জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা কর্তৃপক্ষের জারি করা লকডাউন অর্ডারের ছাড়ের তালিকায় তাদের নাম রয়েছে৷ তা সত্ত্বেও আমাজন, ফ্লিপকার্ট, গ্রোফার্সের মতো E-কমার্স সংস্থাগুলো অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের হোম সাপ্লাই শুরু করতে গিয়ে, হিমসিম খাচ্ছে তাদের ডেলিভারি কর্মীদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে ৷ আমেরিকার ওয়ালমার্টের মালিকানাধীন ফ্লিপকার্ট সমস্ত অর্ডার থামিয়ে দিয়েছে, আশা করা হচ্ছে আজ রাত থেকে তারা ফের অর্ডার নেওয়া শুরু করতে পারে ৷ প্রশাসনের কাছে বিশদে কর্মপদ্ধতির নির্দেশিকা চেয়েছে আমাজন, যাতে তাদের ডেলিভারি কর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যায় ৷ আর এক E-কমার্স সংস্থা গ্রোফার্স প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে, যাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের হোম ডেলিভারি শুরু করা যায়, কারণ সমাজের একটি অংশ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের হোম ডেলিভারির জন্য তাদের ওপর নির্ভরশীল।
ইটিভি ভারতকে ফ্লিপকার্ট জানিয়েছে, "আমাদের সরবরাহ ব্যবস্থা ও ডেলিভারি কর্মীদের নিরাপদ ও সহজ যাতায়াতের আশ্বাস দিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন, আমরা আজই মুদিখানার সামগ্রী ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ডেলিভারি ফের শুরু করব ।"
ফ্লিপকার্ট গোষ্ঠীর সিইও কল্যাণ কৃষ্ণমূর্তি বলেন, "সঙ্কটের সময় পরিচ্ছন্ন ও নিরাপদ সরবরাহ ব্যবস্থার মাধ্যমে দেশকে সাহায্য করতে, এবং দেশজুড়ে গ্রাহকদের কাছে পণ্য পৌঁছে দিতে, আমরা আমাদের শক্তিশালী ও দক্ষ ডেলিভারি নেটওয়ার্কের সাহায্য নেব ।"
বিশ্বের সর্ববৃহৎ E-কমার্স সংস্থা আমাজন জানিয়েছে, যেভাবে সরকার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে, বাড়িতে থাকা নাগরিকদের সহায়তার মাধ্যম হিসেবে E-কমার্সকে স্বীকৃতি দিয়েছে, তা প্রশংসনীয়।
ইটিভি ভারতকে পাঠানো একটি বিবৃতিতে আমাজন ইন্ডিয়া জানিয়েছে, "আমরা কেন্দ্র সরকার ও স্থানীয় প্রশাসনগুলোর সঙ্গে কাজ করছি। কীভাবে কাজ হবে, দ্রুত তার বিশদ পদ্ধতি জানতে চেয়েছি, যাতে রোজকার প্রয়োজনীয় পণ্য, স্বাস্থ্য ও পরিচ্ছন্নতা সম্পর্কিত পণ্য, স্যানিটাইজার, বেবিফুড ও ওষুধ আমাদের গ্রাহকদের কাছে বিনা বাধায় পৌঁছে যেতে পারে ।"
ফ্লিপকার্টের 'থেমেছে, কিন্তু বেশিক্ষণের জন্য নয়' -- এই নোটিসটি বুধবার রাত দশটা নাগাদও সংস্থার ওয়েবসাইটে দেখা গিয়েছে, যদিও সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া তাদের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, আজই পরের দিকে ডেলিভারি ফের চালু করা হবে । এছাড়াও, ইটিভি ভারতের সাংবাদিক পরের দুদিন তাঁর দিল্লি অফিসে আমাজনের মাধ্যমে অত্যাবশ্যক পণ্য আনার চেষ্টা করেন, কিন্তু আমাজনের তরফে সেটা গ্রহণ করা হয়নি।
একইরকমভাবে, গ্রোফার্সের মাধ্যমেও ইটিভির দিল্লি অফিসে অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের ডেলিভারি 6 এপ্রিলের আগে হবে না বলে দেখানো হয়েছে।
ইটিভি ভারতকে পাঠানো বিবৃতিতে গ্রোফার্স জানিয়েছে, স্থানীয় প্রশাসন তাদের কাজকর্ম ফের চালু করার ব্যাপারে সাহায্য করছে। যে ধাক্কা তাদের লেগেছে, তাতে এখনও প্রায় চার লক্ষ অর্ডার সরবরাহ করা তাদের বাকি রয়েছে।
গ্রোফার্সের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও অলবিন্দর ধিন্দসা ইটিভি ভারতকে পাঠানো বিবৃতিতে বলেছেন, "গত কয়েকদিনে, আমাদের কাজকর্মে বেশ কয়েকটি ধাক্কা এসেছে, যার ফলে প্রায় চার লক্ষ অর্ডারের ব্যাকলগ তৈরি হয়েছে। ''
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কোম্পানিগুলিকে বলেছেন, লকডাউন পিরিয়ডে কর্মীদের যেন বাড়ি থেকে কাজ করতে অনুমতি দেওয়া হয় ।
স্থানীয় মুদিখানাগুলি ছাড়াও, NDMA-র লকডাউন নির্দেশিকায় ছাড় দেওয়া হয়েছে E-কমার্স সংস্থাগুলোকে, কারণ বিপুল সংখ্যায় মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী এবং পেশাদাররা মুদিখানার সামগ্রী তাদের দরজায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য বিগ বাস্কেট, গ্রোফার্স ও অন্যান্য E-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলোর ওপর নির্ভর করতে শুরু করেছেন।
যদিও কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর E-কমার্স সংস্থার ডেলিভারি কর্মীদের সমস্যার মুখে পড়ার রিপোর্ট খারিজ করে দিয়্ছেন, কিন্তু লকডাউন নির্দেশিকার কঠোর প্রয়োগ তাঁরা হোম ডেলিভারি বন্ধ রেখেছেন।
যেখানে ইটিভি ভারতের কাছে ফ্লিপকার্ট ও আমাজন ইন্ডিয়া তাদের ঝুলে থাকা অর্ডারের সংখ্যাটা প্রকাশ করতে অস্বীকার করেছে, সেখানে গ্রোফার্স জানিয়েছে, যে দেশে করোনা সংক্রমণ রুখতে সরকারের নির্দেশিকা জারির পর, তাদের চার লক্ষ অর্ডার এখনও বাকি রয়েছে।
গ্রোফার্সের সিইও অলবিন্দর ধিন্দসার কথা, "আমরা সবসময় কাজ করছি সেই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়াতে যাঁরা আমাদের পরিষেবার ওপর নির্ভরশীল, এবং নিজেদের অত্যাবশ্যকীয় জিনিসের জন্য নিজের বাড়িতে অপেক্ষা করছেন। "
তিনি বলেন, "আমরা বুঝি, যে সমাজের অনেক বিপন্ন অংশ আমাদের পরিষেবার ওপর গভীরভাবে নির্ভরশীল, এবং আমরা এই দায়িত্বকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিই।"