ETV Bharat / bharat

লাদাখে চিনের সঙ্গে সংঘাতের মধ্যেই নেপাল-উত্তাপের মুখে ভারত - Ladakh

চলতি মাসে দ্বিতীয়বার দুই দেশের সীমান্তে সমস্যা দেখা দিল । 12 জুন একজন ভারতীয় নাগরিক মারা যান । এবং অন্তত দু'জন আহত হন , যখন বিহারের সীতামারি জেলায় একদল মানুষের উপর নেপালের সশস্ত্র পুলিশ গুলি চালায় । এইসব ঘটনা নেপাল সরকারের নতুন রাজনৈতিক মানচিত্রে অনুমোদন দেওয়ার পর থেকে ঘটছে । যেখানে কালাপানি, লিপুলেখ আর লিম্পিয়াধুরাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । এতে দুই দেশের মধ্যে বাড়তে থাকা সংঘাতের সুরটাই ধরা পড়ছে ।

India-Nepal
ভারত-নেপাল
author img

By

Published : Jun 24, 2020, 11:38 AM IST

যখন ভারত তার ভূখণ্ড রক্ষা করতে চিনের সঙ্গে গুরুতর সংঘাতে ব্যস্ত , ঠিক সেই সময় গত রবিবার বিহারের পূর্ব চম্পারণ জেলায় একটি নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ বন্ধ রাখার নেপালের সিদ্ধান্তে অবনতির মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারত-নেপাল সম্পর্ক ।

এই নিয়ে চলতি মাসে দ্বিতীয়বার দুই দেশের সীমান্তে সমস্যা দেখা দিল । 12 জুন একজন ভারতীয় নাগরিক মারা যান, এবং অন্তত দু'জন আহত হন , যখন বিহারের সীতামারি জেলায় একদল মানুষের ওপর নেপালের সশস্ত্র পুলিশ গুলি চালায় । ভারতীয় কর্তৃপক্ষ একে ‘স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা ও আদেশ ইশু’ আখ্যা দেয় । কিন্তু রবিবারের (21 জুন) ঘটনাক্রম দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও গভীর সমস্যার দিকেই ইঙ্গিত করছে ।

এইসব ঘটনা নেপাল সরকারের নতুন রাজনৈতিক মানচিত্রে অনুমোদন দেওয়ার পর থেকে ঘটছে । যেখানে কালাপানি, লিপুলেখ আর লিম্পিয়াধুরাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । এতে দুই দেশের মধ্যে বাড়তে থাকা সংঘাতের সুরটাই ধরা পড়ছে ।

2015 সালে ভারতের দ্বারা নেপালের অর্থনৈতিক অবরোধকেই ভারত-নেপাল বিশেষজ্ঞরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খারাপ হওয়ার জন্য দায়ি করছেন । পাশাপাশি তাঁরা ভারত-নেপাল তিক্ততার সুযোগ নিতে চিনের প্রয়াসের দিকেও ইঙ্গিত করছেন ।

প্রাক্তন কূটনীতিক এবং ভারত-নেপাল সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এস ডি মুনি বলেন , “তৃতীয় শক্তির প্রভাব সবসময়ই ছিল, এবং আমি মনে করি যে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নেপালের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক আরও মজবুত হওয়ায় বর্তমান নেপালি নেতৃত্বকে অনেক দিক থেকেই উৎসাহিত করেছে ।”

দিল্লির অবজ়ার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো কে ইহোম বলেন , কালাপানি-বিবাদ ভারত ও নেপালের মধ্যে দীর্ঘদিনের ইশু , যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে ফেলা উচিত ছিল ।

কে ইহোম ETV ভারতকে বলেন , “সমস্যাটা হচ্ছে কালি নদীর উৎস নিয়ে । ভারত এর একরকম ব্যাখ্যা দেয় , আবার নেপালেরও নির্দিষ্ট ব্যাখা আছে ।”

