দিল্লি, 5 এপ্রিল : এতদিন ছিলেন প্রচারের মুখ। আজ তিনি একাকী। দলে আছেন, তবে ওই 'নমো-নমো' করে। প্রার্থী হননি। স্পষ্ট করে বলতে গেলে, BJP-র অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্যকে বয়সের দোহাই দিয়ে প্রার্থী করেনি দল। কিছুটা মনক্ষুণ্ণ হয়েছিলেন। তবে, প্রকাশ্যে নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহ জুটির সমালোচনা করেননি। এবার মনের কথা খুলে বললেন। সরাসরি নয়, ব্লগের মাধ্যমে। বুঝিয়ে দিলেন এখনও ফুরিয়ে যায়নি লালকৃষ্ণ আদবানি।
গতকাল "নেশন ফার্স্ট, পার্টি নেক্সট, সেল্ফ লাস্ট" শিরোনামে একটি লেখা লেখেন আদবানি। সেখানে তিনি পরতে পরতে আক্রমণ করেছেন তাঁর উত্তরসূরিদের। জানিয়ে দিয়েছেন, সমালোচক হলেই কেউ দেশ-বিরোধী বা শত্রু হয়ে যায় না। প্রসঙ্গত, বালাকোট অভিযানের পর কংগ্রেস সহ অন্য বিরোধী দলগুলি ঘুরিয়ে মোদির সমালোচনা করেছিল। বলা হয়েছিল, সেনার রক্ত নিয়ে রাজনীতি করছেন প্রধানমন্ত্রী। এরপর থেকেই নরেন্দ্র মোদি বিরোধীদের তোপ দাগতে শুরু করেন। পাকিস্তানের প্রসঙ্গ তুলে এনে একপ্রকার দেশ-বিরোধী আখ্যাও দেন। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, মোদির এই মনোভাব না-পসন্দ আদবানির। তাই, তিনি ব্লগে নিজের অভিমত স্পষ্ট করেন।
কী লিখেছেন আদবানি ?
ব্লগের পরতে পরতে ছিল দলের প্রতি তাঁর গভীর ভাবনা। তবে, তিনি এও জানিয়ে দেন, দেশ তাঁর কাছে সবথেকে আগে। পরে দল। আর ব্যক্তিবিশেষ সবার শেষে আসে। আদবানি লেখেন, দলের একবার পিছনে ফিরে দেখা উচিত, সামনের দিকটাও দেখা উচিত। সর্বোপরি, দলের অভ্যন্তরীণ বিষয় মনে রাখা উচিত। গুরুত্ব দেওয়া উচিত গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে।
গণতন্ত্র প্রসঙ্গে তিনি আরও লেখেন, "ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল বৈশিষ্ট্য হল বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যকে তুলে ধরা ও বাক-স্বাধীনতার অধিকার। জন্মলগ্ন থেকে BJP রাজনৈতিকভাবে বিরোধীদের শত্রু হিসেবে দেখেনি। প্রতিপক্ষ হিসেবেই দেখেছে। জাতীয়তাবাদের ক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য। রাজনৈতিক মতবিরোধীদের আমরা দেশদ্রোহী বলতে পারি না। প্রত্যেক মানুষের মতপ্রকাশের অধিকার আছে। সেইসঙ্গে গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও সংবাদমাধ্যমের স্বচ্ছতা, স্বাধীনতা, দায়বদ্ধতা ধরে রাখাকেই আমরা সর্বদা অগ্রাধিকার দিয়েছি। আমি আবার মনে করিয়ে দিতে চাই, সত্য, দেশের প্রতি নিষ্ঠা ও গণতন্ত্রই আমাদের দলের পথপ্রদর্শক। এই তিনের যোগসূত্রের মাধ্যমেই গড়ে ওঠে সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদ ও সু-রাজ (গুড গভর্নেন্স)। যা আমার দল সবসময় মেনে চলে।"
অটলবিহারী বাজপেয়ি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন উপ প্রধানমন্ত্রী ছিলেন আদবানি। ক্ষমতা হারিয়েও তিনিই ছিলেন দলের মুখ। কিন্তু, 2014 নির্বাচনের আগে ঠিক হয়, 75 ঊর্ধ্ব নেতাদের পাঠিয়ে দেওয়া হবে মার্গদর্শক মণ্ডলীতে। যদিও আদবানি ও মুরলি মনোহর যোশীর ক্ষেত্রে সেই সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি। কিন্তু, এবার তা কার্যকর করে একপ্রকার দূরে সরিয়ে দেওয়া হয় দুই নেতাকেই। আদবানির গান্ধিনগর আসনে দাঁড় করানো হয় অমিত শাহকে। সূত্রের খবর, যা বেশ বিস্মিত করে আদবানিকে। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, তাই কি কলমের খোঁচায় মোদি-শাহকে বিদ্ধ করলেন তিনি ?
যদিও আদবানির লেখাকে সমালোচনা হিসেবে মানতে নারাজ মোদি। তিনি পরে পোস্ট করেন, "আদবানিজি দলের আসল চরিত্র তুলে ধরেছেন। বিশেষ করে, BJP-কে পথ দেখানোর মন্ত্র- দেশ আগে, পার্টি পরে, ব্যক্তিবিশেষ সবার শেষে। BJP কার্যকর্তা হিসেবে আমি গর্বিত।"