ETV Bharat / bharat

পাতাল ভুবনেশ্বর: এখানে রয়েছে গণেশের মস্তক, ব্রহ্মকমল থেকে পড়ে দিব্য জল

পুরাণ অনুসারে, পাতাল ভুবনেশ্বর ছাড়া এমন কোনও স্থান নেই যেখানে একসঙ্গে চার ধামের দর্শন করা যায় ৷ পাতাল ভুবনেশ্বর গুহায় কেদারনাথ, বদ্রীনাথ এবং অমরনাথের দর্শন হয় ৷ কথিত আছে, ভগবান গণেশের কাটা মাথা পিণ্ড রূপে দর্শন করা হয় ৷ শুধু তাই নয়, ব্রহ্মকমল থেকে ভগবান গণেশের মাথায় দিব্য জলের ফোঁটা পড়ে ৷

পাতাল ভুবনেশ্বর: এখানে রয়েছে শ্রী গণেশের মস্তক, ব্রহ্মকমল থেকে পড়ে দিব্য জল
পাতাল ভুবনেশ্বর: এখানে রয়েছে শ্রী গণেশের মস্তক, ব্রহ্মকমল থেকে পড়ে দিব্য জল
author img

By

Published : Aug 22, 2020, 2:15 PM IST

পিথোরাগড়, 22 অগাস্ট: সর্ব সংস্কৃতি, সব ধর্মের মানুষেরই মনে পাতাল নিয়ে আশ্চর্য কৌতুহল রয়েছে ৷ মাটির নীচে কী রয়েছে তা আমাদের চিন্তায় বারবার আঘাত হেনেছে ৷ গুহা, পাতাল-এই ধরনের নামের মধ্যেই রয়েছে একটা গা ছমছমে ভাব, রহস্য ঘেরা অনুভূতি ৷ বেশ কিছু গুহার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পৌরাণিক রহস্য ৷ তেমনই এক গুহা রয়েছে উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড়ের গঙ্গোলিহাটের তহসিলে ৷ নাম পাতাল ভুবনেশ্বর মন্দির ৷

গঙ্গোলিহাট থেকে 18 কিমি দূরে পাইনের ঘন বন আর পাহাড়ে ঘেরা ছমছমে পরিবেশে রয়েছে পাতাল ভুবনেশ্বর মন্দির ৷ নাম মন্দির হলেও এটি আদতে একটি চুনাপাথরের গুহা ৷ কথিত আছে, ভগবান গণেশের কাটা মাথা পাথর রূপে দর্শন করা হয় ৷ শুধু তাই নয়, ব্রহ্মকমল থেকে ভগবান গণেশের মাথায় দিব্য জলের ফোঁটা পড়ে ৷ পুরাণে এ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে লেখা আছে ৷

অত্যাশ্চর্য গুহা

প্রবেশদ্বার থেকে 90 মিটার গভীর ও 160 মিটার দীর্ঘ এই গুহাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 1 হাজার 350 মিটার উঁচুতে অবস্থিত ৷ পাতাল ভুবনেশ্বর গুহায় একসঙ্গে কেদারনাথ, বদ্রীনাথ এবং অমরনাথের দর্শন হয় ৷ এই গুহার বর্ণনা স্কন্দপুরাণে পাওয়া যায় ৷

লোককথা এবং প্রধান বৈশিষ্ট্য

ভগবান গণেশের জন্ম নিয়ে অনেক কথাই প্রচলিত আছে ৷ তেমনই এক প্রচলিত কাহিনী হল ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে মহাদেবের গণেশের মাথা ধড় থেকে আলাদা করে দেওয়ার ঘটনা ৷ পরে মাতা পার্বতীর অনুরোধে গণেশের ধড়ের উপর হাতির মাথা বসিয়ে দেওয়া হয় ৷ স্থানীয়দের বিশ্বাস, গণেশের সেই কাটা মাথা ভগবান শিব এই পাতাল ভুবনেশ্বর গুহার মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলেন ৷

