দিল্লি, 22 অগাস্ট : দিল্লির লোধি রোডের ঝাঁ চকচকে বাড়িটার উদ্বোধন হয়েছিল তাঁরই হাত ধরে । আজ তিনিই অভিযুক্ত হিসেবে রাত কাটালেন সেখানে । এমন দিন যে আসতে পারে তা কল্পনাতেও আনতে পারেননি পি চিদম্বরম । কিন্তু, বাস্তব বলছে অন্য কথা ।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকাকালীন 2011 সালে দিল্লিতে CBI হেডকোয়ার্টার্সের উদ্বোধন করেছিলেন চিদম্বরম । গতকাল সেখানেই রাত কাটান তিনি ।
27 ঘণ্টা পর গতকাল রাতে CBI-র হাতে গ্রেপ্তার হন প্রাক্তন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম ৷ যেন বুমেরাং হয়ে ফিরে এল ঘটনাটি ৷ 2010 সাল সোহরাবউদ্দিন মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল অমিত শাহকে ৷ তখন পি চিদম্বরম ছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৷ আর আজ চিদম্বরমকে গ্রেপ্তার করা হল, যখন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷
INX মিডিয়া দুর্নীতি মামলায় তাঁর উপর খাঁড়াটা ঝুলছিল বেশ কিছুদিন ধরেই ৷ অভিযোগ ছিল, 4.5 কোটির বদলে 350 কোটি টাকা বেআইনি পথে দেশে আনার মূল ষড়যন্ত্রী ছিলেন প্রাক্তন এই অর্থমন্ত্রী ৷ নিজের ছেলে কার্তি চিদম্বরমের সংস্থাকে বেআইনিভাবে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে ৷ এই অভিযোগে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে নিজেদের হেপাজতে নিয়ে তদন্ত করার আর্জি জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা CBI ৷ এই আর্জির বিরুদ্ধে আগাম জামিনের আবেদন জানিয়ে দিল্লি হাইকোর্টে গেছিলেন চিদম্বরম ৷ কিন্তু মঙ্গলবারই সেই আর্জি খারিজ করে দিয়ে চিদম্বরমকেই মূল চক্রান্তকারী বলে উল্লেখ করে আদালত ৷ তারপরই তাঁর বাড়িতে পৌঁছান CBI ও ED-র আধিকারিকরা ৷ কিন্তু বাড়িতে পাওয়া তো দূরের কথা, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর মোবাইল টাওয়ারের হদিশ পর্যন্ত পাননি তাঁরা ৷ এরপর বেশ কয়েক দফায় অভিযান চালানোর পর চিদম্বরমের বাড়িতেই লুকআউট নোটিশ লাগিয়ে দিয়ে আসে CBI ৷ দু'ঘণ্টার মধ্যে CBI দপ্তরে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে ৷
মঙ্গলবার যেখানে শেষ হয়েছিল গতকালের সকালে যেন সেখান থেকেই শুরু হয় চিদম্বরম-পর্ব ৷ মঙ্গলবারই হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে শীর্ষ আদালতে গেছিলেন চিদম্বরমের আইনজীবী কপিল সিব্বল ও অভিষেক মনু সিংভিরা ৷ জরুরি ভিত্তিতে প্রধান বিচারপতির এজলাসে মামলার শুনানির আবেদন জানিয়েছিলেন তাঁরা ৷ কিন্তু অযোধ্যা মামলার দৈনিক শুনানিতে ব্যস্ত প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈর তরফে জানানো হয়, কোনও ভাবেই এই আবেদন রক্ষা করা সম্ভব নয় ৷ পাশাপাশি শুক্রবার শুনানির দিন ঘোষণা করা হয় ৷ পরিস্থিতি যা দাঁড়ায় তাতে যেকোনও মুহূর্তে গ্রেপ্তার হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল তাঁর ৷
ইতিমধ্যেই সহ-যোদ্ধার পাশে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে সরব হন রাহুল গান্ধি-প্রিয়াঙ্কা গান্ধিরা ৷ সুপ্রিম কোর্টে শুনানির দিন শুক্রবার ঘোষণা হওয়ার পরই মাত্র আধঘণ্টার নোটিশে সাংবাদিক সম্মেলন ডাকে কংগ্রেস ৷ জানানো হয় সাংবাদিক বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন অভিষেক মনু সিংভি, কপিল সিব্বলরা ৷ শুরু হয় সাংবাদিক বৈঠক ৷ ঠিক তখনই নাটকীয় মোড় নেয় চিদম্বরম-পর্ব ৷ 27 ঘণ্টা পর প্রকাশ্যে আসেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম ৷ দাবি করেন তিনি নির্দোষ ৷ তাঁর কথায়, "আমি কোথাও পালিয়ে যাইনি ৷ দিল্লিতেই ছিলাম ৷ আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করছিলাম ৷"
সাংবাদিক বৈঠক সেরে তড়িঘড়ি নিজের জোরবাগের বাড়িতে ফেরেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ৷ প্রায় একই সঙ্গে তাঁকে ধাওয়া করে বাড়ি পৌঁছায় 15-20 জনের CBI আধিকারিকদের দল ৷ তখন প্রাক্তন মন্ত্রীর বাড়ির দরজা বন্ধ ছিল ৷ পাঁচিল টপকে ভিতরে ঢোকেন কয়েকজন ৷ ভিতর থেকে তাঁরা দরজা খোলেন ৷ বাড়ির ভিতরে ঢোকেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী অফিসাররা ৷ ঠিক তখনই বাড়ির অপর প্রান্তে উপস্থিত ED-র আধিকারিকরা ৷ দফায় দফায় চলে চিদম্বরমকে জেরা ৷ 28 ঘণ্টা পর গ্রেপ্তার করা হয় প্রাক্তন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ৷ নিজেদের গাড়িতে করে প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে দপ্তরে নিয়ে যায় CBI ৷ আজ তাঁকে CBI আদালতে পেশ করা হবে ৷