দিল্লি, 20 মার্চ : সাতবছরের প্রতীক্ষার অবসান ৷ ফাঁসির সাজা কার্যকর হল নির্ভয়াকাণ্ডের চার দোষী মুকেশ, বিনয় শর্মা, অক্ষয় সিং ও পবন গুপ্তার ৷ আজ ভোর 5.30-এ ফাঁসি হল এই চারজনের ।
এক নজরে ঘটনাপ্রবাহ -
- 2012
16 ডিসেম্বর দিল্লিতে বাসের মধ্যে গণধর্ষণের শিকার হন প্যারা মেডিকেলের ছাত্রী । দোষীদের গ্রোপ্তারির দাবিতে পথে নামে সাধারাণ মানুষ । 22 ডিসেম্বরের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয় দোষীদের । 29 ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে মারা যান নির্ভয়া ।
- 2013
নির্ভয়া ফান্ড তৈরি করে কেন্দ্রীয় সরকার । তিহাড় জেলে আত্মহত্যা করে নির্ভয়া মামলার অন্যতম অভিযুক্ত রাম সিং । ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে বিচার শুরু হয় পাঁচ অভিযুক্তের । একজনের বিচার চলে জুভেনাইল জাস্টিস কোর্টে । তাকে তিন বছরের সাজা দেওয়া হয় । বাকি চার অভিযুক্তকে দোষী সাব্যস্ত করে শোনানো হয় ফাঁসির সাজা । সেবছরই দিল্লি হাইকোর্টে সাজা কমানোর আর্জি জানায় দোষীরা ।
- 2014
নিম্ন আদালতের নির্দেশ বহাল রাখে দিল্লি হাইকোর্ট । সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় দোষী সাব্যস্তরা । মৃত্যুদণ্ডের স্থগিতাদেশ দেয় শীর্ষ আদালত ।
- 2015
ছাড়া পায় নাবালক । অন্যদিকে, রাজ্যসভায় পাশ হয় জুভেনাইল জাস্টিস বিল ।
- 2016
সুপ্রিম কোর্টে শুরু মামলার শুনানি ।
- 2017
চারজনের মৃত্যুদণ্ডের সাজা বহাল রাখে শীর্ষ আদালত । রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায় মুকেশ, পবন ও বিনয় ।
- 2018
পুনর্বিবেচনার আর্জি খারিজ করে সুপ্রিম কোর্ট ।
- 2019
দোষীদের ফাঁসির সাজা দ্রুত কার্যকর করতে দিল্লির পাতিয়ালা হাউজ় কোর্টে আবেদন করে নির্ভয়ার পরিবার । 10 ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানায় অক্ষয় সিং । আর্জি খারিজ শীর্ষ আদালতের ।
- 2020
7 জানুয়ারি দিল্লির পাতিয়ালা হাউজ় কোর্ট নির্দেশ দেয় 22 জানুয়ারি ফাঁসি চার দোষীর ।
দোষীদের মধ্যে একজনের আইনি সবরকম প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া 22 জানুয়ারি ফাঁসিতে স্থগিতাদেশ পড়ে ।
রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চেয়েও মেলেনি । সেই আর্জি খারিজকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে 26 জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানায় নির্ভয়া কাণ্ডে সাজা প্রাপ্ত মুকেশ সিং । নাকচ করে সুপ্রিম কোর্ট । ঠিক হয় 1 ফেব্রুয়ারি ফাঁসি হবে ।
মুকেশের আবেদন খারিজের দিন অর্থাৎ 29 জানুয়ারি ফের নতুন পিটিশন জমা করল নির্ভয়ার অন্য এক দোষী অক্ষয় ঠাকুর ৷
30 জানুয়ারি, ফাঁসিতে স্থগিতাদেশ চেয়ে দিল্লির পাতিয়ালা হাউজ় কোর্টে আবেদন করলেন নির্ভয়াকাণ্ডে সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীদের আইনজীবী ৷
1 জানুয়ারি ফাঁসি হয়নি চার জনের ।
5 ফেব্রুয়ারি একসঙ্গে চার দোষীকে ফাঁসি দেওয়ার দিল্লি হাইকোর্টের এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় কেন্দ্র ও দিল্লি সরকার । নির্ভয়ার চার অপরাধীকে আলাদাভাবে ফাঁসি দেওয়ার জন্য দিল্লি হাইকোর্টে আবেদন জানিয়েছিল তারা । সেই আবেদন খারিজ করে দিল্লি হাইকোর্ট । সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে কেন্দ্রীয় ও দিল্লি সরকার ।
এভাবেই কোনও না কোনও নতুন মামলা করতে থাকে দোষীদের আইনজীবী এ পি সিং ।
17 ফেব্রুয়ারি, নির্ভয়া দোষীদের ফাঁসির জন্য নতুন দিন ঘোষণা করে দিল্লি আদালত । 3 মার্চ নির্ভয়াকাণ্ডের চার দোষীকে ফাঁসি দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেয় তারা ।
কিন্তু আবার পিছিয়ে যায় দিন । 2 মার্চ পবন গুপ্তা, অক্ষয় ঠাকুর ও মুকেশ সিংয়ের ফাঁসির সাজা রদের আবেদন খারিজ করে দিল্লি আদালত । তার কিছুক্ষণ পরই আদালত জানিয়ে দেয়, দোষীদের মধ্যে একজনের প্রাণভিক্ষার আর্জি এখনও রাষ্ট্রপতির কাছে আটকে আছে । তাই এখনও তাদের কাছে আইনি বিকল্প বেঁচে আছে । সেজন্যই ফাঁসি দেওয়া যাবে না ।
5 মার্চ নতুন করে ফাঁসির দিন ঘোষণা হয় । দিল্লি আদালত জানায়, 20 মার্চ ভোর সাড়ে 5টায় ফাঁসি দেওয়া হবে তাদের ।
তারপরও একাধিকভাবে মৃত্যুদণ্ডে স্থগিতাদেশের চেষ্টা করে চার জন ।
গতকাল রাতেও তাদের সবরকম আবেদজন খারিজ করে দেওয়ার বিরুদ্ধে গিয়ে দিল্লির উচ্চ আদালতে আবেদন করে চার দোষী ।
কিন্তু সেই আবেদনও খারিজ হয়ে যায় ।
আজ ভোর 5.30 টায় ফাঁসি হল চার জনের ।
আট বছরের প্রতীক্ষা শেষ । ফাঁসি হল । কিন্তু একটা প্রশ্ন থেকেই গেল । নারী নির্যাতন কী বন্ধ হবে ? নির্ভয়ার মতো দেশের আর কোনও মেয়েকে জীবন হারাতে হবে না তো ?