দিল্লি, 16 অক্টোবর : 40 দিন পর শেষ হল অযোধ্যা মামলার দৈনন্দিন শুনানি ৷ আপাতত রায়দান স্থগিত রাখল সুপ্রিম কোর্ট ৷ তিন দিনের মধ্যে লিখিত বক্তব্য জানানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছে ৷ নভেম্বরের তৃতীয় সপ্তাহেই বহু প্রতীক্ষিত এই মামলার রায়দানের সম্ভাবনা রয়েছে বলে মত আইনজীবীদের একাংশের ৷
মধ্যস্থতা প্রক্রিয়া ব্যর্থ হওয়ার পর 6 অগাস্ট থেকে সুপ্রিম কোর্টে অযোধ্যা মামলার দৈনন্দিন শুনানি শুরু হয় ৷ শীর্ষ আদালত জানিয়েছিল, 17 অক্টোবরের মধ্যে শেষ করতে হবে শুনানি । গতকাল প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ জানান, আজই অযোধ্যার জমি সংক্রান্ত বিবাদের শেষ শুনানি হবে ৷ এরপর আজ সকালে শুরু হয় মামলার শুনানি ৷ তার আগেই সংবাদ মাধ্যমের একটি অংশে খবর ছড়ায়, মামলা থেকে সরতে চেয়ে শীর্ষ আদালতে হলফনামা জমা দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশ সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যান জ়াফর আহমেদ ফারুকি ৷ তাঁর উপর চাপ তৈরি করে হলফনামা জমা দিতে বাধ্য করা হয়েছে ৷ যদিও এই জল্পনাকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করা হয় সংবাদ মাধ্যমের অপর একটি অংশ ৷ পরে একটি সংবাদ সংস্থাকে অল ইন্ডিয়া বাবরি মসজিদ কমিটির (AIBMAC) আহ্বায়ক জ়াফারয়াব জিলানি জানান, ওয়াকফ বোর্ড মামলা থেকে সরতে চেয়ে আবেদন করেছে এমন কোনও তথ্য তাঁর কাছে নেই ৷
এর কোনও প্রভাব অবশ্য দৈনন্দিন শুনানিতে পড়েনি ৷ শুনানির শুরুতেই নিজেদের মনোভাব স্পষ্ট করে দেয় প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ৷ সওয়াল-জবাবের জন্য এক আইনজীবী শীর্ষ আদালতের কাছে আরও সময় চাইলে প্রধান বিচারপতি বলেন, "বিষয়টি আজ বিকেল পাঁচটার মধ্যে শেষ হবে ৷ অনেক হয়েছে ৷" এরপর একাধিক নাটকীয় ঘটনার সাক্ষী থাকে আদালত কক্ষ ৷ কখনও উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ে জড়ান দু'পক্ষের আইনজীবী ৷ কখনও আবার অযোধ্যা সংক্রান্ত বইয়ের নথি ছিঁড়ে দেন আইনজীবী ৷ শীর্ষ আদালতে নতুন প্রামাণ্য নথি হিসেবে একটি বই পেশ করার অনুমতি চান হিন্দু মহাসভার আইনজীবী বিকাশ সিং ৷ বইটি প্রাক্তন IPS অফিসার কিশোর কুণালের লেখা ৷ তাতে আপত্তি জানান সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের আইনজীবী রাজীব ধবন ৷ তিনি বলেন, "এটা সম্পূর্ণ নতুন একটি বই ৷ যা রেকর্ডে আনতে চাইছেন তিনি (বিকাশ সিং)৷" পালটা বিকাশ জানান, আদালতের ভিতরে বইটি আনার অনুমতি দেওয়া হয়েছে ৷ আর রামের আসল জন্মস্থানের ছবি রয়েছে বইটিতে ৷ তখন রাজীব বলেন, "আমি নথিটা ছিঁড়ে দেব ৷" তারপরই তা ছিঁড়ে দেন তিনি ৷ আইনজীবীদের এই ভূমিকায় রীতিমতো ক্ষুব্ধ হন প্রধান বিচারপতি ৷ আদালত কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দেন ৷ উষ্মা প্রকাশ করে তিনি বলেন, "আদালতের শালীনতা লঙ্ঘিত হচ্ছে ৷ আমরা বেরিয়ে যাব ৷"
উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে মধ্যাহ্ণভোজের বিরতি হয় ৷ পরে নিজের স্বপক্ষে যুক্তি দিতে থাকেন ধবন ৷ তিনি বলেন, "আমি আদালতে ম্যাপ ছিঁড়েছি, সেটা ভাইরাল হয়ে গেছে ৷ আমি এ কাজ করেছি আদালতের নির্দেশেই ৷" নিজের এই দাবির পক্ষে যুক্তি দিয়ে ধবন বলেন, "বলেছিলাম, ছুড়ে ফেলে দেব ৷ কিন্তু, প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, আপনি ছিঁড়ে ফেলতে পারেন ৷ তার পরই আমি এ কাজ করি ৷ " প্রত্যুত্তরে প্রধান বিচারপতি বলেন, "ধাওয়ানের সঙ্গে আমরা একমত ৷ আমরা বলেছিলাম, আপনি যদি ছিঁড়ে ফেলতে চান, আপনাকে স্বাগত ৷" এরপর অবশ্য মসৃণভাবেই চলে শুনানি ৷ ইতিমধ্যে আদালতে রিপোর্ট পেশ করে মধ্যস্থতাকারী কমিটিও ৷ বিকেল চারটে নাগাদ শেষ হয় শুনানি ৷ আপাতত রায়দান স্থগিত রেখেছে শীর্ষ আদালত ৷
17 নভেম্বর প্রধান বিচারপতি পদ থেকে অবসর নেবেন রঞ্জন গগৈ ৷ 15 নভেম্বর আদালতে তাঁর শেষ কাজের দিন ৷ তার আগেই অযোধ্যা মামলার রায় ঘোষণা করতে চান তিনি ৷