ETV Bharat / bharat

আসুন, আমাদের ভাষাগত ঐতিহ্যকে রক্ষা করি : উপরাষ্ট্রপতি

author img

By

Published : Nov 12, 2019, 5:07 PM IST

Updated : Nov 12, 2019, 5:25 PM IST

আমাদের দেশে 19 হাজার 500-রও বেশি ভাষা মাতৃভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় ৷ ভারতের মতো এত ভাষাগত বৈচিত্র আর কোথাও নেই ৷ এই ভাষাগুলিকে লালন-পালনের দায়িত্ব আমাদের সকলের ৷ মনে করিয়ে দিলেন দেশের উপরাষ্ট্রপতি বেঙ্কাইয়া নাইডু ৷

ভাষা

দিল্লি, 12 নভেম্বর : আমাদের দেশ ভাষাগত ঐতিহ্যের রত্ন ভাণ্ডার । ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের জন্য এদেশ বিশ্বজুড়ে সমাদৃত । বহুবিধ ভাষার রঙিন উপস্থিতি আমাদের দেশকে অনন্য করে রেখেছে ।

কিন্তু, আমরা আমাদের এই সমৃদ্ধ প্রাদেশিক ভাষার সংরক্ষণে যথেষ্ট তৎপর নই । আর এই বিষয়টা নিয়ে আমি খুবই বিচলিত । শিক্ষার মাধ্যম সংক্রান্ত কোনও নীতি, বিশেষ করে মাধ্যমিক ও সেকেন্ডারি স্তরে প্রয়োগের আগে অবশ্যই সরকারকে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে । সৃজনশীলতার প্রকাশের ক্ষেত্রে মাতৃভাষার কোনও বিকল্প নেই । তবে খেয়াল রাখতে হবে, সৃজনশীলতার প্রাথমিক লালন যেন একেবারে গঠনমূলক পর্যায়ে করা হয় । আমাদের বৌদ্ধিক ও মানসিক বিকাশের অন্যতম সেরা মাধ্যম হল ভাষা । একাধিক প্রজন্মের মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন, বিজ্ঞান চেতনার আদানপ্রদান ও বিশ্ব দর্শনের প্রধান যান হল ভাষা । অতীত ও বর্তমানের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ অথচ অদৃশ্য সেতুর কাজ করে ভাষা । মানুষের বিবর্তনের সঙ্গে এরও বিবর্তন ঘটে এবং বহুল ব্যবহারের দ্বারা এটি লালিত হয় ।

ভাষা আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ । সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রেও এর অবদান অনস্বীকার্য । এক কথায় বলতে গেলে, আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে সভ্যতার তৃণমূলস্তর পর্যন্ত অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে রয়েছে ভাষা । আমাদের নিজস্বতা ও আমরা সমাজের যে স্তরের প্রতিনিধিত্ব করি, ভাষা তারই পরিচয়বাহক । মানুষে মানুষে সম্পর্কের বাঁধনকে আরও সুদৃঢ় করতে বিশেষ ভূমিকা নেয় ভাষা ।


ভাষাসুমারি অনুযায়ী, ভারতে 19 হাজার 500-রও বেশি ভাষা ও উপভাষা মাতৃভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হয় । মোট 121 ধরনের ভাষায় কথা বলেন দেশের 10 হাজার বা তার বেশি সংখ্যার মানুষ । ভাষা স্থিতিশীল নয়, বরং তা সতত পরিবর্তনশীল ৷ দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার সঙ্গে যা নিজেকে সর্বদাই উন্নীত করে চলেছে । ভাষার জন্ম হয়, পরিবর্তন হয়, বিবর্তন হয়, কখনও অন্য ভাষার সঙ্গে মিশে যায় আবার কোনও ক্ষেত্রে মৃত্যুও হয় । বিখ্যাত কবি আচার্য দণ্ডীর মতে, ভাষার আলোয় আমরা যদি আলোকিত না হতাম, তা হলে আমরা এক অন্ধকার বিশ্বে বাস করতাম ।

অত্যন্ত দুঃখের তথ্য এটাই যে, আমাদের দেশের 196টি ভাষা আজ বিপন্ন । আমাদের এটা খেয়াল রাখতেই হবে, যেন এই সংখ্যা আর না বাড়ে । ভাষাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই । আর তা রক্ষা করার সেরা অস্ত্র হল এর বহুল ব্যবহার । আমাদের সমৃদ্ধশালী ভাষার ঐতিহ্যকে রক্ষা করাকে আমি সবসময়ই অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এসেছি । পরম্পরার মাধ্যমে এবং আমাদের প্রাণবন্ত সভ্যতার হাত ধরে আসা এই রত্ন ভাণ্ডারকে আমরা কোনও ভাবেই হারাতে পারি না । আমরা যদি ভাষাকে অবহেলা করি, তা হলে আমরা নিজেদের অস্তিত্বের একটা মূল্যবান অংশকে অবহেলা করব । একটা ভাষার যখন মৃত্যু ঘটে, তখন তার সঙ্গে জ্ঞানের এক বিশাল ভাণ্ডার এবং ব্রহ্মাণ্ডকে দেখার এক বিশেষ দৃষ্টিরও মৃত্যু হয় । বিলুপ্ত হয় বিশেষ কিছু দক্ষতা, শিল্প, খাদ্যেরও ।

ভাষা সংরক্ষণ ও উন্নতির জন্য প্রয়োজন এক বহুমাত্রিক পদ্ধতির । এর সূচনা করা উচিত প্রাথমিক স্কুলগুলি থেকে । প্রথমিক স্কুলে সাধারণ নির্দেশগুলি মাতৃভাষাতেই দেওয়া উচিত । বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহু পরীক্ষায় এটা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে যে, মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষাদানে শিশুর বিকাশ ঘটে দ্রুত হারে । UNESCO-র ডিরেক্টর জেনেরাল অদ্রে আজুলে চলতি বছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বলেছিলেন, “UNESCO মনে করে, প্রতিটি মাতৃভাষারই নিজস্ব পরিচয় থাকা উচিত । সাধারণ মানুষের জীবনে তার নিজস্বতা থাকা উচিত । মাতৃভাষা সবসময় জাতীয় ভাষা বা অফিশিয়াল ভাষার তকমা পায় না । এর ফলে অনেক সময় মাতৃভাষার অবমূল্যায়ন ঘটে এবং তা ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে ।”


আমাদের বেশির ভাগের মধ্যে একটা ধারণা রয়েছে যে, আধুনিক বিশ্বে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেতে শুধুমাত্র ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজন । এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয় । বিশ্বে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি দেশ, যেমন অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কানাডা, অ্যামেরিকা প্রভৃতিতে ইংরেজির বহুল ব্যবহার রয়েছে । কিন্তু জার্মানি, ফ্রান্স, চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশ ইংরেজি শিক্ষা ছাড়াও খুবই ভালো করছে । অন্য আন্তর্জাতিক ভাষা জানাটা যতটা কার্যকর, ইংরেজি শেখাটাও ঠিক ততটাই । মাতৃভাষা ভুলে গিয়ে ইংরেজি শিক্ষা একেবারেই কাজের কথা নয় । মাতৃভাষায় পারদর্শিতা থাকলে একটা সময়ের পরে সঠিক মঞ্চে ইংরেজি শিক্ষা একেবারেই কঠিন বিষয় নয় ।

Naidu
দেশের ভাষাগত ঐতিহ্যকে রক্ষার বার্তা উপরাষ্ট্রপতির

শুধুমাত্র প্রাথমিক শিক্ষা বা স্কুলের নির্দেশের জন্য নয়, প্রশাসনিক, ব্যাংকিং এবং বিচার বিভাগের কাজও যাতে মাতৃভাষায় হয়, তা নিশ্চিত করতে দৃঢ় পদক্ষেপের প্রয়োজন । আমার মতে, শক্তিশালী গণতন্ত্রের এটা অন্যতম ভিত্তি । ভাষাগত বিভেদ মুছে ফেলে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে হবে যা অন্তর্ভুক্তি সরকারের প্রাথমিক উদ্দেশ্য । যখনই সরকারের সঙ্গে সাধারণের কথা হবে, তা যেন এমনই ভাষায় হয়, যা সকলের বোধগম্য ।

আমি এটা একেবারেই বলছি না যে আমরা আমাদের সন্তানদের একাধিক ভাষা শেখাব না । সাহিত্য ও বিজ্ঞানের নতুন দিগন্তের সন্ধান পেতে একাধিক ভাষা জানা অত্যন্ত দরকার । উলটে ভারতের উচিত, দেশের বিপুল মানব সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে জ্ঞান অর্থনীতিতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়া ।

