কোরোনার জেরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আর্থিক মন্দা দেখা দিচ্ছে । যার ফলে মানুষের জীবন ও দেশের অর্থনীতিতেও প্রভাব পড়ছে । সমস্ত শিল্প ও পরিষেবামূলক ক্ষেত্রের কাজ বন্ধ হয়ে গেছে । যার ফলে সরকারের কোষাগারে ক্ষতি হচ্ছে । তাই এই আর্থিক দোলাচল থেকে রেহাই পেতে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য বিভিন্ন রাজ্যের তরফে কেন্দ্রের কাছে দাবি জানানো হচ্ছে । যে কেন্দ্রীয় সরকার এতোদিন রাজ্যেগুলির কথায় কান দিচ্ছিল না তারা এখন শর্তসাপেক্ষে মদের দোকানগুলি খোলার অনুমতি দিয়েছে । কারণ লকডাউনের ফলে দেড় মাসের কাছাকাছি মদের দোকান বন্ধ থাকায় রাজ্যগুলির রাজস্বে প্রায় 30 হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে । উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড ও কর্নাটক সরকার 20 শতাংশের বেশি এবং পশ্চিমবঙ্গ, ছত্তিশগড়, হিমাচল প্রদেশ, পঞ্জাব ও তেলেঙ্গানা সরকারের বাজেটের 15-20 শতাংশ আবগারি দপ্তরের মুনাফায় ক্ষতি হয়েছে ।
কেন্দ্রের তুলনায় রাজ্যগুলি দেড় গুণ বেশি আর্থিক বোঝা বহন করছে । পাঁচগুণ বেশির কর্মীর দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিয়েছে । মদ থেকে যে মুনাফা অর্জন হয় দশক ধরে তাই রাজ্যগুলির বাজেটের মূল উপাদান হয়ে আসছে । কেন্দ্রের তরফে কোনওরকম আর্থিক সাহায্য না মেলায় রাজ্যগুলি তাই মদের দোকান খোলার এই সুযোগকে সহজেই গ্রহণ করে নেয় । আর্থিক ক্ষতি পূরণের জন্য এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মদের দাম উপর দিল্লি 70 শতাংশ, অন্ধ্রপ্রদেশ 75 শতাংশ, তেলাঙ্গানা 16 শতাংশ ও পশ্চিমবঙ্গ 30 শতাংশ বৃদ্ধি করেছে ।
মদের দোকান খোলার পর থেকেই কিলোমিটারের পর কিলোমিটার লাইন পড়েছে ক্রেতাদের । এই বিষয়টিকে মাথা রেখে ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে দোকান আরও বেশি সময়ের জন্য খুলে রাখার দাবি জানাচ্ছে মদ ব্যবসায়ীরা । কিন্তু এই মদের দোকানের সামনে ভিড় করার ফলে সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ছে । তাহলে যে উদ্দেশ্যে এই 40 দিনের লকডাউন তা কি নষ্ট হল ? কে দেবে এই প্রশ্নের উত্তর ?
একদিকে এটা বাস্তব সত্য যে কোরোনা এমন এক মহামারি যার কোনও প্রতিষেধক বা ওষুধ এখনও আবিষ্কার করা যায়নি । একইভাবে দেশের 16 কোটি মানুষের মদ আসক্তি লাখ লাখ পরিবারের কাছে মহামারিরই শামিল । 2018-র সেপ্টেম্বরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্টে বলা হয়, ভারতে বছরে 2 লাখ 60 হাজার মানুষের মৃত্যু হয় মদ খাওয়ার জন্য । যার অর্থ দিনে গড়ে 712 জন করে মানুষ মদের কারণে মারা যান । আর এই মদের কারণেই দিন সরকারের রাজস্বে জমা পড়ে 700 কোটি ।
অন্যদিকে মেডিকেল বিশেষজ্ঞরা জানান, মদ খাওয়ার ফলে 230 রকমের রোগের দেখা দেয় । আবার সমাজবিদদের চিন্তা অন্য জায়গায় । তাঁদের মতে, এই মদ নামক মহামারির কারণে অসংখ্য পরিবার ও শিশুরা শান্তি ও আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয় ।
2004-05 সালে সমগ্র দেশে আবগারি খাতে 28 হাজার কোটি টাকা এসেছে । এই মদ মানুষের দুর্দশাকে আরও বাড়িয়ে দিয়েছে । সামাজিক বিপর্যয় থেকে শুরু করে অসংখ্য শিশুর অনাথ হওয়া, অল্প বয়সে বিধবা হওয়া, অগণিত অল্প বয়সি ছেলেদের মৃত্যুর পিছনে দায়ি এই মদ । আর এই ক্ষতি অর্থ দিয়ে পূরণ করা সম্ভব নয় । লকডাউন হওয়ায় প্রকৃতির পাঁচ উপাদান পবিত্র হওয়ায় লাখ লাখ পরিবার স্বস্তি পায় । কারণ মদের দোকান বন্ধ হওয়ায় অনেক নেশাগ্রস্থের স্বাস্থ্য ও জীবনযাপনে উন্নতি হয়েছে । কিন্তু মদের দোকান ফের খোলায় মানুষ পাগলের মতো ভিড় করছে । সামাজিক দূরত্বকে যেন এক ফুঁ-তে আকাশে উড়িয়ে দিয়েছে ।
চিকিৎসকরা বার বার সতর্ক করছেন । বলছেন, হাইপারসটেনশন, ডায়াবেটিসের মতো রোগীদের কোরোনায় আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি । সেখানে কেন মদের দোকান খোলার অনুমতি দেওয়া হল ? এই মুহূর্তে এর ফলে এই মহামারি আরও বাড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে । সরকারের এই সিদ্ধান্ত কোরোনার থেকেও বেশি বড় বিপর্যয় হিসেবে প্রমাণিত হতে পারে ।