এবছর ভারতের GDP বৃদ্ধির হার 5.2 শতাংশ হতে পারে । যা 1979 সালে দেখা গিয়েছিল । অধ্যাপক কৌশিক বসুর মতে, সেক্ষেত্রে দেশে স্বাধীনতার পর থেকে GDP -র ধীরতম বৃদ্ধির হার হবে এটাই । বিভাজনের রাজনীতি এবং বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গি রূপায়ণে অনীহার প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি কৌশিক বসু সতর্ক করেছেন, সমস্ত সমালোচনাকেই চক্রান্ত বলে নস্যাৎ করে দিয়ে বিশ্বের অধিকাংশ দেশ যেভাবে ব্যর্থতার মুখে পড়েছে, সেই ভুল যেন ভারত কখনও না করে ।
প্রশ্ন : ভারতের GDP বৃদ্ধির হার 2019-20 সালে 4.2 শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে । 11 বছরের মধ্যে এই হার সবচেয়ে ধীর গতির । একাধিক সংস্থার মতে, চলতি অর্থবর্ষে ভারতের অর্থনীতির বৃদ্ধির হার কমে এসে দাঁড়াবে 3-5 শতাংশের মধ্যে । অন্যদিকে, কোরোনা সংক্রমণের হার প্রতিদিন দ্রুত হারে বাড়ছে । আমরা যে অর্থনৈতিক সংকটের মুখে দাঁড়িয়ে আছি, তা নিয়ে আপনার অভিমত কী? এই সংকট কতটা গভীর বলে আপনার মনে হয়?
কৌশিক বসু : ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক । যে ধীরগতিতে অর্থনীতি চলছে, তার একটি প্রধান কারণ কোরোনা পরিস্থিতি । গোটা বিশ্বই এর ভুক্তভোগী । কিন্তু এই ধীরগতি বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, তাতে আলাদা করে কোনও দেশের র্যাঙ্কিংয়ে কোনও বদল আসা উচিত নয় । অথচ বর্তমানে আমরা দেখছি, বিশ্বব্যপী প্রায় সমস্ত র্যাঙ্কিংয়েই ভারত পিছিয়ে পড়ছে ।
বিশ্বের 43টি প্রধান অর্থনীতির জন্য প্রতি সপ্তাহে ইকোনমিস্ট ম্যাগাজিনের ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের তরফে যে র্যাঙ্কিং প্রকাশ করা হয়, তাতে বহু বছর ধরে ভারতের স্থান থাকত দ্রুততম হারে বর্ধনশীল প্রথম তিনটি অর্থনীতির তালিকায় । কিন্তু এখন পিছোতে পিছোতে তা এসে দাঁড়িয়েছে 23 তম স্থানে ।
প্যানডেমিকের দু’বছর আগে ভারতের এই চড়া আর্থিক ধীরগতি শুরু হয়েছিল এবং যেভাবে লকডাউন পরিচালনা করা হয়েছে, তাতে অর্থনীতিতে আরও আঘাত লেগেছে । লকডাউনের পর ভারতে বেকারত্বের হার লাফিয়ে বেড়েছে 20 শতাংশেরও বেশি, যা বিশ্বের যে কোনও দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি । দেশকে সবসময় সফল দেখতে চাওয়া একজন ভারতীয় নাগরিক হিসেবে আমি অত্যন্ত হতাশ ।
রাজনৈতিক বিষয়ে সরকারের সঙ্গে আমার মতবিরোধ রয়েছে, কিন্তু তা সত্ত্বেও আমি ভেবেছিলাম, সরকার আর্থিক অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রাখবে । আর সেই নিরিখে ভারতের পারফরম্যান্স দেখে আমি সতি্যই খুব হতাশ হয়েছি ।
এই দেশে যে পরিমাণে মৌলিক সম্পদ এবং প্রতিভা আছে, তার ভিত্তিতে বলতে পারি, ভারত অবশ্যই বিশ্বের দ্রুততম আর্থিক বৃদ্ধিসম্পন্ন দেশ হতে পারে । কিন্তু সমস্যা হল, আমরা বিপরীত দিকে এগোচ্ছি । মনে হচ্ছে, এবছর ভারতের বৃদ্ধির হার এসে দাঁড়াবে 5.2 শতাংশ । এর আগে এই হার 1979 সালে দেখা গিয়েছিল । যদি এই হার হয়, তাহলে স্বাধীনতার পর থেকে এটাই হবে দেশের ধীরে বৃদ্ধির হার ।
প্রশ্ন : কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে 20 লাখ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে, তা নিয়ে আপনার কী অভিমত?
