এ যেন এক স্বপ্নপুরী । যেন ঘরে সাজানো কোনও এক নাম না জানা গ্রামের ওয়াল পেন্টিং । যেদিকে তাকাবেন, সেদিকেই নয়নাভিরাম সৌন্দর্য্য । চারিদিকে সবুজের ঘেরাটোপ । হাঁসের ডাক । পাখির কলতান । শান্ত, সবুজ, সুন্দর এক গ্রাম । ঠিক যেন রূপকথার মতো ।
এই গ্রামে বাড়ি আছে । মানুষ আছে । পশু-পাখিও আছে । নেই শুধু রাস্তা । অবাক হলেন ? হ্যাঁ ঠিকই পড়ছেন । এই গ্রামে একটিও রাস্তা নেই । ভাবছেন তাও আবার হয় নাকি ! রাস্তা ছাড়া মানুষজন যাতায়াত করেন কীভাবে ! এটাই এই গ্রামের বৈশিষ্ট, যা পৃথিবীর আর কোথাও নেই । আর এর টানেই প্রচুর পর্যটক ভিড় জমান এই গ্রামে ।
নেদারল্যান্ডসের গিয়েথুর্ন । অ্যামস্টারডাম শহর থেকে একশো বিশ কিলোমিটারের রাস্তা । অ্যামস্টারডাম থেকে আপনি গাড়ি পেয়ে যাবেন । ঘণ্টা দেড়েকের পথ । গ্রামে ঢোকার মুখে আপনাকে গাড়ি ছেড়ে দিতে হবে । কারণ আর রাস্তা নেই ।
চারিদিকে রাস্তার বদলে ছোটো-বড় ক্যানেল । সারি সারি নৌকা দাঁড় করানো আছে ক্যানেলের ধার ঘেঁষে । কিছু নৌকা যাতায়াতও করছে । হ্যাঁ , এটাই এই গ্রামের বৈশিষ্ট । গাড়ির বদলে নৌকা চলে এই গ্রামে । গ্রামের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে গেছে ক্যানেল । প্রতিটি বাড়ি, প্রতিটি দোকানের সামনে দিয়ে গেছে ক্যানেল । মজার ব্যাপার, এখানকার পোস্টমাস্টারও নৌকায় করে চিঠিপত্র বিলি করেন । গ্রামবাসীরা এই জলপথের নাম দিয়েছেন ক্যানেল রোড । যেদিকে তাকাবেন, সেদিকেই একেবারে পিকচার পারফেক্ট ফ্রেম । এ এক দারুণ নান্দনিক সৌন্দর্য্য । যেন কোনও এক শিল্পী অনেক সময় নিয়ে এঁকেছেন গ্রামটিকে । সবুজের সঙ্গে এক অদ্ভুত নিবিড়তা রয়েছে এই গ্রামের ।
এই গ্রামের ভিতরে শিরা-উপশিরার মতো চারিদিকে এত ক্যানেল রয়েছে যে গ্রামটি অনেকগুলি ছোটো ছোটো দ্বীপে পরিণত হয়েছে । আর ছোটো ছোটো দ্বীপগুলির মধ্যে যোগাযোগের জন্য রয়েছে কাঠের সাঁকো । একশো আশিটিরও উপরে সাঁকো রয়েছে এই গ্রামে ।
শহুরে কোলাহল থেকে অনেক দূরে এই গ্রাম । নেই গাড়ি-ঘোড়ার আওয়াজ । নেই শহুরে ব্যস্ততা । গ্রামে যে নৌকাগুলি চলে, তার ইঞ্জিনেও কোনও শব্দ হয় না । সাইলেন্সার লাগানো । চারিদিকে এক শান্ত, নির্মল পরিবেশ । গাছে গাছে কত নাম না জানা পাখি । তাদের কলতান । গাছে গাছে যেন এক অদ্ভুত সুরে গান ধরেছে পাখিগুলো । রয়েছে স্নিগ্ধ বাতাস আর বাহারি ফুলের সুবাস ।
সবমিলিয়ে প্রায় হাজার তিনেক মানুষের বাস এই গ্রামে । অনেকের আবার নিজস্ব এক একটি দ্বীপও আছে ।
প্রাকৃতিক শোভার পাশাপাশি উপরি পাওনা নৌকাবিহার । এই দুইয়ের টানেই প্রতিবছর গিয়েথুর্নে ভিড় করেন পর্যটকেরা । আসেন, নৌকায় করে গোটা গ্রাম ঘুরে বেরান, প্রাণ ভরে অক্সিজেন নেয় । অনেকেই এই গ্রামকে নেদারল্যান্ডসের ভেনিস বলে থাকেন । তবে 1958 সালের আগে পর্যন্ত গ্রামটি বিশ্ববাসীর কাছে সেভাবে পরিচিত ছিল না । চিত্র পরিচালক বার্ট হানসট্রা তাঁর ফ্যানফেয়ার সিনেমার শুটিং করেছিলেন এই গ্রামে । তারপর থেকেই পরিচিতি পায় গ্রামটি ।