রত্নগিরি (মহারাষ্ট্র), 9 জুন : 27টি কীটনাশকের উপর নিষেধাজ্ঞার প্রস্তাব দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ পাশাপাশি 45দিনের মধ্যে এই বিষয়ে পরামর্শও চাওয়া হয়েছে ৷ তবে এই বিষয়ে দ্বিধার মধ্যে রয়েছেন চাষিরা ৷ কারণ, অনেক চাষিই এই কীটনাশকগুলি ব্যবহার করেন ৷ আম চাষিরাও এই কীটনাশকগুলির মধ্যে 8-10রকমের কীটনাশক ব্যবহার করেন ৷ বর্তমানে এই কীটনাশকগুলি চাষিদের কাছে সহজলভ্য ৷ কিন্তু, এগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলে চাষিদের বেশি দামি কীটনাশক কিনতে হবে ৷ যার জন্য তাঁদের বেশি টাকা খরচও করতে হবে ৷
আম চাষিদের একজন বলেন, পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকার কারণেই কীটনাশকগুলির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার কথা ভাবছে সরকার ৷ তাই চাষিদেরও এটা মেনে নেওয়া উচিত ৷
যে সমস্ত কীটনাশকগুলি আম চাষিরা ব্যবহার করছেন, সেগুলি ভারতেই তৈরি জেনেরিক কীটনাশক ৷ এগুলি খুবই কম দামে পাওয়া যায় ৷ এই দাম স্থানীয় চাষিদের সামর্থের মধ্যে ৷
এই কীটনাশকগুলির মধ্যে কুইনালফস একধরনের কীটনাশক যা আমের পোকাদের জন্য ব্যবহার করা হয় ৷ এর দাম 400 টাকা প্রতি লিটার ৷
ক্যারবেনডাজ়িম পাওডার আম গাছে ছত্রাক দূর করতে কাজে লাগে ৷ এর দাম প্রতি কেজিতে 500 টাকা ৷
ক্লোরপাইরিফস পোকাদের শুকিয়ে ফেলতে ব্যবহার করা হয় ৷ এই কীটনাশকের দাম প্রতি লিটারে 400 টাকা ৷
আমের ক্ষয়রোধ করে ফেনাকিউকার্ব ৷ এর দাম প্রতি লিটারে 550 টাকা ৷
পোকাদের জন্য ব্যবহার করা হয় ডেল্টামেথরিন ৷ এই কীটনাশকের দাম প্রতি লিটারে 600 টাকা ৷
কোঙ্কানের নন্দাই অ্যাগ্রোশপের মালিক মহিন্দর বামনে বলেন, "বিগত কয়েক বছর ধরে আম চাষিরা এই সমস্ত কীটনাশক ব্যবহার করে আসছে ৷ এর ফলও এখনও পর্যন্ত ভালো রয়েছে ৷ তাই আম চাষিদের মধ্যে এই কীটনাশকগুলির চাহিদাও প্রচুর ৷" তিনি আরও বলেন, "এছাড়া, এই কীটনাশকগুলি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি হলে চাষিদের লিটার প্রতি 2-3 হাজার টাকা ব্যয়ে কীটনাশক কিনতে হবে ৷ যার ফলে চাষিদের বর্তমানে খরচের চার-পাঁচগুণ বেশি খরচ করতে হবে ৷"
এই বিষয়ে আমবাগানের মালিক প্রসন্ন পেঠে বলেন, বর্তমানে খুব সহজেই এই কীটনাশকগুলি পাওয়া যায় এবং এর ফলও পায় চাষিরা ৷
পেঠে বলেন, "যদিও এই সমস্ত কীটনাশকগুলির মধ্যে কয়েকটি বহু দিন ধরে জলে বা মাটিতে থেকে যায় ৷ যদি এই ধরনের কীটনাশকগুলি সরকারের তরফে বন্ধ করে দেওয়া হয়, তাহলে তা চাষিদের মেনে নেওয়া উচিত ৷"
তিনি আরও বলেন, সম্পূর্ণ নিষেধাজ্ঞা জারি করার বদলে ক্ষতিকারক কীটনাশকগুলিকে সরকারের বন্ধ করা উচিত ৷ পেঠে দাবি জানিয়েছেন, যে সমস্ত কীটনাশক মানুষের ও জমির ক্ষতি করে না, সেগুলিকে নিষেধাজ্ঞার তালিকা থেকে সরিয়ে ফেলা উচিত ৷
আম চাষে কীটনাশকের খরচ
