তিন তালাক আইন- এই আইনের অধীনে তাৎক্ষণিক তিন তালাক আইন অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে ৷ আইন অনুযায়ী যদি কোনও ব্যক্তি তাঁর বিবিকে তাৎক্ষণিক তিন তালাক দেন, তাহলে তা অপরাধ বলে গণ্য করা হবে ৷ অপরাধ প্রমাণিত হলে তিন বছরের জেল হবে ৷ 2011-র জনগণনা অনুসারে দেশের আট শতাংশ মহিলা মুসলিম ৷
তাৎক্ষণিক তিন তালাক বিরোধী আইন, 2019 সম্পর্কিত কিছু তথ্য-
- 15 অক্টোবর, 2015- বিবাহ বিচ্ছেদের ক্ষেত্রে মুসলিম মহিলারা বৈষম্যের শিকার কি না তা দেখার জন্য প্রধান বিচারপতিকে জানায় সুপ্রিম কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ৷
- ফেব্রুয়ারি, 2016- শায়রা বানু ওই বছর ফেব্রুয়ারিতে পিটিশন দায়ের করেন ৷ তিনি আদালতকে জানান, উত্তরাখণ্ডে বাপের বাড়িতে গেছিলেন চিকিৎসার জন্য ৷ সেইসময় তাঁর শওহর তাঁকে একটি চিঠি পাঠান ৷ ওই চিঠিতে তাৎক্ষণিক তালাক দেন শায়রার শওহর ৷ এরপর 15 বছর ধরে শওহরের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি তিনি ৷ এমনকী তাঁর সন্তানদের সঙ্গেও দেখা করতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন শায়রা ৷ শায়রার শওহর এলাহাবাদে থাকতেন ৷ আদালতের কাছে তাৎক্ষণিক তিন তালাক বন্ধের আর্জি জানান তিনি ৷ পাশাপাশি শায়রা জানান, মুসলিম ব্যক্তিরা তাঁদের বিবিদের সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করেন ৷
- 5 ফেব্রুয়ারি, 2016- অ্যাটর্নি জেনেরাল মুকুল রোহাতগিকে এই বিষয়ে সহযোগিতা করার জন্য সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দেয় ৷
- 28 মার্চ, 2016- ‘মহিলা এবং আইন : পারিবারিক আইনের মূল্যায়ন এবং বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ, অভিভাবকত্ব ও উত্তরাধিকার সম্পর্কিত আইনের উপর লক্ষ্য’-বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের রিপোর্ট তৈরির জন্য কেন্দ্রকে নির্দেশ দেয় সুপ্রিম কোর্ট ৷ স্বতঃপ্রণোদিত এই মামলায় অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (AIMPLB)-এর মতো বহু সংস্থাকে যুক্ত করে শীর্ষ আদালত ৷
- 29 জুন, 2016- সুপ্রিম কোর্ট জানায়, ‘‘সাংবাধিনাকি পরিকাঠামোর কষ্টি পাথর’’-এ বিচার হবে ‘তিন তালাক’ ৷
- 7 অক্টোবর, 2016- সাংবিধানিক ইতিহাসে প্রথমবার শীর্ষ আদালতে কেন্দ্রীয় সরকার তিন তালাকের বিরোধিতা করে ৷ লিঙ্গ-বৈষম্য ও ধর্মনিরপেক্ষতার মতো বিষয়ে ভেবে দেখার কথা জানায় কেন্দ্র ৷
- 14 ফেব্রুয়ারি, 2017- মূল মামলার সঙ্গে আরও কয়েকটি আলোচনামূলক আবেদন যুক্ত করার অনুমতি দেয় শীর্ষ আদালত ৷
