দিল্লি, 26 জুলাই : চাবাহার জাহেদান রেল সংযোগ প্রকল্প নির্মাণে ভারতের উপস্থিতি নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে এবং ইরানি শাসক ও ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্কের অবনতির জেরে ভারতের ওই প্রকল্পে থাকা নিয়ে যে অনিশ্চিয়তা তৈরি হয়েছে৷ তার প্রেক্ষিতে ভারত জানিয়েছে যে তেহরানে তারা আমেরিকার পথ ধরে এগোচ্ছে না৷ তেহরানে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত গাদ্দাম ধর্মেন্দ্র এই বিশ্লেষণ করেছেন৷ ইংরেজি দৈনিক তেহরান টাইমসের বিশিষ্ট সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি এই বিশ্লেষণ করেন৷ 15 জুলই ওই বৈঠক হয়৷ তার আগে প্রকাশিত একটি ভিডিয়ো ক্লিপে ধর্মেন্দ্রকে ব্যাখ্যা করতে দেখা যাচ্ছে যে ভারত একমাত্র দেশ যারা ইরানি মুদ্রায় সেখানে ব্যবসা করে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও৷ বর্তমানে ভারত ইরানে মূলত চা, চালের মতো কৃষিজ পণ্য এবং গাড়ির যন্ত্রাংশ রফতানি করে৷ তবে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভারত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপের জন্য সেখান থেকে তেল আমদানি করা প্রায় শূন্যতে নামিয়ে এনেছে৷ পণ্য বিনিময়ে বাণিজ্যের জন্য সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইরান (CBI) এবং রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI) সহ UCO ব্যাঙ্ক ও ইরানি পক্ষের ছয়টি ব্যাঙ্কের স্থানীয় মুদ্রা ব্যবহার করে৷ তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে তিনি যোগ করেছেন যে ভারত "আমেরিকাকে বলেছে যে চাবাহারে তারা কী কবে, তা নিয়ে আমেরিকা তাদেরকে কিছু বলতে পারে না৷"
রাষ্ট্রদূত বলেন, "চাপের নিরিখে, আমি যা বলেছিলাম সেটাই আসল ঘটনা৷ আমরা একমাত্র দেশ যারা আমাদের দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের অর্থায়নের জন্য টাকা ও রিয়াল ব্যবহার অব্যাহত রেখেছি। বাস্তব পরিস্থিতি হচ্ছে আমরা চাবাহারে কাজ করছি, আমরা চবাহারের জন্য সরঞ্জাম কিনছি, আমরা চাবাহারের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমরা আমেরিকাকে বলেছি যে চাবাহারে কী করতে হবে, তা নিয়ে তারা আমাদের কোনও কিছু বলতে পারে না৷"
তেহরান টাইমসের তরফে প্রথমে ভিডিয়োটি ট্যুইট করা হয়৷ পরে আবার তা ডিলিট করে দেওয়া হয়৷ ওই ভিডিয়োটিতে দেখা যাচ্ছে গদ্দাম আরও ব্যাখ্যা করেছেন যে 2018 সালে দুই দেশের মধ্যে বাৎসরিক চুক্তি বা অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তি সাক্ষরিত হয়৷ তারই আওতায় চাবাহারের মাধ্যমে পণ্য পরিবহণ যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে । রাষ্ট্রদূত বলেন, "2018-র ডিসেম্বর থেকে ও 2019 এর মধ্যে তৈরি হওয়া একটি অন্তর্বর্তীকালীন চুক্তিতে, এক বছরে আমরা ইরান ও আফগানিস্তানের জন্য শিপিং বৃদ্ধি করে ছয় হাজার টন কন্টেনার এবং এক মিলিয়ন টনেরও বেশি কার্গোতে চাল, চিনি, গম সরবরাহ করেছি। এক বছরের মধ্যে এটা বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি হয়েছে। তবে এটি একটি নতুন বন্দর। এটা উন্নত হতে আরও সময় লাগবে৷ ইরানের শীর্ষ স্থানীয় ইংরেজি দৈনিককে দেওয়া ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের এই সাক্ষাৎকার এমন একটা সময়ে সামনে এল যখন তেহরান বেজিংয়ের সাথে 25 বছরের মেয়াদে ব্যাপক সহযোগিতা চুক্তিতে সাক্ষর করতে চলেছে৷ যাকে ওই দেশের বিদেশমন্ত্রী জাভেদ জারিফ স্বচ্ছ বলেই দাবি করেছেন। রাষ্ট্রদূত ধর্মেন্দ্র আরও উল্লেখ করেন যে চাবাহার বন্দরের জন্য সরঞ্জাম সরবরাহ করতে তৃতীয় দেশে অর্ডার দেওয়া হয়েছে৷ মূল সরবরাহকারীদের মধ্যে রয়েছে ইতালি, ফিনল্যান্ড, জার্মানি এবং চিন৷ এই বছরের অক্টোবরের মধ্যে তা সরবরাহ হওয়ার কথা৷