যদি আমের উপর পর্যাপ্ত পরিমানে এবং ভালোভাবে কীটনাশক স্প্রে করা হয়, তাহলে আম বাগানের মালিকরা চাষিদের প্রতি 100টি গাছে 2.25 থেকে 2.5 লাখ টাকা দেন ৷ অনেক চাষিরা এক থেকে দেড় লাখ টাকার কীটনাশকও স্প্রে করেন ৷ কিন্তু, যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে কীটনাশক স্প্রে করা হয়, তাহলে ফলনও ভালো হয় ৷ উৎপাদনের পাশাপাশি ফলের গুণগত মানও ভালো হয় ৷ কীটনাশক স্প্রে না করা হলে ফলনেও তার প্রভাব পড়ে ৷ কীটনাশক দিলে যেখানে 500 বাক্স আম পাওয়া যায়, সেখানে কীটনাশক না দিলে 200-250 বাক্স আম পাওয়া যায় ৷ যার মানে দাঁড়াচ্ছে, কীটনাশক না দিলে উৎপাদনের পরিমাণ 50 শতাংশ কমে যাবে ৷ অনেক আমে কালো দাগ পাওয়া যায় ৷ যার ফলে গুণগত মানও কমে যায় ৷ সাধারণত এটি তাঁদের পুঁজিতেও প্রভাব ফেলে ৷
আম সাধারণত মুম্বই থেকে রপ্তানি হয় ৷ প্রতি বছর প্রায় 38-40 হাজার মেট্রিক টন আম ভারত থেকে রপ্তানি হয়, যার মধ্যে 15-20 শতাংশ আলফানজ়ো থাকে ৷ এর মানে প্রায় সাত-আট মেট্রিক টন আলফানজ়ো রপ্তানি হয় ৷ মহারাষ্ট্রের কৃষি বিপণন বোর্ড (কঙ্কান ডিভিশন)-র ডেপুটি জেনেরাল ম্যানেজার ভাষ্কর পাতিল বলেন, ইংল্যান্ড, ইউরোপ, অ্যামেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, নিউজ়িল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান-সহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিতেও আম রপ্তানি করা হয় ৷
কিন্তু, সবচেয়ে বেশি আম মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলিতেই রপ্তানি করা হয় ৷ এ বছর কোরোনার প্রভাব আমের রপ্তানিতেও পড়েছে ৷ গত দুই মাস ধরে বিমান পরিষেবা সম্পূর্ণ বন্ধ ৷ তাই এ বছর মধ্যপ্রাচ্যে ও ইউরোপে জাহাজের মাধ্যমে আম রপ্তানি করা হয়েছে ৷
2019 সালের 1 এপ্রিল থেকে 19 মে পর্যন্ত মহারাষ্ট্র থেকে 16,746 মেট্রিক টন আম রপ্তানি হয়েছিল ৷ এবছর 1 এপ্রিল থেকে 19 মে পর্যন্ত আম রপ্তানি হয়েছে 8,460 মেট্রিক টন ৷
প্রচুর পরিমাণে আম রপ্তানি হয় ৷ যদিও গত বছরের তুলনায় আমের রপ্তানি এ বছর 52 শতাংশ কমে গিয়েছে ৷ এই রপ্তানিতে আলফানজ়ো আমের এক বড় ভূমিকা থাকে ৷ আলফানজ়ো ছাড়াও কেশর, বেগনপল্লি, তোতাপুরি, বাদামি ও অন্য রাজ্যগুলির আমও রপ্তানি হয় ৷ কিন্তু, এবছর মুম্বই থেকে মূলত আলফানজ়ো রপ্তানি হয়েছে ৷ কারণ এ বছর অন্য রাজ্য থেকে মুম্বইয়ে আম আনা খুবই কঠিন ছিল ৷
লকডাউনের জেরে সমস্ত সীমান্ত বন্ধ ছিল ৷ বিপণন কমিটিও বন্ধ ছিল ৷ যে কারণে রপ্তানিকারকদের কাছে অন্য রাজ্যের আম সহজলভ্য ছিল না ৷ তাই আলফানজ়ো আমই মূলত মুম্বই থেকে রপ্তানি হয়েছে ৷ ভাস্কর পাতিল আরও বলেন, জাহাজের মাধ্যমে মূলত মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপে এবছর আম রপ্তানি হয়েছে ৷ তাই যদিও রপ্তানি কমলেও আলফানজ়ো আমের রপ্তানি অন্য আমের তুলনায় বেশি হয়েছে ৷