কৌশিক বসু : পরিমাণগত বিচারে 20 লাখ কোটি টাকা বিপুল । আমি খুশি যে এই প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে । যদি যথাযথভাবে ব্যবহার করা যায় তাহলে এটা দিয়ে অনেক ভাল ভাল কাজ হতে পারে ।
প্রশ্ন : কিন্তু অনেকেই সমালোচনা করে বলছেন এই প্যাকেজে বিপন্ন মানুষজনের জন্য কোনও যথাযথ এবং প্রত্যক্ষ উপার্জনগত সাহায্যের পরিকাঠামো নেই । আপনার কী মনে হয়?
কৌশিক বসু : এই সমালোচনা যথাযথ । এই সংকটের সময় অবিলম্বে দরিদ্রদের হাতে অর্থের সংস্থান করতে হবে । যুদ্ধকালীন তৎপরতায় তা করা উচিত । দুর্ভাগ্যবশত, সেরকম কোনও কর্মসূচি আমরা দেখছি না ।
সেজন্য যখন আমি বলছি, 20 লাখ কোটি টাকার আর্থিক প্যাকেজ ঘোষিত হওয়ায় আমি খুশি, তখন তার সঙ্গে কিছু কথা যোগ করাও উচিত । এটা ভেবেও আমি উদ্বিগ্ন । হয়তো এই ঘোষণা কেবলমাত্র খবরের কাগজে একটা ভাল শিরোনাম হয়েই থেকে যাবে । যথাযথভাবে এই ঘোষণার কোনও বাস্তবায়ন আর হবে না । আমাদের অর্থনীতি পিছিয়ে পড়ার অন্যতম কারণ হল, আমরা কেবল ভাল শিরোনাম তৈরি করতেই ব্যস্ত হয়ে পড়ছি, তার বাস্তবায়নে কোনও উদ্যোগ নিচ্ছি না ।
প্রশ্ন : অর্থনীতিকে বাঁচাতে সরকারের কী কী করা উচিত ছিল? আপনার মতে, অর্থনীতির উপর কোরোনার প্রভাব কতদিন স্থায়ী হবে?
কৌশিক বসু : পরিস্থিতি খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, লকডাউন কার্যকর ও তা পরিচালনায় ভুল ছিল । ফলে অর্থনীতিতে আরও বেশি ধীরগতি এসেছে । আবার ভাইরাসের সংক্রমণও বেড়ে গিয়েছে । অথচ বিশ্বে ভারতের লকডাউনই ছিল সবচেয়ে গুরুতর । যখন তা ঘোষণা হল, আমি খুব খুশি হয়েছিলাম । নিশ্চিত ছিলাম যে, সরকার নিশ্চয়ই এই লকডাউনকে সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করার বিস্তারিত পরিকল্পনা তৈরি করে, তবেই মাঠে নেমেছে । যারা কাজ হারাতে পারে, তাদের কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তা নিয়ে আগাম পরিকল্পনা থাকা দরকার । আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে, আপনার গৃহীত কর্মসূচিতে যাতে খামতি না থাকে । দ্রুত কীভাবে হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল পরীক্ষা কেন্দ্র তৈরি করা যায়, তা নিয়েও পরিকল্পনা থাকা দরকার । এসব না হলে লকডাউন শেষে আপনার প্রাপ্তির ঝুলি অল্পই ভরবে । আর সেটাই ভারতের ক্ষেত্রে ঘটেছে ।
খুব শীঘ্রই এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে, এধরনের আর্থিক সহায়তামূলক কর্মসূচির কোনও অস্তিত্ত্বই ছিল না । বহু শ্রমিকের কাজ কেড়ে নেওয়া হয়েছে, সকলকে স্বল্প পরিসর জায়গায়, একসঙ্গে গুঁতোগুঁতি করে রাখা হয়েছে । আর যখন তারা সেখান থেকে বেরিয়ে বাড়ির দিকে হেঁটে যাত্রা শুরু করেছে, তখনই ভাইরাসের সংক্রমণ বেড়ে গেছে ।