- 16 ফেব্রুয়ারি, 2017- পাঁচ বিচারপতিকে নিয়ে একটি সাংবিধানিক বেঞ্চ গড়ে সুপ্রিম কোর্ট ৷ ওই বেঞ্চে তিন তালাক ও নিকাহ হালালা সংক্রান্ত যাবতীয় শুনানি ও আলোচনা হয় ৷
- মার্চ, 2017- AIMPLB সুপ্রিম কোর্টকে জানায়, তিন তালাকের বিষয়টি বিচার ব্যবস্থার এক্তিয়ারের মধ্যে পড়ে না ৷
- 18 মে, 2017- তিন তালাক সংক্রান্ত মামলার রায়দান স্থগিত রাখে ৷
- 22 অগাস্ট, 2017- তিন তালাককে বেআইনি বলে ঘোষণা করে শীর্ষ আদালত ৷ কেন্দ্রকে এই বিষয়ে আইন পাশ করানোর কথা জানায় ৷
- ডিসেম্বর, 2017- লোকসভায় পাশ হয় মুসলিম মহিলা (বিবাহের অধিকারের সুরক্ষা) বিল ৷
- 9 অগাস্ট, 2018- তিন তালাক বিলের সংশোধনীতে অনুমতি দেয় কেন্দ্র ৷
- 10 অগাস্ট, 2018- রাজ্যসভায় পেশ হয় তিন তালাক বিল ৷ সমর্থন না পাওয়ায় সংসদের শীতকালীন অধিবেশন পর্যন্ত পিছিয়ে যায় বিল পাশ ৷
- 19 সেপ্টেম্বর, 2018- মন্ত্রিসভায় অর্ডিন্যান্স পাশ হয় ৷ তিন তালাককে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে ঘোষণা করা হয় এবং অপরাধ প্রমাণ হলে তিন বছরের জেল হেপাজতের নির্দেশ দেওয়া হয় ৷
- 31 ডিসেম্বর, 2018- বিরোধীরা রাজ্যসভার নির্বাচিত প্যানেলের দ্বারা বিলের পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায় ৷
- 20 জুন, 2019- রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ সমস্ত রাজনৈতিক দলকে তিন তালাক বিল পাশের আর্জি জানান ৷
- 20 জুন, 2019- রাজ্যসভায় পেশ হয় মুসলিম মহিলা (বিবাহের অধিকারের সুরক্ষা) বিল ৷
- 21 জুন, 2019- লোকসভায় পেশ হয় মুসলিম মহিলা (বিবাহের অধিকারের সুরক্ষা) বিল ৷
- 25 জুন, 2019- বিরোধীরা ওয়াক-আউট করে ৷ লোকসভায় পাশ হয় তিন তালাক বিল ৷
- 30 জুলাই, 2019- রাজ্যসভায় পাশ হয় তিন তালাক বিল ৷
- 1 অগাস্ট, 2019- মুসলিম মহিলা (বিবাহের অধিকারের সুরক্ষা) বিল বলবৎ হয় ৷
তিন তালাক নিষিদ্ধ করতে আইন রূপায়ণ
বাস্তবায়নে সমস্যা-
2019-এর নভেম্বরে রাজধানী দিল্লিতে ভারতীয় মুসলিম মহিলা আন্দোলন দু’দিনের কনফারেন্সের আয়োজন করে ৷ মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, তেলাঙ্গানাসহ 10 রাজ্য থেকে প্রায় 50 জন মুসলিম মহিলা কনফারেন্সে যোগ দেন ৷ তিন তালাক দেওয়ায় তাঁদের শওহরদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে গিয়ে কতটা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়েছে তা জানান তাঁরা ৷ তাঁদের মধ্যে কেউ কেউ জানান, FIR দায়ের করতে গিয়ে পুলিশকে দীর্ঘক্ষণ বোঝাতে হয়েছে ৷ যদিও বা অভিযোগ দায়ের করতে পেরেছেন, তারপরে আদালতে সময় নষ্ট হয়েছে ৷
আইন রূপায়ণ নিয়ে কেন্দ্রের বিবৃতি-
কেন্দ্রীয়মন্ত্রী মুখতার আব্বাস নকভি’র বিবৃতি- আইন বলবৎ হওয়ায় তিন তালাক 82 শতাংশ কমেছে ৷