শিবের জটা থেকে বেরোনো গঙ্গা
শিবের জটা থেকে বেরোনো গঙ্গা

গুহার ভেতর ওই পাথরের গণেশের মাথার ঠিক উপর রয়েছে 108টি পাপড়ি যুক্ত ব্রহ্মকমলের আকারের আরও একটি পাথর ৷ সেই ব্রহ্মকমল থেকে পাথর রূপী গণেশের মাথার উপর ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ে ৷ কথিত আছে, গুহাটি তৈরির সময় ভগবান শিব ব্রহ্মকমলটি গণেশের মাথার উপর রেখে দিয়েছিলেন ৷

পুরাণে বর্ণিত

পুরাণের লেখা অনুসারে ভগবান শিব স্বয়ং এই গুহায় বাস করেন ৷ তাঁর উপাসনার জন্য বাকি দেবতারা পাতাল ভুবনেশ্বরে উপস্থিত হন ৷ দ্বাপর যুগে পাণ্ডবরা নাকি এখানেই পাশা খেলেছিলেন ৷ আবার ত্রেতা যুগে অযোধ্যার রাজা ঋতুপর্ণ একটি হরিণকে ধাওয়া করতে করতে এই গুহায় পৌঁছেছিলেন ৷ সেইসময় মহাদেব সহ ও অন্যান্য দেবতাদের দর্শন পান ঋতুপর্ণ ৷ কলিযুগে 722 খ্রিষ্টাব্দে জগৎগুরু শঙ্করাচার্য গুহাটি খুঁজে পাওয়ার পর গুহায় স্থিত শিবলিঙ্গটিকে তামা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন ৷ কারণ শিবলিঙ্গ থেকে ঠিকরানো আলোর তেজ এতটাই যে যেকোনও ব্যক্তি অন্ধ হয়ে যেতে পারত ৷ এরপর চন্দ রাজারা এই গুহা খুঁজে পেয়েছিল ৷

গণেশের কাটা মস্তক ও ব্রহ্মকমল
গণেশের কাটা মস্তক ও ব্রহ্মকমল

কলিযুগের শেষ

এই গুহায় চারটি যুগের প্রতীক রূপে চারখানা পাথর রয়েছে ৷ তার মধ্যে একটি পাথরকে কলিযুগের প্রতীক বলে ধরা হয় সেটি ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠছে ৷ স্থানীয়দের বিশ্বাস, যেদিন পাথরটির দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লাগবে সেদিনই কলিযুগের অন্ত হবে ৷

পৌরাণিক ইতিহাস

পুরাণ অনুসারে, পাতাল ভুবনেশ্বর ছাড়া এমন কোনও স্থান নেই যেখানে একসঙ্গে চারধামের দর্শন করা যায় ৷ পাতাল ভুবনেশ্বর দর্শন করলেই নাকি চারধাম যাত্রার ফল মেলে ৷ গুহায় চারটি যুগের সঙ্গে যুক্ত দ্বার রয়েছে ৷ এই গুহাতেই 33 কোটি দেবদেবীর বাস ৷ তক্ষক নাগের আকৃতির পাথরও দেখা যায় ৷ পাশাপাশি পাতাল ভুবনেশ্বরে এলে দর্শন হবে কালভৈরবের জিভের ৷ কথিত আছে, কালভৈরবের মুখ থেকে গর্ভের প্রবেশ করে লেজ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলে মোক্ষলাভ হয় ৷

ব্রহ্মকমল
ব্রহ্মকমল

গুহার ভেতর যা যা আছে

গুহার প্রবেশের মুখেই ভগবান নরসিংহের দর্শন প্রাপ্তি হয় ৷ একটু নিচে নামলেই শেষনাগের ফণার আকারের পাথর নজরে পড়ে ৷ যত গুহার ভেতরে যাবেন গুহার ছাদে গরুর স্তনের আকৃতি দেখতে পাবেন ৷ বিশ্বাস করা হয় এটিই কামধেনু ৷ একসময় দেবতাদের জন্য এখান থেকে দুগ্ধ বেরোত ৷ এখন সেখান থেকে জল টপকে পড়ে ৷