এশিয়া এবং আফ্রিকার সর্বত্র এই প্যানডেমিকের প্রভাব অতটা ভয়ংকর ভাবে পড়েনি । কিন্তু ভারতের পরিস্থিতি চোখে পড়ার মতো । কারণ এখানে লকডাউনের সময় থেকেই ভাইরাস সংক্রমণ দ্রুত হারে বাড়তে শুরু করেছিল ।
তবে, আর কত দিন এই পরিস্থিতি স্থায়ী হবে, তা নির্ভর করছে প্যানডেমিকের উপর । যদিও সেবিষয়ে আমার বিশেষ কোনও জ্ঞান নেই ।
তবে এর অর্থনৈতিক প্রভাবের কথা বিচার করলে বলতে পারি, ভারত বর্তমানে দুই রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে । মৌলিকভাবে দেখলে ভারত যথেষ্ট শক্তিশালী–উচ্চশিক্ষার সুবন্দোবস্ত, গবেষণাক্ষেত্র বলা যায় । যেখানে তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে আকাশচুম্বী সাফল্য পাওয়া যাচ্ছে । কিন্তু একইসঙ্গে আমরা নানা প্রকল্প প্রণয়ণের ক্ষেত্রে এত ভুল করছি যে, ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও অর্থনীতির ভিত দুর্বল হয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে ।
এই প্যানডেমিকের প্রভাবে সরকারের তরফে অর্থনীতিতে অতিরিক্ত নজরদারির চেষ্টা এবং এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ারর প্রবণতা দেখা গেছে । আমি উদ্বিগ্ন । লাইসেন্স পারমিট রাজত্বের ইতিহাস ভারতে অতি পুরোনো । আগের মতো এখনও এখানে অনুমতি প্রদান এবং অতিরিক্ত আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা চলছে । যা খুবই খারাপ । কিন্তু তার থেকেও ক্ষতিকর হল অনুমতি প্রদান এবং অতিরিক্ত রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা ।
প্রশ্ন : বেশিরভাগ পরিযায়ী শ্রমিকরাই নিজেদের গ্রামে ফিরেছেন । ভবিষ্যতে তাঁরা আর শহরে ফিরবেন কি না তার ঠিক নেই । কারণ সংক্রমণ দিন দিন দ্রুত হারে বাড়ছে । এই পরিস্থিতি শহুরে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি, উভয়ের উপরই ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে । একে কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়?
কৌশিক বসু : লকডাউন সহায়ক পরিকল্পনার অভাবেই এটি ঘটেছে । সমস্ত প্যানডেমিকের সময়ই মানুষের বিশ্বাস ভেঙে যায় । সমাজের উপর আমাদের বিশ্বাসেও বড়সড় চিড় ধরেছে । আমাদের আর্থিক এবং রাজকোষ সংক্রান্ত কর্মসূচির মধ্যে সমন্বয় সাধন করতে হবে, যাতে চাহিদা বাড়ে এবং দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতি আমাদের আস্থা এবং ভরসা পুনঃপ্রতিষ্ঠা হয় ।
প্রশ্ন : একটি সাম্প্রতিক সাক্ষাৎকারে আপনি বলেছেন, "ভারতে অসাম্য ইতিমধে্যই অনেকটা বেড়ে গেছে । এটা উদ্বেগজনক । এটা ভেবে আরও আতঙ্কিত যে, কোরোনা প্যানডেমিক এই অসাম্য আরও বাড়িয়ে তুলবে ।" এটি একটি গুরুতর বিষয় । কীভাবে এই সমস্যার সমাধান করা যায়?