তিনি বলেন , “ সীমান্ত-বিবাদ এবং আঞ্চলিক সমস্যাগুলি আবেগের বিষয় , তাই দু'পক্ষই এর সমাধান করতে সক্ষম হয়নি ।”

নেপাল এই ইশু প্রথমবার তোলেনি । ২০১৫ সালেও , ভারত-চিন যৌথবিবৃতিতে লিপুলেখ পাসকে অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা করেছিল নেপাল ।

২০১৫ সালের ১৫ মে ভারত ও চিন তাদের যৌথ বিবৃতিতে বলেছিল , “বাণিজ্যের পণ্যের তালিকা নিয়ে আলাপ-আলোচনায় দুই পক্ষই সম্মত হয়েছে । নাথু-লা, কিয়াংলা/লিপুলেখ পাস এবং শিপকি-লাতে সীমান্ত বাণিজ্যের প্রসারে সম্মত হয়েছে দুই দেশ ।”

অধ্যাপক এস ডি মুনি অবশ্য এটা পুরানো বিবাদ বলে মানতে নারাজ । কারণ 1954 সালে ভারত-চিন পঞ্চশীল চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সময় , লিপুলেখ পাসকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে নেপাল কোনও প্রতিবাদ করেনি ।

অধ্যাপক এসডি মুনি বলেন , “ চিন শুধু 2015 সালেই লিপুলেখকে ভারতের অংশ বলে মানেনি, এছাড়াও 1954 সালে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চুক্তির সময়ও আট থেকে ন'টি রুটের কথা বলা হয়েছিল । যার মাধ্যমে ভারত ও চিনের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান চলবে ।”

অধ্যাপক মুনি উল্লেখ করেন, “ ২০১৫ সালে চিনারা যেটাই করে থাকুক , সেটা তাদের আগের অবস্থানেরই পুনরাবৃত্তি । নেপালের অবস্থানে বদল হয়েছে , ভারতের নয় ।”

যদিও , বহু বিশেষজ্ঞকে যা অবাক করেছে এবং যার থেকে বাইরের প্রভাবের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে , তা হল যে গতির সঙ্গে নেপাল সেই নতুন রাজনৈতিক মানচিত্রকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিল , যেখানে ভারতের কালাপানি , লিপুলেখ এবং লিম্পিয়াধুরাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেইসময় , যখন লাদাখে ভারত ও চিনের সেনাবাহিনী একটা উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে পরস্পরের মুখোমুখি ।

গত সপ্তাহেই গালওয়ান উপত্যকায় পিএলএ-র সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের 20 জন জওয়ান শহিদ হন ।

নেপালের নতুন ম্যাপ অনুমোদনের পিছনে চিনের হাত?

8 মে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ উত্তরাখণ্ডে একটি নতুন 80 কিলোমিটার লম্বা রাস্তার উদ্বোধন করেন , যা ভারত, চিন ও নেপালের সংযোগস্থলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখাকে যুক্ত করছে । এই নতুন গ্রিনফিল্ড রোড তৈরির উদ্দেশ্য কৈলাস-মানসসরোবরগামী তীর্থযাত্রীদের দুর্ভোদ কমানো , কারণ এই সড়ক তাঁদের সোজা ভারত ও চিনের মধ্যে লিপুলেখ পাস পর্যন্ত পৌঁছে দেয় ।

কৌশলগতভাবেও এই সড়ক গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটা ভারতের দিকে যোগাযোগের উন্নতি ঘটায় । বিশেষ করে যদি চিনের মুখোমুখি হয়ে হয় , তাহলে এই রাস্তা ভারতীয় সেনার গতিবিধিকে আরও সহজ করে তোলে ।

5 মে লাদাখে ভারত ও চিনের সেনাবাহিনীর প্রথম সংঘর্ষের তিনদিন পর এই রাস্তা উদ্বোধন করা হয় ।

যদিও , 8 মে সড়ক উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই নেপাল প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতকে চিঠি লেখে, এবং জানায় যে এর ফলে দু'দেশের বোঝাপড়া ধাক্কা খাবে ।

