370 ধারা সংবিধানের একবিংশ অংশের প্রথম অনুচ্ছেদ । এই অংশের শিরোনাম হল- সাময়িক, পরিবর্তনসাপেক্ষ এবং বিশেষ বিধান
- 1947 সালে স্বাধীনতার সময় কাশ্মীরের রাজা হরি সিং প্রাথমিক ভাবে স্থির করেছিলেন তিনি স্বাধীন থাকবেন, এবং সেই অনুযায়ী ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে স্থিতাবস্থার চুক্তি স্বাক্ষর করবেন । পাকিস্তান সে চুক্তিতে স্বাক্ষরও করেছিল । কিন্তু জনজাতি এবং সাদা পোশাকের পাক সেনা যখন কাশ্মীরে অনুপ্রবেশ করে, তখন তিনি ভারতের সাহায্য চান, যা কাশ্মীরের ভারতভুক্তির অন্যতম কারণ । 1947 সালের 26 অক্টোবর হরি সিং ভারতভুক্তির চুক্তি স্বাক্ষর করেন । পরদিন, 27 অক্টোবর 1947, গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্টব্যাটেন সে চুক্তি অনুমোদন করেন । 1949 সালে নিয়ন্ত্রণরেখা প্রতিষ্ঠিত হয় ৷
- 370 ধারা সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত হয়েছিল 1949 সালের 17 অক্টোবর । এই ধারাবলে জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতীয় সংবিধানের আওতামুক্ত রাখা হয় (অনুচ্ছেদ 1 ব্যতিরেকে) এবং ওই রাজ্যকে নিজস্ব সংবিধানের খসড়া তৈরির অনুমতি দেওয়া হয় । এই ধারা বলে ওই রাজ্যে সংসদের ক্ষমতা সীমিত । ভারতভুক্তি সহ কোনও কেন্দ্রীয় আইন বলবৎ রাখার জন্য রাজ্যের মত নিলেই চলে । কিন্তু অন্যান্য বিষয়ে রাজ্য সরকারের একমত হওয়া আবশ্যক ।
- এই ধারা কাশ্মীরের বাসিন্দাদের বিশেষ ক্ষমতা দিয়েছে। ফলে বাইরের প্রদেশের বাসিন্দারা এখানে স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি কিনতে পারেন না । এছাড়া এজন্য জম্মু ও কাশ্মীর সরকার অন্য প্রদেশের নাগরিকদের চাকরিতে রাখতে পারে না । 1954 সালে রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদের নির্দেশে 35-এ ধারাকে 370 নম্বর ধারার সঙ্গে সংযুক্ত করা হয় । কাশ্মীরের মেয়েরা অন্য রাজ্যে বিয়ে করলে তাঁদের সম্পত্তির কোনও অধিকার থাকে না ।
- 1956 সালে জম্মু-কাশ্মীরের যে সংবিধান গৃহীত হয়েছিল, সেই সংবিধানে নির্দিষ্ট করে জানানো হয়েছিল, জম্মু-কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে বিবেচিত হতে হলে শর্ত কী কী । ভারতভুক্তির শর্ত অনুযায়ী, জম্মু-কাশ্মীরে সংসদ প্রতিরক্ষা, বিদেশ ও যোগাযোগ এই তিনটি বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার বিষয়ে ক্ষমতাশালী ৷
- সংবিধান অনুযায়ী 1954 সালের 14 মে-তে যাঁরা জম্মু-কাশ্মীরের প্রজা ছিলেন, তাঁদের সকলকে রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে গণ্য করা হবে ।
- এ ছাড়া, কেউ যদি 10 বছর বা তারও বেশি সময় জম্মু-কাশ্মীরে থাকেন এবং বৈধ উপায়ে সে রাজ্যে স্থাবর সম্পত্তির মালিক হন, তা হলে তিনিও রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা বিবেচিত হবেন । 35-এ ধারা অনুযায়ীই জম্মু-কাশ্মীরের জন্য এই বিশেষ ব্যবস্থা স্বীকৃতি পেয়েছে ।
- 2014 সালে একটি বেসরকারি সংস্থা জম্মু-কাশ্মীর থেকে 35-এ ধারা বাতিল করার আর্জি জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টে রিট পিটিশন জমা দেয় ।
- জম্মু-কাশ্মীর সরকার পাল্টা হলফনামা জমা দিয়ে এই রিট পিটিশন খারিজ করার দাবি তোলে । কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার কোনও পক্ষ নেয়নি । জম্মু-কাশ্মীর সরকার বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও 35-এ ধারা বহাল রাখার পক্ষে কেন্দ্র সওয়াল করেনি ।
- 2018 সালের এপ্রিল মাসে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিয়েছিল, শিরোনামে সাময়িক লেখা থাকলেও 370 ধারা সাময়িক নয় । 1969 সালে সম্পৎ প্রকাশ মামলায় 370 ধারাকে সাময়িক বলে মানতে অস্বীকার করে সুপ্রিম কোর্ট ।
- জম্মু-কাশ্মীরের সংবিধানের 3 নং অনুচ্ছেদে বলা রয়েছে যে জম্মু কাশ্মীর ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ । 370 ধারা থেকেই প্রবাহিত হয়েছে 35-এ ধারা, যা 1954 সালে রাষ্ট্রপতির নির্দেশের মাধ্যমে কার্যকর হয়েছিল । 35এ ধারানুসারে, জম্মু-কাশ্মীরের বাসিন্দা বলতে কী বোঝায়, তাঁদের বিশেষ অধিকারগুলি কী কী, এ সম্পর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার জম্মু-কাশ্মীর বিধানসভার উপর ন্যস্ত রয়েছে ।
- 2017 সালে 370 ধারাকে চ্যালেঞ্জ করে দিল্লি হাইকোর্টে মামলা দায়ের করেন বিজয়লক্ষ্মী ঝাঁ নামে এক মহিলা । 2017 সালের 11 এপ্রিল এই মামলা খারিজ করে দেয় আদালত । তা খারিজ হয়ে যায় ৷ সেই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে যান বিজয়লক্ষ্মী । তাঁর দাবি ছিল 370 ধারাকে অস্থায়ী ব্যবস্থা বলে ঘোষণা করুক আদালত । কারণ এই ব্যবস্থার সময়সীমা শেষ হয়ে গিয়েছে । তাই এবার তা তুলে দেওয়া উচিত ।
- 2018 সালে দেশের শীর্ষ আদালত স্পষ্ট জানিয়ে দেয় সংবিধানের 370 ধারা অনুযায়ী জম্মু–কাশ্মীর যে বিশেষ সুবিধা পেয়ে থাকে তা কোনও অস্থায়ী বন্দোবস্ত নয় ।
- 2019 সালের 5 অগাস্ট (আজ) রাজ্যসভায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ 370 ধারা রদ করার কথা ঘোষণা করেন ৷ রাজ্যের মর্যাদা হারাল জম্মু-কাশ্মীর ৷ সেখান থেকে ভাঙা হল লাদাখ ৷ দুটোই হচ্ছে কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল ৷ দু’টি জায়গাতেই দু’জন লেফটেন্যান্ট গভর্নর নিয়োগ করা হবে । লাদাখের ক্ষেত্রে আইনসভা থাকছে না, তবে জম্মু-কাশ্মীরের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট আইনসভা থাকবে ৷