হায়দরাবাদ : আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম 30 শতাংশ কমে ব্যারেল প্রতি 31.02 মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে ৷ 2016 সালের ফেব্রুয়ারি মাসের পর এটাই অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সর্বনিম্ন দাম ৷
অন্য একটি বড় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের বিকল্প অ্যামেরিকার ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI)-য়েও জ্বালানির দাম 27 শতাংশ কমে ব্যারেল প্রতি 30 মার্কিন ডলারে নেমে এসেছে ৷ এটাও 2016 সালের ফেব্রুয়ারির পর অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের সর্বনিম্ন দাম ৷ উল্লেখ্য, 1991 সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের পর এটাই WTI-এর সবচেয়ে খারাপ দিন ৷
হঠাৎ এভাবে দাম কমে যাওয়ার কারণ কী ?
জ্বালানি তেলের উৎপাদন খরচ কমানোর বিষয়ে সৌদি আরব এবং রাশিয়া নিজেদের মধ্যে চুক্তি সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হয়েছে । এটাকেই দাম কমার প্রাথমিক কারণ হিসেবে ধরা হচ্ছে ৷ কোরোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ফলে যে দাম কমেছে তাকে সামাল দিতে বৃহস্পতিবার OPEC 2020 সালের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে প্রতিদিন ব্যারেল প্রতি (bpd) 1.5 মিলিয়ন জ্বালানি উত্তোলন কমানোর বিষয়ে সহমত হয়েছে ৷ রাশিয়া এবং অন্যদের যোগদানের শর্তেই এটাকে কার্যকর করা হয়েছে ৷ যদিও অনিচ্ছুক রাশিয়া গত 20 বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দাম কমিয়ে সৌদি আরবকে ক্ষুব্ধ করে দিয়েছে ৷
অন্যদিকে সৌদির পরিকল্পনা চিনের চাহিদা কমে যাওয়ায় অতিরিক্ত জ্বালানি সরবরাহ করে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া ৷ এই জন্যই তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজ়িল, কানাডা এবং নরওয়েতে জ্বালানি তেলের সরবরাহ বাড়াতে চাইছে৷ অর্থনীতিবিদদের অনুমান, যতদিন না পর্যন্ত চিন এবং বিশ্বের অন্য অংশে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদা বাড়ছে ততদিন পর্যন্ত দাম কমতেই থাকবে ৷ আর তার জন্য আরও ছয় থেকে বারো মাস সময় লাগবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা ।
এতে ভারতের লাভ কীভাবে হবে ?
জানুয়ারির মাঝামাঝি থেকেই ভারতে পেট্রল ও ডিজ়েলের দাম লিটার প্রতি চার টাকা করে কমে গিয়েছে ৷ পরবর্তীকালে দাম আরও কমতে পারে মনে করা হচ্ছে ।
আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম কমে যাওয়ায় ইন্ডিয়ান ওয়েল, BPCL ও HPCL-এর মতো তেল সংস্থাগুলির লাভ হবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ তাদের লাভের শতাংশের পরিমাণ এবং আয়ও বাড়তে পারে ৷
উল্লেখ্য, যে দেশের তেল ব্যবসায়ীরা আন্তর্জাতিক দামের 15 দিনের গড় হিসেবের উপর পেট্রল ও ডিজ়েলের প্রতিদিনের দাম নির্ধারণ করে ৷ ফলে, দেশীয় বাজারে পেট্রল ও ডিজ়েলের দামের উপর কতটা প্রভাব পড়তে চলেছে তার উত্তর পেতে হলে আরও এক সপ্তাহ অপেক্ষা করতেই হবে ৷
ভারত যেহেতু অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের চাহিদার 85 শতাংশই আমদানি করে তাই বিশ্বের বাজারে এর দাম কমে যাওয়ার অর্থ, আমদানিতে ভারতের নজিরবিহীন লাভ হওয়া ৷
একটা হিসাব অনুযায়ী, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম বিশ্বের বাজারে এক মার্কিন ডলার কমে যাওয়ার অর্থ ভারতের আমদানির খরচ 3 হাজার কোটি টাকা কমে যাওয়া ৷ অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম 45 মার্কিন ডলার হওয়ার অর্থ ভারতের 2 বিলিয়ন মার্কিন ডলার বা 14 হাজার কোটি টাকা বেঁচে যাবে ৷
তেলের দাম কমে যাওয়া মানে মূল্যবৃদ্ধি অনেকটাই কমবে ৷ তেলে ভর্তুকির পরিমাণও কমে যাবে ৷ কারেন্ট অ্যাকাউন্টে ঘাটতিও কমবে ৷ আর জনগণের জন্য কাজ করতে দেশের সরকারের হাতে সম্পদও বাড়বে ৷
হিসাব অনুযায়ী, অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম 10 শতাংশ কমে যাওয়ার অর্থ উপভোক্তা মূল্য সূচকে মূল্যবৃদ্ধি 20 বেসিস পয়েন্ট (bps) কমে যাবে এবং GDP-তে 30 bps বেড়ে যাবে ৷
বি:দ্র: উপরের মতামত ETV Bharat বা তার কর্তৃপক্ষের নয়, তা একেবারেই লেখকের নিজস্ব ৷ ETV Bharat-এর পাঠকদের পরামর্শ, কোনও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে বিশেষজ্ঞের মতামত নিন ৷