বন্ধুত্ব ৷ এই একটি শব্দ জীবনের প্রত্যেক পদক্ষেপে বার বার নিজের অস্তিত্ব মনে করিয়ে দেয় ৷ শিশু বয়স থেকে প্রত্যেকের জীবনে বন্ধুত্বের বাঁধন শুরু হয়ে যায় ৷ স্কুলে টিফিন ভাগ করে খাওয়া, এক বেঞ্চে পাশাপাশি বসে পড়ার ফাঁকে পেন্সিল দিয়ে আঁকিবুকি কাটা ৷ তারপর স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে কলেজ জীবনের বন্ধুত্বের আরেক বিশেষত্ব রয়েছে ৷ শৈশবের যে বন্ধুত্বে থাকে নিখাদ ভালোবাসা, যৌবনে পা দিয়ে সেই বন্ধুত্বই হয় ভরসার আরেক জায়গা ৷ যার কাছে মন খুলে নিজের সবটা উজার করা যায়, সেই তো বন্ধু ৷ যে বন্ধুত্বের মধ্যে নেই কোনও সম-অসম ভেদাভেদ ৷ একে অপরের সঙ্গে ভাব বিনিময়ের পাশাপাশি সংস্কৃতি, ভাষার বিনিময় হয়ে যায় বন্ধুত্বে ৷
ফ্রেন্ডশিপ ডে-র ইতিহাস
1930 সাল নাগাদ হলমার্ক কার্ডস-এর মার্কেটিং স্ট্র্যাটেজি ছিল ন্যাশনাল ফ্রেন্ডশিপ ডে ৷ সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা জয়েস হল 2 অগাস্ট ফ্রেন্ডশিপ ডে পালনের ঘোষণা করেন ৷ এর জন্য তিনি কার্ড পাঠিয়ে বন্ধুদের শুভেচ্ছা জানানোর কথা বলেন ৷ এই বিষয়টি আরও বড় করে পালনের জন্য 1935 সালে অ্যামেরিকান কংগ্রেস অগাস্টের প্রথম রবিবার ফ্রেন্ডশিপ ডে ঘোষণা করে ৷
ফ্রেন্ডশিপ ডে-র গুরুত্ব
মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ও শান্তির বার্তা পৌঁছে দিতে ফ্রেন্ডশিপ ডে’র শুরু ৷ বন্ধুর সঙ্গেই সুখ-দুঃখ ভাগ করে নেওয়া যায় ৷ জীবনের চড়াই-উতরাইয়ে বন্ধুই পরামর্শ দেয়, পাশে থাকে ৷ তাই বছরের একটি বিশেষ দিনে তাদের সম্মান জানানো হয় ৷ বন্ধুত্ব আসলে সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করা যায় না ৷ তবে বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে বন্ধুত্বের ৷ প্রত্যেক মানুষের জীবন বন্ধু অবিচ্ছিন্ন অঙ্গ ৷ তাই ফ্রেন্ডশিপ ডে-র গুরুত্ব যথেষ্ট ৷ বন্ধু না থাকলে জীবনে শূন্যতা ভিড় করে ৷ বেঁচে থাকার মধ্যেও মানুষ কোথাও হারিয়ে যায় ৷ একমাত্র বন্ধুই পারে আরেক বন্ধুকে আনন্দ দিতে ৷ তাই প্রত্যেক মানুষের জীবনে ফ্রেন্ডশিপ পালনের গুরুত্ব থেকেই যায় ৷
COVID-19 পরিস্থিতিতে ফ্রেন্ডশিপ ডে পালন
কোরোনার বর্তমান পরিস্থিতিতে ফ্রেন্ডশিপ ডে পালনে ভাটা পড়েছে ৷ সামাজিক দূরত্ববিধি মানতে অনেকে এক জায়গায় জমায়েত করতে পারবেন না ৷ তাই এবছর ফ্রেন্ডশিপ ডে পালন হোক সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে ৷ দূরত্ব ফ্রেন্ডশিপ ডে-র উপর প্রভাব ফেলতে পারেনি কখনও ৷ যাঁরা এই পরিস্থিতিতে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন না, তাঁরা সুন্দর মেসেজ, শুভেচ্ছা, ছবি সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে পাঠাতে পারেন ৷ বাড়িতে ফুল পাঠাতে পারেন ৷ অনলাইনে গিফট পাঠিয়ে দিতে পারেন ৷ অনলাইন গেম খেলতে পারেন ৷ পাশাপাশি ভিডিয়ো কলের সুবিধা রয়েছে ৷ পুরানো ছবি কোলাজ করে সোশাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে পোস্ট করা যেতে পারে আজকের এই বিশেষ দিনে ৷
