কলকাতা, 22 ডিসেম্বর: ট্রাম সংক্রান্ত অ্যাডভাইজারি কমিটি থাকা সত্ত্বেও কেন নিয়মিত বৈঠক হচ্ছে না ? কলকাতা হাইকোর্টে ট্রাম নিয়ে সর্বশেষ শুনানিতে এই প্রশ্ন তুলে রীতিমতো উষ্মা প্রকাশ করেছেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি । উল্লেখ্য, আদালতের নির্দেশে যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল, তার শেষ বৈঠক হয়েছিল চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ৷ ট্রাম লাইনের উপর বিটুমিন ঢালা নিয়েও এদিন ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারপতি ৷ এ প্রসঙ্গে ট্রামপ্রেমীদের অভিযোগ, আদালতের গঠিত অ্যাডভাইজারি কমিটি গোড়া থেকেই ট্রামের বিপক্ষে ৷
সম্প্রতি ট্রামের যে জনস্বার্থ মামলা চলছে কলকাতা হাইকোর্টে, সেই মামলার শুনানি চলছে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও হিরন্ময় ভট্টাচার্যের ডিভিশন বেঞ্চে ৷ গত শুনানিতে বেঞ্চ বলে যে, একদিকে যখন বিদেশে ট্রামের আধুনিকীকরণ করে ট্রাম ফিরিয়ে নিয়ে আসা হচ্ছে, তখন এখানে ট্রাম লাইনের উপর বিটুমিন ঢেলে দেওয়া হচ্ছে । ট্রাম সংক্রান্ত যে কমিটি গঠন করা হয়েছিল তার বৈঠক কেন নিয়মিত করা হচ্ছে না তাও জানতে চান বিচারপতি ।
প্রসঙ্গত, ট্রাম সংক্রান্ত প্রথমবার যখন জনস্বার্থ মামলা দায়ের করা হয়, তখন আদালত 2023 সালের আগস্ট মাসে একটি অ্যাডভাইজারি কমিটি গঠন করে দিয়েছিল । সেই কমিটিতে মোট 11 জন সদস্য ছিলেন । সবমিলিয়ে মোট চারটি বৈঠক হয়েছিল । সর্বশেষ বৈঠকটি হয়েছিল চলতি বছরের 4 জানুয়ারি । এমনকি জানুয়ারি মাসের পর থেকে কেন আর একটিও বৈঠক হয়নি তা পরিষ্কার নয় ।
ক্যালকাটা ট্রাম ইউজারস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ড. দেবাশিস ভট্টাচার্য এই কমিটির অন্যতম সদস্য ৷ তিনি জানিয়েছেন, "কী করে ট্রামকে আবার আগের জায়গায় ফেরানো যায়, সেই নিয়েই কমিটি গঠন করা হয়েছিল ৷ কিন্তু দেখা গেল, রাজ্য সরকার যে আর ট্রাম চালাতে চাইছে না সেই বিষয়ে একেবারেই বদ্ধপরিকর । আসলে রাজ্য সরকারের কাছে এই কমিটির কোনও দামই নেই । কারণ দেখা যাচ্ছে যে, আমাদের মতামতের কোনও দাম নেই । আমরা যে ক'টা গঠনমূলক প্রস্তাব দিয়েছি একটিও গ্রাহ্য করা হয়নি ।"
তিনি আরও জানিয়েছেন যে, রঞ্জনবীর সিং কাপুরের আমলে দুটি বৈঠক হয়েছিল । এরপর ডব্লিউবিটিসি-র ম্যানেজিং ডিরেক্টর হয়ে আসেন অঞ্চল গুপ্ত । তবে তিনি প্রথম থেকেই ট্রামের বিপক্ষে ছিলেন বলে তাঁর কথাবার্তার থেকে অনুমান করা হয় । কিন্তু বৈঠকে ট্রাম পক্ষের যাঁরা ছিলেন, তাঁদের কোনও কথা যেমন শোনা হয়নি, তেমনই মিনিটস অফ দ্য মিটিংয়ে কোনও কথা লিপিবদ্ধ করা হয়নি । তাই অগত্যা গত নভেম্বর মাসে আদালতে একটি অভিযোগ পত্র জমা দেওয়া হয় ।
পাশাপাশি ক্যালকাটা ট্রাম ইউজার্স অ্যাসোসিয়েশনের আর এক সদস্য তমাল নন্দ বলেন, "রাজ্য সরকারের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত সওয়াল করেছেন যে, রাজ্য সরকারের হাতে পর্যাপ্ত অর্থ নেই ৷ তাই তারা ট্রাম ফিরিয়ে আনতে অসমর্থ । অথচ ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর কাজের সময় মেট্রো কর্তৃপক্ষের থেকে ধর্মতলা ও বিবাদী বাগ অঞ্চলে ট্রামের কাজের জন্য রাজ্য সরকার খেপে খেপে প্রায় 35 কোটি টাকা পেয়েছে । তাই সরকারের কাছে টাকা নেই বলে যে যুক্তি খাড়া করা হয়েছে, তা সর্বৈব মিথ্যে কথা । আর যদি টাকা নাই থাকে, তাহলে এই যে 35 কোটি টাকা রাজ্য পেয়েছে সেই টাকা কোথায় গেল ?"
এই মামলার আগামী শুনানি 14 জানুয়ারি ৷ তার আগেই অ্যাডভাইজারি কমিটির বৈঠক করতে হবে ও সেই বৈঠকের 'মিনিটস অফ দ্য মিটিং' আদালতে পেশ করতে হবে ।