1999 সালে UNESCO একাধিক ভাষায় শিক্ষার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেয় । সেই সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী, শিক্ষায় অন্তত তিনটি ভাষার ব্যবহার করার আর্জি জানানো হয়, মাতৃভাষা, একটি প্রাদেশিক বা জাতীয় ভাষা এবং একটি আন্তর্জাতিক ভাষা । সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের গুরুত্ব মেনে নিয়ে UNESCO বলেছে, মাতৃভাষা জ্ঞান ও উদ্ভাবনী শক্তির আধার । তাদের আরও দাবি, মাতৃভাষায় শিক্ষাদান শিক্ষাকে সহজতর করে তোলে । এটা উৎসাহবর্ধক যে, জাতীয় শিক্ষানীতির যে খসড়া তৈরি হয়েছে, তাতে মাতৃভাষা, বিভিন্ন আদি ভাষা এমনকি সাইন ল্যাঙ্গুয়েজকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । চলতি বছরকে রাষ্ট্রসংঘ দেশীয় ভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও প্রচারের বছর হিসাবে উল্লেখ করেছে । ভারতে এই রকম একাধিক ভাষা রয়েছে, যেগুলি অবলুপ্তির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ।

আমি আশা করি, আরও বেশি করে মানুষ বাড়িতে, সমাজে, প্রশাসনে তাদের নিজেদের ভাষার ব্যবহার শুরু করবেন । দেশের মানুষ আরও বেশি করে নিজেদের ভাষায় গল্প, কবিতা, নাটক, লেখা শুরু করবে । নিজেদের ভাষা ব্যবহার করে আমাদের গর্বিত হতে হবে । দেশীয় ভাষায় আরও বেশি করে বই, ম্যাগাজিন ছাপার উপর গুরুত্ব দিতে হবে । উপভাষা এবং লোকসাহিত্যের গুরুত্ব বাড়াতে হবে ।

ভাষাকে আমাদের উন্নতির অন্যতম অনুঘটক হতে হবে । ভাষার উন্নতিতে সরকারকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে । স্বামী বিবেকানন্দের কথায়, একটা জাতীয় উন্নতির প্রধান সূচক হল ভাষা । দেশের জনগণের ক্ষমতায়নে ভাষাকে ব্যবহার করতেই হবে । রাজ্যসভাতেও সদস্যরা 22টি ভাষার যে কোনও একটিতে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করতে পারেন । সুপ্রিম কোর্টও সম্প্রতি রায়ের প্রতিলিপি ছ’টি প্রাদেশিক ভাষায় দেওয়ার কথা জানিয়েছে । বিচার বিভাগে ভাষার ব্যবধান মুছে দিয়ে আইনকে সবার আওতায় আনতে এটা একটা সুদৃঢ় পদক্ষেপ । ইংরেজি, হিন্দি ছাড়া আরও 13টি প্রাদেশিক ভাষায় বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরির পরীক্ষা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে অর্থমন্ত্রকও । রেল ও পোস্ট অফিস চাকরির পরীক্ষাগুলি স্বীয় রাজ্যের সরকারি ভাষায় নেওয়া শুরু করেছে ।

যুব-সংখ্যার নিরিখে বিশ্বের বাকি দেশগুলির তুলনায় ভারত অনেকটাই এগিয়ে । দেশের 65 শতাংশের গড় বয়স 35 বছরের নিচে । মাতৃভাষা ও উপভাষাগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে এই যুব সমাজকে উৎসাহ দিয়ে যেতে হবে । আমাদের সন্তানদের ভাষাকে ভালোবাসতে শেখাতে হবে । এগুলো দ্রুত না করলে আমরা আমাদের সভ্যতার পরিচয় ক্রমশ হারিয়ে ফেলব । পরে কিন্তু এটা নিয়ে আপশোস করার কোনও জায়গা থাকবে না । আসুন আমরা সবাই মিলে মাতৃভাষাকে লালন করি । মাতৃভাষাকে রক্ষার অঙ্গীকার নিই ।

দিল্লি, 12 নভেম্বর : আমাদের দেশ ভাষাগত ঐতিহ্যের রত্ন ভাণ্ডার । ভাষাগত ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্রের জন্য এদেশ বিশ্বজুড়ে সমাদৃত । বহুবিধ ভাষার রঙিন উপস্থিতি আমাদের দেশকে অনন্য করে রেখেছে ।