8 মে জারি করে বিবৃতিতে নেপাল সরকার বলে , ‘খুব দুঃখের সঙ্গে নেপাল সরকার জানতে পেরেছে যে , গতকাল ভারত লিপুলেখের সঙ্গে সংযোগকারী একটি লিঙ্ক রোডের ‘উদ্বোধন’ করেছে , যা নেপালের ভূখণ্ডের উপর দিয়ে যায় ।’

নেপালের কড়া প্রতিক্রিয়া করেছে, কারণ ভারত 2005সালে এই সড়ক তৈরির অনুমোদন দিয়েছিল , খরচ ধার্য হয়েছিল 81 কোটি টাকা । 2018 সালে এই খরচ বেড়ে দাঁড়ায় 439 কোটি টাকা । রাস্তা তৈরির কাজ 17 এপ্রিল শেষ হয় , কিন্তু উদ্বোধন মে পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয় ।

এর জেরে ভারতের সেনাপ্রধান এম এম নারাভানে নাম না করে ইঙ্গিত দেন যে , নেপালের প্রতিক্রিয়ার পিছনে চিনের মদত রয়েছে ।

15 মে জেনেরাল এম এম নারাভানে বলেন , “আমরা কালি নদীর পশ্চিমে রাস্তা তৈরি করেছি । নেপাল কালি নদীর পূর্ব দিককে তাদের এলাকা বলে মেনে নিয়েছে । ট্রাই-জাংশন নিয়ে আগে কখনও কোনও সমস্যা দেখা দেয়নি । ”

জেনেরাল নারাভানে বলেছিলেন , “এটা বিশ্বাস করার কারণ আছে , যে ওরা (নেপাল) অন্য কারও কথায় এই ইশু তুলেছে এবং এটা খুবই সম্ভব ।”

যখন ভারত ও চিনের মধ্যে সংঘাত বাড়ছে , তখন 18 মে নেপাল মন্ত্রিসভা ভারতের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও দেশের রাজনৈতিক মানচিত্র বদলের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় ।

গত সপ্তাহে নেপালের সংসদের দুটি কক্ষই নতুন রাজনৈতিক ম্যাপে অনুমোদন দেয় , যেখানে কালাপানি, লিপুলেখ ও লিম্পিয়াধুরাকে দেশের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে ।

আপত্তি জানিয়ে ভারত ইতিমধ্যেই নেপালের পদক্ষেপকে ‘কৃত্রিমভাবে এলাকা বাড়িয়ে দেখানোর চেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছে ।

যদিও , কালাপানিকে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন মানচিত্রে নেপালের অনুমোদন দেওয়াতেই সমস্যা শেষ হয়নি । সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে ইঙ্গিত যে , সীমান্ত বিবাদ এবার আরও নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে ।

এই রবিবারেই নেপালি পুলিশ ও জেলা আধিকারিকরা পূর্ব চম্পারণ জেলায় লালবাকেয়া নদীর ওপর বন্যা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া বিহারের পদক্ষেপ থামিয়ে দিয়েছে । এই ঘটনা ঘটেছে 12 জুন একদল ভারতীয় নাগরিকের ওপর গুলি চালানোর পর , যেখানে একজন মারা গেছেন ও দুইজন আহত হয়েছেন ।

লালবাকেয়া নদীর উৎপত্তি নেপালে এবং সেখান থেকে তা বিহারের সীতামারি জেলায় বাগমতি নদীতে মেশে । নেপাল থেকে ভারতে আসা নদীগুলির জলস্তর বৃদ্ধির ফলে বিহার ঐতিহাসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এসেছে ।

ভারত এই নদীগুলির ওপর বহু বাঁধ তৈরি করেছে , এবং প্রতিবছরই বর্ষার আগে সেগুলিকে শক্তপোক্ত করা হয় । কিন্তু এইবছর নেপাল কর্তৃপক্ষ এই কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ।

প্রতিবেদনটি লিখেছেন কৃষ্ণানন্দ ত্রিপাঠি

যখন ভারত তার ভূখণ্ড রক্ষা করতে চিনের সঙ্গে গুরুতর সংঘাতে ব্যস্ত , ঠিক সেই সময় গত রবিবার বিহারের পূর্ব চম্পারণ জেলায় একটি নদীতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ বন্ধ রাখার নেপালের সিদ্ধান্তে অবনতির মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে ভারত-নেপাল সম্পর্ক ।

এই নিয়ে চলতি মাসে দ্বিতীয়বার দুই দেশের সীমান্তে সমস্যা দেখা দিল । 12 জুন একজন ভারতীয় নাগরিক মারা যান, এবং অন্তত দু'জন আহত হন , যখন বিহারের সীতামারি জেলায় একদল মানুষের ওপর নেপালের সশস্ত্র পুলিশ গুলি চালায় । ভারতীয় কর্তৃপক্ষ একে ‘স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা ও আদেশ ইশু’ আখ্যা দেয় । কিন্তু রবিবারের (21 জুন) ঘটনাক্রম দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের আরও গভীর সমস্যার দিকেই ইঙ্গিত করছে ।

এইসব ঘটনা নেপাল সরকারের নতুন রাজনৈতিক মানচিত্রে অনুমোদন দেওয়ার পর থেকে ঘটছে । যেখানে কালাপানি, লিপুলেখ আর লিম্পিয়াধুরাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । এতে দুই দেশের মধ্যে বাড়তে থাকা সংঘাতের সুরটাই ধরা পড়ছে ।

2015 সালে ভারতের দ্বারা নেপালের অর্থনৈতিক অবরোধকেই ভারত-নেপাল বিশেষজ্ঞরা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক খারাপ হওয়ার জন্য দায়ি করছেন । পাশাপাশি তাঁরা ভারত-নেপাল তিক্ততার সুযোগ নিতে চিনের প্রয়াসের দিকেও ইঙ্গিত করছেন ।

প্রাক্তন কূটনীতিক এবং ভারত-নেপাল সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এস ডি মুনি বলেন , “তৃতীয় শক্তির প্রভাব সবসময়ই ছিল, এবং আমি মনে করি যে সাম্প্রতিক বছরগুলিতে নেপালের সঙ্গে চিনের সম্পর্ক আরও মজবুত হওয়ায় বর্তমান নেপালি নেতৃত্বকে অনেক দিক থেকেই উৎসাহিত করেছে ।”

দিল্লির অবজ়ার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের সিনিয়র ফেলো কে ইহোম বলেন , কালাপানি-বিবাদ ভারত ও নেপালের মধ্যে দীর্ঘদিনের ইশু , যা আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করে ফেলা উচিত ছিল ।

কে ইহোম ETV ভারতকে বলেন , “সমস্যাটা হচ্ছে কালি নদীর উৎস নিয়ে । ভারত এর একরকম ব্যাখ্যা দেয় , আবার নেপালেরও নির্দিষ্ট ব্যাখা আছে ।”

তিনি বলেন , “ সীমান্ত-বিবাদ এবং আঞ্চলিক সমস্যাগুলি আবেগের বিষয় , তাই দু'পক্ষই এর সমাধান করতে সক্ষম হয়নি ।”

নেপাল এই ইশু প্রথমবার তোলেনি । ২০১৫ সালেও , ভারত-চিন যৌথবিবৃতিতে লিপুলেখ পাসকে অন্তর্ভুক্ত করার বিরোধিতা করেছিল নেপাল ।

২০১৫ সালের ১৫ মে ভারত ও চিন তাদের যৌথ বিবৃতিতে বলেছিল , “বাণিজ্যের পণ্যের তালিকা নিয়ে আলাপ-আলোচনায় দুই পক্ষই সম্মত হয়েছে । নাথু-লা, কিয়াংলা/লিপুলেখ পাস এবং শিপকি-লাতে সীমান্ত বাণিজ্যের প্রসারে সম্মত হয়েছে দুই দেশ ।”

