গত মাস এবং আগামী মাস অর্থনীতির জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ । বিশেষ করে কর ও ধার সংক্রান্ত বিষয়ের ক্ষেত্রে । কেন্দ্রীয় সরকার আরও 1.6 লাখ কোটি টাকা ধার নেওয়ার বিষয়ে সংসদের অনুমতি চেয়েছে । আর 13 টি রাজ্য এই ইস্যুতে ও GST ক্ষতিপূরণ সংক্রান্ত বিবাদের বিষয়ে ধার নেওয়ার সময়সীমা সংক্রান্ত সম্মতি চেয়েছে । আর এই পরিস্থিতি ঈশ্বরের প্রবেশ ( ভগবানের হাত ) চুক্তির ক্ষেত্রগুলিকে আরও উত্তেজিত করে দিয়েছে । যা খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয় ।
সাংবিধানিক বিষয় নিয়ে যখন মতবিরোধ কেন্দ্রীভূত হয়, তখন বিষয়টি আরও জটিল হয়ে ওঠে । আর বিষয় যখন অর্থনীতি সংক্রান্ত হয়, তখন সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেতে থাকে কেন্দ্র, রাজ্যের সম্পর্ক ও ফেডারেল ব্যবস্থা সংক্রান্ত ক্ষেত্রে । সংক্ষেপে বলতে গেলে GST ক্ষতিপূরণ নিয়ে যে বিতর্ক তৈরি হয়েছে, তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা এড়ানো সম্ভব ছিল । এই বিষয়টি সরকারি নীতি গ্রহণের জন্য একটা শিক্ষা দিয়ে গেল । কারণ, এটা দেখাল যে এখন থেকে ভারতে কোনও অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক কাঠামোগত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন করতে গেলে আরও বেশি সতর্ক হওয়া দরকার । রাজনৈতিক স্লোগান ও অতিশোয়ক্তির ক্ষেত্রে পিছিয়ে গেলে চলবে না । রাজনীতি এবং তার স্লোগান কখনই যুক্তিবাদী নয় । বিশেষত ভারতের মতো জটিল এবং বৈচিত্র্যময় দেশে বুদ্ধিমান চিন্তাভাবনার পাশে তা বিস্তৃত ও গভীর বিশ্লেষণের বিকল্প হতে পারে না ।
GST ক্ষতিপূরণ: আইন ও তার অন্যান্য দিক
প্রথম দিন থেকেই GST ভারতে একটি জটিল ব্যববস্থাকে আরও খারাপ করেছে । প্রথমত, কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলি বিভিন্ন পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বিচক্ষণ ও কার্যকর বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়নি । কোভিডের মতো অপ্রত্যাশিত পরিস্থিতি, যা সরাসরি বিশ্বের অর্থনীতিতে আঘাত হেনেছে, এমন পরিস্থিতিতে কী করা হবে, তাও ঠিক করে রাখা হয়নি । রাজনৈতিক নেতারা তাড়াহুড়ো করে নিজেদের মহান সংস্কারক হিসেবে প্রমাণ করতে চান । আর এটা করতে গিয়ে হয় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলি হয় এড়িয়ে যাওয়া হয়, অথবা সেগুলি স্থগিত করা হয় । অর্থনীতির সঙ্গে জড়িত নয় এমন বিষয়গুলিতে রাজ্যগুলি বরাবর তাড়াহুড়োয় থাকে । তারাও সবসময় নিজেদের 'সংস্কারক' হিসেবে তুলে ধরতে চায় । আর এদিকে কেন্দ্রীয় সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে যে রাজ্যগুলি GST চালুর প্রথম পাঁচ বছর ক্ষতিপূরণ পাবে । 