ETV Bharat / bharat

কোরোনা : রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই নতুন অস্ত্র

ড. কৃষ্ণা রাও জানিয়েছেন যে খাদ্যতালিকায় ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার থাকলে, তাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ৷ ক্ষত নিরাময়ের পর শ্বেত রক্ত কণিকাগুলির পূর্বের আকারে ফিরে যেতে সাহায্য করে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড ৷

Immunity is the new missile
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাই নতুন অস্ত্র
author img

By

Published : May 10, 2020, 12:35 PM IST

Updated : May 10, 2020, 3:28 PM IST

COVID19, অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই ৷ আমাদের কেউ নিশ্চিত নই যে কোন দিক থেকে এই শত্রু আক্রমণ করতে পারে ৷ এই ধরনের একটি পরিস্থিতিতে এই ভয়ঙ্কর ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের সব ধরনের সুরক্ষা নিতে হবে ৷ আমাদের নিজেদেরই যাচাই করে দেখতে হবে যে এই ভাইরাস যদি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, তাহলে আমাদের কি তা মোকাবিলা করার এবং পালটা আক্রমণ করার ক্ষমতা আছে ৷ এছাড়া, এই ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আমরা কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করছি?

কোরোনা ভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করাই একমাত্র অস্ত্র বলে জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েটের বিজ্ঞানী ড. মাড্ডিপতি কৃষ্ণা রাও ৷ ড. কৃষ্ণা রাও একজন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটিতেও কাজ করছেন এবং তিনি লিপিডোমিক কোর ফ্যাকাল্টির ডিরেক্টর ৷

ড. কৃষ্ণা রাও জানিয়েছেন যে খাদ্যতালিকায় ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার থাকলে, তাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ৷ ড. রাও ফ্যাটি অ্যাসিড নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন৷ তাঁর মতে, ফ্যাটি অ্যাসিড ব্যবহারের ফলে ইনফ্লেমেশন বাড়তে বা কমতে পারে ৷ তিনি আরও জানিয়েছেন যে মানব দেহে ইনফ্লেমেশনের বৃদ্ধি পাওয়াই বড় অংশের রোগের কারণ ৷ কোরোনায় মৃত্যুর প্রায় 5-10 শতাংশ ক্ষেত্রে এই কারণটি কাজ করেছে ৷ ETV ভারত-এর সঙ্গে একটি টেলিফোনিক সাক্ষাৎকারে ড. কৃষ্ণা রাও অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ৷ তার মধ্যে ছিল ইনফ্লেশন কী, ইনফ্লেশনের সঙ্গে কোরোনার কী ধরনের সম্পর্ক রয়েছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কী এবং মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার কী কী পদ্ধতি রয়েছে, ইনফ্লেমেশন কমাতে মানব শরীরে ফ্যাটি অ্যাসিডের কী ভূমিকা রয়েছে ইত্যাদি, এখানে তিনি কী বলেছেন, তা উল্লেখ করা হল...

সেরে ওঠা / নিরাময়ের প্রক্রিয়া

যখন শরীর শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন শ্বেত রক্ত কণিকা চেষ্টা করে মৃত কোষগুলিকে সরিয়ে দিতে এবং একই রকম ভাবে যখন শরীরে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মতো প্যাথোজেন প্রবেশ করে, তখনও শ্বেত রক্ত কণিকা ওই প্যাথোজেনকে শরীরের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করে ৷ নিরাময় এবং শরীরের বাইরে প্যাথোজেনকে বের করে দেওয়া, এই দুই পদ্ধতিকেই বলে ইনফ্লেমেশন ৷ এটা শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত অংশকে সারিয়ে তোলার একটি পদ্ধতি ৷ এই পদ্ধতিকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখা উচিত নয় ৷ এটা যদি না হয়, তা হলে শরীর ভিতর বা বাইরের কোনওরকম আঘাতে প্রতিক্রিয়া দেখাবে না ৷ ইনফ্লেমেশনকে চারটি লক্ষণ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়: ফুলে যাওয়া / ইনফ্লেমেশন, যন্ত্রণা, লাল হয়ে যাওয়া এবং জ্বর ৷