কিন্তু, আমরা আমাদের এই সমৃদ্ধ প্রাদেশিক ভাষার সংরক্ষণে যথেষ্ট তৎপর নই । আর এই বিষয়টা নিয়ে আমি খুবই বিচলিত । শিক্ষার মাধ্যম সংক্রান্ত কোনও নীতি, বিশেষ করে মাধ্যমিক ও সেকেন্ডারি স্তরে প্রয়োগের আগে অবশ্যই সরকারকে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে । সৃজনশীলতার প্রকাশের ক্ষেত্রে মাতৃভাষার কোনও বিকল্প নেই । তবে খেয়াল রাখতে হবে, সৃজনশীলতার প্রাথমিক লালন যেন একেবারে গঠনমূলক পর্যায়ে করা হয় । আমাদের বৌদ্ধিক ও মানসিক বিকাশের অন্যতম সেরা মাধ্যম হল ভাষা । একাধিক প্রজন্মের মধ্যে সাংস্কৃতিক সেতুবন্ধন, বিজ্ঞান চেতনার আদানপ্রদান ও বিশ্ব দর্শনের প্রধান যান হল ভাষা । অতীত ও বর্তমানের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ অথচ অদৃশ্য সেতুর কাজ করে ভাষা । মানুষের বিবর্তনের সঙ্গে এরও বিবর্তন ঘটে এবং বহুল ব্যবহারের দ্বারা এটি লালিত হয় ।

ভাষা আমাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও কৃষ্টির এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অংশ । সামাজিক বিকাশের ক্ষেত্রেও এর অবদান অনস্বীকার্য । এক কথায় বলতে গেলে, আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে শুরু করে সভ্যতার তৃণমূলস্তর পর্যন্ত অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িয়ে রয়েছে ভাষা । আমাদের নিজস্বতা ও আমরা সমাজের যে স্তরের প্রতিনিধিত্ব করি, ভাষা তারই পরিচয়বাহক । মানুষে মানুষে সম্পর্কের বাঁধনকে আরও সুদৃঢ় করতে বিশেষ ভূমিকা নেয় ভাষা ।


ভাষাসুমারি অনুযায়ী, ভারতে 19 হাজার 500-রও বেশি ভাষা ও উপভাষা মাতৃভাষা হিসাবে ব্যবহৃত হয় । মোট 121 ধরনের ভাষায় কথা বলেন দেশের 10 হাজার বা তার বেশি সংখ্যার মানুষ । ভাষা স্থিতিশীল নয়, বরং তা সতত পরিবর্তনশীল ৷ দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার সঙ্গে যা নিজেকে সর্বদাই উন্নীত করে চলেছে । ভাষার জন্ম হয়, পরিবর্তন হয়, বিবর্তন হয়, কখনও অন্য ভাষার সঙ্গে মিশে যায় আবার কোনও ক্ষেত্রে মৃত্যুও হয় । বিখ্যাত কবি আচার্য দণ্ডীর মতে, ভাষার আলোয় আমরা যদি আলোকিত না হতাম, তা হলে আমরা এক অন্ধকার বিশ্বে বাস করতাম ।

অত্যন্ত দুঃখের তথ্য এটাই যে, আমাদের দেশের 196টি ভাষা আজ বিপন্ন । আমাদের এটা খেয়াল রাখতেই হবে, যেন এই সংখ্যা আর না বাড়ে । ভাষাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদেরই । আর তা রক্ষা করার সেরা অস্ত্র হল এর বহুল ব্যবহার । আমাদের সমৃদ্ধশালী ভাষার ঐতিহ্যকে রক্ষা করাকে আমি সবসময়ই অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে এসেছি । পরম্পরার মাধ্যমে এবং আমাদের প্রাণবন্ত সভ্যতার হাত ধরে আসা এই রত্ন ভাণ্ডারকে আমরা কোনও ভাবেই হারাতে পারি না । আমরা যদি ভাষাকে অবহেলা করি, তা হলে আমরা নিজেদের অস্তিত্বের একটা মূল্যবান অংশকে অবহেলা করব । একটা ভাষার যখন মৃত্যু ঘটে, তখন তার সঙ্গে জ্ঞানের এক বিশাল ভাণ্ডার এবং ব্রহ্মাণ্ডকে দেখার এক বিশেষ দৃষ্টিরও মৃত্যু হয় । বিলুপ্ত হয় বিশেষ কিছু দক্ষতা, শিল্প, খাদ্যেরও ।