কৌশিক বসু : ভারতের অর্থনৈতিক অসাম্য অপ্রত্যাশিত রকম বেশি । এক বছর আগে OXFAM-এর একটি সমীক্ষায় দেখা গেছিল যে, ভারতের 73 শতাংশ ধনসম্পদই মাত্র এক শতাংশ নাগরিকের হাতে কুক্ষিগত । অর্থনীতিবিদ হিসেবে এবিষয়ে আমি অবহিত । অর্থনৈতিক অসাম্য থাকবেই এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে এর জেরে নানা কর্মসূচিও তৈরি হওয়া উচিত । কিন্তু এত উচ্চহারে অসাম্য কোনওভাবেই কাম্য নয় । এমন একটি দেশ, যেখানে এখনও লাখ লাখ মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে বাস করেন । সেখানে ধনসম্পদের এই বিপুল বৈষম্যের কোনও নৈতিক, রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক যুক্তি থাকতে পারে না । আমি মনে করি, এই প্যানডেমিকের প্রভাবে ডিজিটাল প্রযুক্তি আরও উন্নত হবে । এটা অবশ্যই সুখবর কিন্তু পাশাপাশি আমাদের এটাও সুনিশ্চিত করতে হবে, যে এর সুফল কেবলমাত্র স্বল্প সংখ্যক অভিজাতরাই যেন না ভোগ করেন ।
প্রশ্ন : ভারতের স্বপ্ন নিজেকে 2025 সালে 5 ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলারের অর্থনীতিতে পরিণত করা । কিন্তু এখন এই প্যানডেমিকের জেরে আমরা বুঝতে পেরেছি আমাদের জনস্বাস্থ্য ক্ষেত্র কতটা দুর্বল । আমরা স্বাস্থ্য খাতে GDP-র মাত্র ৩.৬ শতাংশ ব্যয় করছি, যা খুবই কম। উন্নত দেশগুলির মধ্যে ব্রিটেন ব্যয় করছে ৯.৮ শতাংশ আর জার্মানি ১১.১ শতাংশ । স্বাস্থ্য খাতে যথাযথ বিনিয়োগ ছাড়া কোনও দেশের পক্ষে বিপুল অর্থনৈতিক উন্নয়ন হাসিল করা কি সম্ভব?
কৌশিক বসু : অ্যামেরিকান ডলারের মূল্য দ্রুতহারে না পড়লে প্যানডেমিকের আগে বা 2025 সালের মধ্যে ভারত 5 ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতির দেশে পরিণত হওয়া সম্ভব নয় । আপনি ঠিকই বলছেন-স্বাস্থ্য খাতে আমাদের আরও আরও বিনিযোগ দরকার । ভারতের ক্ষেত্রে এই সমস্যা দীর্ঘমেয়াদী এবং দশকের পর দশক ধরে, পূর্ববর্তী সমস্ত সরকারের ব্যর্থতার কারণেই এটা ঘটেছে । আমরা স্বাস্থ্য খাতে যথেষ্ট অর্থ বিনিয়োগ করি না । বাংলাদেশের মতো পিছিয়ে পড়া অর্থনীতির দেশও আমাদের থেকে ভাল ফল করেছে আর এখন বাংলাদেশে মানুষের বাঁচার হার ভারতীয়দের তুলনায় তিন বছর বেশি ।
প্রশ্ন : লাদাখে চিনা আগ্রাসনের পালটা অর্থনৈতিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে ভারত চিন থেকে আমদানি কমানোর চেষ্টা করছে । এতে কি ভারতের উৎপাদন ক্ষেত্রের কোনও লাভ হবে?
কৌশিক বসু : এটা একটা প্রতীকি পদক্ষেপ । আমার মনে হয় না, এতে ভালো বা মন্দ কোনও বড় প্রভাব পড়বে ।
প্রশ্ন : শিল্পমহলে কেউ কেউ বলাবলি করছেন, নতুন পরিস্থিতি অনুযায়ী যদি সরকার নতুন শিল্পনীতি তৈরি করে, তাহলে বেশ কিছু বড় বিদেশি সংস্থা চিন থেকে সরে এসে ভারতে বিনিয়োগ করবে । এটা কি সতি্যই হবে?
