দিল্লি, 14 ফেব্রুয়ারি : দেশের বিভিন্ন শহরে ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক অধিকারগুলির মধ্যে অন্যতম, বাঁচার অধিকার ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । সভ্যতার কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত এই সব শহরে এখন তাদের শোচনীয় সড়কব্যবস্থা ও নিম্নমানের যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে নাভিশ্বাস অবস্থা । রাস্তার খানাখন্দ থেকে হওয়া ক্ষতি ও পথচারীদের বিভিন্ন সমস্যার কথা মাথায় রেখে গত বছর কর্নাটক হাইকোর্ট একটি আদেশনামা জারি করেছে । মহানগর পালিকে (BBMP)-কে দেওয়া আদালতের নির্দেশে বলা হয়েছে, রাস্তার খানাখন্দের জন্য হওয়া দুর্ঘটনার ক্ষতিপূরণ পেতে যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে জন্য কর্তৃপক্ষকে একটি আলাদা দপ্তর খুলতে হবে । কর্নাটক হাইকোর্টের এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে BBMP । কিন্তু শীর্ষ আদালত সেই আবেদন খারিজ করে । বিচারপতিদের একটি বেঞ্চ হাইকোর্টের রায়কে সমর্থন করে জানায়, শহরের রাস্তায় যেন কোনও খানাখন্দ না থাকে সে বিষয়ে সরকারকে নিশ্চিত করতে হবে । যদিও BBMP কর্তৃপক্ষ আগে দাবি করেছিল যে, কর্নাটক পৌরসভা আইনে এই ধরনের ক্ষতিপূরণের কোনও বিধি নেই । এমনকি, এই ধরনের ক্ষতিপূরণের ফলে BBMP-এর প্রচুর খরচ হয়ে যাবে বলেও জানিয়েছিলেন তাঁরা । তবে আদালত তাদের সব আবেদনই খারিজ করে পালটা প্রশ্ন করে, কর্নাটক পৌরসভা আইনে কোথাও রাস্তায় খন্দ ও বেআইনি নির্মাণের বিধি রয়েছে কি না । কর্নাটক হাইকোর্টের এই রায় অন্য শহরের কর্পোরেশনগুলির কাছেও একটা বড় শিক্ষা । পথ নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে আশা আরও বাড়িয়েছে শীর্ষ আদালতের এই রায়, যেখানে মানুষের বাঁচার অধিকারকে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে ।
2015 সালে এক রায়ে মুম্বই হাইকোর্টের বেঞ্চ জানায়, ভারতীয় সংবিধানের 21 নম্বর ধারা অনুযায়ী, ব্যবহারের জন্য ভালো রাস্তা প্রত্যেক নাগরিকের মৌলিক অধিকার । সেই বেঞ্চের অন্যতম সদস্য ছিলেন বর্তমান কর্নাটক হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি অভয় ওকা । হাইকোর্টের রায়ে 226 নম্বর ধারার উল্লেখ করা হয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে, পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় কোনও দুর্ঘটনা ঘটলে কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ দিতে বাধ্য থাকবে । ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস বিউরো (NCRB)-এর তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রতি বছর পথ দুর্ঘটনায় মারা যান দেড় লাখেরও বেশি মানুষ । পথ নিরাপত্তা বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত কমিটি জানায় যে, রাস্তায় খন্দের জন্য 2013 থেকে 2017 সালের মধ্যে মারা গিয়েছেন 15 হাজার মানুষ । এই সংখ্যাটা সীমান্তে জঙ্গি হামলায় মৃত্যুর থেকেও বেশি বলে দাবি করে শীর্ষ আদালত । এই সব মৃত্যুর জন্য শীর্ষ আদালত পৌর কর্তৃপক্ষ, ন্যাশনাল হাইওয়ে অথরিটি অফ ইন্ডিয়া (NHAI) এবং রাজ্যের পূর্ত দপ্তরকে দোষী হিসাবে চিহ্নিত করে । খন্দপথের জন্য হওয়া দুর্ঘটনায় শীর্ষে থাকা রাজ্যগুলির মধ্যে রয়েছে উত্তরপ্রদেশ, বিহার, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত, পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশ ।
নাগরিকদের জন্য উচ্চমানের পরিষেবার ব্যবস্থা করা পৌর কর্তৃপক্ষের প্রাথমিক কর্তব্য । যে সময় মানুষের গ্রাম থেকে শহরে আসার পরিমাণ বাড়ছে, সেই অবস্থায় শহুরে সমস্যাগুলির মোকাবিলায় পৌর সংস্থাগুলির যে তেমন কোনও প্রকল্পের কথা চিন্তাতেও নেই তা স্পষ্ট । যৌন অপরাধ সংক্রান্ত আইনের পুনর্মূল্যায়নের জন্য গঠিত জে এস ভার্মা কমিটি রাজ্য সরকারগুলিকে প্রতিটি রাস্তায় আলো লাগাতে এবং তা যেন কার্যকর হয় তা দেখার নির্দেশ দিয়েছে । জাতীয় সড়কগুলির বেহাল অবস্থার জন্য NHAI-কে সম্প্রতি কড়া বার্তা দিয়েছে কেন্দ্র । প্রশাসনের অব্যবস্থার একটি উদাহরণ মিলল সম্প্রতি যখন মুম্বই পুলিশ এক মহিলা বাইকারের বিরুদ্ধে বেপরোয়াভাবে বাইক চালানোর অভিযোগে মামলা রুজু করে । অথচ ওই মহিলা রাস্তার খন্দের জন্য বাইক থেকে পড়ে যান এবং ট্রাকের ধাক্কায় তাঁর মৃত্যু হয় । সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত প্যানেল এই ধরনের পথ দুর্ঘটনায় মৃতদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণের নির্দেশ দিয়েছে । একইসঙ্গে শীর্ষ আদালত রাজ্য সরকারগুলিকে সড়কের মান উন্নতির জন্য ব্যবস্থা নিতেও নির্দেশ দিয়েছে । এই সব সদর্থক নির্দেশের সঙ্গে দুর্নীতি বন্ধ করা সম্ভব হলে আমরা এক নতুন ভোর দেখতেই পারি ।