ক্ষতিকারক প্যাথোজেনগুলির উপর নজর রাখা

যখন ভাইরাস এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার মতো মাইক্রোবস শরীরে প্রবেশ করে, তখন সঙ্গে সঙ্গে কাজ করতে নেমে পড়ে শ্বেত রক্ত কণিকা এবং শরীরের বাইরে থেকে আসা ওইগুলির উপর কাজ করে ৷ লোহিত রক্ত কণিকা এক প্রকারের হয় ৷ অন্যদিকে শ্বেত রক্ত কণিকা বিভিন্ন প্রকারের হয় ৷ প্রতিবারই এটি স্বতন্ত্র কাজ করে ৷ কিছু শ্বেত রক্ত কণিকা ভাইরাস বহন করে বাইরে বের করে দেয়, কিছু কণিকা কাজ করে ভাইরাস নষ্ট করতে, আর কিছু কণিকা ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গের নিরাময় করার নির্দিষ্ট কাজ থাকে ৷ ফুসফুস, পাচনতন্ত্র ইত্যাদির মতো শরীরের বিভিন্ন অংশে অবস্থান করে বিভিন্ন ধরনের শ্বেত রক্ত কণিকা ৷ আর সেই সংশ্লিষ্ট অংশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট কাজ করে ৷

ব্লিচিং এজেন্টের থেকেও খারাপ...

মানব শরীরে প্রবেশ করা ক্ষতিকারক মাইক্রো অরগানিজ়মগুলিকে নষ্ট করতে শরীরের ভিতর অনেক বৃহদাকার কর্মকাণ্ড চলে ৷ প্রথমত, প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনস এবং লিউকোট্রিয়েন্সের মতো কমাউন্ড বের করে কাজ শুরু করে ওমেগা-6 ফ্যাটি অ্যাসিড ৷ এই ধরনের কম্পাউন্ডগুলি শ্বেত রক্ত কণিকাকে আকর্ষিত করে ৷ সঙ্গে সঙ্গে কাজে নেমে পড়ে এক ধরনের শ্বেত রক্ত কণিকা ৷ তারা সাইটোকাইন নামে প্রোটিন মলিকিউল বের করে অন্য শ্বেত রক্ত কণিকাগুলিকে আকর্ষণ করার জন্য ৷ সাইটোকিনেরও অনেক প্রকারভেদ আছে ৷ শরীরের যে অঙ্গে সমস্যা তৈরি হয়েছে, সেখানে কাজ করার জন্য শ্বেত রক্ত কণিকা আকর্ষণ করতে সাইটোকাইন বের করা হয় ৷ শ্বেত রক্ত কণিকা আসে এবং মাইক্রোবসকে টুকরো টুকরো করে ভেঙে ফেলে ৷ ক্ষতিকারক অর্গানিজমকে বের করে দিতে তারা খুব শক্তিশালী রাসায়নিক নির্গত করে ৷ শ্বেত কণিকা দ্বারা বের হওয়া এই ধরনের রাসায়নিক বাড়ি পরিষ্কার করতে ব্যবহার করা ব্লিচিং পাউডারের থেকেও বেশি টক্সিক হয় ৷ তাই এই সময় সাধারণ কোষও এই রাসায়নিক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ৷ এই পুরো পদ্ধতিকেই বলে ইনফ্লেমেশন ৷

যে কারণগুলির জন্য ইনফ্লেমেশন কমতে পারে

ক্ষতিকারক মাইক্রো অর্গানিজমগুলিকে নষ্ট করার প্রক্রিয়া চলাকালীন ইনফ্লেমেশন একেবারে উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায় ৷ যখন ক্ষত নিরাময় হয়ে যায়, তখন ইনফ্লেমেশন তৈরি করা শ্বেত রক্ত কণিকাগুলি নিজেদের চেহারা বদলে ফেলে ৷ শ্বেত রক্ত কণিকাগুলির পূর্বের আকারে ফিরে যেতে সাহায্য করে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড ৷ ফ্যাটি অ্যাসিডের দ্বারা নির্গত কিছু ধরনের উপাদানের মাধ্যমে ইনফ্লেমেশন কমতে পারে ৷ এই পদ্ধতি ‘ইনফ্লেমেশন রেজিলিউশন’ বা ‘ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড রেজিলিউশন’ নামে পরিচিত ৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে শরীরের ইনফ্লেমেশন নিয়ন্ত্রণে যদি ওমেগা-2 ফ্যাট পর্যাপ্ত না হয় বা উপাদান নির্গত করতে সমস্যা হয়, তখন ইনফ্লেমেশন চলতে থাকে ৷ এই পরিস্থিতি কোনও ব্যক্তির শরীরে আরও স্বাস্থ্যজনিত জটিলতা তৈরি করতে পারে ৷

দ্য সার্জিং সাইটোকিন্স

শরীরে অনিয়ন্ত্রিত ইনফ্লেমেশনের একাধিক ঝুঁকি রয়েছে ৷ হার্টের অসুখ, ক্যানসার এবং আর্থারাইটিসের মতো রোগগুলি অনিয়ন্ত্রিত ইনফ্লেমেশনই কারণ ৷ এগুলোকে বলা হয় ক্রনিক ইনফ্লেমেটারি রোগ ৷ যদি 100 জন ক্যানসার রোগীর মধ্যে পাঁচজন জিনগত ভাবে ওই রোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে বাকি 95 জনের ক্ষেত্রে এর কারণ ইনফ্লেমেশন !! COVID19 রোগের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে 90-95 শতাংশ রোগীর শরীরে উপস্থিত শ্বেত রক্ত কণিকা ভাইরাসকে মারতে সক্ষম হচ্ছে এবং এই পদ্ধতিতে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আগের থেকে অনেকটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ যদিও বাকি 5-10 শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত ইনফ্লেমেশন দেখা যাচ্ছে, যা যথেষ্ট ভয়ের কারণ ৷ এর ফলে তাঁদের মৃত্যুর ঝুঁকিও অনেক বেশি ৷ এই রোগীদের শরীরে ইনফ্লেমেশনের জন্য দায়ী সাইটোকিন্স অনেক বেশি পরিমাণে নির্গত হচ্ছে৷ এটাকে বলে, ‘সাইটোকিন ঝড়’ ৷

জলজ উদ্ভিদ ও ওমেগা-3

যদিও মানুষের শরীরের সমস্ত অঙ্গেই প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে ৷ তবে মানুষের মস্তিষ্কে এটা উচ্চমাত্রায় থাকে ৷ কিন্তু মানুষের শরীরে এটা তৈরি হওয়ার ক্ষমতা খুবই কম ৷ এটা মায়ের দুধে প্রচুর পরিমাণে থাকে ৷ মাছ খেয়ে এবং মৎস্য তেলের ক্যাপসুল খেয়েও এটা সংগ্রহ করা যায় ৷

এই কাজগুলি করা যেতে পারে...

* প্রতিদিন মৎস্য তেলের একটি ক্যাপসুল এবং একটি মাল্টি ভিটামিন ক্যাপসুল খান ৷

* হলুদের মধ্যে ইনফ্লেমেশন কমানোর উপাদান থাকে ৷ তবে এটা পরিমিত মাত্রায় নেওয়া যেতে পারে ৷ খুব বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা যাবে না৷ শাঁকের বীজেও ওমেগা-৩ ফ্যাট থাকে ৷

* রোজ ২০-৩০ মিনিটের ব্যায়াম শরীরকে ঘামতে সাহায্য করে ৷

* বাষ্পীকরণ শ্বাসনালীকে আরও উন্মুক্ত করে ৷ এর ফলে ফুসফুসে অক্সিজেন পৌঁছতে সাহায্য করে ৷ অক্সিজেন শ্বেত রক্ত কণিকাকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে ৷

* জ্বর হলে অবশ্যই প্যারাসিটামল খেতে হবে ৷ ‘নন-স্টিরিওডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি ওষুধ’ নেওয়া একেবারেই উচিত নয় ৷ চিকিৎসক বললেই তবে অ্যাসপিরিন খাওয়া উচিত ৷

এই সুপার পাওয়ার ঠিক কী ?

শ্বেত রক্ত কণিকা, যাকে লিম্ফোসাইট বলা হয়, তা মানুষের শরীরের ভাইরাস খেয়ে নিতে পারে ৷ যখন একই ভাইরাস আবার আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, তখন সঙ্গে সঙ্গে এটা তা চিহ্নিত করতে পারে এবং প্রোটিন তৈরি করে, যা আমরা অ্যান্টিবডি নামে চিনি, তা ভাইরাসের ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করে ৷ যখন শরীরে একই ভাইরাসের জন্য আবার সংক্রমণ হয়, তখন তাদের অ্যান্টিবডি চিহ্নিত করে এবং সঙ্গে সঙ্গে ওই ভাইরাসের উপর আক্রমণ করে ৷ এর পর ভাইরাসগুলিকে শ্বেত রক্ত কণিকাকে দিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তারা পাচনতন্ত্রের মাধ্যমে ওই ভাইরাসকে শরীরের বাইরে বের করে দিতে পারে ৷ এই কারণেই কেউ একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বারবার একই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় ৷ তবে এতে কোনও ঝুঁকি নেই৷ একেই বলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ৷

টীকাকরণের কারণ...

ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্যই টীকাকরণ করা হয় ৷ টীকাকরণের পদ্ধতিতে অসাঢ় হয়ে যাওয়া ভাইরাসকে ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্তের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয় ৷ এই অসাঢ় ভাইরাস কোনও ধরনের ক্ষতি করতে পারে না ৷ যদিও আমাদের শরীরের শ্বেত রক্ত কণিকা এটাকে চিহ্নিত করতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবডি তৈরি করা শুরু করে ৷ এর ফলে শরীরে ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে ৷ একজনের শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি একই ভাইরাসে আক্রান্ত অন্য কারও শরীরেও ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো যেতে পারে ৷ যদিও এই অ্যান্টিবডি অন্য ব্যক্তিকে অস্থায়ী ভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিতে পারে ৷ স্থায়ী ভাবে কিছু করতে পারে না ৷ একটা ভাইরাসকে চিহ্নিত করতে একটাই অ্যান্টিবডি যথেষ্ট ৷ তবে একটি ভাইরাসের জন্য আমাদের শরীর একাধিক কোষ তৈরি করতে পারে, যা অনেক অ্যান্টিবডি তৈরি করে ৷ এই তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিগুলি সারাজীবন ধরে শরীরে থেকে যায় ৷

অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে

* কোরোনা ভাইরাস সারাতে এখনও কোনও ওষুধ তৈরি হয়নি ৷ অ্যান্টিবায়োটিক কোনও ভাইরাস থেকে মুক্তি দিতে পারে না ৷ কোরোনা সংক্রমণে শরীর দুর্বল হয়ে গেলে, তা থেকে রক্ষা করতে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় এবং তৈরি হয় অন্য ব্যাকটেরিয়া সংক্রান্ত সংক্রমণ ৷ হাত পরিষ্কার রাখা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারলেই কোরোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে ৷

* কোরোনা ভাইরাসের জেনেটিক মিউটেশন খুব দ্রুতহারে হচ্ছে ৷ এটা কোনও জীবিত কোষ নয় ৷ কোরোনা ভাইরাস যখন কোনও জীবিত কোষের মধ্যে প্রবেশ করে, তখনই এটা বেঁচে ওঠে ৷ মানুষের ত্বকের এই ধরনের ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার ক্ষমতা রয়েছে ৷ কিন্তু যখন মুখ, নাক, কান বা চোখের মাধ্যমে শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করছে, তখন তা রক্তের সঙ্গে সরাসরি মিশে যাচ্ছে ৷

* যদি কোরোনা ভাইরাস সরাসরি মানুষের পাচনতন্ত্রে প্রবেশ করে, তাহলে তা কোনও ক্ষতি করতে পারে না ৷ মুখ দিয়ে প্রবেশ করার পর রক্তের মাধ্যম ছাড়া এই ভাইরাসের পাচনতন্ত্রে প্রবেশের কোনও সম্ভাবনা নেই ৷ ইনফ্লেমেশন বৃদ্ধি পেতে থাকে যখন এই ভাইরাস রক্তের মধ্যে মিশে যায় ৷

* মানুষের শরীরে যখন প্রথমবার ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখন অ্যান্টিবডি তৈরি হয় ৷ যখন ভাইরাস একই ব্যক্তির দেহে আবার সংক্রামিত হয়, তখন ওই অ্যান্টিবডি আক্রমণের জন্য প্রস্তুত থাকে এবং ভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে ৷

COVID19, অদৃশ্য শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াই ৷ আমাদের কেউ নিশ্চিত নই যে কোন দিক থেকে এই শত্রু আক্রমণ করতে পারে ৷ এই ধরনের একটি পরিস্থিতিতে এই ভয়ঙ্কর ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমাদের সব ধরনের সুরক্ষা নিতে হবে ৷ আমাদের নিজেদেরই যাচাই করে দেখতে হবে যে এই ভাইরাস যদি আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, তাহলে আমাদের কি তা মোকাবিলা করার এবং পালটা আক্রমণ করার ক্ষমতা আছে ৷ এছাড়া, এই ভাইরাসের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আমাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে আমরা কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করছি?

কোরোনা ভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করাই একমাত্র অস্ত্র বলে জানিয়েছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ডেট্রয়েটের বিজ্ঞানী ড. মাড্ডিপতি কৃষ্ণা রাও ৷ ড. কৃষ্ণা রাও একজন অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর হিসেবে ওয়েন স্টেট ইউনিভার্সিটিতেও কাজ করছেন এবং তিনি লিপিডোমিক কোর ফ্যাকাল্টির ডিরেক্টর ৷

ড. কৃষ্ণা রাও জানিয়েছেন যে খাদ্যতালিকায় ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার থাকলে, তাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ৷ ড. রাও ফ্যাটি অ্যাসিড নিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন৷ তাঁর মতে, ফ্যাটি অ্যাসিড ব্যবহারের ফলে ইনফ্লেমেশন বাড়তে বা কমতে পারে ৷ তিনি আরও জানিয়েছেন যে মানব দেহে ইনফ্লেমেশনের বৃদ্ধি পাওয়াই বড় অংশের রোগের কারণ ৷ কোরোনায় মৃত্যুর প্রায় 5-10 শতাংশ ক্ষেত্রে এই কারণটি কাজ করেছে ৷ ETV ভারত-এর সঙ্গে একটি টেলিফোনিক সাক্ষাৎকারে ড. কৃষ্ণা রাও অনেক প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন ৷ তার মধ্যে ছিল ইনফ্লেশন কী, ইনফ্লেশনের সঙ্গে কোরোনার কী ধরনের সম্পর্ক রয়েছে, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কী এবং মানুষের মধ্যে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার কী কী পদ্ধতি রয়েছে, ইনফ্লেমেশন কমাতে মানব শরীরে ফ্যাটি অ্যাসিডের কী ভূমিকা রয়েছে ইত্যাদি, এখানে তিনি কী বলেছেন, তা উল্লেখ করা হল...

সেরে ওঠা / নিরাময়ের প্রক্রিয়া

যখন শরীর শারীরিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন শ্বেত রক্ত কণিকা চেষ্টা করে মৃত কোষগুলিকে সরিয়ে দিতে এবং একই রকম ভাবে যখন শরীরে ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার মতো প্যাথোজেন প্রবেশ করে, তখনও শ্বেত রক্ত কণিকা ওই প্যাথোজেনকে শরীরের বাইরে পাঠানোর চেষ্টা করে ৷ নিরাময় এবং শরীরের বাইরে প্যাথোজেনকে বের করে দেওয়া, এই দুই পদ্ধতিকেই বলে ইনফ্লেমেশন ৷ এটা শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত অংশকে সারিয়ে তোলার একটি পদ্ধতি ৷ এই পদ্ধতিকে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে দেখা উচিত নয় ৷ এটা যদি না হয়, তা হলে শরীর ভিতর বা বাইরের কোনওরকম আঘাতে প্রতিক্রিয়া দেখাবে না ৷ ইনফ্লেমেশনকে চারটি লক্ষণ দিয়ে চিহ্নিত করা হয়: ফুলে যাওয়া / ইনফ্লেমেশন, যন্ত্রণা, লাল হয়ে যাওয়া এবং জ্বর ৷

ক্ষতিকারক প্যাথোজেনগুলির উপর নজর রাখা

যখন ভাইরাস এবং ক্ষতিকারক ব্যাকটেরিয়ার মতো মাইক্রোবস শরীরে প্রবেশ করে, তখন সঙ্গে সঙ্গে কাজ করতে নেমে পড়ে শ্বেত রক্ত কণিকা এবং শরীরের বাইরে থেকে আসা ওইগুলির উপর কাজ করে ৷ লোহিত রক্ত কণিকা এক প্রকারের হয় ৷ অন্যদিকে শ্বেত রক্ত কণিকা বিভিন্ন প্রকারের হয় ৷ প্রতিবারই এটি স্বতন্ত্র কাজ করে ৷ কিছু শ্বেত রক্ত কণিকা ভাইরাস বহন করে বাইরে বের করে দেয়, কিছু কণিকা কাজ করে ভাইরাস নষ্ট করতে, আর কিছু কণিকা ক্ষতিগ্রস্ত অঙ্গের নিরাময় করার নির্দিষ্ট কাজ থাকে ৷ ফুসফুস, পাচনতন্ত্র ইত্যাদির মতো শরীরের বিভিন্ন অংশে অবস্থান করে বিভিন্ন ধরনের শ্বেত রক্ত কণিকা ৷ আর সেই সংশ্লিষ্ট অংশ অনুযায়ী নির্দিষ্ট কাজ করে ৷

ব্লিচিং এজেন্টের থেকেও খারাপ...

মানব শরীরে প্রবেশ করা ক্ষতিকারক মাইক্রো অরগানিজ়মগুলিকে নষ্ট করতে শরীরের ভিতর অনেক বৃহদাকার কর্মকাণ্ড চলে ৷ প্রথমত, প্রোস্টাগ্ল্যান্ডিনস এবং লিউকোট্রিয়েন্সের মতো কমাউন্ড বের করে কাজ শুরু করে ওমেগা-6 ফ্যাটি অ্যাসিড ৷ এই ধরনের কম্পাউন্ডগুলি শ্বেত রক্ত কণিকাকে আকর্ষিত করে ৷ সঙ্গে সঙ্গে কাজে নেমে পড়ে এক ধরনের শ্বেত রক্ত কণিকা ৷ তারা সাইটোকাইন নামে প্রোটিন মলিকিউল বের করে অন্য শ্বেত রক্ত কণিকাগুলিকে আকর্ষণ করার জন্য ৷ সাইটোকিনেরও অনেক প্রকারভেদ আছে ৷ শরীরের যে অঙ্গে সমস্যা তৈরি হয়েছে, সেখানে কাজ করার জন্য শ্বেত রক্ত কণিকা আকর্ষণ করতে সাইটোকাইন বের করা হয় ৷ শ্বেত রক্ত কণিকা আসে এবং মাইক্রোবসকে টুকরো টুকরো করে ভেঙে ফেলে ৷ ক্ষতিকারক অর্গানিজমকে বের করে দিতে তারা খুব শক্তিশালী রাসায়নিক নির্গত করে ৷ শ্বেত কণিকা দ্বারা বের হওয়া এই ধরনের রাসায়নিক বাড়ি পরিষ্কার করতে ব্যবহার করা ব্লিচিং পাউডারের থেকেও বেশি টক্সিক হয় ৷ তাই এই সময় সাধারণ কোষও এই রাসায়নিক দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ৷ এই পুরো পদ্ধতিকেই বলে ইনফ্লেমেশন ৷

যে কারণগুলির জন্য ইনফ্লেমেশন কমতে পারে

ক্ষতিকারক মাইক্রো অর্গানিজমগুলিকে নষ্ট করার প্রক্রিয়া চলাকালীন ইনফ্লেমেশন একেবারে উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছে যায় ৷ যখন ক্ষত নিরাময় হয়ে যায়, তখন ইনফ্লেমেশন তৈরি করা শ্বেত রক্ত কণিকাগুলি নিজেদের চেহারা বদলে ফেলে ৷ শ্বেত রক্ত কণিকাগুলির পূর্বের আকারে ফিরে যেতে সাহায্য করে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড ৷ ফ্যাটি অ্যাসিডের দ্বারা নির্গত কিছু ধরনের উপাদানের মাধ্যমে ইনফ্লেমেশন কমতে পারে ৷ এই পদ্ধতি ‘ইনফ্লেমেশন রেজিলিউশন’ বা ‘ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড রেজিলিউশন’ নামে পরিচিত ৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে শরীরের ইনফ্লেমেশন নিয়ন্ত্রণে যদি ওমেগা-2 ফ্যাট পর্যাপ্ত না হয় বা উপাদান নির্গত করতে সমস্যা হয়, তখন ইনফ্লেমেশন চলতে থাকে ৷ এই পরিস্থিতি কোনও ব্যক্তির শরীরে আরও স্বাস্থ্যজনিত জটিলতা তৈরি করতে পারে ৷

দ্য সার্জিং সাইটোকিন্স

শরীরে অনিয়ন্ত্রিত ইনফ্লেমেশনের একাধিক ঝুঁকি রয়েছে ৷ হার্টের অসুখ, ক্যানসার এবং আর্থারাইটিসের মতো রোগগুলি অনিয়ন্ত্রিত ইনফ্লেমেশনই কারণ ৷ এগুলোকে বলা হয় ক্রনিক ইনফ্লেমেটারি রোগ ৷ যদি 100 জন ক্যানসার রোগীর মধ্যে পাঁচজন জিনগত ভাবে ওই রোগে আক্রান্ত হয়, তাহলে বাকি 95 জনের ক্ষেত্রে এর কারণ ইনফ্লেমেশন !! COVID19 রোগের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে 90-95 শতাংশ রোগীর শরীরে উপস্থিত শ্বেত রক্ত কণিকা ভাইরাসকে মারতে সক্ষম হচ্ছে এবং এই পদ্ধতিতে রোগীর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আগের থেকে অনেকটাই বৃদ্ধি পাচ্ছে ৷ যদিও বাকি 5-10 শতাংশ রোগীর ক্ষেত্রে অনিয়ন্ত্রিত ইনফ্লেমেশন দেখা যাচ্ছে, যা যথেষ্ট ভয়ের কারণ ৷ এর ফলে তাঁদের মৃত্যুর ঝুঁকিও অনেক বেশি ৷ এই রোগীদের শরীরে ইনফ্লেমেশনের জন্য দায়ী সাইটোকিন্স অনেক বেশি পরিমাণে নির্গত হচ্ছে৷ এটাকে বলে, ‘সাইটোকিন ঝড়’ ৷

জলজ উদ্ভিদ ও ওমেগা-3

যদিও মানুষের শরীরের সমস্ত অঙ্গেই প্রচুর পরিমাণে ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে ৷ তবে মানুষের মস্তিষ্কে এটা উচ্চমাত্রায় থাকে ৷ কিন্তু মানুষের শরীরে এটা তৈরি হওয়ার ক্ষমতা খুবই কম ৷ এটা মায়ের দুধে প্রচুর পরিমাণে থাকে ৷ মাছ খেয়ে এবং মৎস্য তেলের ক্যাপসুল খেয়েও এটা সংগ্রহ করা যায় ৷

এই কাজগুলি করা যেতে পারে...

* প্রতিদিন মৎস্য তেলের একটি ক্যাপসুল এবং একটি মাল্টি ভিটামিন ক্যাপসুল খান ৷

* হলুদের মধ্যে ইনফ্লেমেশন কমানোর উপাদান থাকে ৷ তবে এটা পরিমিত মাত্রায় নেওয়া যেতে পারে ৷ খুব বেশি পরিমাণে ব্যবহার করা যাবে না৷ শাঁকের বীজেও ওমেগা-৩ ফ্যাট থাকে ৷

* রোজ ২০-৩০ মিনিটের ব্যায়াম শরীরকে ঘামতে সাহায্য করে ৷

* বাষ্পীকরণ শ্বাসনালীকে আরও উন্মুক্ত করে ৷ এর ফলে ফুসফুসে অক্সিজেন পৌঁছতে সাহায্য করে ৷ অক্সিজেন শ্বেত রক্ত কণিকাকে সক্রিয় করতে সাহায্য করে ৷

* জ্বর হলে অবশ্যই প্যারাসিটামল খেতে হবে ৷ ‘নন-স্টিরিওডাল অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটারি ওষুধ’ নেওয়া একেবারেই উচিত নয় ৷ চিকিৎসক বললেই তবে অ্যাসপিরিন খাওয়া উচিত ৷

এই সুপার পাওয়ার ঠিক কী ?

শ্বেত রক্ত কণিকা, যাকে লিম্ফোসাইট বলা হয়, তা মানুষের শরীরের ভাইরাস খেয়ে নিতে পারে ৷ যখন একই ভাইরাস আবার আমাদের শরীরে প্রবেশ করে, তখন সঙ্গে সঙ্গে এটা তা চিহ্নিত করতে পারে এবং প্রোটিন তৈরি করে, যা আমরা অ্যান্টিবডি নামে চিনি, তা ভাইরাসের ক্ষতি থেকে শরীরকে রক্ষা করে ৷ যখন শরীরে একই ভাইরাসের জন্য আবার সংক্রমণ হয়, তখন তাদের অ্যান্টিবডি চিহ্নিত করে এবং সঙ্গে সঙ্গে ওই ভাইরাসের উপর আক্রমণ করে ৷ এর পর ভাইরাসগুলিকে শ্বেত রক্ত কণিকাকে দিয়ে দেওয়া হয়, যাতে তারা পাচনতন্ত্রের মাধ্যমে ওই ভাইরাসকে শরীরের বাইরে বের করে দিতে পারে ৷ এই কারণেই কেউ একটি ভাইরাসে আক্রান্ত হলে বারবার একই ভাইরাসে আক্রান্ত হয় ৷ তবে এতে কোনও ঝুঁকি নেই৷ একেই বলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ৷

টীকাকরণের কারণ...

ভাইরাসের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্যই টীকাকরণ করা হয় ৷ টীকাকরণের পদ্ধতিতে অসাঢ় হয়ে যাওয়া ভাইরাসকে ইনজেকশনের মাধ্যমে রক্তের মধ্যে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয় ৷ এই অসাঢ় ভাইরাস কোনও ধরনের ক্ষতি করতে পারে না ৷ যদিও আমাদের শরীরের শ্বেত রক্ত কণিকা এটাকে চিহ্নিত করতে পারে এবং সঙ্গে সঙ্গে অ্যান্টিবডি তৈরি করা শুরু করে ৷ এর ফলে শরীরে ওই ভাইরাসের বিরুদ্ধে একটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে ৷ একজনের শরীরে তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডি একই ভাইরাসে আক্রান্ত অন্য কারও শরীরেও ইনজেকশনের মাধ্যমে প্রবেশ করানো যেতে পারে ৷ যদিও এই অ্যান্টিবডি অন্য ব্যক্তিকে অস্থায়ী ভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিতে পারে ৷ স্থায়ী ভাবে কিছু করতে পারে না ৷ একটা ভাইরাসকে চিহ্নিত করতে একটাই অ্যান্টিবডি যথেষ্ট ৷ তবে একটি ভাইরাসের জন্য আমাদের শরীর একাধিক কোষ তৈরি করতে পারে, যা অনেক অ্যান্টিবডি তৈরি করে ৷ এই তৈরি হওয়া অ্যান্টিবডিগুলি সারাজীবন ধরে শরীরে থেকে যায় ৷

অ্যান্টিবায়োটিক কাজ করে

* কোরোনা ভাইরাস সারাতে এখনও কোনও ওষুধ তৈরি হয়নি ৷ অ্যান্টিবায়োটিক কোনও ভাইরাস থেকে মুক্তি দিতে পারে না ৷ কোরোনা সংক্রমণে শরীর দুর্বল হয়ে গেলে, তা থেকে রক্ষা করতে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয় এবং তৈরি হয় অন্য ব্যাকটেরিয়া সংক্রান্ত সংক্রমণ ৷ হাত পরিষ্কার রাখা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং ওমেগা-3 ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে পারলেই কোরোনা মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করা যাবে ৷

* কোরোনা ভাইরাসের জেনেটিক মিউটেশন খুব দ্রুতহারে হচ্ছে ৷ এটা কোনও জীবিত কোষ নয় ৷ কোরোনা ভাইরাস যখন কোনও জীবিত কোষের মধ্যে প্রবেশ করে, তখনই এটা বেঁচে ওঠে ৷ মানুষের ত্বকের এই ধরনের ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ার ক্ষমতা রয়েছে ৷ কিন্তু যখন মুখ, নাক, কান বা চোখের মাধ্যমে শরীরে এই ভাইরাস প্রবেশ করছে, তখন তা রক্তের সঙ্গে সরাসরি মিশে যাচ্ছে ৷

* যদি কোরোনা ভাইরাস সরাসরি মানুষের পাচনতন্ত্রে প্রবেশ করে, তাহলে তা কোনও ক্ষতি করতে পারে না ৷ মুখ দিয়ে প্রবেশ করার পর রক্তের মাধ্যম ছাড়া এই ভাইরাসের পাচনতন্ত্রে প্রবেশের কোনও সম্ভাবনা নেই ৷ ইনফ্লেমেশন বৃদ্ধি পেতে থাকে যখন এই ভাইরাস রক্তের মধ্যে মিশে যায় ৷

* মানুষের শরীরে যখন প্রথমবার ভাইরাসের দ্বারা আক্রান্ত হয়, তখন অ্যান্টিবডি তৈরি হয় ৷ যখন ভাইরাস একই ব্যক্তির দেহে আবার সংক্রামিত হয়, তখন ওই অ্যান্টিবডি আক্রমণের জন্য প্রস্তুত থাকে এবং ভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে ৷

Last Updated : May 10, 2020, 3:28 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.