কৌশিক বসু : বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগ আকর্ষণে ভারতের সম্ভাবনা প্রচুর । এটা আমি আগে বলছিলাম । ভারতের মৌলিক ক্ষমতা রয়েছে । যার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী স্তরে বিনিয়োগ আসার সম্ভাবনা রয়েছে । এর ফলে বিকাশের হারে ভারত বিশ্বব্যাপী তালিকার শীর্ষে স্থান পেতে পারে । কিন্তু আমরা কর্মসূচি রূপায়ণে এত স্বল্প পেশাদারিত্ব দেখাচ্ছি আর বাজার ও ফার্মগুলিতে যেভাবে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে আখেরে এর বিপরীতটাই হচ্ছে ।
গত মার্চ মাসে ভারতে মূলধনী বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল 15 বিলিয়ন ডলার । যা একমাসে সর্বাধিক । যে মূলধনী বিনিয়োগ চিন হারাচ্ছে, তা চলে আসছে ভিয়েতনাম, মেক্সিকো ও অন্যান্য দেশগুলিতে । আর নগণ্য মাত্রায় আসছে ভারতে ।
তবে ভারতের ক্ষেত্রে এখনও খুব বেশি দেরি হয়ে যায়নি । আমাদের বিশ্বব্যপী স্তরে এই সংকেত দিতে হবে যে, আমরা দেশ হিসাবে খুবই আধুনিক, যাদের কর্মসূচি রূপায়ণ হয় বিজ্ঞানভিত্তিকভাবে, যারা বিজ্ঞান ও ইঞ্জিনিয়ারিংকে গুরুত্ব দেয়, গোষ্ঠীবিদ্বেষের ভাবনার বদলে নাগরিকদের মধ্যে আস্থার সম্পর্ক গড়ে ।
উন্নয়নের প্রচারে আস্থার সম্পর্ক যে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে, তা বর্তমানে সুবিদিত । কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে, ভারত এই নিরিখে ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছে ।
প্রশ্ন : কোরোনার পর বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক ক্রমবিন্যাসে কী কী পরিবর্তন হতে পারে বলে আপনি মনে করছেন ?
কৌশিক বসু : বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক পরিস্থিতির আমূল পরিবর্তন হবে । আমার ধারণা, ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার অনেকটা বেড়ে যাবে । তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে প্রচুর অগ্রগতি হবে ।
আমি চাই স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের পরিধি আরও বাড়ুক । আরও বেশি হাসপাতাল তৈরি হোক, আরও ওষুধ আসুক, ঔষধশাস্ত্র এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা নিয়ে আরও আরও গবেষণা হোক এবং মানুষের কাছে স্বাস্থ্যরক্ষার আরও পথ খুলে যাক । তথ্যপ্রযুক্তি এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা–এই দুই ক্ষেত্রে ভারত অত্যন্ত শক্তিশালী । এটা আপনাকে আমার আর বলার দরকার নেই ।
আপনার অঞ্চল তেলেঙ্গানা, অন্ধ্রপ্রদেশ এবং কর্ণাটক এই সব ক্ষেত্রে অগ্রণী স্থানে রয়েছে ।
প্রশ্ন : কিন্তু এই শক্তির উপর নির্ভর করে অগ্রগতির পথে হাঁটার আগে আমাদের দেশের রাজনৈতিক আবাসস্থল এবং প্রতিষ্ঠানগুলিকে ক্রমান্বয়ে সাজাতে হবে ।
কৌশিক বসু : কয়েক বছর আগে পর্যন্তও, গোটা বিশ্বের সংবাদমাধ্যম খবরের কাগজ, ম্যাগাজিন এবং টেলিভিশন ভারতকে উন্নয়নে নেতৃত্বদানকারী দেশ হিসেবে গণ্য করত । সেই পরিস্থিতি বর্তমানে অনেকটাই বদলে গেছে ।
ভারত সম্পর্কে গোটা বিশ্বে অনেক রকম আশঙ্কার কথা ছড়িয়ে রয়েছে । নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, বিচ্ছিন্নতাবাদী রাজনীতির উত্থান, বিজ্ঞানভিত্তিক দৃষ্টিভঙ্গী প্রয়োগে অনীহা এবং প্রশ্ন, যুক্তি, সমালোচনা চাপা দেওয়ার প্রবণতা । আমাদের এই নিয়ে ভাবনা-চিন্তা করতে হবে এবং আলোচনা করতে হবে কীভাবে আমরা ভাবমূর্তি ভাল করতে পারি ।
সমস্ত সমালোচনাকে চক্রান্তের নাম দিয়ে একপাশে সরিয়ে রাখার যে ভুল করে বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ অর্থনৈতিক উন্নয়নের নিরিখে ব্যর্থতার মুখে পড়েছে, সেই ভুল ভারতের কখনও করা উচিত নয় ।
অধ্যাপক কৌশিক বসু 2012-2016 সাল পর্যন্ত বিশ্ব ব্যাঙ্কের মুখ্য অর্থনীতিবিদ ছিলেন । কেন্দ্র সরকারের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবেও কাজ করেছেন । বর্তমানে তিনি অ্যামেরিকার কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ।