অনেক কিছু স্মৃতি নিয়ে 2019 সালটা শেষ হচ্ছে । এর মধ্যে কিছু ভাল, কিছু খারাপ । এই বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বধীন সরকার বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় এল । এছাড়াও রয়েছে একাধিক উল্লেখযোগ্য ঘটনা ।
এ বছর সাংবিধানিক এবং আইনগত ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরিবর্তন চোখে পড়ে । 2019 সালে এই সকল পরিবর্তন নিঃসন্দেহে বড় দিকচিহ্ন স্বরূপ । রাজনৈতিক, ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার সরকার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে । BJP-র অধিকাংশ সিদ্ধান্ত বিস্ময় তৈরি করেছে, এই সকল সিদ্ধান্তের মধ্যে অন্যতম হল CAA।
এ বছরের অন্যতম ঐতিহাসিক ঘটনা তিন তালাক নিয়ে সরকারের পদক্ষেপ । তিন তালাক বিষয়টি নিয়ে মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে যে বিপুল প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা করা গেছিল, তেমনটা হয়নি । এতদিন সব সরকার কোনও ধর্মের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের আগে বার বার চিন্তা করত, অনেক ক্ষেত্রেই বিষয়টি নিয়ে পাশ কাটিয়ে যেত । কিন্তু, BJP সরকার বহু দিন ধরে চলে আসা এই আইনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে সচেষ্ট হয় । অমানবিক-অপরিবর্তনীয়-সংকীর্ণ-নারী বিরোধী এই রীতির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করে । এই অমনাবিক রীতির বিরুদ্ধে সংসদের দুই কক্ষেই পাশ হয়ে যায় নয়া বিল । সরকারের এই জাতীয়তাবাদী পদক্ষেপের ফলে বিরোধীদের অনেক প্রশ্ন-বিরোধীতা অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়ে । বিরোধীদের কোনও সমালোচনার সুযোগ না দিয়েই এই বিল পাশ করিয়ে নেয় কেন্দ্রীয় সরকার ।
এই সরকারের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ-ঐতিহাসিক পদক্ষেপ 370 ধারা প্রত্যাহার । যার পরিকল্পনাটি ছিল নিখুঁত । একই সঙ্গে বলতে হয় 370 ধারা প্রত্যাহারের পরবর্তী অশান্তি রুখতে সরকারের পদক্ষেপ ছিল প্রশংসাযোগ্য । সরকারের নিখুঁত পদক্ষেপর ফলে যা আশঙ্কা করা হয়েছিল তার পাঁচ শতাংশ অশান্তিও হয়নি । পরিকল্পনা এবং নিরাপত্তার কঠোরতা এতটাই মজবুত ছিল যে, প্রথম কয়েকটা সপ্তাহ কোনও সভা-সমিতি-সমাবেশ করার অনুমতি ছিল না । ফোন-ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে গুজব ছড়ানোর মতো পরিস্থিতি পুরোপুরি রুখে দেওয়া হয়েছিল । যাতে কোনওরকম উষ্কানিতে প্ররোচনা দিতে না পারেন, সে জন্য সব রাজনৈতিক নেতৃত্বকে গৃহবন্দি করা হয় । 370 ধারা প্রত্যাহার করে জম্মু-কাশ্মীরকে দু'টি পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করা হয় ।
এখনও বেশ কিছু এলাকায় ইন্টারনেট বন্ধ রয়েছে, নাগাড়ে এতদিন ইন্টারনেট বন্ধ- খুব সম্ভবত বিশ্বে প্রথম । বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম সমালোচনা করেছে । ভারতের এই পদক্ষেপের তীব্র নিন্দা করেছে পাকিস্তান । চিন-তুরস্ক-মালয়েশিয়ার সঙ্গে জোট বাধার চেষ্টা করেছিল, যাতে ভারত-বিরোধিতাকে আরও তীব্র করা যায় ।
হিন্দু-মুসলিম ধর্মের অন্যতম প্রাচীন বিরোধ রাম জন্মভূমি-বাবরি মসজিদ বিতর্ক অত্যন্ত সক্রিয়তার সঙ্গে সমাধান করা হয় । বেশ কিছু মুসলিম পণ্ডিত বিষয়টি নিয়ে বিরুদ্ধ মতের কথা বলছিলেন, কিন্তু হিন্দু বা মুসলমান কোনওপক্ষকেই অসন্তুষ্ট না করে একটি সমাধান সূত্র বের করা সম্ভব হয় । হিন্দুদের দাবি মতো মন্দির বা মুসলিমদের কথা মতো মসজিদ তৈরির বিষয়টির দিকেও নজর দেওয়া হয় ।
বলতেই হবে নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন পাশ করার ব্যাপারে সরকারের ভূমিকার কথা । এই আইনটি কোনও নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর প্রতি নয়, সামগ্রিক ভাবে দেশের প্রতিটি মানুষের কথা চিন্তা করে পাশ করা হয় । এই আইনের ফলে দেশের একটা বড় অংশের মানুষের মনে হয়েছে তাঁদের নাগরিকত্ব সুরক্ষিত নয়, তবে এই আশঙ্কা ঠিক নয় ।
পরিশেষে একটা কথা বলতেই হবে, নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন, 2019 -এ মাধ্যমে নাগরিকত্ব পাওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু পরর্বতন আনা হয় । 2014 সালে 31 ডিসেম্বরের আগে পাকিস্তান-আফগানিস্তান-বাংলাদেশ থেকে যে সব অ-মুসলিমরা ভারতে এসেছেন, তাঁদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে সবুজ সংকেত দেয় এই আইন । এর প্রতিবাদে গর্জ ওঠেন দেশের নানা প্রান্তের মানুষ । উত্তর প্রদেশে ছবিটা সব থেকে ভয়ঙ্কর, প্রতিবাদ জানাতে গিয়ে সেখানে প্রাণ হারান 20 জন ।
সংসদের উভয় কক্ষে বিল পাশ হওয়ার পর একটি টিভি সাক্ষাত্কারে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ । ফের একবার দেশের ধর্ম নিরপেক্ষ চরিত্রটা তুলে ধরেন । মুসলিমদের এদেশ থেকে বের করে দেওয়া বা তাদের নাগরিকত্ব না দেওয়ার বিষয়ে একটি জল্পনা তৈরি হয়েছিল । কিন্তু, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বার বার গুজবে কান দেওয়ার কথা বলেন । বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয় । একটি খুব খারাপ রাজনৈতিক দৃষ্টান্ত তৈরি করে । শুরু হয় বিরোধিতা । স্বাভাবিক ভাবেই সরকার একাধিক সমালোচনার মুখোমুখি হয় ।
উপরের আলোচনা থেকে একটা কথা বলা চলে, জনাদেশ কখনই উপেক্ষা করা উচিত নয় ।
বিলাল ভাট
সাংবাদিক, ETV ভারত