ETV Bharat / bharat

পহলে আপ... বুঝিয়ে দিল দিল্লি

বুথ ফেরত সমীক্ষা আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিল ৷ সমীক্ষাকে সত্যি প্রমাণিত করে তৃতীয়বারের জন্য দিল্লির মসনদে আম আদমি পার্টি ৷

নিজস্ব চিত্র
নিজস্ব চিত্র
author img

By

Published : Feb 11, 2020, 6:20 PM IST

Updated : Feb 12, 2020, 12:04 AM IST

দিল্লি, 11 ফেব্রুয়ারি : প্রচারের সময় তাঁর স্লোগান ছিল, 'আচ্ছে বিতা পাঁচ সাল ৷' এই স্লোগানেই ভরসা রাখলেন মানুষ ৷ দিল্লি ফের কেজরিওয়ালের ৷

বুথ ফেরত সমীক্ষা আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিল ৷ সমীক্ষাকে সত্যি প্রমাণিত করে তৃতীয়বারের জন্য দিল্লির মসনদে আম আদমি পার্টি ৷ নিঃসন্দেহে কিছুটা শক্তি বাড়িয়েছে BJP ৷ কংগ্রেসের ঝুলি শূন্য ৷ 70 বিধানসভা আসনে আম আদমি পার্টির খাতায় 62টি, BJP পেল 8টি আসন ৷

গতবারের তুলনায় BJP-র আসন সংখ্যা বেড়েছে ৷ স্বাভাবিকভাবেই শতকরার হিসেবেও বেশ কিছুটা এগিয়েছে তারা ৷ গতবার প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে গেরুয়া শিবিরের শতকরা হার ছিল 32.3 শতাংশ ৷ এবারে তা বেড়ে 40 শতাংশ হয়েছে ৷ কিন্তু, আসন সংখ্যা বা ভোটের হারে পরিবর্তন কার্যত স্থিমিত লাগল AAP-র ফলাফলের সামনে ৷

পাঁচ বছর আগে BJP-সহ সব বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ভোটে নেমেছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল ৷ 70 আসনের বিধানসভার মধ্যে 67 দখল করেছিল তারা ৷ খড়কুটোর মতো উড়ে গেছিল বিরোধীরা ৷ ক্ষমতায় আসার পরই একাধিক অভিনব পদক্ষেপ ঘোষণা করেছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ৷ বিদ্যুৎ, জল এবং সড়ক পরিবহনের ক্ষেত্রে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছিলেন ৷ নিখরচায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন ৷ জল এবং বিদ্যুতের মতো মৌলিক চাহিদাগুলিকে প্রতিটি সাধারণ মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগই কেজরিওয়ালের জয়ের অন্যতম হাতিয়ার বলে মনে করছেন অনেকে ৷ নারী নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছিলেন ৷ রাজ্যের প্রতিটি কোণায় CCTV লাগিয়ে সুরক্ষা ব্যবস্থাকে মজবুত করেছিলেন ৷ 2012 সালে নির্ভয়াকাণ্ডের পর রাজধানীতে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, গত পাঁচ বছরে কেজরিওয়ালের মুখ্যমন্ত্রিত্বকালে সেই কলঙ্ক অনেকটাই মোছা সম্ভব হয়েছে ৷

পুলিশ ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে থাকায় বরাবরই কেজরিওয়ালের সঙ্গে বিরোধ দেখা গেছে উপ-রাজ্যপালের ৷ কিন্তু, দিনের শেষে সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাজি জিতেছেন কেজরিওয়ালই ৷ আবার, গোটা দেশ যখন পরিবেশ দূষণের নিরিখে রাজধানীর দিকে আঙুল তুলছিল, তখনই জোড়-বিজোড় ফরমুলা চালু করে অভিনবত্ব এনেছিলেন ৷ স্বাভাবিকভাবেই কেজরিওয়ালের এই মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত প্রশংসা কুড়িয়েছিল ৷

দেখুন ভিডিয়োয়...

এত কিছুর পরে অবশ্য এবারে ভোটের আগেই শাহিনবাগ বিতর্ক নতুন মাত্রা যোগ করে ৷ প্রথম থেকেই নজর ছিল ওখলা কেন্দ্রের দিকে ৷ কারণ, এই ওখলার মধ্যেই পড়ে শাহিনবাগ ও জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ৷ শাহিনবাগের আন্দোলন কেজরিওয়ালকে বাড়তি অক্সিজেন দিচ্ছে না পক্ষান্তরে BJP-র হাত শক্ত করেছে, তা নিয়ে জল্পনা ছিল ফল ঘোষণার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ৷ কিন্তু, দিনের শেষে দেখা গেছে, ওখলাতে শেষ হাসি ফের হাসল AAP-ই ৷ নয়াদিল্লি কেন্দ্র থেকে যেভাবে অরবিন্দ কেজরিওয়াল জিতলেন, তা নিঃসন্দেহে দলকে বাড়তি প্রেরণা দেবে ৷ তবে, দলের 'সেকেন্ড ইন কমান্ড' মণীশ সিসোদিয়ার অবস্থা দলের এই সুখের দিনেও যেন কিছুটা কাঁটা হয়ে থাকল ৷ তিনি জিতেছেন । তবে মাত্র ২ হাজারের ব্যবধানে । শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে সিসোদিয়ার ভূমিকা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছিল ৷ নিন্দুকরা বলছেন, উপ-মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও নিজের কাজ ঠিক মতো করতে পারেননি ৷

তাই হয়ত বিজলি-পানি-সড়কের স্লোগান ভোটের আগে কিছুটা ফিকে হয়ে গেছিল ৷ আর এখানেই ড্যামেজ কন্ট্রোলের ভূমিকায় দেখা গেল প্রশান্ত কিশোরকে ৷ 2014 সালে প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন কেজরিওয়াল ৷ ভোট হয়েছে 2020-র 8 ফেব্রুয়ারি । আর 2019-এর 14 ডিসেম্বর টুইটারে কেজরিওয়াল জানিয়েছিলেন, 'ইন্ডিয়ানপ্যাক' অর্থাৎ পিকে'র সংস্থার সঙ্গে তাঁর দল গাঁটছড়া বেঁধেছে । এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াটা কিন্তু খুব বেশি দিন আগে শুরু হয়নি । গত লোকসভা ভোটে বাংলার মতো দিল্লিতেও গেরুয়া ঝড় চোখে পড়েছিল ৷ বাংলায় যেমন দুই থেকে 18-তে পৌঁছেছিল BJP, ঠিক তেমনই আম আদমি পার্টির বুকে হৃদকম্প ধরিয়েছিল তারা ৷ সাতটির মধ্যে সাতটি লোকসভা আসনই নিজেদের দখলে নিয়েছিল তারা ৷ BJP-র এই উত্থানের পর আলোচনা শুরু হয়েছিল এই বিধানসভা নির্বাচনকে নিয়ে ৷ অনেকেই মনে করেছিলেন, বিধানসভা নির্বাচনে 20 বছর বাদে পদ্ম ফুটতে চলেছে দিল্লির মাটিতে ৷ আলোচনা যখন মধ্যগগনে ঠিক তখনই ‘ইন্ডিয়ানপ্যাক’-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন কেজরিওয়াল ৷ তার পরই ছবিটা পরিবর্তন হতে শুরু করে ৷ ডিসেম্বরের আগেও একাধিক জনসভায় সার্জিকাল স্ট্রাইক থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা ছিল কেজরিওয়ালের ভাষণের প্রতিপাদ্য বিষয় ৷ অনেকেই তখন মনে করেছিলেন, বিরোধিতা অনেক ক্ষেত্রেই অকারণে হয়ে যাচ্ছে ৷ কিন্তু, পিকে'র সংস্পর্শে আসার পরই আস্তে আস্তে পরিস্থিতির পরিবর্তন নজরে পড়তে শুরু করে ৷ BJP-র ফাঁদে পা দিয়ে কারণে-অকারণে কেন্দ্রকে আক্রমণ করা থেকে পিছু হঠে আসেন AAP সুপ্রিমো ৷ সেই পরিস্থিতি এবং এই জয় থেকে অনেকের মনেই দাঁড়ি টানছে একটা কথাই ৷ তা হলে কি পিকে'র পরামর্শেই এবারের ভোটে বাজিমাত করলেন কেজরিওয়াল ?

পহলে আপ... বুঝিয়ে দিল দিল্লি

ভোট শেষ হতেই বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষা ইঙ্গিত দিয়েছিল এবারেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে চলেছে আম আদমি পার্টি ৷ তিন থেকে BJP যে বেশ কিছুটা উপরে উঠে আসবে, তাও স্পষ্ট করেছিল সমীক্ষাগুলি ৷ রিপাবলিক-জন কি-বাত, ইন্ডিয়া টুডে, ABP নিউজ় রিপোর্টার বা ইন্ডিয়া নিউজ় সবাই 55-র উপর আসন AAP পাবে বলেই আভাস দিয়েছিল ৷ সব আভাসই মিলে গেল ৷ গতবার 67টি আসনের থেকে গোটা কয়েক আসন কমেছে বটে ৷ কিন্তু, 70 বিধানসভার মধ্যে প্রায় 90 শতাংশ আসন পেয়ে AAP বুঝিয়ে দিল এখনও তারাই দিল্লির চালিকাশক্তি ৷ ভোটের আগে কেজরিওয়ালের ঘোষণা ছিল আগামীদিনে দিল্লিকে আরও নিরাপদ শহরে পরিণত করবেন ৷ তৃতীয়বারের জন্য সিংহাসনে বসে সেই বিষয়েই তিনি গুরুত্ব দেবেন তাতে সন্দেহ নেই ৷ আবার, লোকসভা ভোটে সাফল্য এলেও তৎপরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে গেরুয়া শিবিরের হাত ততটা মজবুত দেখায়নি ৷ কংগ্রেসের জমি অপেক্ষাকৃত মজবুত হয়েছে ৷ কিন্তু, শীলা দীক্ষিত পরবর্তী দিল্লির মাটি যে এখনও হাত পাকাতে প্রস্তুত নয়, আজকের ফল ফের একবার বুঝিয়ে দিল ৷ যেভাবে সুষমা স্বরাজ পরবর্তী সময়ে BJP থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে দিল্লির সাধারণ মানুষ, অনেকটা সেভাবেই কমনওয়েলথ কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানো শীলা দীক্ষিত বা কংগ্রেসের থেকেও কয়েক যোজন দূরে তারা ৷ গতবারের মতো এবারও একটি আসনও জোটেনি তাদের ।

এবারের ভোটে লড়াইটা ছিল মূলত কেজরিওয়াল বনাম মোদি ৷ মোদি ঝড়কে সামনে রেখে মাস আটেক আগেই লোকসভা ভোটের বৈতরণী পার হয়েছিল ভারতীয় জনতা পার্টি ৷ হাত কেন, ঝাড়ুও কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি দিল্লিতে ৷ সাতটির মধ্যে সাতটি আসনই দখল করেছিল BJP ৷ অন্যদিকে, বেশ কয়েকটি রাজ্যে নিজেদের প্রার্থী দিয়েও কার্যত মুখ লুকোতে হয়েছিল কেজরিওয়ালকে ৷ লোকসভায় সাফল্য নেই বললেই চলে ৷ ভোট প্রচারে গিয়েও বেশ কয়েকবার বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল ৷ কয়েকজন অনুগামী দল ছেড়ে বেরিয়ে কেজরিওয়ালকে নিশানা করেছিলেন ৷ এক সময়ের 'রাজনৈতিক গুরু' আন্না হাজারেও কেজরিওয়ালের সমালোচনায় মুখ খুলেছিলেন ৷ যেভাবে রাজনৈতিক দল গড়ে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্শিতে বসেছিলেন, সেই পদ্ধতিকে সমর্থন করতে পারেননি আন্না ৷ এক সময় কেজরিওয়ালের অন্যতম ঘনিষ্ঠ অলকা লাম্বা সরব হয়েছেন বারবার ৷ কিন্তু, এত কিছুর পরও মাফলার পরা, অনাড়ম্বর কাঠের চেয়ারে মুখ্যমন্ত্রিত্ব করতে বসা মানুষটির পাশে থাকতেই চাইলেন দিল্লির জনতা ৷ সমালোচকরা বলছেন, কেজরিওয়ালের আড়ম্বরহীন জীবন, সহজ সরল বাক্যালাপ, প্রায় নিরাপত্তাহীনভাবে চলাফেরা করার এই 'আম আদমি'-র ক্যারিশ্মাই শেষ পর্যন্ত দিল্লিবাসীর মন জয় করে নিল ৷ আর অবশ্যই তার সঙ্গে বিজলি-পানির প্রতিশ্রুতিই জোগাল ভরসা ৷

দিল্লি, 11 ফেব্রুয়ারি : প্রচারের সময় তাঁর স্লোগান ছিল, 'আচ্ছে বিতা পাঁচ সাল ৷' এই স্লোগানেই ভরসা রাখলেন মানুষ ৷ দিল্লি ফের কেজরিওয়ালের ৷

বুথ ফেরত সমীক্ষা আগেই ইঙ্গিত দিয়েছিল ৷ সমীক্ষাকে সত্যি প্রমাণিত করে তৃতীয়বারের জন্য দিল্লির মসনদে আম আদমি পার্টি ৷ নিঃসন্দেহে কিছুটা শক্তি বাড়িয়েছে BJP ৷ কংগ্রেসের ঝুলি শূন্য ৷ 70 বিধানসভা আসনে আম আদমি পার্টির খাতায় 62টি, BJP পেল 8টি আসন ৷

গতবারের তুলনায় BJP-র আসন সংখ্যা বেড়েছে ৷ স্বাভাবিকভাবেই শতকরার হিসেবেও বেশ কিছুটা এগিয়েছে তারা ৷ গতবার প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে গেরুয়া শিবিরের শতকরা হার ছিল 32.3 শতাংশ ৷ এবারে তা বেড়ে 40 শতাংশ হয়েছে ৷ কিন্তু, আসন সংখ্যা বা ভোটের হারে পরিবর্তন কার্যত স্থিমিত লাগল AAP-র ফলাফলের সামনে ৷

পাঁচ বছর আগে BJP-সহ সব বিরোধীদের চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ভোটে নেমেছিলেন অরবিন্দ কেজরিওয়াল ৷ 70 আসনের বিধানসভার মধ্যে 67 দখল করেছিল তারা ৷ খড়কুটোর মতো উড়ে গেছিল বিরোধীরা ৷ ক্ষমতায় আসার পরই একাধিক অভিনব পদক্ষেপ ঘোষণা করেছিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ৷ বিদ্যুৎ, জল এবং সড়ক পরিবহনের ক্ষেত্রে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছিলেন ৷ নিখরচায় বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন ৷ জল এবং বিদ্যুতের মতো মৌলিক চাহিদাগুলিকে প্রতিটি সাধারণ মানুষের ঘরে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগই কেজরিওয়ালের জয়ের অন্যতম হাতিয়ার বলে মনে করছেন অনেকে ৷ নারী নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করেছিলেন ৷ রাজ্যের প্রতিটি কোণায় CCTV লাগিয়ে সুরক্ষা ব্যবস্থাকে মজবুত করেছিলেন ৷ 2012 সালে নির্ভয়াকাণ্ডের পর রাজধানীতে মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছিল, গত পাঁচ বছরে কেজরিওয়ালের মুখ্যমন্ত্রিত্বকালে সেই কলঙ্ক অনেকটাই মোছা সম্ভব হয়েছে ৷

পুলিশ ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনে থাকায় বরাবরই কেজরিওয়ালের সঙ্গে বিরোধ দেখা গেছে উপ-রাজ্যপালের ৷ কিন্তু, দিনের শেষে সুরক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাজি জিতেছেন কেজরিওয়ালই ৷ আবার, গোটা দেশ যখন পরিবেশ দূষণের নিরিখে রাজধানীর দিকে আঙুল তুলছিল, তখনই জোড়-বিজোড় ফরমুলা চালু করে অভিনবত্ব এনেছিলেন ৷ স্বাভাবিকভাবেই কেজরিওয়ালের এই মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত প্রশংসা কুড়িয়েছিল ৷

দেখুন ভিডিয়োয়...

এত কিছুর পরে অবশ্য এবারে ভোটের আগেই শাহিনবাগ বিতর্ক নতুন মাত্রা যোগ করে ৷ প্রথম থেকেই নজর ছিল ওখলা কেন্দ্রের দিকে ৷ কারণ, এই ওখলার মধ্যেই পড়ে শাহিনবাগ ও জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয় ৷ শাহিনবাগের আন্দোলন কেজরিওয়ালকে বাড়তি অক্সিজেন দিচ্ছে না পক্ষান্তরে BJP-র হাত শক্ত করেছে, তা নিয়ে জল্পনা ছিল ফল ঘোষণার আগের মুহূর্ত পর্যন্ত ৷ কিন্তু, দিনের শেষে দেখা গেছে, ওখলাতে শেষ হাসি ফের হাসল AAP-ই ৷ নয়াদিল্লি কেন্দ্র থেকে যেভাবে অরবিন্দ কেজরিওয়াল জিতলেন, তা নিঃসন্দেহে দলকে বাড়তি প্রেরণা দেবে ৷ তবে, দলের 'সেকেন্ড ইন কমান্ড' মণীশ সিসোদিয়ার অবস্থা দলের এই সুখের দিনেও যেন কিছুটা কাঁটা হয়ে থাকল ৷ তিনি জিতেছেন । তবে মাত্র ২ হাজারের ব্যবধানে । শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে সিসোদিয়ার ভূমিকা নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন উঠেছিল ৷ নিন্দুকরা বলছেন, উপ-মুখ্যমন্ত্রী হিসেবেও নিজের কাজ ঠিক মতো করতে পারেননি ৷

