বাস্তার, 1 অগাস্ট : মাওবাদী, উপজাতি আর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য । এই তিনটি একসঙ্গে আছে মানেই আপনি বাস্তারে আছেন । ছত্তিশগড়ের দক্ষিণে অবস্থিত এই এলাকার বাসিন্দাদের 70 শতাংশই উপজাতি । এখানকার জঙ্গলেই তাদের বাস । অনন্য সংস্কৃতি, শিল্প ও উৎসবই এই উপজাতির পরিচয় । বাস্তারের যে জঙ্গলে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা পাওয়াটাই দূরহ সেখানে অনলাইনে পড়াশোনাটা একপ্রকার স্বপ্নই বলা যেতে পারে ।
নেটওয়ার্ক নেই । স্মার্টফোনও নেই । মোবাইলে রিচার্জ করার টাকাও নেই । পরিস্থিতি এমনই ছিল যে 3 জুলাই গোটা এলাকা থেকে মাত্র 17 জন পড়ুয়া এসেছিল অনলাইনে পড়াশোনার জন্য । বাকি দিনগুলিতেও 30 জনের বেশি পড়ুয়া ছিল না । শুধু তাই নয়, অনলাইনে পড়াশোনার জন্য রেজিস্ট্রেশনও খুব কম হয়েছিল ।
বাস্তার ডিভিশনে এখন সাক্ষরতার হার 51.5 শতাংশ । এই ডিভিশনে রয়েছে বাস্তারসহ সাতটি জেলা ৷ তার মধ্যে সুকমা জেলায় সাক্ষরতার হার 44 শতাংশ । যা শুধু রাজ্য নয়, দেশেও একেবারে নিচের দিকে । কানকেরে সাক্ষরতার হার 68 শতাংশ । এটাই এই ডিভিশনে সর্বোচ্চ । শুধু তাই নয়, প্রায় সাত হাজার শিক্ষকের পদ ফাঁকা রয়েছে এই ডিভিশনে । পড়ুয়ারাও বলছে, অনলাইন ব্যবস্থায় তাদের কোনও উপকার হচ্ছে না । যাদের কাছে ফোন রয়েছে তাদের আবার মোবাইলে নেট পরিষেবার জন্য রিচার্জ করার টাকা নেই । কোথাও আবার অন্যের ফোন ধার করে অনলাইনে পড়াশোনা করছে কেউ ।
অভিভাবকদের কথায়, শিক্ষকরা ঠিকমতো প্রশিক্ষণ পাননি । তাই তাঁরা ঠিকভাবে পড়াতে পারছেন না । এই পরিস্থিতিতে অনলাইন শিক্ষাব্যবস্থা শুধু লোক দেখানো ছাড়া আর কিছুই নয় বলে মনে করছেন তাঁরা । তাঁরা এখন বিকল্প পথ খুঁজছেন ।
প্রশাসনিক আধিকারিকরাও স্বীকার করে নিয়েছেন বাস্তারের এই দুরাবস্থার কথা । বলছেন, "বাস্তার অনেকটাই পিছিয়ে । এখানকার গরিব পরিবারের সদস্যদের কাছে মোবাইল ফোনও নেই ।"
8 জুলাই "পড়হাই তুনহার দুয়ার" অর্থাৎ ঘরে ঘরে শিক্ষা নামে অনলাইন পোর্টাল চালু করা হয়েছিল যাতে পড়াশোনা ব্যাহত না হয় । বিশেষজ্ঞরাও বলছেন, বাস্তারে অনলাইন শিক্ষা তেমন কার্যকর নয় ।
যদিও কয়েকটি ভালো দিকও নজরে এসেছে । দেবাশিস নাথ ও তাঁর দশজন শিক্ষকের একটি দল পালা করে বিভিন্ন জায়গায় ক্লাস ওয়ান থেকে এইট পর্যন্ত পড়ুয়াদের পড়ান । পড়ুয়াদের জন্য জলখাবার ও মধ্যাহ্নভোজেরও ব্যবস্থা করেন তাঁরা । কিন্তু ভাটপাল পঞ্চায়েতে ইন্টারনেটের সমস্যার জেরে লাউডস্পিকার লাগিয়েই ক্লাস নেওয়া হয় । জেলা প্রশাসনের সহায়তায় গ্রামের সাতটি জায়গায় লাউডস্পিকার লাগানো হয়েছে । এই লাউডস্পিকারের মাধ্যমেই পড়াশোনা করে পড়ুয়ারা ।