বহরমপুর, 29 জানুয়ারি : মুর্শিদাবাদের বাসিন্দা গৌতমচন্দ্র বিশ্বাস ৷ একাই বহু বছর ধরে গঙ্গা পরিষ্কার করে চলেছেন ৷ একটি ছোটো নৌকায় চেপে গঙ্গার জলে ভেসে যাওয়া প্লাস্টিক বোতলগুলি তুলে জল পরিষ্কার রাখায় তাঁর একমাত্র লক্ষ্য ৷
সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে নৌকা ভরতি করে প্লাস্টিক বর্জ্য নিয়ে বাড়ি ফেরেন গৌতমবাবু ৷ তার মধ্যে থাকে একবার ব্যবহার যোগ্য প্লাস্টিক ব্যাগ থেকে শুরু করে প্লাস্টিক বোতল ৷ সেগুলি পরেরদিন সকালে বিক্রি করে দেন ৷
এখন প্রশ্ন একটাই ৷ যে কাজ করে তিনি কোনও টাকা পান না, সে কাজ করেন কেন ? গৌতমবাবু জানান, "এটা খারাপ দেখায় ৷ নদীর উপর এত প্লাস্টিক বর্জ্য বয়ে চলেছে ৷ প্রতিদিন ভাগীরথীতে দূষণের পরিমাণ বেড়ে চলেছে ৷ আমি শুধু সেগুলিকে জল থেকে তুলে নদীকে পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করছি ৷"
কেন্দ্রীয় সরকার অনেক দিন ধরেই প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের জন্য সাধারণ মানুষকে সচেতন করার কাজ করে চলেছে ৷ গান্ধিজির স্বচ্ছ ভারতের স্বপ্নকে পুরণ করার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও সবাইকে প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধের আবেদন করে চলেছেন ৷
গৌতম বিশ্বাস একজন মৎস্যজীবী ছিলেন ৷ ভাগীরথীর কাছেই কাজ করতেন তিনি ৷ পাঁচ বছর আগে মাছ ধরতে গিয়ে তিনি লক্ষ্য করেন, নদীর উপর প্লাস্টিক বোতল ভেসে বেড়াচ্ছে ৷ যা জলকে দূষিত করছে ৷ সিদ্ধান্ত নিতে তিনি দু'বার ভাবেননি ৷ তারপর থেকেই গঙ্গাকে পরিষ্কার রাখার লক্ষ্য নিয়েছেন ৷
গৌতমবাবু জানান, "বয়স বাড়ায় মাছ ধরার কাজ ছাড়তে হয়েছে ৷ কিন্তু, আমি শুধু বসে বসে নদীর এই অবস্থা দেখতে পারব না ৷ প্লাস্টিক বর্জ্য থেকে মাছগুলোকে বাঁচানোর চেষ্টা করছি ৷"
এই কাজের প্রতি গৌতম বিশ্বাসের দায়বদ্ধতার প্রশংসায় পঞ্চমুখ স্থানীয়রা ৷ অসীম দাস বলেন, "শরীরে এত ক্ষমতা না থাকলেও তিনি প্রতিদিন নদী থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য তুলে নিয়ে আসেন ৷ আমি অনেকদিন ধরে তাঁকে এই কাজ করতে দেখছি ৷ তিনি এই কাজ করে আমাদের সবাইকে সাহায্য করছেন ৷"
প্রতিবেশী মীরা বিশ্বাস বলেন, নদী থেকে প্লাস্টিক বর্জ্য তুলে এনে সেগুলি বিক্রি করে এমন কিছু রোজগার হয় না গৌতমবাবুর ৷ "তাঁর কাছে এটা খুবই কঠিন কাজ ৷ শীতের সময় ঠান্ডা বাড়লে তাঁর কষ্টও বাড়ে ৷ প্রশাসনের তরফে তাঁকে কোনও সাহায্য করলে খুবই ভালো হত ৷"
স্থানীয় ক্লাব বা সংস্থাগুলি তাঁকে এই কাজের জন্য সম্মান জানালেও তেমন কোনও উপকার হয়নি ৷ SDPO (বহরমপুর) দীপাঞ্জন মুখোপাধ্যায় বলেন, "এই মানুষটি যা করছে, তা শুধু উদাহরণ দেওয়ার মতো নয় ৷ অন্যদের অনুপ্রাণিতও করছে ৷"