তাই হয়ত বিজলি-পানি-সড়কের স্লোগান ভোটের আগে কিছুটা ফিকে হয়ে গেছিল ৷ আর এখানেই ড্যামেজ কন্ট্রোলের ভূমিকায় দেখা গেল প্রশান্ত কিশোরকে ৷ 2014 সালে প্রশান্ত কিশোরের সংস্থার সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধেন কেজরিওয়াল ৷ ভোট হয়েছে 2020-র 8 ফেব্রুয়ারি । আর 2019-এর 14 ডিসেম্বর টুইটারে কেজরিওয়াল জানিয়েছিলেন, 'ইন্ডিয়ানপ্যাক' অর্থাৎ পিকে'র সংস্থার সঙ্গে তাঁর দল গাঁটছড়া বেঁধেছে । এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়াটা কিন্তু খুব বেশি দিন আগে শুরু হয়নি । গত লোকসভা ভোটে বাংলার মতো দিল্লিতেও গেরুয়া ঝড় চোখে পড়েছিল ৷ বাংলায় যেমন দুই থেকে 18-তে পৌঁছেছিল BJP, ঠিক তেমনই আম আদমি পার্টির বুকে হৃদকম্প ধরিয়েছিল তারা ৷ সাতটির মধ্যে সাতটি লোকসভা আসনই নিজেদের দখলে নিয়েছিল তারা ৷ BJP-র এই উত্থানের পর আলোচনা শুরু হয়েছিল এই বিধানসভা নির্বাচনকে নিয়ে ৷ অনেকেই মনে করেছিলেন, বিধানসভা নির্বাচনে 20 বছর বাদে পদ্ম ফুটতে চলেছে দিল্লির মাটিতে ৷ আলোচনা যখন মধ্যগগনে ঠিক তখনই ‘ইন্ডিয়ানপ্যাক’-এর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন কেজরিওয়াল ৷ তার পরই ছবিটা পরিবর্তন হতে শুরু করে ৷ ডিসেম্বরের আগেও একাধিক জনসভায় সার্জিকাল স্ট্রাইক থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় সরকারের বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়ে সমালোচনা ছিল কেজরিওয়ালের ভাষণের প্রতিপাদ্য বিষয় ৷ অনেকেই তখন মনে করেছিলেন, বিরোধিতা অনেক ক্ষেত্রেই অকারণে হয়ে যাচ্ছে ৷ কিন্তু, পিকে'র সংস্পর্শে আসার পরই আস্তে আস্তে পরিস্থিতির পরিবর্তন নজরে পড়তে শুরু করে ৷ BJP-র ফাঁদে পা দিয়ে কারণে-অকারণে কেন্দ্রকে আক্রমণ করা থেকে পিছু হঠে আসেন AAP সুপ্রিমো ৷ সেই পরিস্থিতি এবং এই জয় থেকে অনেকের মনেই দাঁড়ি টানছে একটা কথাই ৷ তা হলে কি পিকে'র পরামর্শেই এবারের ভোটে বাজিমাত করলেন কেজরিওয়াল ?