ভাষা সংরক্ষণ ও উন্নতির জন্য প্রয়োজন এক বহুমাত্রিক পদ্ধতির । এর সূচনা করা উচিত প্রাথমিক স্কুলগুলি থেকে । প্রথমিক স্কুলে সাধারণ নির্দেশগুলি মাতৃভাষাতেই দেওয়া উচিত । বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বহু পরীক্ষায় এটা প্রতিষ্ঠা পেয়েছে যে, মাতৃভাষায় প্রাথমিক শিক্ষাদানে শিশুর বিকাশ ঘটে দ্রুত হারে । UNESCO-র ডিরেক্টর জেনেরাল অদ্রে আজুলে চলতি বছরের আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে বলেছিলেন, “UNESCO মনে করে, প্রতিটি মাতৃভাষারই নিজস্ব পরিচয় থাকা উচিত । সাধারণ মানুষের জীবনে তার নিজস্বতা থাকা উচিত । মাতৃভাষা সবসময় জাতীয় ভাষা বা অফিশিয়াল ভাষার তকমা পায় না । এর ফলে অনেক সময় মাতৃভাষার অবমূল্যায়ন ঘটে এবং তা ধীরে ধীরে হারিয়ে যেতে থাকে ।”


আমাদের বেশির ভাগের মধ্যে একটা ধারণা রয়েছে যে, আধুনিক বিশ্বে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পেতে শুধুমাত্র ইংরেজি শিক্ষার প্রয়োজন । এই ধারণা একেবারেই ঠিক নয় । বিশ্বে মাত্র হাতে গোনা কয়েকটি দেশ, যেমন অস্ট্রেলিয়া, ব্রিটেন, কানাডা, অ্যামেরিকা প্রভৃতিতে ইংরেজির বহুল ব্যবহার রয়েছে । কিন্তু জার্মানি, ফ্রান্স, চিন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশ ইংরেজি শিক্ষা ছাড়াও খুবই ভালো করছে । অন্য আন্তর্জাতিক ভাষা জানাটা যতটা কার্যকর, ইংরেজি শেখাটাও ঠিক ততটাই । মাতৃভাষা ভুলে গিয়ে ইংরেজি শিক্ষা একেবারেই কাজের কথা নয় । মাতৃভাষায় পারদর্শিতা থাকলে একটা সময়ের পরে সঠিক মঞ্চে ইংরেজি শিক্ষা একেবারেই কঠিন বিষয় নয় ।

Naidu
দেশের ভাষাগত ঐতিহ্যকে রক্ষার বার্তা উপরাষ্ট্রপতির

শুধুমাত্র প্রাথমিক শিক্ষা বা স্কুলের নির্দেশের জন্য নয়, প্রশাসনিক, ব্যাংকিং এবং বিচার বিভাগের কাজও যাতে মাতৃভাষায় হয়, তা নিশ্চিত করতে দৃঢ় পদক্ষেপের প্রয়োজন । আমার মতে, শক্তিশালী গণতন্ত্রের এটা অন্যতম ভিত্তি । ভাষাগত বিভেদ মুছে ফেলে সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে চলতে হবে যা অন্তর্ভুক্তি সরকারের প্রাথমিক উদ্দেশ্য । যখনই সরকারের সঙ্গে সাধারণের কথা হবে, তা যেন এমনই ভাষায় হয়, যা সকলের বোধগম্য ।

আমি এটা একেবারেই বলছি না যে আমরা আমাদের সন্তানদের একাধিক ভাষা শেখাব না । সাহিত্য ও বিজ্ঞানের নতুন দিগন্তের সন্ধান পেতে একাধিক ভাষা জানা অত্যন্ত দরকার । উলটে ভারতের উচিত, দেশের বিপুল মানব সম্পদকে কাজে লাগিয়ে আগামী দিনে জ্ঞান অর্থনীতিতে বিশ্বকে নেতৃত্ব দেওয়া ।