অধ্যাপক এস ডি মুনি অবশ্য এটা পুরানো বিবাদ বলে মানতে নারাজ । কারণ 1954 সালে ভারত-চিন পঞ্চশীল চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার সময় , লিপুলেখ পাসকে অন্তর্ভুক্ত করা নিয়ে নেপাল কোনও প্রতিবাদ করেনি ।

অধ্যাপক এসডি মুনি বলেন , “ চিন শুধু 2015 সালেই লিপুলেখকে ভারতের অংশ বলে মানেনি, এছাড়াও 1954 সালে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান চুক্তির সময়ও আট থেকে ন'টি রুটের কথা বলা হয়েছিল । যার মাধ্যমে ভারত ও চিনের বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান চলবে ।”

অধ্যাপক মুনি উল্লেখ করেন, “ ২০১৫ সালে চিনারা যেটাই করে থাকুক , সেটা তাদের আগের অবস্থানেরই পুনরাবৃত্তি । নেপালের অবস্থানে বদল হয়েছে , ভারতের নয় ।”

যদিও , বহু বিশেষজ্ঞকে যা অবাক করেছে এবং যার থেকে বাইরের প্রভাবের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে , তা হল যে গতির সঙ্গে নেপাল সেই নতুন রাজনৈতিক মানচিত্রকে আনুষ্ঠানিক রূপ দিল , যেখানে ভারতের কালাপানি , লিপুলেখ এবং লিম্পিয়াধুরাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে সেইসময় , যখন লাদাখে ভারত ও চিনের সেনাবাহিনী একটা উত্তেজনাময় পরিস্থিতিতে পরস্পরের মুখোমুখি ।

গত সপ্তাহেই গালওয়ান উপত্যকায় পিএলএ-র সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের 20 জন জওয়ান শহিদ হন ।

নেপালের নতুন ম্যাপ অনুমোদনের পিছনে চিনের হাত?

8 মে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ উত্তরাখণ্ডে একটি নতুন 80 কিলোমিটার লম্বা রাস্তার উদ্বোধন করেন , যা ভারত, চিন ও নেপালের সংযোগস্থলে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখাকে যুক্ত করছে । এই নতুন গ্রিনফিল্ড রোড তৈরির উদ্দেশ্য কৈলাস-মানসসরোবরগামী তীর্থযাত্রীদের দুর্ভোদ কমানো , কারণ এই সড়ক তাঁদের সোজা ভারত ও চিনের মধ্যে লিপুলেখ পাস পর্যন্ত পৌঁছে দেয় ।

কৌশলগতভাবেও এই সড়ক গুরুত্বপূর্ণ কারণ এটা ভারতের দিকে যোগাযোগের উন্নতি ঘটায় । বিশেষ করে যদি চিনের মুখোমুখি হয়ে হয় , তাহলে এই রাস্তা ভারতীয় সেনার গতিবিধিকে আরও সহজ করে তোলে ।

5 মে লাদাখে ভারত ও চিনের সেনাবাহিনীর প্রথম সংঘর্ষের তিনদিন পর এই রাস্তা উদ্বোধন করা হয় ।

যদিও , 8 মে সড়ক উদ্বোধনের সঙ্গে সঙ্গেই নেপাল প্রতিবাদ জানিয়ে ভারতকে চিঠি লেখে, এবং জানায় যে এর ফলে দু'দেশের বোঝাপড়া ধাক্কা খাবে ।

8 মে জারি করে বিবৃতিতে নেপাল সরকার বলে , ‘খুব দুঃখের সঙ্গে নেপাল সরকার জানতে পেরেছে যে , গতকাল ভারত লিপুলেখের সঙ্গে সংযোগকারী একটি লিঙ্ক রোডের ‘উদ্বোধন’ করেছে , যা নেপালের ভূখণ্ডের উপর দিয়ে যায় ।’

