুয়ারি মাসের 25 তারিখ অবধি স্পিকটি নট ! এই বিষয়ে গোশাল অধিক পরিচিত হলেও ৷ জানা যায়, হিমাচলের বুরুয়া, শানাগ, মাঝাচ, পালচান, কোঠি, রুয়ার ও কুলাং নামের গ্রামেগুলিতেও টানা 42 দিন নীরবতা পালন করে মানুষ ৷ সোলাং ও রুয়ারে চুপ থাকার পাশাপাশি ওই কদিন বন্ধ থাকে কৃষিকাজও ৷ আসলে মাঘ মাসে মকর সংক্রান্তি থেকে এই রীতি চালু হয় ৷ প্রশ্ন হল, টানা 42 দিন কেন চুপ করে থাকেন গ্রামগুলির বাসিন্দারা ?
স্থানীয়দের কারো কারো বিশ্বাস, এই সময় ধ্যানমগ্ন হন ঈশ্বর ৷ স্বর্গের পথে পাড়ি দেন তিনি ৷ সেই সময় বাচাল মানুষের শব্দের ট্রাফিক জ্যাম যাতে না থাকে হাওয়াবাতাসে, তাই এই নিরবতা ৷ এই বিষয়ে আরও একটি পৌরাণিক মত রয়েছে ৷ তা হল, বিপাশা নদীর তীরে ঋষি গৌতম আজও তপস্যা করছেন ! তাঁর তপস্যা যাতে ভঙ্গ না হয়, তাই এই ব্যবস্থা গ্রামবাসীদের ৷ উল্লেখ্য, প্রাচীন একটি মন্দির রয়েছে এই অঞ্চলে ৷ মকর সংক্রান্তির দিন পুজোর পর বন্ধ করে দেওয়া মন্দির ৷ মানুষের নীরবতা ভঙ্গের দিনই খোলে মন্দিরের দরজাও ৷ লোকবিশ্বাসের এই কথা একদিকে যেমন রয়েছে, অন্যদিকে বিজ্ঞানীরা খুঁজছেন বাস্তবতা, যুক্তির উত্তর ৷
বিজ্ঞানীদের মতে, শীতকালে তীব্র শীত পড়ে গোশালসহ হিমাচলের পাহাড়ি গ্রামগুলিতে ৷ বরফে সাদা হয়ে যায় চত্বর ৷ এমন শীতে যে কর্মক্ষমতা থাকে না মানুষের ৷ ঠান্ডায় কষ্ট পায় গোটা গ্রাম ৷ ক্লান্ত বোধ করেন বাসিন্দারা ৷ এই অবস্থায় বাড়ি থেকে বেরোনো বা কথা বলার মতো শক্তিই থাকে না বাসিন্দাদের ৷ অতএব, অকারণ শারীরিক শক্তির ক্ষয় যাতে না হয় তাই টানা 42 দিনের মৌনী ৷
তবে কথা না বললেও হোডফোনে গান শোনে গ্রাম, আর ইশারায় চলে ঘরগৃহস্থালির কাজ ৷ জানা যায়, এই সময় গোশালে কোনও পর্যটক এলে তাঁকেও চুপ থাকতে হয় ৷