প্রসঙ্গত, ভারত বৃহস্পতিবার তাদের জেনারেল ফিনান্সিয়াল রুলস 2017-তে সংশোধন করেছে৷ তাতে বলা হয়েছে যে ‘ভারতের সঙ্গে স্থল সীমান্ত ভাগ করে নেয় এমন দেশগুলি, যাদের সঙ্গে ভারতের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত বিষয় অথবা বিষয়গুলি সরাসরি বা পরোক্ষ ভাবে জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে জড়িত, সেই দেশগুলির উপরনিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে’ ওই সংশোধনের মাধ্যমে৷ চিন থেকে সরকারি সংগ্রহের উপর অতিরিক্ত নজরদারি করতে বা বিধিনিষেধ আরোপ করার জন্যই এটা করা হয়েছে৷ তা সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে৷ এর আগে 20 জুলাই ইরানের এক জুনিয়র মন্ত্রীর সঙ্গে রাষ্ট্রদূতের বৈঠক হয়৷ তার পর ভারতীয় দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল যে সাম্প্রতিক বিতর্কিত প্রতিবেদনের জন্য ইরানি পক্ষ ‘আরোপিত উপাদান’-এর উপর দোষ চাপিয়েছিল৷ ভারতীয় দূতাবাসের সরকারি ট্যুইটার হ্যান্ডেল থেকে ট্যুইট করে বলা হয়, "রাষ্ট্রদূত গদ্দাম ধর্মেন্দ্রকে আজ HE সাঈদ রসৌলির তরফে আমন্ত্রণ জানানো হয়৷ তাঁকে চাবাহার-জাহেদন রেলপথে চলতে থাকা সহযোগিতার বিষয়টি পর্যালোচনা করার জন্যই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল৷ HE সাঈদ রসৌলি সড়ক বিষয়ক সহকারি মন্ত্রী এবং ইরানি রেলওয়ের মাথা৷ HE রসৌলি বলেছিলেন যে চাবাহার-জাহেদন রেলপথ থেকে ইরান ভারতকে বাদ দিয়েছে এমন সাম্প্রতিক রিপোর্টের পেছনে স্বার্থান্বেষীদের স্বার্থ রয়েছে৷" (httpstwitter.comindia_in_iranstatus1285214666109706241s=21)
দক্ষিণ-পূর্ব ইরানে অবস্থিত চাবাহার বন্দরের সম্ভাবনা প্রথম ভারতই বের করে৷ আর প্রকল্পের প্রস্তাব দেয়৷ এর ফলে ভারতের কাছে মধ্য এশিয়ায় প্রবেশের কৌশলগত প্রবেশদ্বার তৈরি হয়েছে৷ আর স্থলপথে আফগানিস্তানকে মানবিক দিক থেকে সাহায্য করার সুযোগও হচ্ছে৷ কারণ আফগানিস্তানে স্থলপথে সাহায্য পাঠাবার রাস্তা পাকিস্তান বন্ধ করে রেখেছে৷ ভারতকে প্রথম পর্যায়ে চাবাহারে শাহিদ বেহেস্তি বন্দরের মান উন্নত করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ৷ ভারতীয় রাষ্ট্রদূত তেহরান টাইমসের সিনিয়র সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে আশ্বাস দিয়ে বলেন, "মূলত চাবাহার নতুন বন্দর হিসেবে কাজ করে চলেছে। এটি এখনও এর উন্নয়নের পর্যায়ে রয়েছে এবং আমরা আশা করছি যে আমরা যত এগিয়ে যাব, ততই বন্দর ব্যবহারের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে৷ এই বন্দর ব্যবহার করে আজারবাইজান হয়ে আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়ায় চলে যাওয়া যাবে৷ ইরানের মূল বন্দরটি এখন বন্দর আব্বাস। ইরানে বন্দর পরিচালনার কাজের 90 শতাংশই এখন বন্দর আব্বাসের মাধ্যমে হয়। আমরা এক বছরে চাবাহারে তিন শতাংশ পেয়েছি। চাবাহারকে আমাদের উন্নত করতে হবে। এর জন্য সময় লাগতে পারে ৷"