নেপালের কড়া প্রতিক্রিয়া করেছে, কারণ ভারত 2005সালে এই সড়ক তৈরির অনুমোদন দিয়েছিল , খরচ ধার্য হয়েছিল 81 কোটি টাকা । 2018 সালে এই খরচ বেড়ে দাঁড়ায় 439 কোটি টাকা । রাস্তা তৈরির কাজ 17 এপ্রিল শেষ হয় , কিন্তু উদ্বোধন মে পর্যন্ত পিছিয়ে দেওয়া হয় ।

এর জেরে ভারতের সেনাপ্রধান এম এম নারাভানে নাম না করে ইঙ্গিত দেন যে , নেপালের প্রতিক্রিয়ার পিছনে চিনের মদত রয়েছে ।

15 মে জেনেরাল এম এম নারাভানে বলেন , “আমরা কালি নদীর পশ্চিমে রাস্তা তৈরি করেছি । নেপাল কালি নদীর পূর্ব দিককে তাদের এলাকা বলে মেনে নিয়েছে । ট্রাই-জাংশন নিয়ে আগে কখনও কোনও সমস্যা দেখা দেয়নি । ”

জেনেরাল নারাভানে বলেছিলেন , “এটা বিশ্বাস করার কারণ আছে , যে ওরা (নেপাল) অন্য কারও কথায় এই ইশু তুলেছে এবং এটা খুবই সম্ভব ।”

যখন ভারত ও চিনের মধ্যে সংঘাত বাড়ছে , তখন 18 মে নেপাল মন্ত্রিসভা ভারতের তীব্র আপত্তি সত্ত্বেও দেশের রাজনৈতিক মানচিত্র বদলের প্রস্তাবে অনুমোদন দেয় ।

গত সপ্তাহে নেপালের সংসদের দুটি কক্ষই নতুন রাজনৈতিক ম্যাপে অনুমোদন দেয় , যেখানে কালাপানি, লিপুলেখ ও লিম্পিয়াধুরাকে দেশের অংশ হিসেবে দেখানো হয়েছে ।

আপত্তি জানিয়ে ভারত ইতিমধ্যেই নেপালের পদক্ষেপকে ‘কৃত্রিমভাবে এলাকা বাড়িয়ে দেখানোর চেষ্টা’ বলে অভিহিত করেছে ।

যদিও , কালাপানিকে অন্তর্ভুক্ত করে নতুন মানচিত্রে নেপালের অনুমোদন দেওয়াতেই সমস্যা শেষ হয়নি । সাম্প্রতিক ঘটনাবলি থেকে ইঙ্গিত যে , সীমান্ত বিবাদ এবার আরও নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ছে ।

এই রবিবারেই নেপালি পুলিশ ও জেলা আধিকারিকরা পূর্ব চম্পারণ জেলায় লালবাকেয়া নদীর ওপর বন্যা নিয়ন্ত্রণে নেওয়া বিহারের পদক্ষেপ থামিয়ে দিয়েছে । এই ঘটনা ঘটেছে 12 জুন একদল ভারতীয় নাগরিকের ওপর গুলি চালানোর পর , যেখানে একজন মারা গেছেন ও দুইজন আহত হয়েছেন ।

লালবাকেয়া নদীর উৎপত্তি নেপালে এবং সেখান থেকে তা বিহারের সীতামারি জেলায় বাগমতি নদীতে মেশে । নেপাল থেকে ভারতে আসা নদীগুলির জলস্তর বৃদ্ধির ফলে বিহার ঐতিহাসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এসেছে ।

ভারত এই নদীগুলির ওপর বহু বাঁধ তৈরি করেছে , এবং প্রতিবছরই বর্ষার আগে সেগুলিকে শক্তপোক্ত করা হয় । কিন্তু এইবছর নেপাল কর্তৃপক্ষ এই কাজ বন্ধ করে দিয়েছে ।

প্রতিবেদনটি লিখেছেন কৃষ্ণানন্দ ত্রিপাঠি

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.