1999 সালে UNESCO একাধিক ভাষায় শিক্ষার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেয় । সেই সিদ্ধান্ত অনুয়ায়ী, শিক্ষায় অন্তত তিনটি ভাষার ব্যবহার করার আর্জি জানানো হয়, মাতৃভাষা, একটি প্রাদেশিক বা জাতীয় ভাষা এবং একটি আন্তর্জাতিক ভাষা । সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের গুরুত্ব মেনে নিয়ে UNESCO বলেছে, মাতৃভাষা জ্ঞান ও উদ্ভাবনী শক্তির আধার । তাদের আরও দাবি, মাতৃভাষায় শিক্ষাদান শিক্ষাকে সহজতর করে তোলে । এটা উৎসাহবর্ধক যে, জাতীয় শিক্ষানীতির যে খসড়া তৈরি হয়েছে, তাতে মাতৃভাষা, বিভিন্ন আদি ভাষা এমনকি সাইন ল্যাঙ্গুয়েজকেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে । চলতি বছরকে রাষ্ট্রসংঘ দেশীয় ভাষা সংরক্ষণ, পুনরুজ্জীবন ও প্রচারের বছর হিসাবে উল্লেখ করেছে । ভারতে এই রকম একাধিক ভাষা রয়েছে, যেগুলি অবলুপ্তির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে ।

আমি আশা করি, আরও বেশি করে মানুষ বাড়িতে, সমাজে, প্রশাসনে তাদের নিজেদের ভাষার ব্যবহার শুরু করবেন । দেশের মানুষ আরও বেশি করে নিজেদের ভাষায় গল্প, কবিতা, নাটক, লেখা শুরু করবে । নিজেদের ভাষা ব্যবহার করে আমাদের গর্বিত হতে হবে । দেশীয় ভাষায় আরও বেশি করে বই, ম্যাগাজিন ছাপার উপর গুরুত্ব দিতে হবে । উপভাষা এবং লোকসাহিত্যের গুরুত্ব বাড়াতে হবে ।

ভাষাকে আমাদের উন্নতির অন্যতম অনুঘটক হতে হবে । ভাষার উন্নতিতে সরকারকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে হবে । স্বামী বিবেকানন্দের কথায়, একটা জাতীয় উন্নতির প্রধান সূচক হল ভাষা । দেশের জনগণের ক্ষমতায়নে ভাষাকে ব্যবহার করতেই হবে । রাজ্যসভাতেও সদস্যরা 22টি ভাষার যে কোনও একটিতে নিজেদের মতামত ব্যক্ত করতে পারেন । সুপ্রিম কোর্টও সম্প্রতি রায়ের প্রতিলিপি ছ’টি প্রাদেশিক ভাষায় দেওয়ার কথা জানিয়েছে । বিচার বিভাগে ভাষার ব্যবধান মুছে দিয়ে আইনকে সবার আওতায় আনতে এটা একটা সুদৃঢ় পদক্ষেপ । ইংরেজি, হিন্দি ছাড়া আরও 13টি প্রাদেশিক ভাষায় বিভিন্ন ব্যাংকে চাকরির পরীক্ষা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে অর্থমন্ত্রকও । রেল ও পোস্ট অফিস চাকরির পরীক্ষাগুলি স্বীয় রাজ্যের সরকারি ভাষায় নেওয়া শুরু করেছে ।

যুব-সংখ্যার নিরিখে বিশ্বের বাকি দেশগুলির তুলনায় ভারত অনেকটাই এগিয়ে । দেশের 65 শতাংশের গড় বয়স 35 বছরের নিচে । মাতৃভাষা ও উপভাষাগুলিকে বাঁচিয়ে রাখতে এই যুব সমাজকে উৎসাহ দিয়ে যেতে হবে । আমাদের সন্তানদের ভাষাকে ভালোবাসতে শেখাতে হবে । এগুলো দ্রুত না করলে আমরা আমাদের সভ্যতার পরিচয় ক্রমশ হারিয়ে ফেলব । পরে কিন্তু এটা নিয়ে আপশোস করার কোনও জায়গা থাকবে না । আসুন আমরা সবাই মিলে মাতৃভাষাকে লালন করি । মাতৃভাষাকে রক্ষার অঙ্গীকার নিই ।

New Delhi, Oct 28 (ANI): While speaking to ANI in the national capital on Delhi's air pollution, Minister of Transport in the Delhi government, Kailash Gahlot, said, "We have already taken the steps which were codified and if air pollution will continue in the next 48 hours, then we will take necessary steps in this regard. But, in comparison to last year, the level of air pollution and air quality is better this year." "I request Municipal Corporation of Delhi (MCD) and several departments of the Delhi government that there barren lands shouldn't be misused in anyway," he added. "Every Delhite has equally contributed in reduction of the air pollution," Gahlot further stated.
Last Updated : Nov 12, 2019, 5:25 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.