2016 সালের 31 মার্চ যে অর্থবর্ষ শেষ হয়েছে, সেটাকেই প্রথম বছর হিসেবে ধরা হয়েছে । আর পণ্য পরিষেবা কর আইন ( রাজ্যগুলিকে ক্ষতিপূরণ ) 2017 পাস করানো হয়েছে । এটি অতি উৎসাহের সঙ্গে ধরে নেওয়া হয়েছিল যে পাঁচ বছরের রূপান্তরকালীন সময়ে একটি রাজ্যের সাবসামড কর থেকে আয়ের নামমাত্র বৃদ্ধির হার বার্ষিক 14 শতাংশ হবে (ধারা 3) । এর থেকে যে কোনও ধরনের হ্রাসের ক্ষেত্রে, তা কেন্দ্রীয় সরকার পাঁচ বছরের জন্য বহন করবে ( 2022 সালে তা শেষ হবে ) । এই সমস্ত পরিবর্তনের সময় যে ঘাটতি হবে, তা নতুন পরোক্ষ করের মাধ্যমে তুলে নেওয়া হবে । যা নন-ল্যাপস্যাবল GST ক্ষতিপূরণ তহবিলে জমা হবে ( ধারা 10 ) । প্রতি বছর রাজ্যের রাজস্ব 14 শতাংশ করে বৃদ্ধি পাবে, এই নিয়ে যে বিশ্লেষণ করা হয়েছিল, তা ছিল অর্থনৈতিক বিকাশের বিষয়টি সম্পর্কে ত্রুটিপূর্ণ ধারণা এবং ভারতের অগ্রগতি কেউ থামাতে পারবে না এই দৃঢ় বিশ্বাসের উপর তৈরি হওয়া । এই বিশ্বাসটা অনেকটা সেই রকম যে গাছ একেবারে আকাশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পাবে । GST এর জটিলতা এবং এর সমস্যা সঙ্কুল প্রয়োগ অর্থনীতির গতি কোভিডের আগে থেকেই কমিয়ে দিয়েছিল ।
ঘাটতির পরিমাণ যথেষ্ট । যা আনুমানিক 3 লাখ কোটি টাকা । অন্যদিকে ক্ষতিপূরণ তহবিলে প্রায় 65 হাজার কোটি টাকা জমা পড়ার কথা ছিল । অর্থাৎ ঘাটতির পরিমাণ হওয়ার কথা 2.35 লাখ কোটি টাকা । সংক্ষেপে এর অর্থ হল যে কেন্দ্র সংগ্রহের উপর নির্ভর না করে রাজ্যগুলিকে অর্থ প্রদানে সাংবিধানিক ভাবে বাধ্য । কারণ বেশিরভাগ রাজ্যের ক্ষেত্রে ঘাটতিটি মূল কারণ কোভিড । প্রকৃতপক্ষে আইনের ধারা 6 ও ধারা 7 এ খুব স্পষ্টভাবে এবং উদাহরণ সহ ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য বিষয়গুলি উল্লেখ করা আছে । সেই হিসেবে রূপান্তরকালীন পর্বে ( অর্থাৎ 5 বছর ) রাজ্যগুলি প্রতি দুই মাস অন্তর ক্ষতিপূরণ পাবে । কোনও ধরনের ঘাটতি হলে কেন্দ্র ক্ষতিপূরণের টাকা রাজ্যগুলিকে দেবে না, এমন কিছু ওই আইনে রাখা নেই । আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে এই আইনের 12 নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে GST কাউন্সিলের সুপারিশ অনুসারে কেন্দ্র প্রথম বছরে অন্তর্ভুক্ত শর্তগুলির সঙ্গে সম্পর্কিত শর্তাদি তৈরি করতে পারে । যার মধ্যে রাজস্ব জমা না দেওয়া হলে তার শর্ত, ক্ষতিপূরণের পদ্ধতি, লেভি ও সেস আদায়, সেস দেওয়ার পদ্ধতি রয়েছে । সুতরাং, রাজ্যগুলিকে GST এর ক্ষতিপূরণ দেওয়ার আইনে সংশোধন না করা পর্যন্ত কেন্দ্র তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসতে পারবে না ।
প্রয়োগ
