হায়দরাবাদ, 21 মে : ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষা অনুযায়ী, এক্সট্রাকোরপোরিয়াল মেমব্রেন অক্সিজেনেশন (ECMO) মেশিন গুরুতর অসুস্থ কোরোনা রোগীদের চিকিৎসায় সহায়ক হতে পারে । কোরোনা আক্রান্তরা গুরুতর অসুস্থ হলে অনেক সময় ফুসফুস কাজ করা বন্ধ করে দেয় । যদি তাদের ফুসফুস কাজ না করে, তবে তাদের রক্ত মস্তিষ্ক, লিভার ও শরীরের অন্য অঙ্গগুলিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন সঞ্চালন করতে পারে না । তবে, বয়স্ক রোগী যাদের অন্য রোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এই যন্ত্র খুব একটা ফলপ্রসূ হবে না ।
একটি ECMO যন্ত্র মানুষের শরীরের বাইরে রক্ত পাম্প করে তাতে অক্সিজেন সঞ্চালন বাড়ায় । তারপর রক্তকে শরীরে প্রবেশ করায় । এভাবে ফুসফুসকে কখনও কখনও হৃৎপিণ্ডকেও বিশ্রামের সুযোগ দেয় ECMO । যে সমস্ত রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে শুধু ভেন্টিলেটরে কাজ হয় না, সেক্ষেত্রে এই যন্ত্র ওই রোগীকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করে ।
গবেষণা অনুযায়ী, ফুসফুসের অবস্থা খারাপ এরকম 32জন কোরোনা আক্রান্ত রোগীর উপর এই যন্ত্রের প্রয়োগ করেন গবেষকরা । দেখা যায়, এর ফলে 22জন রোগী বেঁচে যান । এই 22 জনের মধ্যে 17 জন এই যন্ত্রের উপর নির্ভরশীল ছিলেন । বাকি পাঁচজনের থেকে ECMO যন্ত্র পরে খুলে নেওয়া হয় । তারপরও তাঁরা বেঁচে ছিলেন । এই পাঁচ রোগীর মধ্যে মজার জিনিস ছিল, তাঁদের সকলকেই এমন একটি ECMO যন্ত্র দেওয়া হয়েছিল যা শুধু ফুসফুসকে সাহায্য করে কিন্তু হৃৎপিণ্ডকে নয় । ফুসফুস ও হৃৎপিণ্ডকে সাহায্য করে এমন ECMO যন্ত্র এখনও সফল হয়নি । যেসব রোগী হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস উভয়ের জন্য ECMO-র সাহায্য নিয়েছিল, তারা সুস্থ হওয়ার বদলে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছিল ।
ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালক ও ECMO তৈরির গবেষণা দলের সদস্য জেরেমিয়া হায়াঙ্গা বলেন, "ECMO-র সুবিধা ও অসুবিধাগুলি সম্পর্কে রোগী ও তাদের পরিবারের সদস্যদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য এই উদাহরণগুলি সাহায্য করে । " এই গবেষণা দলে রয়েছেন ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজ়িকিউটিভ চেয়ার বিনয় বাধওয়ার ও স্কুল অফ মেডিসিন্স ডিপার্টমেন্ট অফ কার্ডিয়োভাসকুলার অ্যান্ড থোরাসিক সার্জারির নন-ফ্যাকাল্টি কোল্যাবরেটর জেফ্রি জেকবস । জেরেমিয়া বলেন, "যাদের রোগ শুধুমাত্র ফুসফুসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ, তাদের সুস্থ হওয়ার সুযোগ বেশি ।"
"যখন হৃৎপিণ্ড ও ফুসফুস উভয়ই দুর্বল হয়ে পড়ে, তখন বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমতে থাকে । এই রোগীদের নির্বাচনের জন্য আরও বেশি গবেষণার প্রয়োজন ।" গবেষকরা আরও আবিষ্কার করেছেন যে, 65 বছরের কম বয়সি রোগীদের মধ্যে স্থূলত্ব, ডায়াবেটিস বা হৃদরোগের সম্ভাবনা কম । প্রবীণদের তুলনায় এই রোগীরা ECMO-র দ্বারা তাড়াতাড়ি সুস্থ হন ।
জেরেমিয়া বলেন, "ECMO-র ব্যবহারের বিষয়ে আমাদের পূর্বে প্রকাশিত গবেষণাটি উল্লেখ করেছে যে, 70 বছরের বেশি বয়সি রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কম । সম্ভবত একাধিক রোগ ও সংরক্ষণের অভাবে এটি হতে পারে । প্রকৃতপক্ষে, এক্সট্রাকোপোরিয়াল লাইফ সাপোর্ট অর্গানাইজ়েশন যা বিশ্বজুড়ে ECMO-র প্রোগ্রামের জন্য তদারকি করে, তারা 65 বছর বয়সকে আপেক্ষিক প্রতিলক্ষণ হিসেবে বিবেচনা করে । যেমন, বেশি বয়সের রোগীদের বিপদ ছাড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য যত্ন সহকারে মূল্যায়ন প্রয়োজন ।" ECMO থেকে সফলভাবে সুস্থ হওয়া পাঁচজন রোগীর মধ্যে চারজন IV-র মাধ্যমে স্টেরয়েড গ্রহণ করেছিলেন । এই আবিষ্কার চিন থেকে প্রাপ্ত আগের গবেষণার বিরোধিতা করেছে । যেখানে বলা হয়েছিল, স্টেরয়েডগুলি রোগীদের সুস্থ করার বদলে ক্ষতি করতে পারে । জ্যাকবস বলেন, "এটা সত্যি যে, প্রতিটি চিকিৎসা একটি অর্কেস্ট্রার আলাদা আলাদা যন্ত্র ।"
তথ্য অনুযায়ী, কম বয়সি কোরোনা আক্রান্তদের জন্য বিশেষত যাদের স্টেরয়েড নিতে বলা হয়েছে এমন রোগীরা ECMO-র চিকিৎসায় বেশি সাড়া দেয় বলে এর কোনও মানে নেই যে, অন্য রোগীদের ECMO দ্বারা চিকিৎসা করা যাবে না । জেরেমিয়া বলেন, "আমরা WVU HVI-তে সমস্ত রোগীদের আলাদা আলাদভাবে যত্ন দেওয়ার জন্য গর্ব করি । ECMO-র ব্যবহারে উপকৃত হতে পারে এমন রোগীর কাছে আমাদের মাল্টিডিসিপ্লিনারি দল অত্যন্ত স্বতন্ত্র পদ্ধতি গ্রহণ করে । আমরা এই উন্নত পদ্ধতিতে সুস্থ করার জন্য কোনও রোগীকে সাহায্য করার সম্ভাব্য সুবিধা ও বিপদগুলি নিয়ে পুরোপুরি মূল্যায়ন করি ।"