পহলে আপ... বুঝিয়ে দিল দিল্লি

ভোট শেষ হতেই বিভিন্ন বুথ ফেরত সমীক্ষা ইঙ্গিত দিয়েছিল এবারেও একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে চলেছে আম আদমি পার্টি ৷ তিন থেকে BJP যে বেশ কিছুটা উপরে উঠে আসবে, তাও স্পষ্ট করেছিল সমীক্ষাগুলি ৷ রিপাবলিক-জন কি-বাত, ইন্ডিয়া টুডে, ABP নিউজ় রিপোর্টার বা ইন্ডিয়া নিউজ় সবাই 55-র উপর আসন AAP পাবে বলেই আভাস দিয়েছিল ৷ সব আভাসই মিলে গেল ৷ গতবার 67টি আসনের থেকে গোটা কয়েক আসন কমেছে বটে ৷ কিন্তু, 70 বিধানসভার মধ্যে প্রায় 90 শতাংশ আসন পেয়ে AAP বুঝিয়ে দিল এখনও তারাই দিল্লির চালিকাশক্তি ৷ ভোটের আগে কেজরিওয়ালের ঘোষণা ছিল আগামীদিনে দিল্লিকে আরও নিরাপদ শহরে পরিণত করবেন ৷ তৃতীয়বারের জন্য সিংহাসনে বসে সেই বিষয়েই তিনি গুরুত্ব দেবেন তাতে সন্দেহ নেই ৷ আবার, লোকসভা ভোটে সাফল্য এলেও তৎপরবর্তী বিধানসভা নির্বাচনগুলিতে গেরুয়া শিবিরের হাত ততটা মজবুত দেখায়নি ৷ কংগ্রেসের জমি অপেক্ষাকৃত মজবুত হয়েছে ৷ কিন্তু, শীলা দীক্ষিত পরবর্তী দিল্লির মাটি যে এখনও হাত পাকাতে প্রস্তুত নয়, আজকের ফল ফের একবার বুঝিয়ে দিল ৷ যেভাবে সুষমা স্বরাজ পরবর্তী সময়ে BJP থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে দিল্লির সাধারণ মানুষ, অনেকটা সেভাবেই কমনওয়েলথ কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানো শীলা দীক্ষিত বা কংগ্রেসের থেকেও কয়েক যোজন দূরে তারা ৷ গতবারের মতো এবারও একটি আসনও জোটেনি তাদের ।

এবারের ভোটে লড়াইটা ছিল মূলত কেজরিওয়াল বনাম মোদি ৷ মোদি ঝড়কে সামনে রেখে মাস আটেক আগেই লোকসভা ভোটের বৈতরণী পার হয়েছিল ভারতীয় জনতা পার্টি ৷ হাত কেন, ঝাড়ুও কোনও প্রভাব ফেলতে পারেনি দিল্লিতে ৷ সাতটির মধ্যে সাতটি আসনই দখল করেছিল BJP ৷ অন্যদিকে, বেশ কয়েকটি রাজ্যে নিজেদের প্রার্থী দিয়েও কার্যত মুখ লুকোতে হয়েছিল কেজরিওয়ালকে ৷ লোকসভায় সাফল্য নেই বললেই চলে ৷ ভোট প্রচারে গিয়েও বেশ কয়েকবার বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছিল ৷ কয়েকজন অনুগামী দল ছেড়ে বেরিয়ে কেজরিওয়ালকে নিশানা করেছিলেন ৷ এক সময়ের 'রাজনৈতিক গুরু' আন্না হাজারেও কেজরিওয়ালের সমালোচনায় মুখ খুলেছিলেন ৷ যেভাবে রাজনৈতিক দল গড়ে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্শিতে বসেছিলেন, সেই পদ্ধতিকে সমর্থন করতে পারেননি আন্না ৷ এক সময় কেজরিওয়ালের অন্যতম ঘনিষ্ঠ অলকা লাম্বা সরব হয়েছেন বারবার ৷ কিন্তু, এত কিছুর পরও মাফলার পরা, অনাড়ম্বর কাঠের চেয়ারে মুখ্যমন্ত্রিত্ব করতে বসা মানুষটির পাশে থাকতেই চাইলেন দিল্লির জনতা ৷ সমালোচকরা বলছেন, কেজরিওয়ালের আড়ম্বরহীন জীবন, সহজ সরল বাক্যালাপ, প্রায় নিরাপত্তাহীনভাবে চলাফেরা করার এই 'আম আদমি'-র ক্যারিশ্মাই শেষ পর্যন্ত দিল্লিবাসীর মন জয় করে নিল ৷ আর অবশ্যই তার সঙ্গে বিজলি-পানির প্রতিশ্রুতিই জোগাল ভরসা ৷

New Delhi, Feb 11 (ANI): While speaking to ANI in the national capital during Delhi election results counting process, the Chief Electoral Officer (CEO) of Delhi Dr Ranbir Singh spoke on counting. He said, "Our first priority is to conduct the accurate counting so that there will be no inaccuracy in the entire process. We will have to follow the due process of the Election Commission and also have to be patient during counting."
Last Updated : Feb 12, 2020, 12:04 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.