এটি স্বীকৃত নীতি যে কোনও ধরনের সংবিধানিক বিধি বা এমনকী আইনের ক্ষেত্রে বিধি অনুসারে দেওয়া শর্ত পুরোপুরি অনুসরণ করতে হবে । এই ক্ষেত্রে যদিও ‘ঈশ্বরের হাত’ কে টেনে নিয়ে আসার কোনও বিধান নেই । তাও যাঁরা পদে বসে আছেন, তাঁরা চাইবেন যে এতে ভগবান নাক গলাক । আর এটাই আইনের শাসনের সারমর্ম । যেহেতু কোনও ব্যতিক্রমের কথা উল্লেখ করা নেই, তাই তার মানে হল রাজ্যগুলিকে অর্থ প্রদান করতেই হবে কেন্দ্রীয় সরকারকে । যদি না রাজ্যগুলি অন্য কোনও সমাধান গ্রহণ করে । রাজ্যগুলিকে ভারত সরকারের দুইটি প্রস্তাবের মধ্যে একটি গ্রহণ করাতে বাধ্য করতে পারে না । তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, ‘ঈশ্বরের হাত’ এই বিষয়টি 1872 সালের ভারতীয় চুক্তি আইনে অন্তর্ভুক্ত করা আছে । কিন্তু তা GST ক্ষতিপূরণ আইনে আমদানি করা যাবে না । জেনারেলবাস স্পেশিয়া ডেরোগ্যান্ট অনুযায়ী এই আইনি নিয়ম মেনে নিতে হবে যে সাধারণ আইন ( ভারতীয় চুক্তি আইন, 1872 ) কে পথ করে দিতে হবে বিশেষ আইন ( রাজ্যগুলিকে প্রদেয় GST ক্ষতিপূরণ আইন ) এর জন্য । এটাই আইনের বহু পুরনো নিয়ম ।
সুতরাং, এই মুহূর্তে যা প্রয়োজন, তা হল কেন্দ্রীয় সরকার আইনের নিয়ম এবং সাংবিধানিক বিধি অনুযায়ী প্রতিশ্রুতি পুনরায় নিশ্চিত করবে এবং ক্ষতির ভার বহন করবে । কারণ, অর্থনীতির ভবিষ্যৎ সম্পর্কে তারাই ভুল বিশ্লেষণ করেছিল । দ্বিতীয়ত, এটি গুরুত্বপূর্ণ যে কেন্দ্রীয় সরকারকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব ও অন্যান্য প্রতিশ্রুতি থেকে পিছিয়ে গেল, এই ধারণা তৈরি হওয়া উচিত নয় । বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে এটি একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে যে যাই ঘটুক না কেন, কেন্দ্রীয় সরকার সাংবিধানিক নিয়মগুলি রক্ষা করায় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ । তৃতীয়ত, কেন্দ্রীয় সরকার তার সাংবিধানিক এবং আইনী বাধ্যবাধকতাগুলি থেকে সরে গেলে কেন্দ্র এবং রাজ্যগুলির মধ্যে অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হওয়া শুরু হবে । যা ফেডারেল ব্যবস্থার জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয় । ভারত কেবল তখনই ভালো পারফরম্যান্স করতে পারে, যখন কেন্দ্রীয় সরকার, রাজ্য সরকার, স্থানীয় সরকার এবং নাগরিক সহ সমস্ত অংশীদার সুসংহত হয়ে কাজ করে । উপর থেকে জোর করে সমাধান সূত্র চাপিয়ে দেওয়া আমাদের ফেডারেল ব্যবস্থাকে সিস্টেমকে শক্তিশালী করার কোনও উপায় নয় । শেষ অবধি, রাজ্যগুলিকে ঋণ নিতে বাধ্য করা কেবল নাগরিকদের জন্য আরও আর্থিক সমস্যা তৈরি করবে । এমনকী যদি ক্ষমতাসীন সরকারগুলি ঋণ নিতে আগ্রহী হয়, তাহলে অতিরিক্ত ঋণ নেওয়ার কারণে এটি কয়েক মাস ধরে টিকে থাকতে পারে । রাজ্যগুলির দ্বারা আরও ঋণ নেওয়ার অর্থ অদূর ভবিষ্যতে আরও বেশি কর দিতে হবে ।