ফ্রেন্ডশিপ ডে-তে কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের উক্তি-
এ পি জে আবদুল কালাম- ‘‘একটি ভালো বই একশো বন্ধুর সমান ৷ আর একজন ভালো বন্ধু একটি লাইব্রেরির সমান ৷’’
‘‘পুরানো বন্ধুরা সোনা, নতুন বন্ধুরা হিরে ৷ যদি হিরে পাও তাহলে সোনাকে ভুলে যেও না ৷ কারণ হিরে ধরে রাখতে পারে সোনা ৷’’
মাদার টেরেসা- ‘‘বন্ধুকে কখনও নিখুঁত ব্যক্তি হিসেবে আশা করবে না ৷ তাঁকে নিখুঁত তৈরি হতে সাহায্য করো ৷ এটাই আসল বন্ধুত্ব ৷’’
উইলিয়াম শেক্সপিয়ার- ‘‘তুমি কেমন, তা একজন বন্ধুই জানে ৷ তুমি কোথায় ছিলে, এখন তুমি কেমন এবং ভবিষ্যতে তুমি কেমন হবে- সব মিলিয়ে তোমার বন্ধু তোমাকে গ্রহণ করে ৷’’
সেলিব্রিটিদের ফ্রেন্ডশিপ ডে
সেলিব্রিটিরাও এই বিশেষ দিনটি পালনে কম যান না ৷ নিজের বন্ধু ও ফ্যানদের শুভেচ্ছা জানান সোশাল মিডিয়ায় ৷
বলিউডে বন্ধুত্ব-
ঐশ্বর্য রাই বচ্চন-প্রীতি জ়িন্টা- এঁরা দু’জন দীর্ঘ সময় ধরে বন্ধুত্ব অটুট রেখেছেন ৷ প্রাক্তন মিস ওয়ার্ল্ড ঐশ্বর্যকে ‘‘অসাধারণ মা এবং প্রাণোচ্ছ্বল’’ বলে ডাকেন ৷
করণ জোহর-টুইঙ্কল খান্না- করণ ও টুইঙ্কল দু’জন ছোটোবেলার বন্ধু ৷ কুছ কুছ হোতা হ্যায়- সিনেমায় টুইঙ্কলের জন্য একটি চরিত্র লিখেছিলেন করণ ৷ কোনও কারণে তাঁর ওই চরিত্র পরবর্তীতে আর সিনেমায় যুক্ত হয়নি ৷
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া-কঙ্গনা রাণাওয়াত- ফ্যাশন সিনেমা থেকে কঙ্গনা ও প্রিয়াহ্কার বন্ধুত্ব ৷ ফ্যাশনের সাফল্যের পার্টিও যৌথভাবে দিয়েছিলেন দু’জনে ৷
শ্রুতি হাসান-তামান্না ভাটিয়া- ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে শ্রুতি ও তামান্নার বন্ধুত্ব বহু চর্চিত ৷ দু’জনের মধ্যে বন্ধন এত মজবুত যে, কোনও প্রোজেক্টে একে অপরের পরিবর্তে এলে তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্কে তার প্রভাব পড়ে না ৷
সলমন খান-প্রীতি জ়িন্টা- একসময় দু’জনের মিষ্টি অনস্ক্রিন কেমিস্ট্রি দর্শকদের মন জয় করে নিয়েছিল ৷ আর্থিক সমস্যার সময় প্রীতিকে সাহায্য করেছেন সলমন ৷
প্রভু দেবা-সোনু সুদ- দক্ষিণি কোরিওগ্রাফার, ডিরেক্টর, অভিনেতা প্রভু দেবা বাস্তবে অত্যন্ত শান্ত মানুষ ৷ কিন্তু সোনুর সঙ্গে যখন থাকেন, তখন তিনি অন্য মানুষ ৷ বিনা নিমন্ত্রণেই সোনুর বাড়িতে চলে যান প্রভু ৷ একসঙ্গে বসে খাওয়া-দাওয়া করেন ৷ এমনকী দুই বন্ধু মিলে সিদ্ধি বিনায়ক মন্দিরেও যান ৷