গুহার ভেতর শেষনাগের ফণা আকৃতির পাথর
গুহার ভেতর শেষনাগের ফণা আকৃতির পাথর

এছাড়া দেখা মেলে কুণ্ডের মধ্যে ঘাড় বেঁকিয়ে বসে থাকা হাঁসের আকৃতির পাথর ৷ ভগবান শিব নাগদের জল খাওয়ার জন্য এই কুণ্ডটি তৈরি করেছিলেন ৷ যার দেখাশোনার ভার ছিল গরুড়ের উপর ৷ কিন্তু গরুড় যেদিন নিজে এই কুণ্ড থেকে জল খাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সেদিন ক্রোধে মহাদেব তাঁর ঘাড় বেঁকিয়ে দিয়েছিলেন ৷

পিথোরাগড়, 22 অগাস্ট: সর্ব সংস্কৃতি, সব ধর্মের মানুষেরই মনে পাতাল নিয়ে আশ্চর্য কৌতুহল রয়েছে ৷ মাটির নীচে কী রয়েছে তা আমাদের চিন্তায় বারবার আঘাত হেনেছে ৷ গুহা, পাতাল-এই ধরনের নামের মধ্যেই রয়েছে একটা গা ছমছমে ভাব, রহস্য ঘেরা অনুভূতি ৷ বেশ কিছু গুহার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে পৌরাণিক রহস্য ৷ তেমনই এক গুহা রয়েছে উত্তরাখণ্ডের পিথোরাগড়ের গঙ্গোলিহাটের তহসিলে ৷ নাম পাতাল ভুবনেশ্বর মন্দির ৷

গঙ্গোলিহাট থেকে 18 কিমি দূরে পাইনের ঘন বন আর পাহাড়ে ঘেরা ছমছমে পরিবেশে রয়েছে পাতাল ভুবনেশ্বর মন্দির ৷ নাম মন্দির হলেও এটি আদতে একটি চুনাপাথরের গুহা ৷ কথিত আছে, ভগবান গণেশের কাটা মাথা পাথর রূপে দর্শন করা হয় ৷ শুধু তাই নয়, ব্রহ্মকমল থেকে ভগবান গণেশের মাথায় দিব্য জলের ফোঁটা পড়ে ৷ পুরাণে এ সম্পর্কে বিস্তারিত ভাবে লেখা আছে ৷

অত্যাশ্চর্য গুহা

প্রবেশদ্বার থেকে 90 মিটার গভীর ও 160 মিটার দীর্ঘ এই গুহাটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে 1 হাজার 350 মিটার উঁচুতে অবস্থিত ৷ পাতাল ভুবনেশ্বর গুহায় একসঙ্গে কেদারনাথ, বদ্রীনাথ এবং অমরনাথের দর্শন হয় ৷ এই গুহার বর্ণনা স্কন্দপুরাণে পাওয়া যায় ৷

লোককথা এবং প্রধান বৈশিষ্ট্য

ভগবান গণেশের জন্ম নিয়ে অনেক কথাই প্রচলিত আছে ৷ তেমনই এক প্রচলিত কাহিনী হল ক্রোধে উন্মত্ত হয়ে মহাদেবের গণেশের মাথা ধড় থেকে আলাদা করে দেওয়ার ঘটনা ৷ পরে মাতা পার্বতীর অনুরোধে গণেশের ধড়ের উপর হাতির মাথা বসিয়ে দেওয়া হয় ৷ স্থানীয়দের বিশ্বাস, গণেশের সেই কাটা মাথা ভগবান শিব এই পাতাল ভুবনেশ্বর গুহার মধ্যে লুকিয়ে রেখেছিলেন ৷

শিবের জটা থেকে বেরোনো গঙ্গা
শিবের জটা থেকে বেরোনো গঙ্গা

গুহার ভেতর ওই পাথরের গণেশের মাথার ঠিক উপর রয়েছে 108টি পাপড়ি যুক্ত ব্রহ্মকমলের আকারের আরও একটি পাথর ৷ সেই ব্রহ্মকমল থেকে পাথর রূপী গণেশের মাথার উপর ফোঁটা ফোঁটা জল পড়ে ৷ কথিত আছে, গুহাটি তৈরির সময় ভগবান শিব ব্রহ্মকমলটি গণেশের মাথার উপর রেখে দিয়েছিলেন ৷

