যে কোনও মহিলার জীবনেই সন্তানের জন্ম দেওয়া অন্যতম আনন্দের মূহূর্ত। কিন্তু সন্তান জন্মের পর অনেক রকম চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়, বিশেষ করে শরীরের দিক থেকে বিচার করলে, ‘পোস্ট—নেটাল রিকভারি’ এবং ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়। আর ঠিক এইসময়ই ত্রাতার ভূমিকা নিতে পারে যোগচর্চা। এটা শারীরিক এবং মানসিক, উভয় দিক থেকেই উপকারী। ‘বিমল যোগা’—র প্রতিষ্ঠাতা, MA যোগাচার্য, রিংকি আর্য্য বলেছেন, “ডেলিভারির ছয় থেকে আট সপ্তাহ পর সাধারণত মহিলারা যোগচর্চা শুরু করতে পারেন। কিন্তু তা শুরু করার আগে মহিলাদের উচিত নিজেদের স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে এ বিষয়ে পরামর্শ নেওয়া, বিশেষ করে তঁাদের ক্ষেত্রে, যঁাদের সি—সেকশন সার্জারি হয়েছে। তবে প্রাথমিকভাবে আপনি সহজ কিছু আসন (পোজ বা ভঙ্গি) দিয়ে যোগচর্চা শুরু করতে পারেন এবং তার পর ক্রমশ আরও কঠিন আসন, নিজেদের রুটিনে যোগ করতে পারেন।
আমাদের ইনস্ট্রাক্টর রিংকি নিম্নলিখিত কিছু আসন করার পরামর্শ দিয়েছেন ।
১. ট্রায়াঙ্গেল পোজ় (ত্রিকোণাসন)
পা প্রসারিত করে দাঁড়ান এবং ডান পায়ের পাতা ৯০ ডিগ্রি কোণে, বাইরের দিকে মুখ করে রাখুন আর বাম পায়ের পাতা একটু ভিতরের দিকে নিয়ে আসুন।
এই পজিশনে শ্বাস নিতে নিতে হাত প্রসারিত করুন এবং শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ডান পায়ের দিকে, হাত বাঁকান । এমনভাবে, যেন ডান হাত আপনার ডান পা স্পর্শ করে আর বাম হাত উপরের দিকে ওঠানো থাকে।
মুখ উপরের দিকে তুলুন আর দৃষ্টি রাখুন বাম হাতের দিকে। গভীর শ্বাস নিতে নিতে এই ভঙ্গিতে কিছুক্ষণ থাকুন।
এবার শ্বাস নিতে নিতে পা সোজা করুন, হাত দুটো নামান এবং অন্যদিকেও একই ভঙ্গি অনুসরণ করুন।
এই আসন করলে পা, হাঁটু মজবুত হয়, পশ্চাদ্দেশ—কঁুচকি কাফ মাংসপেশী প্রসারিত এবং মুক্ত হয়। তাছাড়া এটি পেলভিক ফ্লোরের উপরও সক্রিয়।
২. ওয়ারিয়র পোজ় (বীরভদ্রাসন)
দুই পা প্রসারিত করে দাঁড়ান । ডান পায়ের পাতা ৯০ ডিগ্রি কোণে বাইরের দিকে মুখ করে রাখুন আর বাম পায়ের পাতা একটু ভিতরের দিকে নিয়ে আসুন ।
এই পজিশনে হাত দু’টোকে শরীরের দু’পাশে তুলুন আর ডান দিকে মাথা ঘোরান।
শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে ডান হাত আরও প্রসারিত করুন, পাশাপাশি ডান পাও বেঁকান আর শরীরের পেলভিস অংশকে চাপ নিয়ে নিচের দিকে নামানোর চেষ্টা করুন।
কয়েক সেকেন্ডের জন্য এই পোজ ধরে রাখুন। শ্বাস নিতে থাকুন।
হাত নামিয়ে নিন। বাম দিকেও একই ভঙ্গি অনুসরণ করুন।
এই আসন করলে ভারসাম্য রক্ষা হয় আর স্ট্যামিনা বাড়ে। তাছাড়া এটি বাহু, পা এবং লোয়ার ব্যাককেও মজবুত করে। কঁাধের ব্যথার উপশমের জন্যও এটি খুব উপকারী।
৩. কোবরা স্ট্রেচ (ভুজঙ্গাসন)
পেটের উপর ভর দিয়ে শুয়ে পড়ুন, পাদু’টো যতটা সম্ভব কাছাকাছি আনুন। হাতদু’টো রাখুন পাশে।
মাটিতে রাখা হাতদু’টো কাঁধের কাছে নিয়ে আসুন। এবার আস্তে আস্তে হাতে ভর দিয়ে শরীরের ঊর্ধ্বভাগকে উপরে তুলুন। শ্বাস নিতে নিতে।
১ থেকে ১০ পর্যন্ত গুণুন। তার পর শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে আগের শায়িত অবস্থায় ফিরে আসুন।
এই আসনে বাহু, কাঁধ এবং মেরুদণ্ড শক্ত হয় । ক্লান্তি লাঘব হয় এবং পশ্চাদ্দেশ দৃঢ়, মজবুত হয় ।
মেরুদণ্ডের উপরে, গ্লুটস পেশীতে যে চাপ পড়ে, তা নিরাময় করতে সাহায্য করে। হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখে। পায়ের জোর বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
৪. বো পোজ় (ধনুরাসন)
পেটের উপর ভর দিয়ে শুয়ে পড়ুন, পাদু’টো পরস্পরের থেকে একটু দূরে রাখুন। হাতদু’টো রাখুন পাশে।
এবার হাঁটু বেঁকিয়ে হাত দু’টো পিছনের দিকে প্রসারিত করুন, তার পর হাত দিয়ে গোড়ালি স্পর্শ করুন।
শ্বাস নিন এবং বুক, পা উপরে তুলে রাখুন । ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ড এই ভঙ্গিমায় থাকুন। মাঝে মাঝে গভীর শ্বাস নিন।
এবার শ্বাস ছেড়ে আগের অবস্থায় ফিরে আসুন ।
এই আসনে পেট এবং পিঠের মাংসপেশী শক্ত হয় । পা এবং হাতের বাহু অংশকে এটি সক্রিয় রাখে এবং পিঠকেও রাখে সুঠাম।
সুতরাং, সন্তান জন্ম দেওয়ার পর এমন আরও অনেক আসন আছে, যা অনুশীলন করলে আবার আগের সুঠাম, নির্মেদ চেহারায় ফিরে যাওয়া যায়। আবার মাংসপেশীও মজবুত হয় । তবে এক্ষেত্রে যোগচর্চা করার আগে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা এবং কোনও বিশেষজ্ঞের নজরদারিতে তা করা জরুরি । কারণ নিজে করতে গেলে, কোনওভাবে চোট—আঘাত পেতে পারেন । তাই বিশেষজ্ঞের নজরদারি অত্যন্ত জরুরি ।