ইতিহাসবিদ রামচন্দ্র গুহ বলেছিলেন, "রাজনীতি ও সামাজিক আন্দোলনের ময়দানে নারীদের নিয়ে আসা ছিল নারী জাগরণের ক্ষেত্রে গান্ধির সব থেকে বড় অবদান ।"
সেই সময় সাধারণত চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ নারীদের মুক্ত আকাশের নিচে রাজপথে নিয়ে এসেছিলেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি । ইংরেজদের বেড়ি ছিঁড়ে বের হতে পুরুষদের পাশাপাশি নারীরা স্বাধীনতা আন্দোলনে নামায় সেই আন্দোলন সম্পূর্ণতা পেয়েছিল । আর এর পুরো অবদান গান্ধির ।
মূলত গান্ধির ডাকেই ভারতের রাজনীতিতে মহিলাদের ব্যাপক অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা গিয়েছে । এর পিছনে অন্যতম কারণ হতে পারে গান্ধির অহিংসানীতি । রাজনৈতিক পন্থা হিসাবে অহিংসানীতি মহিলাদের মানসিক গঠনের সঙ্গে অনেকটা মিলে যাওয়াতেই তাঁরা গান্ধির পথে অগ্রসর হয়েছিলেন । প্রসঙ্গত, 1922 সালের সর্বভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সভায় অংশগ্রহণকারী 350 সদস্যের মধ্যে মাত্র 16 জন মহিলা প্রতিনিধি ছিলেন । তবে অন্য চিত্র ছিল গান্ধির নেতৃত্বে চম্পারণ আন্দোলনে মহিলাদের অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে । প্রাথমিক ভাবে 25 জন সত্যাগ্রহীকে নিয়ে শুরু করা গান্ধির চম্পারণ সত্যাগ্রহে 12 জন মহিলা ছিলেন ।
পরবর্তীকালে 1921 সালে অসহযোগ আন্দোলনেও ব্যাপক সংখ্যায় অংশ নেন মহিলারা । গান্ধি মনে করতেন সমাজের পুরুষদের সমান স্থান প্রাপ্য মহিলাদের । তাই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে নারীদের অংশগ্রহণ খুব দরকার । গান্ধির প্রদর্শিত পথেই 1925 সালে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট পদে প্রথমবার কোনও নারী আসীন হন । তাঁর নাম, সরোজিনী নাইডু ।
1933 সালে গান্ধির হরিজন উন্নয়ন যাত্রাতেও বিশেষ ভূমিকা নিয়েছিল মহিলারা । গান্ধির আন্দোলনে শুধু পা মেলানোই নয়, অর্থ জোগান দিতে নিজেদের গয়না পর্যন্ত দান করেছিল তারা । সেই আন্দোলনের অন্যতম কাণ্ডারি ছিলেন সরোজিনী নাইডু । সঙ্গে ছিলেন কমলা দেবী চট্টোপাধ্যায় ও আরও অনেক মহিলারা । এমন কী হিজাবের আড়াল থেকে বেরিয়ে এসে গান্ধির খিলাফত আন্দোলনে যোগ দিয়েছিলেন তৎকালীন রক্ষণশীল পরিবারের মুসলিম নারীরাও ।
1942 সালের 9 অগাস্ট ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু হলে ভারতের হাজার হাজার নারী এই আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে । 9 অগাস্ট ভোর রাতেই কংগ্রেস কার্যনির্বাহক কমিটির সকল সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয় । তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন, সরোজিনী নাইডু । ভারত ছাড়ো আন্দোলনে নারীদের যোগদান আইন অমান্য আন্দোলনের মতো পরিকল্পিত ও কর্মসূচিভিত্তিক না হলেও নারীরা বিভিন্নভাবে এই আন্দোলনে যোগদান করেছিল । অহিংস আন্দোলন সংগঠিত করে এই আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিলেন সুচেতা কৃপালাণী ।
নারীদের অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে গান্ধি মন্তব্য করেছিলেন, "ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস যখন লেখা হবে নারীদের বীরত্বের কথা সেই ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি জায়গা দখল করবে ।"