পুরাণে বর্ণিত

পুরাণের লেখা অনুসারে ভগবান শিব স্বয়ং এই গুহায় বাস করেন ৷ তাঁর উপাসনার জন্য বাকি দেবতারা পাতাল ভুবনেশ্বরে উপস্থিত হন ৷ দ্বাপর যুগে পাণ্ডবরা নাকি এখানেই পাশা খেলেছিলেন ৷ আবার ত্রেতা যুগে অযোধ্যার রাজা ঋতুপর্ণ একটি হরিণকে ধাওয়া করতে করতে এই গুহায় পৌঁছেছিলেন ৷ সেইসময় মহাদেব সহ ও অন্যান্য দেবতাদের দর্শন পান ঋতুপর্ণ ৷ কলিযুগে 722 খ্রিষ্টাব্দে জগৎগুরু শঙ্করাচার্য গুহাটি খুঁজে পাওয়ার পর গুহায় স্থিত শিবলিঙ্গটিকে তামা দিয়ে মুড়ে দিয়েছিলেন ৷ কারণ শিবলিঙ্গ থেকে ঠিকরানো আলোর তেজ এতটাই যে যেকোনও ব্যক্তি অন্ধ হয়ে যেতে পারত ৷ এরপর চন্দ রাজারা এই গুহা খুঁজে পেয়েছিল ৷

গণেশের কাটা মস্তক ও ব্রহ্মকমল
গণেশের কাটা মস্তক ও ব্রহ্মকমল

কলিযুগের শেষ

এই গুহায় চারটি যুগের প্রতীক রূপে চারখানা পাথর রয়েছে ৷ তার মধ্যে একটি পাথরকে কলিযুগের প্রতীক বলে ধরা হয় সেটি ধীরে ধীরে উপরের দিকে উঠছে ৷ স্থানীয়দের বিশ্বাস, যেদিন পাথরটির দেওয়ালের সঙ্গে ধাক্কা লাগবে সেদিনই কলিযুগের অন্ত হবে ৷

পৌরাণিক ইতিহাস

পুরাণ অনুসারে, পাতাল ভুবনেশ্বর ছাড়া এমন কোনও স্থান নেই যেখানে একসঙ্গে চারধামের দর্শন করা যায় ৷ পাতাল ভুবনেশ্বর দর্শন করলেই নাকি চারধাম যাত্রার ফল মেলে ৷ গুহায় চারটি যুগের সঙ্গে যুক্ত দ্বার রয়েছে ৷ এই গুহাতেই 33 কোটি দেবদেবীর বাস ৷ তক্ষক নাগের আকৃতির পাথরও দেখা যায় ৷ পাশাপাশি পাতাল ভুবনেশ্বরে এলে দর্শন হবে কালভৈরবের জিভের ৷ কথিত আছে, কালভৈরবের মুখ থেকে গর্ভের প্রবেশ করে লেজ পর্যন্ত পৌঁছাতে পারলে মোক্ষলাভ হয় ৷

ব্রহ্মকমল
ব্রহ্মকমল

গুহার ভেতর যা যা আছে

গুহার প্রবেশের মুখেই ভগবান নরসিংহের দর্শন প্রাপ্তি হয় ৷ একটু নিচে নামলেই শেষনাগের ফণার আকারের পাথর নজরে পড়ে ৷ যত গুহার ভেতরে যাবেন গুহার ছাদে গরুর স্তনের আকৃতি দেখতে পাবেন ৷ বিশ্বাস করা হয় এটিই কামধেনু ৷ একসময় দেবতাদের জন্য এখান থেকে দুগ্ধ বেরোত ৷ এখন সেখান থেকে জল টপকে পড়ে ৷

গুহার ভেতর শেষনাগের ফণা আকৃতির পাথর
গুহার ভেতর শেষনাগের ফণা আকৃতির পাথর

এছাড়া দেখা মেলে কুণ্ডের মধ্যে ঘাড় বেঁকিয়ে বসে থাকা হাঁসের আকৃতির পাথর ৷ ভগবান শিব নাগদের জল খাওয়ার জন্য এই কুণ্ডটি তৈরি করেছিলেন ৷ যার দেখাশোনার ভার ছিল গরুড়ের উপর ৷ কিন্তু গরুড় যেদিন নিজে এই কুণ্ড থেকে জল খাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন সেদিন ক্রোধে মহাদেব তাঁর ঘাড় বেঁকিয়ে দিয়েছিলেন ৷

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.